Page 1 of 1

৪০তম বিসিএস লিখিত প্রস্তুতিঃ বাংলা সাহিত্য

Posted: Fri Jun 14, 2019 5:48 pm
by shohag
১। বঙ্কিমচন্দ্রকে বাংলা উপন্যাসের জনক বলা হয় কেন ?
উত্তর :
উপন্যাসের প্রাথমিক প্রচেষ্ঠার বিচিত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার কালাতিক্রমের পর বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক উপন্যাস রচনার কৃতিত্ব বঙ্কিমচন্দ্রের প্রাপ্য। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর সাহিত্যিক জীবনে ১৪টি উপন্যাস রচনা করেছেন । এসব উপন্যাসে
১. বাঙালীর অতীত ইতিহাস যেমন স্থান পেয়েছে তেমনি ব্যক্ত হয়েছে সমকালীন সমাজ জীবনের কথা ।
২. বাস্তব জীবনকে ভিত্তিভূমি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে
৩. সেখানে অলৌকিকের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বিদ্যমান রয়েছে।
৪. রোমান্সের বৈশিষ্ট্য নিহিত রয়েছে।
৫. রোমান্সের রচনায় ইতিহাস দৈবশক্তির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তার সাথে যুদ্ধ করেছেন রহস্যময় দৃঢ় ব্যক্তিত্বশালী মনুষ্যচরিত্র ।
৬. বঙ্কিম পূর্ববর্তী যুগে উপন্যাসের এত বহুমাত্রিক বিকাশ খুব বেশি লক্ষ করা যায় না ।
৭. উপন্যাসের অবয়ব সমৃদ্ধ কিছু কিছু পুস্তক রচিত হয়েছে তবে উপন্যাসের সমস্ত লক্ষণ কেবল বঙ্কিম রচিত উপন্যাসগুলোতেই প্রথম পাওয়া যায় ।
.
এজন্য তাঁকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক বলা হয়ে থাকে।
. =============================================
২। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে কেন বাংলা গদ্যের জনক বলা হয় ?
কারণ
ক. গদ্য সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে শৃঙ্খলা , পরিমিতিবোধ, যতি চিহ্নের মাধ্যমে বাংলা গদ্যের অবয়ব নির্মাণে অবিচ্ছিন্নতা সঞ্চার করে বাংলা গদ্যরীতিকে উত্কষের এক উচ্চতর পরিসীমায় উন্নীত করেন {মূল কারণ }
খ. বাংলার পূর্ণ সাহিত্যিক রুপ ও স্থিরতা প্রদানসহ ব্যাপক অনুশীলনের মাধ্যমে গদ্যের সমস্ত জটিলতা দূরীভূত করেন ।
গ. পাণ্ডিত্যের গভীরতায় , মানসিকতার উদারতায় , সমাজ, সংস্কারের তত্পরতায় তাঁর যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে তা এদেশের সমাজ- সংস্কৃতির ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রাহ্য।
ঘ. সুষম বাক্য গঠনরীতির নির্দশন তিনিই প্রথম দেখিয়েছেন।
==============================
৩। জসীমউদ্দীনকে কেন পল্লী কবি বলা হয়?
উত্তরঃ
১. ভাষা গ্রামের মানুষের মত কিন্তু গ্রাম্য নয়।
২. গ্রামীণ সংস্কৃতির গভীর এবং প্রকৃত রূপ ফুটে উঠেছে।
৩. তাঁর কবিতার অলংকার বা উপমা, রূপক গ্রামের মানুষের মনস্তত্ত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
যেমন- লাল মোড়গের পাখার মত উড়ে তাহার শাড়ি।
জসীমউদ্দীন বাংলা কবিতায় একাই পল্লী নিয়ে কবিতা লিখেছেন তা নয় বরং কুমুদরঞ্জন মল্লীক, বন্দে আলী মিয়াঁ, যতীন্দ্র মোহন বাগচী পল্লী নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কিন্তু তাদের কবিতা যেন ট্রেনের জানালা দিয়ে দেখা পল্লী। একমাত্র জসীমউদ্দীনের কবিতায় পল্লীর প্রকৃত চিত্র, প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়। এ কারনে তাকে পল্লী কবি বলা হয়।
/
তাঁর রচিত অধিকাংশ সাহিত্যের পটভূমি গ্রাম ও গ্রামীন জীবন । পল্লী জীবনের নানা অস্ফুট চিত্রও তার কবিতায় অতি যত্নের সাথে চিত্রিত হয়েছে। পল্লীর মানুষের জীবনাচার তাঁর কবিতায় স্থান পেয়েছে। সহজ- সরল মানুষের সুখ-দু:খ, আনন্দ- বেদনার অনুভূতি অতি দরদ দিয়ে কবি তাঁর কবিতায় চিত্রিত করেছেন । তাই তাঁকে পল্লীকবি বলেন।
.
.
৪। বিহারীলালকে কেন ভোরের পাখি বলা হয় ?
বিহারীলাল চক্রবর্তীকে রবী ঠাকুর ভোরের পাখি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন । কেননা
,তিনিই প্রথম বাংলায় ব্যক্তির আত্মলীনতা, ব্যক্তিগত অনুভূতি ও গীতোচ্ছ্বাস সহযোগে কবিতা রচনা করে বাংলা কবিতাকে নতুন এক প্রেরণা দান করেন । এবং বাংলা কাব্যে গীতি ধারার সূচনা করেন যা রবী ঠাকুর পূর্ণতা দেয়।
=====
৫। সৈয়দ শামসুল হককে কী সব্যসাচী লেখক বলা হয় ?
.
বাংলা সাহিত্যে সব্যসাচী লেখক বলতে রবীন্দ্রনাথ কে বোঝায় । কারণ তিনি সাহিত্য ও শিল্পের সমস্ত ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন । আধুনিক যুগে বুদ্ধদেব বসুকেও সব্যসাচী লেখক বলা চলে। যদিও তিনি রবী ঠাকুরের মতো সাহিত্য- শিল্পের সবদিকে অবদান রাখতে পারেন নি। সৈয়দ শামসুল হক এঁদের বিচারে অবশ্যই সব্যসাচী লেখক নন । তাঁকে সব্যসাচী লেখক হিসেবে অভিহিত করার ক্ষেত্রে তাঁর কয়েকজন অনুরাগী এবং তিনি নিজেও চেষ্টা করেছেন । আসল কথা, তাঁর প্রথম দিককার গ্রন্থগুলো তাঁরই সহোদরের লক্ষ্মীবাজারস্থ সব্যসাচী প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পায় এবং এসময় সৈয়দ শামসুল হক গল্প, কবিতা, উপন্যাসের সঙ্গে বাংলা সিনেমার জন্য চিত্রনাট্যও লিখছিলেন।
==============================================
৬। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয় কেন ?
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয় কারণ তাঁর সময়ে বাঙালি মুসলামন সমাজে নারীরা যুগযুগ ধরে নির্যাতিত, বঞ্চিত, ও নানারকম কুসংস্কার ও সামাজিক বিধি নিষেধের বেড়াজালে বন্দি ছিল । মুসলামান সমাজ শিক্ষা- দীক্ষা , সম্মানে পিছিয়ে পড়েছিল আর নারীদের অবস্থা ছিল আরও করুন। সমাজের এই ক্রান্তিকালে বেগম রোকেয়া তাঁর সাহিত্য সাধনা, সংগ্রাম এবং বিভিন্ন সংগঠন প্রর্তিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম নারীদের জাগরণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন । তাঁর এই ভূমিকার জন্যই তিনি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসিবে পরিচিত।
======================================
৭। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে যুগসন্ধিক্ষণের কবি বলা হয় কেন ?
কারণ
বাংলা সাহিত্যের মধ্য ও আধুনিক যুগের সন্ধিস্থলে দাঁড়িয়ে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সব্যসাচীর ন্যায় দুহাতে দুদিক নির্দেশ করেছেন । ভারতচন্দ্র রায়গুনাকরের তিরোধানের পর মধ্যযুগের পরিসমাপ্তি এবং মাইকেলের মাধ্যমে আধুনিকে কাব্যধারার সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে তিনি কাব্য রচনা করেন । তার কবিতার প্রাচীন ও নবীন দুই যুগের বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটিয়েছিল। তিনি যুগের পরিবর্তনকে গ্রহণ করতে পারেননি বলে প্রাচীন পন্থীর প্রমাণ পাওয়া যায় আবার আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্যও পাওয়া যায় । সমাজ সচেতনতা তাঁর কাবে্য প্রথমবারের মতো ফুটে ওঠে। দুই যুগের বৈশিষ্ট্যই সমানভাবে তার কাব্যে পাওযা যায় বলে তাকে যুগসন্ধিক্ষণের কবি বলা হয়।
=================
৮। আলাওলকে ‘পণ্ডিত কবি’ কেন বলা হয় ?
.
তিনি কবি কিন্তু পণ্ডিত কবি কারণ
১. তাঁর কাব্যে পাণ্ডিত্য ও কবিত্বের সংমিশ্রণ ঘটেছে।
২.রত্নসেন , ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আলাওলের পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি দিয়ে উদ্ধৃতি দিয়েছেন । কাব্য প্রেম ইত্যাদি সম্পর্কে আলাওলের মন্তব্য বিবেচনা করলেই তার পাণ্ডিত্যের গভীরতা উপলব্ধি করা যায়।
======================
৯। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চৈতন্যদেবে কেন স্মরণীয় ?
.
বাংলা সাহিত্যে একটি পঙক্তি না লিখলেও যিনি একটি নতুন যুগের সৃষ্টি করেছেন তিনি হলেন শ্রী চৈতন্যদেব। তাঁর পিতৃ প্রদত্ত নাম বিশ্বম্ভর মিশ্র ডাকনাম নিমাই । নবদ্বীপে জন্মগ্রহণকারী শ্রীচৈতন্যদেব ভগবত প্রেমে উন্মত্ত হয়ে ওঠেন । মুসলমান শাসন ও ইসলাম ধর্মের সম্প্রসারণে হিন্দু সমাজের যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছিল তাকে প্রতিরোধ করার মন্ত্র প্রচার করেন চৈতন্যদেব তার বৈষ্ণব মতবাদের মাধ্যমে । তিনি প্রচার করে ’’ জীবে দয়া ইশ্বরে ভক্তি, বিশেষ করে নাম -ধর্ম , নাম - সংকীর্তন । চৈতন্যদেবেরে আবির্ভাব লক্ষ করা যায় তা হচ্ছে , েঐতিহাসিক ও সামাজিক দিক থেকে দেশ জাতীয় মুক্তির পথের সন্ধানে পায়। মানব প্রেমাদর্শে সমৃদ্ধ দর্শন ও ধর্ম সম্প্রদায় গড়ে ওঠে েএবং অধ্যাত্মভাব , চিত্র সৌন্দর্য ও মধুর প্রেমরস সমৃদ্ধ বৈষ্ণব সাহিত্য সৃষ্টি হয়। বাংলা সাহিত্যের তাঁর জীবনী দিয়ে জীবনী সাহিত্য আত্ম প্রকাশ করে । বাংলা ভাষায় চৈতন্যদেবের প্র্রথম জীবনী গ্রন্থ বৃন্দাবন দাসের চৈতন্য -ভগবত। ২য় লোচন দাসের ‘চৈতন্য-মঙ্গল’। সর্বাপেক্ষা তথ্য বহুল কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘চৈতন্য- চরিতামৃত’।
================
১০। জীবনানন্দ দাশকে ধূসরতার কবি বলা হয় কেন ?
’ধূসর পাণ্ডুলিপি’ নামে েএকটি কাব্যগ্রন্থ আছে তাঁর। কিন্তু শুধু িএ কারণেই তাঁকে ‘ধূসরতার কবি’ বলা হয় না । ঝরা পাতা , শিরশিরে হাওয়া, উর ব্যাবিলন মিশরীয় সভ্যতা- েএসবই জীবনানন্দ দাশের কাব্য বৈশিষ্ট। বন্ধ্যাযুগের যথাযথ চিত্রকল্প সৃষ্টিতে জীবনানন্দের তুলনা হয় না। মৃত্যুচেতনাও প্রায় প্রথমে থেকেই তাঁর কবিতায় দেখা যায় । শ্মশান , মরুবালু, আলেয়া, ইত্যাদি কবিতার পটভূমি মৃত্যু । এই মৃত্যুচেতনা অর্থাত্ যুগযন্ত্রণা থেকে উদ্ভুত। জীবনানন্দ একে জীবনে ধারণ করেছিলেন । যেমন, একটি কবিতায় তিনি হতাশা ভরে বলেছেন:
বিবর্ণ জ্ঞানের রাজ্য কাগজের ডাঁইয়ে পড়ে আছে
আমাদের সন্ততিও আমাদের নয়।
-
( বিভিন্ন কোরাস )
এরকমের হতশা আর বিবর্ণে র কথা আছে তার বহু কবিতায়। তাঁর কবিতার চালচিত্রে আছ ধূসর বর্ণ। তাই জীবনানন্দ দাশকে ধূসরতার কবি বলা হয়।

সংৃহীত