Get on Google Play

চাকরি প্রর্থীদের সমস্যা, প্রশ্ন, মতামত এবং বিভিন্ন পেশা সর্ম্পকে আলোচনা, অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ
#1092
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়েন তাদের অধিকাংশই বিসিএস দিতে ভয় পান বা হীনমন্যতায় ভোগেন। যেসব কারণে তাঁরা এমনটা মনে করেন সেগুলো মোটামুটি এরকম- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নামটাই একটা সমস্যা, সেশনজট বেশি, সিজিপিএ ভালো করা কঠিন, ভালো ভালো সাবজেক্ট নাই, লাইব্রেরী নাই, ভালো শিক্ষক নাই, ভালো পরিবেশ নাই ইত্যাদি। বিসিএসের ক্ষেত্রে উপরের বিষয়গুলোর প্রভাব কতটুকু সেটাই একটু জানি, কেমন?

এক) বিসিএসে অ্যাপ্লাই করতে ভার্সিটির নাম উল্লেখ করা লাগলেও ভার্সিটির নামের জন্য কোন মার্ক বরাদ্দ নাই। ঢাকা, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, শাহজালাল ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই বিসিএস হয় না, বিসিএসের জন্য সবারই পরিশ্রম করা লাগে, পড়ালেখা করা লাগে। সুতরাং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াটাকেই যে আপনি সমস্যা ভাবছেন সেটা আসলে কোন সমস্যাই না। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার আপনি কী জানেন সেটা। তাই আপনার জানার পরিধি ভালো থাকলে আজ হোক কাল হোক আপনি ক্যাডার হবেনই।

দুই) জাতীয় ভার্সিটিতে সেশনজট সমস্যা এমন না যে আপনার বিসিএস দেওয়ার বয়স পার হয়ে যায়। আপনি কমপক্ষে ২-৩ টি বিসিএস দেওয়ার সুযোগ পাবেনই। ভুল উত্তরের জন্য মার্ক কাটা হলেও সেশনজটের কারণে বিসিএসে কোন মার্ক কাটা হয় না। তাছাড়া কিছু ভার্সিটির কিছু সাবজেক্টে হয়তো সেশনজট নাই কিন্তু অধিকাংশ ভার্সিটিতেই অধিকাংশ সাবজেক্টেই মোটামুটি সেশনজট আছে। সুতরাং আমার মনে হয় না সেশনজটের দিক আপনারা খুব পিছিয়ে আছেন। তাছাড়া আমি যতটুকু জানি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জট এখন আগের চেয়ে অনেক কম। আপনি জেনে অবাক হবেন, পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ে আমার অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করতে পাক্কা সাত বছর লেগেছিল।

তিন) বিসিএসের ক্ষেত্রে সিজিপিএ কোন ফ্যাক্টরই না। কারণ সিজিপিএ বা রেজাল্টের জন্য বিসিএসে কোন মার্ক বরাদ্দ নেই। আপনি শিক্ষাজীবনে একটা থার্ড ক্লাস নিয়েও বিসিএসে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। তাই এসব বাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন।

চার) টেকনিক্যাল ক্যাডার ছাড়া জেনারেলের ১৫ টি ক্যাডারের জন্য সাবজেক্টভিত্তিক কোন চাহিদা নেই। ফলে আপনি যে সাবজেক্টেই পড়েন না কেন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য সেটা কোন প্রভাবই ফেলবে না। তাই এটা নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে।

পাঁচ) অন্যান্য পাবলিক ভার্সিটির মত জাতীয় ভার্সিটিতে ভালো লাইব্রেরী নাই একথা মেনে নিলাম। কিন্তু একবার ভাবুন তো সেই লাইব্রেরীতে কি বিসিএসের বই থাকে? না, থাকে না। সেখানে শুধু একাডেমিক বই থাকে। বিসিএসের বই অন্যান্য পাবলিক ভার্সিটির ছাত্রদেরও বাজার থেকে কিনে বাসায়ই পড়তে হয়। আপনি বাসায় লেখাপড়া করেছেন না লাইব্রেরীতে করেছেন এজন্য বিসিএসে কোন মার্ক বরাদ্দ নেই।

ছয়) জাতীয় ভার্সিটিতে ভালো শিক্ষক নাই একথা মানতে পারলাম না। আচ্ছা, পাবলিক ভার্সিটির শিক্ষকরা কি ক্লাসে বিসিএস নিয়ে ক্লাস নেয়? না, নেয় না। তাহলে ভালো শিক্ষকের দোহাই দেওয়াটা কি নিজের সাথে প্রতারণা না? আপনি কার নিকট থেকে শিখেছেন বিসিএসের ভাইভাতে এটা জিজ্ঞাসা করবে না। আপনি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেই তাঁরা খুশি।

সাত) জাতীয় ভার্সিটি ক্যাম্পাসের পারিপাশ্বিক অবস্থা বিসিএসের অনুকূলে না। এই কথাটা আমি মেনে নিলাম। পাবলিক ভার্সিটিতে যেখানে প্রায় সবাই অনেক আগে থেকেই বিসিএসের ব্যাপারে সচেতন থাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ছাত্র-ছাত্রীরাই এব্যাপারে ততটাই উদাসীন থাকে। ফলে এখানে বিসিএস নিয়ে আলোচনা করার ছেলে-মেয়ে পাওয়া যায় না। কাউকে বিসিএসের কথা বললে উৎসাহ দেওয়ার বদলে উল্টো টিপ্পনী কাটে। তবে এতে হতাশ হওয়ার কিছু নাই। যাদের খাওয়া বিসিএস, ধ্যানে জ্ঞানে বিসিএস সেইসব বিসিএস পাগলদের নিয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে। সেখানে যোগ দিন। বিসিএসের যাবতীয় বিষয় জানুন, আড্ডা দিন।

উপরের আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন আপনি যেসব বিষয়কে অজুহাত বানাচ্ছেন, বিসিএসের জন্য এগুলোর কোন দরকার নেই। আপনি হয়তো জানেন না ১০ তম বিসিএস থেকে সর্বশেষ বিসিএস পর্যন্ত প্রাপ্ত ক্যাডারদের যদি একটা তালিকা করা হয়, তাঁতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত ক্যাডার সংখ্যা বেশ ভালো একটা সংখ্যাই হবে। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিসিএসে জাতীয় মেধায় থাকার রেকর্ড তো আছেই প্রথম হওয়ার রেকর্ডও আছে। তাই আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা হেরে যাওয়ার আগেই হারার মানসিকতা বদলে ফেলে লক্ষ্য স্থির করুন। নিজের মধ্যে সাহস সঞ্চার করুন। লেখাপড়া করে আত্নবিশ্বাস অর্জন করুন।

পরিশেষে বলতে চাই, এসএসসি, এইচএসসি পর্যন্ত মানুষ জানতে চায়- তোমার রেজাল্ট কী? উত্তর দিতে সংকোচ বোধ করেছেন। এইচএসসির পর প্রশ্ন করে- কোন ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছো? সেটার উত্তরও ঠিক ঠাক দিতে পারেননি। কিছুদিন পর মানুষ প্রশ্ন করবে- কোথায় চাকুরী করো? এই প্রশ্নের উত্তর যেন বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন “আমি বিসিএস অমুক ক্যাডারে আছি” সেই চেষ্টা করুন।

Best of Luck
সৈকত তালুকদার
৩৬ তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)

সিনিয়র অফিসার, বিকেবি
    Similar Topics
    TopicsStatisticsLast post
    0 Replies 
    1435 Views
    by bdchakriDesk
    0 Replies 
    185 Views
    by tasnima
    0 Replies 
    197 Views
    by mousumi
    0 Replies 
    72 Views
    by rafique
    0 Replies 
    77 Views
    by raihan

    বিষয় : রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আপন বিভাগের “[…]

    বিষয় : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্[…]

    Amendment of Vacancy announcement for the post of […]