Page 1 of 1

৩৮ তম ভাইভা, ৪০ তম বিসিএস লিখিত, ৪১ তম প্রিলি প্রস্তুতিঃ সংবিধানের সংরক্ষিত নারী আসন রাখার যৌক্তিকতা

Posted: Thu Nov 14, 2019 11:46 pm
by sajib
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ৩০০ সদস্য বিশিষ্ট সর্বোচ্চ আইন পরিষদ। প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারের সরাসরি ভোটের ভিত্তিতে প্রতি আসন থেকে একজন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাধারণত প্রতি ৫ বছর অন্তর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সংরক্ষিত নারী আসনের প্রেক্ষাপটঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় আইন প্রণয়নে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তদানীন্তন গণপরিষদ কৃর্তক প্রণীত ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ৬৫(৩) অনুচ্ছেদ এর বিধানে জাতীয় সংসদে মহিলা সদস্যদের জন্য সংবিধান প্রবর্তনের সময় হতে পরবর্তী দশ বছরের মেয়াদে ১৫টি নারী আসন সংরক্ষিত রাখার বিধান যুক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে ১৫ বছরের জন্য সংসদে মহিলা সদস্যদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ করা হয়। ১৯৯০ সালে সংবিধানের দশম সংশোধনীর মাধ্যমে আরও দশ বছরের জন্য ৩০ জন মহিলা সদস্যদের আসন সংরক্ষণ করা হয়। ২০০৪ সালে চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে আরও দশ বছরের জন্য আইনটি অব্যাহত রাখা হয় এবং মহিলা সদস্যদের আসন বাড়িয়ে ৪৫ জন করা হয়।

২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পরবর্তী দশ বছরের জন্য আইনটি অব্যাহত রাখা হয় এবং মহিলা সদস্যদের আসন বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। সে অনুযায়ী ৩৫০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হয়।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ ২৫ বছর বাড়িয়ে ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) বিল-২০১৮’ পাস করা হয়েছে।

বর্তমানে নারী আসন সং ক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৬৫(৩)ঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের (৩) দফা নিম্নরূপঃ
‘(৩) সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধনী) আইন, ২০১৮ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যাবহতি পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে শুরু করিয়া ২৫ বৎসরকাল অতিবাহিত হইবার অব্যাবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভাঙ্গিয়া না যাওয়া পর্যন্ত পঞ্চাশটি আসন কেবল মহিলা-সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে এবং তাহারা আইনানুয়ায়ী পূর্বোক্ত সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইবেন। তবে শর্ত থাকে যে এই দফার কোন কিছুই এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন কোন আসনে কোন মহিলার নির্বাচন নিবৃত্ত করিবে না।’

কীভাবে নির্বাচিত হন সংরক্ষিত আসনের এমপিরাঃ
সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী অনুযায়ী, ২০০৪ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে নির্ধারণ করা হয় যে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে (সেসময় ৪৫টি) একটি দল থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী সাংসদকে সুযোগ দেওয়া হবে; এবং তা হবে সংসদে ঐ দলের কতজন প্রতিনিধি রয়েছে তার অনুপাতে।
নির্বাচিত সাংসদের সাথে সংরক্ষিত আসনের সাংসদের পার্থক্য কীঃ
সংরক্ষিত আসনের সাংসদদের কার্যপরিধির ব্যপ্তি বা দায়িত্বের বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানে আলাদাভাবে উল্লেখ নেই । সংবিধানে শুধু বলা আছে সংরক্ষিত আসন থাকতে হবে, সেটির সংখ্যা বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে সংরক্ষিত আসনের সাংসদদের বিষয়ে আলাদা করে কিছু বলা নেই।

নারী আসন রাখার স্বপক্ষে যুক্তিঃ
১। সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেহেতু প্রতিযোগিতায় এখনও নারীরা সক্ষমতা অর্জন করেননি, তাই সংসদে নারীদের সুযোগ করে দেয়া৷
২। নারী যেহেতু প্রায় দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক, তাই রাজনীতিতে নারীর সমঅংশীদারির বিষয়টি একই সঙ্গে ন্যায্যতা ও গণতন্ত্রের মৌল ভিত্তি হিসেবে সংযোজনের একমাত্র পন্থা হিসেবে সংসদে নারীর জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ বা রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে কোটাপদ্ধতির প্রচলন একমাত্র গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত পদ্ধতি হিসেবে গৃহীত।
৩। এর মধ্য দিয়ে নারীকে ক্ষমতা ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সম্পৃক্ত করে তাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ সংকুচিত মাত্রায় হলেও সৃষ্টি হয়েছে।

নারী আসন রাখার বিপক্ষে যুক্তিঃ
১। নারী-পুরুষ সমানাধিকার ও সমমর্যাদার প্রশ্নে কোটাপদ্ধতি অমর্যাদাকর।
২। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সাংসদ আর কোটার সাংসদকে জনগণ একই চোখে দেখে না। সরাসরি ভোটে যিনি নির্বাচিত তাঁকে মানুষ জানে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে। জনগণের কাছেও তাঁদের জবাবদিহি থাকে, তা যত অল্পই হোক কিন্ত মহিলা সদস্যদের কোন জবাবদিহিতা নেই ।
৩। এটি অনুচ্ছেদ ১০,১৯(১),২৭,২৮(১),২৮(২) এর আদর্শের পরিপন্থী।

সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের কিছু সুপারিশঃ
১। সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদের সাধারণ আসন ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের মধ্যে কোনো পার্থক্য না থাকলেও সাধারণ সদস্যদের দাপটের কারণে সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরা বৈষম্যের শিকার এবং এলাকার উন্নয়নে তাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ খুব কম। এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে এর নিরসন করতে না পারলে নারীর ক্ষমতায়নের কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় লাভ সম্ভব নয়। নারীর ক্ষমতায়নের মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সংসদে সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করা হলেও এ ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে, তা দূর করতে না পারলে রাজনীতিসহ সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানো যাবে না। এসব ত্রুটি কাটিয়ে ওঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে ।
২। সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্টকরণের পদক্ষেপ নেওয়াও জরুরি।
৩। এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ সংশোধন করে ২০০৮-এ বিধান করা হয় ২০২০-এর মধ্যে নিবন্ধিত সব দলের প্রত্যেক স্তরের কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য রাখতে হবে। তাতে আশা করা গিয়েছিল জাতীয় সংসদসহ সব নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের সময় অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারী থাকবেন। এবং তাঁরা পুরুষ প্রার্থীর মতোই সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন রাখার চেয়ে এটাই উপযুক্ত গণতান্ত্রিক উপায়। কিন্ত সেটিও আদৌ সম্ভব হয়নি।সেটি বাস্তবায়ন জরুরী ।
______________________________________________
★কোন সাজেশান থাকলে কমেন্টে জানাবেন
(সূত্রঃ বিভিন্ন গণমাধ্যম,ব্লগ,সাংবিধানিক রাজনীতির বই থেকে সংগৃহীত, সম্পাদিত ,সংক্ষেপিত একটি মৌলিক লেখা। কপি করলে কার্টেসি দিতে ভুলবেন না )
মুহাম্মদ ইরফান উদ্দীন
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা(সুপারিশপ্রাপ্ত)
৩৭ তম বিসিএস নন-ক্যাডার