Get on Google Play

চাকরি প্রর্থীদের সমস্যা, প্রশ্ন, মতামত এবং বিভিন্ন পেশা সর্ম্পকে আলোচনা, অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ
#7402
সাবিনা ইয়াসমিন সুমি
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
প্রশাসন ক্যাডার, ৩০ তম বিসিএস

খুব পরিপাটি হয়ে আমাদের স্কুল পরিদর্শনে আসতেন কিছু মানুষ। আমাদের সঙ্গে হেসে কথা বলতেন, সহজ সহজ যোগ-বিয়োগ জিজ্ঞেস করতেন। তখন জানতাম না তাঁরা কে; কিন্তু তখনই ঠিক করেছিলাম আমিও তাঁদের মতো হব। জানতাম না, ম্যাজিস্ট্রেট হতে হলে আমাকে কি কি করতে হবে। তবুও স্বপ্নটা আঁকড়ে ধরেই পড়াশোনা করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির পর বুঝলাম, আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য অসাধারণ একটা প্ল্যাটফর্ম পেয়েছি। পড়াশোনায় বরাবরই বেশ মনোযোগী ছিলাম। তাই সব পরীক্ষার রেজাল্ট বেশ ভালোই হতো।

এবার আসি আমার বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়ে। ক্যাম্পাসের বড় ভাইয়া-আপু, যারা বিসিএসএ টিকেছেন, তাদের ফলো করেছি। এরপর নিজের মতো করে একটি রুটিন তৈরি করে ফেলি। রোজ তিনটি দৈনিক সংবাদপত্র পড়তাম, দুটি বাংলা ও একটি ইংরেজী। লাইব্রেরিতে তিন বান্ধবী মিলে গ্রুপ স্ট্যাডি করতাম। তার পরও নিয়মিত রাত জেগে পড়েছি। আমি ছাড়া আমার দুর্বল জায়গাগুলো আর কে জানে? দুর্বলতাগুলো কাটানোর চেষ্টা করেছি। বিসিএস কোচিংয়ে ভর্তি হলেও বেশিদিন ক্লাস করিনি। আমার মনে হয়েছে, বিসিএস অনুশীলনের ব্যাপার। কোচিংয়ে নতুন করে কিছু শেখার নেই। যে যত বেশি চর্চা করবে, সেই ভাল করবে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই অল্পবিস্তর সাধারণ জ্ঞান, ইংরেজী আর গণিতের চর্চা করেছি। ক্লাস সিক্স থেকে টেনের ইংরেজী গ্রামার আর ম্যাথসের ওপর পরিস্কার ধারণ নিয়েছিলাম। এটি বিসিএস প্রস্তুতিতে অনেক সাহায্য করেছে। সবাই বিসিএস এর জন্য যেসব বইপত্র পড়েন, আমিও সেসব বই-ই পড়েছি।

বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রীই বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে গেলে প্রথমে সাধারণত প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি নেন। আমি বলব শুরু থেকেই রিটেন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। লিখিত পরীক্ষার জন্য অনুশীলন করলে প্রিলিমিনারির প্রস্তুতিও এমনিতেই হয়ে যাবে। আমিও এমনটি করেছিলাম।

বিসিএস এর প্রস্তুতি দিয়েই আমি চারটি চাকরি পেয়েছি। ২৯ তম বিসিএস এ প্রথম অংশ নিই। প্রিলিমিনারিতে বাদ পড়ার পর বাংলাদেশ জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরি পাই। এ চাকরিতে ছিলাম তিন বছর। এই প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষা অনেকটা বিসিএস এর মতই। তফাতটা এই যে প্রথমেই আমাকে শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। এরপর যে কয়েকটি ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হয়েছি, তার প্রতিটিতেই আমার চাকরি হয়েছে। তারপরও বিসিএস প্রিলিমিনারিতে বাদ পড়া নিয়ে হতাশ ছিলাম। প্রচন্ড মন খারাপ হয়েছিল। পরে দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয় এবং হলের যাঁরা বিসিএস এ চান্স পেয়েছে, তারা আমার চেয়ে বেশি সময় পড়েছেন। আবার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম, এবার আরও বেশি সময় নিয়ে।

অফিস, বিসিএস এর পড়া-সব মিলিয়ে ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে কাটত দিনগুলো। ৩০ তম বিসিএস এ যথারীতি প্রিলিমিনারি ও রিটেন হলো। টিকে গেলাম। মুখোমুখি হলাম ভাইভা বোর্ডের। দীর্ঘ ৪০ মিনিটের ভাইভাটা ছিল আমার জীবনের সেরা পারফরম্যান্স। সব প্রশ্ন করা হয়েছিল ইংরেজীতে। ভাইভা বোর্ডের প্রত্যেক সদস্যের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর পেরেছিলাম। একটা সময় নিজের কাছেই মনে হচ্ছিল, বের হব কখন! বুঝলাম, আমাকে না আটকানো পর্যন্ত প্রশ্ন করতেই থাকবেন তারা। একজন সম্মানিত সদস্য জানতে চাইলেন, হিলফুল ফুজুল কী? উত্তর জানা থাকা সত্ত্বেও বলেছিলাম – স্যার, জানি না। সত্যি বলতে কী, ভাইভা বোর্ড থেকে বের হয়েই বলেছিলাম – এইবার না হল আর কখনোই হবে না। শেষ পর্যন্ত আমার বিসিএস এর স্বপ্ন পূরণ হযেছিল বলেই আজ আমি এ জায়গায়। হ্যা, কাজটা চ্যালেঞ্জিং। লিডারশিপ কোয়ালিটি আর ম্যানেজমেন্ট পাওয়ার ভালো থাকা বাধ্যতামূলক। আমার কাজের পরিবেশ বেশির ভাগ সময়ই আমার অনকূলে থাকে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমি কতটা খুশি আমার কাজ নিয়ে। কাজ করতে গিয়ে নানা রকম অভিজ্ঞতা হয়। একবার একটি গ্রামে স্কুল ভিজিটে গিয়েছিলাম। স্কুলের পাশে অনেক মানুষের মধ্যে আমিও দাড়িয়ে। হঠাৎ একজন বয়স্ক মানুষ এসে বললেন, ‘তোমার বাড়ি কই? কোন ক্লাসে পড়ো? আগে স্কুলে দেখিনি তো!’ অনেক কষ্টে সেদিন হাসি চেপে রেখেছিলাম।

সংগৃহিতঃ-
    Similar Topics
    TopicsStatisticsLast post
    0 Replies 
    215 Views
    by mousumi
    0 Replies 
    96 Views
    by raihan
    0 Replies 
    956 Views
    by mousumi
    0 Replies 
    16141 Views
    by tasnima
    0 Replies 
    446 Views
    by sajib

    Thanks for the information.

    Achieving the best SEO (Search Engine Optimization[…]

    Creating a website easily on WordPress is a popula[…]

    Creating a website on BigCommerce offers a seamles[…]