Get on Google Play

বাংলা ব্যাকরণ বিষয়ক আলোচনা
#1029
শব্দ হলো বাক্য গঠনের মূল উপাদান যা এক বা একাধিক বর্ণ ও অক্ষর সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে ।

শব্দের শ্রেণীবিন্যাস

শব্দকে উৎস ,গঠন ও অর্থ অনুসারে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে ।

উৎপত্তিগত শ্রেণিবিভাগ
বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ ভাগগুলো হলো : তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দ।

১. তৎসম শব্দ
সংস্কৃত ভাষার যে-সব শব্দ পরিবর্তিত না হয়ে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকেই বলা হয় তৎসমতৎসম শব্দ। উদাহরণ- চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য

২. অর্ধ-তৎসম শব্দ:
যে -সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম। যেমন, জ্যোৎস্না˂ জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ˂ ছেরাদ্দ, গৃহিণী˂ গিন্নী, বৈষ্ণব˂ বোষ্টম, কুৎসিত˂ কুচ্ছিত।

৩. তদ্ভব শব্দ
বাংলা ভাষা গঠনের সময় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে যে সব শব্দ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছিলো, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। অবশ্য, তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত ভাষায় থাকতে হবে। যেমন- সংস্কৃত ‘হস্ত’ শব্দটি প্রাকৃততে ‘হত্থ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর বাংলায় এসে সেটা আরো সহজ হতে গিয়ে হয়ে গেছে ‘হাত’। তেমনি, চর্মকার˂ চম্মআর˂ চামার,

৪.দেশি শব্দ
বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতো, সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ। এই আদিবাসীদের মধ্যে আছে- কোল, মুণ্ডা, ভীম, ইত্যাদি। মেমন, কুড়ি (বিশ)- কোলভাষা, পেট (উদর)- তামিল ভাষা, চুলা (উনুন)- মুণ্ডারী ভাষা।

৫. বিদেশি শব্দ
বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছে, বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অন্য ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যে কোনো ভাষার সমৃদ্ধির জন্য বিদেশি শব্দের আত্মীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এদিক দিয়ে বাংলা ভাষা বেশ উদারও বটে।

আরবি শব্দ : আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওযু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গোসল,
জান্নাত, জাহান্নাম, হওবা, হসবি, যাকাত, হজ, হাদিস, হারাম, হালাল আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায ৷

ফারসি শব্দ: খোদা, গুনাহ, দোযখ, নামায, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোযা
কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার, দোকান,দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, রসদ আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাস, রফতানি, হাঙ্গামা ৷

ইংরেজি শব্দ: প্রায় অপরিবর্তিত উচ্চারণে- চেয়ার, টেবিল, পেন, পেন্সিল, ইন্টারনেট, ইনপুট, আউটপুট, আপলোড, ডাউনলোড।
পরিবর্তিত উচ্চারণে- আফিম (opium), ইস্কুল (school), বাক্স (box), হাসপাতাল (hospitai), বোতল (bottle), ডাক্তার (doctor), ইংরেজি (English) ইত্যাদি ।

পর্তুগিজ শব্দ : আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি ৷
ফরাসি শব্দ : কার্তুজ, কুপন , ডিপো, রেস্তোরাঁ।
ওলন্দাজ শব্দ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন (তাসের নাম) ৷

গুজরাটি শব্দ : খদ্দর, হরতাল ৷
পাঞ্জাবি শব্দ : চাহিদা, শিখ
তুর্কি শব্দ : চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা ৷
চিনা শব্দ : চা, চিনি, লুচি
মায়ানমার/ বর্মি শব্দ : ফুঙ্গি, লুঙ্গি জাপানি শব্দ : রিক্সা, হারিকিরি ৷

মিশ্র শব্দ:
এছাড়াও আরেকটি বিশেষ ধরনের শব্দ আছে। দুইটি ভিন্ন ধরনের শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে একত্রিত হলে ঐ নতুন শব্দটিকে বলা হয় মিশ্র শব্দ। এক্ষেত্রে যে দুইটি শব্দ মিলিত হলো, তাদের শ্রেণীবিভাগ চিনতে পারাটা খুব জরুরি। যেমন- রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি) হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি) হেড-মৌলভী (ইংরেজি+ফারসি) হেড-পন্ডিত (ইংরেজি+তৎসম) খ্রিস্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম) ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি) পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা)

গঠন অনুসারে শ্রেণিবিভাগ
গঠন অনুসারে শব্দকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়: ১. মৌলিক শব্দ ২. সাধিত শব্দ

১. মৌলিক শব্দ
যে -সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে আর কোন শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। অর্থাৎ, যে সব শব্দকে ভাঙলে আর কোন অর্থসঙ্গতিপূর্ণ শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন- গোলাপ, নাক, লাল, তিন, ইত্যাদি। এই শব্দগুলোকে আর ভাঙা যায় না, বা বিশ্লেষণ করা যায় না। আর যদি ভেঙে নতুন শব্দ পাওয়াও যায়, তার সঙ্গে শব্দটির কোন অর্থসঙ্গতি থাকে না। যেমন, উদাহরণের গোলাপ শব্দটি ভাঙলে গোল শব্দটি পাওয়া যায়। কিন্তু গোলাপ শব্দটি গোল শব্দ থেকে গঠিত হয়নি। এই দুটি শব্দের মাঝে কোন অর্থসঙ্গতিও নেই। তেমনি নাক ভেঙে না বানানো গেলেও নাক না থেকে আসেনি। অর্থাৎ, এই শব্দগুলোই মৌলিক শব্দ। ‘গোলাপ’ শব্দটির সঙ্গে ‘ই’ প্রত্যয় যোগ করে আমরা ‘গোলাপী’ শব্দটি বানাতে পারি। তেমনি ‘নাক’-র সঙ্গে ‘ফুল’ শব্দটি যোগ করে আমরা ‘নাকফুল’ শব্দটি গঠন করতে পারি।

২. সাধিত শব্দ
যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে অর্থসঙ্গতিপূর্ণ ভিন্ন একটি শব্দ পাওয়া যায়, তাদেরকে সাধিত শব্দ বলে। মূলত, মৌলিক শব্দ থেকেই বিভিন্ন ব্যাকরণসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় সাধিত শব্দ গঠিত হয়। মৌলিক শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যুক্ত হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। যেমন- • সমাসবদ্ধ হয়ে- চাঁদের মত মুখ = চাঁদমুখ • প্রত্যয় সাধিত- ডুব+উরি = ডুবুরি • উপসর্গযোগে- প্র+শাসন = প্রশাসন

অর্থমূলক শ্রেণিবিভাগ
অর্থগত ভাবে শব্দসমূহকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়:

১. যৌগিক শব্দ
যে-সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই, তাদের যৌগিক শব্দ বলে। অর্থাৎ, শব্দগঠনের প্রক্রিয়ায় যাদের অর্থ পরিবর্তিত হয় না, তাদেরকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন- মূল শব্দ শব্দ গঠন (অর্থ) অর্থ গায়ক গৈ+অক যে গান করে কর্তব্য কৃ+তব্য যা করা উচিত বাবুয়ানা বাবু+আনা বাবুর ভাব মধুর মধু+র মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত দৌহিত্র দুহিতা+ষ্ণ্য (দুহিতা= মেয়ে, ষ্ণ্য= পুত্র) কন্যার মত, নাতি চিকামারা চিকা+মারা দেওয়ালের লিখন

২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ
প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগে গঠিত যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন- মূল শব্দ শব্দ গঠন ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ব্যবহারিক/ মূল অর্থ হস্তী হস্ত+ইন হাত আছে যার একটি বিশেষ প্রাণী, হাতি গবেষণা গো+এষণা গরম্ন খোঁজা ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা বাঁশি বাঁশ+ইন বাঁশ দিয়ে তৈরি বাঁশের তৈরি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র তৈল তিল+ষ্ণ্য তিল থেকে তৈরি সেণহ পদার্থ উদ্ভিদ থেকে তৈরি যে কোন সেণহ পদার্থ প্রবীণ প্র+বীণা প্রকৃষ্টরূপে বীণা বাজায় যিনি অভিজ্ঞ বয়স্ক ব্যক্তি সন্দেশ সম+দেশ সংবাদ মিষ্টান্ন বিশেষ

৩. যোগরূঢ় শব্দ
সমাস নিষ্পন্ন যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আর ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন- মূল শব্দ শব্দ গঠন ব্যবহারিক অর্থ পঙ্কজ পঙ্কে জন্মে যা পদ্মফুল রাজপুত রাজার পুত্র একটি জাতি বিশেষ, ভারতের একটি জাতি মহাযাত্রা মহাসমারোহে যাত্রা মৃত্যু জলধি জল ধারণ করে যা/ এমন সাগর

৪. নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ
বিভিন্ন বিদেশি শব্দের অনুকরণে ভাবানুবাদমূলক যেসব প্রতিশব্দ সৃষ্টি করা হয়েছে, সেগুলোকে নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ বলে। মূলত প্রচলিত বিদেশি শব্দেরই এরকম পারিভাষিক শব্দ তৈরি করা হয়েছে। যেমন- পারিভাষিক শব্দ মূল বিদেশি শব্দ পারিভাষিক শব্দ মূল বিদেশি শব্দ অম্লজান -Oxygen সচিব Secretary উদযান -Hudrogen স্নাতক -Graduate নথি -File স্নাতকোত্তর -Post Graduate প্রশিক্ষণ -Training সমাপ্তি -Final ব্যবস্থাপক -Manager সাময়িকী -Periodical বেতার -Radio সমীকরণ - Equation

Mohammad Ashraful Islam
    Similar Topics
    TopicsStatisticsLast post
    0 Replies 
    251 Views
    by raihan
    0 Replies 
    540 Views
    by sajib
    0 Replies 
    352 Views
    by kajol
    0 Replies 
    233 Views
    by tasnima
    0 Replies 
    259 Views
    by mousumi

    ] Global China Hardware & Trading Ltd. is[…]

    Thanks for the information.

    ইবনে সিনা ট্রাস্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৪ নিয়োগ বিজ[…]

    Achieving the best SEO (Search Engine Optimization[…]