Get on Google Play

সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য
#8953
বিক্ষোভের কারন
২০২৪-২৫ সালে নেপালের অর্থনৈতিক সংকট ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ধীরগতি, মূল্যস্ফীতি এবং জলবিদ্যুতের জন্য ভারতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য করাণসমূহ –
দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ: নেপালের এই বিক্ষোভ এক রাতের ঘটনা নয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ক্ষমতার অপব্যহার আর দুর্নীতির কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি।

বেকারত্ব: ২০২৪ সালে নেপালে ১৫-২৪ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যে বেকারেত্বের হার ছিল ২০.৮%। চাকরির খোঁজে বহু তরুণ বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হচ্ছেন। নেপালের অর্থনীতি মূলত কৃষি ও রেমিট্যান্সের উপরে নির্ভরশীল। দেশটির মোট জিডিপির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে।

সোসাল মিডিয়া বন্ধ: ১৭ আগস্ট ২০২৫ নেপালের শীর্ষ আদালত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দেশের আইন মেনে নিবন্ধন করার নির্দেশনা প্রদান করে। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন নেপাল সরকার নতুন নিয়মনীতি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ও মেসেজিং অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিয়ম মানায় টিকটকসহ শুধু পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রাখা হয়। এর প্রতিবাদে ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে করেন তরুণেরা। এ বিক্ষোভে ৭০ জনের অধিক নিহত হয়।

নেপো কিডস বা নেপো বেবি: নেপো কিডস শব্দটি হলিউডে জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘নেপো বেবি’ থেকে নেওয়া হয় বলে মনে করা হয়। নেপালের জেন-জি বিক্ষোভের মূলে ছিল ‘নেপো কিডস’ এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ। ধনী রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সন্তানেরা, যারা স্বজনপ্রীতির স্পষ্ট সুবিধাভোগী, তারা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। বিক্ষোভকারীরা তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘নেপো কিডস’, ‘নেপো বেবিজ’ ‘পলিটিশিয়ানস নেপো বেবি নেপাল’-এর মতো হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে । এসব ভিডিওতে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের সাফল্য ব্যক্তিগত পরিশ্রমের ফল নাকি বিশেষ সুবিধার কারণ।

১৭ বছরে ১৪তম সরকারের পতন
১৯৫১ সালে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনে রাণা রাজাদের পতনের পর দেশটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রেরে পথে হাঁটে। নেপালে তৎকালীন রাজাদের রাণা বলা হতো। ১৯৬১ সালে রাজা মহেন্দ্র রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে রাজতন্ত্রকেই শক্তিশালী করেন। প্রায় তিন দশক পর ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনের মাধ্যমে নেপাল বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রবেশ করে। ১৯৯৬ সালে মাওবাদীদের দশকব্যাপী রক্তক্ষয়ী আন্দোলন দেশকে নতুন মোড়ে দাঁড় করায়। প্রায় ১৭ হাজার প্রাণহানির পর ২০০৬ সালে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। ২০০৮ সালে নেপালকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয় এবং ২০১৫ সালে গৃহীত হয় নতুন সংবিধান। ২০০৮ সালে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে নেপাল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত হওয়ার পর থেকে এখনো স্থিতিশীল সরকার দেখা যায়নি। একে একে ক্ষমতায় আসা ১৪টি সরকারের কোনোটিই পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারেনি।

আন্দোলনের নেতা
সুদান গুরুং
নেপালে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সুদান গুরুং। বয়স ৩৬ বছর। যার এক ডাকেই লাখ লাখ মানুষ নেপালের রাস্তায় নেমেছে। তিনি শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম পরে হাতে বই নিয়ে আন্দোলনে নামার পরামর্শ দেন এবং মেসেজ আদান-প্রদানের এ্যাপ ডিসকর্ড ও ইনস্ট্রাগ্রাম ব্যবহার করে সরকার বিরোধী বিক্ষোভকে সংঘটিত করেন।

বালেন্দ্র শাহ
নেপালে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহ, যিনি ’বালেন শাহ’ নামেই পরিচিত। ২৭ এপ্রিল ১৯৯০ কাঠমান্ডুতে জন্মগ্রহন করেন বালেন্দ্র শাহ। ২০২২ সালে স্থানীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাঠমান্ডুর মেয়র নির্বাচিত হন। এই আন্দোলনে তার সক্রিয় সমর্থন তরুণদের উজ্জীবিত করে।

কেপি শর্মা ওলি
কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল বা সিপিএন-ইউএমএল-এর অভিজ্ঞ নেতা কেপি শর্মা ওলি। ১২ অক্টোবর ২০১৫ দীর্ঘ সংগ্রামের পর অর্জিত গণতান্ত্রিক সংবিধানের অধীনে নেপালের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হন কেপি শর্মা ওলি। সে সময় দেশটি ভারতের সীমান্ত অবরোধের মুখে পড়ে। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি ২০১৮-২০২১ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। পরে ২০২১ সালে আরও একবার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। সর্বশেষ ১৫ জুলাই ২০২৪ চতুর্থবারের মতো নেপালের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণে তাকে ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে কারাভোগ করতে হয়।

প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিচারপতি সুশিলা কার্কি দেশটির প্রথম নারী অন্তবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহন করেন। তিনি নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রথম এবং একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ১১ জুলাই ২০১৬ – ৬ জুন ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপালকালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেন। ৭ জুন ১৯৫২ সুশিলা কার্কি মোরাং নেপালের পূর্বাঞ্চল জেলায় জন্মগ্রহন করেন। তার স্বামী দুর্গা প্রসাদ সুবেদী ছিলেন নেপালি কংগ্রেসের নেতা। উল্লেখ্য, ৫ মার্চ ২০২৬ নেপালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দক্ষিণ এশিয়া: জেন জি বিপ্লবের সূতিকাগার
নেপালে হাজারো তুরুণ-তরুণী রাজধানী কাঠমান্ডুতে রাস্তায় নামে। সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধে আন্দোলনের সূচনা ঘটালেও প্রকৃত ক্ষোভ জমে ছিল বৈষম্য, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে ঘিরে। এদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় আন্দোলনের ঢেউ একের পর এক দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে দিচ্ছে, যা প্রায়শই শেষ হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের অপ্রত্যাশিত পদত্যাগের মাধ্যমে। এর আগে ২০২২ সালে শ্রীলংকাতেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়, আর ২০২৪ সালে বাংলাদেশও দেখেছে একই পরিস্থিতি । দক্ষিণ এশিয়ায় তরুণদের নেতৃত্বে একের পর এক সরকারের পতনের মাধ্যমে ঘনবসতিপূর্ণ এ অঞ্চল জেন জি বিপ্লবের সূতিকাগার হয়ে উঠছে। উল্লেখ্য, মঙ্গা জলদস্যুর পতাকা এখন বিশ্বব্যাপী জেন জি ঐক্যের প্রতীক।
Gen Z একটি শব্দবন্ধ, যা Generation Z-এর সংক্ষিপ্ত রূপ , যাকে জেন জি নামে ডাকা হয়। ১৯৯৭-২০১২ সালের মধ্যে যারা জন্মগ্রহণ করেন তারা এ প্রজন্মের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রজন্মের বর্তমান বয়স ১২-২৭ বছর। জেনারেশন জেডের আরও একটি নাম হলো ‘জুমার্স’। যার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে জেডের পূর্বসূরিদের নাম।

সংগৃহীত
    Similar Topics
    TopicsStatisticsLast post
    0 Replies 
    9702 Views
    by raja
    0 Replies 
    11568 Views
    by romen
    0 Replies 
    10446 Views
    by rafique
    0 Replies 
    10890 Views
    by masum
    0 Replies 
    12261 Views
    by shahan

    ১. সমাস শব্দের অর্থ হলো – - সংক্ষেপণ ২. কোনট[…]

    ১. মানুষের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত? - ২৩ জোড়া ২. দূষি[…]

    ১. সমুদ্রে দ্রাঘিমাংশ নির্ণয়ের যন্ত্রের নাম &ndas[…]