Get on Google Play

সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য
#4152
ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী
০৬ নভেম্বর, ২০২০
জনকণ্ঠ
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সরকার যে বহুমাত্রিকতা গ্রহণ করেছে তার অন্যতম পদক্ষেপ হচ্ছে ডিজিটাইজেশন। অর্থাৎ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশে একটি চতুর্থ শিল্প বিল্পব উপযোগী অথচ কর্মসংস্থান বহুল অর্থনৈতিক পদক্ষেসমূহ সরকারপ্রধানের প্রয়াসে ২০০৯ থেকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিভিন্ন খাতে যে প্রায়োগিক কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল, তা এখন মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সমন্বয় সাধন করে কাজ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের এই সাধু উদ্যোগের মূল্যায়নার্থে আমি একটি গবেষণাকর্মে গত বছর হাত দেই। সম্প্রতি এর ফলাফল জার্নাল অব গভার্নেন্স এ্যান্ড রেগুলেশনের ভলিউম ৯, সংখ্যা : ৪-এ প্রকাশিত হয়েছে। আসলে জনবহুল দেশে কর্মসংস্থান প্রার্থীর যেখানে আধিক্য আছে, যেখানে বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে আমাদের অবশ্যই ডিজিটাইজেশন পদ্ধতিকে গ্রহণ করার কোন বিকল্প নেই। একটি দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা অত্যন্ত গতিময়তায় যখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সমগ্র বিশ্বে করোনার প্রকোপে নানামুখী সমস্যায় ভারাক্রান্ত। আলোচ্য গবেষণায় যে প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল তা হচ্ছে, ডিজিটাল অর্থনীতির কারণে বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতির জন্য সুবিধাজনক পন্থায় কার্যকর ও দক্ষতার সঙ্গে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে রূপান্তর করা সম্ভব হচ্ছে কিনা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে গবেষণা কর্মকাণ্ডে পরিমাণগত এবং গুণগত মানসম্পন্ন বিশ্লেষণধর্মী কর্মকা-ের ওপর কাজ করেছি। গবেষণায় হাত দেয়ার পর অর্থ সঙ্কট হতে পারে বলে ভয় থাকলেও কৃচ্ছ্রতা সাধন করে বেতন থেকে অর্থ বাঁচিয়ে গবেষণাটি করেছি। গবেষণাকর্মে মোট ষোলোটি অনুমাননির্ভর করা হয়েছিল, এ কারণে ষোলোটি অনুমানকে ভিত্তি করা হয়েছিল। অনুমানগুলোকে পরবর্তী কাই-স্কয়ার (Chi-Square test) পরীক্ষা করা হয়। একই সঙ্গে গুণগত অবস্থার সঙ্গে তুলনা করা হয়। ২০২১ সালকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে বাংলাদেশের ভিশন-২০২১ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দেশে সরকার অভিমত ব্যক্ত করেছে যে, ডিজিটাল চাকরিসমূহে কর্মসংস্থানের সুযোগগুলো তরুণদের সৃজনশীল, উদ্ভাবনশীল কর্মকা-ের অনুশীলনে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগের দক্ষতাকে বৃদ্ধি করবে। এক্ষেত্রে এসডিজি-৪ এবং ৮ পূরণে সহায়ক হবে বলে প্রতিভাত হয়। এসডিজি-৪ এ বলা হয়েছে, শিক্ষার মৌল ধারণায় অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, ন্যায়সঙ্গত উৎকর্ষ সাধন এবং সকলের জন্য আজীবন শিক্ষার সম্ভাবনাকে কার্যকর করা। এদিকে এসডিজি-৮ এর মৌল উদ্দেশ্য হচ্ছে- অব্যাহতপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই অর্থনৈতিক কর্মকা-ে প্রসার ও নিযুক্ত হওয়া এবং শালীনতাপূর্ণ কাজে নিযুক্ত হওয়ার বন্দোবস্ত করা। প্রত্যেকের অভীষ্ট সিদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশে ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং চালু এবং ধীরে ধীরে ক্রমবিকাশমান গতি প্রবাহ দেশের অর্থনীতিতে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে সুসংহত করতে সহায়তা করেছে। চতুর্থ জেনারেশনের মোবাইল ইন্টারনেট ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সালে শুরু হয়। গবেষণার সময়ে যদিও দেখা যায় যে, দেশের ৫.২৭৫টি ইউনিয়নে ডিজিটাল কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে এবং এতে দশ হাজারের অধিক উদ্যোক্তা জড়িত, যার পরিমাণে বর্তমানে আরও অধিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ১২ মে, ২০১৮ তারিখে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। এটি দেশের জন্য অত্যন্ত যুগান্তরী ঘটনা। বাংলাদেশ একটি শ্রম উদ্বৃত্ত দেশ হওয়ায় বিদেশে পাঠানোর পূর্বে যাতে চতুর্থ শিল্প বিল্পব সম্পর্কে মোটামুটিভাবে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে, সে জন্য ব্যবস্থা থাকা দরকার। গবেষণায় দেখা যায় যে, কর্মসংস্থান হ্রাসের আশঙ্কা থেকে কর্মপ্রত্যাশী পক্ষ এবং যারা সামাজিক ন্যায়বিচার ও জনকল্যাণের বিষয়টি নিয়ে ভাবেন, তাদের কাছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়ন করা এক ধরনের অন্তরায়। তবে এক শ্রেণীর উদ্যোক্তা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে বরণ করে নিতে বেশ আটঘাট বেধে কাজ করে চলেছেন। এক্ষেত্রে অবশ্য করোনাভাইরাসের কারণে আরও বেশী দ্রুততা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুুক্তির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে এবং দেশে একটি বৈপ্লবিক ডিজিটাল অর্থনীতির প্রক্রিয়া চালু করেছে। তার পরও দেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে যথাযথ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুুক্তিভিত্তিক শিক্ষা, শিক্ষক, প্রস্তুতি এবং সার্বিকভাবে জ্ঞানের বিকাশ সাধন প্রয়োজন। এ দেশে ডিজিটাইজেশনের সহায়তায় সুশাসন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কর্মকা- পরিচালনা করা যেতে পারে। ইউএনএফপিএ বাংলাদেশ (২০২০) বর্ণনা করেছে যে, বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়স্করা মোট জনসংখ্যার বিবেচনায় তরুণদের হার হচ্ছে ২০%। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ২২ কোটিতে উন্নীত হতে পারে। বাংলাদেশের মতো একটি শ্রমঘন রাষ্ট্রে শ্রম-দক্ষতার ক্ষেত্রে তা মূলধনের বিকল্প হওয়া উচিত- এক্ষেত্রে শ্রম এবং মূলধন একে অন্যের বিকল্পায়ন হলে কর্মপ্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন সংযুক্তিকৃত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিভিন্ন ধাপ দেশে সিনক্রোনাইজ করা দরকার। দেশে ধীরে ধীরে ডিজিটাল প্রক্রিয়া চালুর কারণে নানাবিধ কর্মসূচী চালু করা হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক মনোবিশ্লেষণ গুরুত্ববহন করছে। দেশে এক শ’টিরও অধিক সরলীকৃত জনকল্যাণমূলক পরিষেবা, ই-প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ই-স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার কথা প্রচারিত হচ্ছে। দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে আট হাজারের মতো গ্রামীণ অঞ্চলের পোস্ট অফিসের বাধ্যমে আইটি পরিষেবা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ই-সেন্টার রয়েছে। ২০১৮ সালে রিনি এবং রকিবের ঘটনা দেশে বেশ জনপ্রিয় হয় যারা থ্রিডি কনক্রিট প্রিন্টিং রোবট তৈরি করেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ১১টি রোবট রফতানি করেছিলেন। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এমনভাবে যুগোপযোগী করতে হবে যাতে করে বিশাল তরুণগোষ্ঠী উৎপাদশীল মানব হিসেবে গণ্য হয় এবং এ কারণে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যক্ষম করে বাংলাদেশে প্রযুক্তি চালিত পেশার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব তরুণদের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় কেবল আশা পোষণ করেননি, বরং বাস্তবায়নে একনিষ্ঠ চিত্রে কাজ করে চলেছেন। দেশের ব্যাংকিং, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিসহ নানা খাতে ক্রমবিবর্তনের মধ্যে দিয়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে তথ্য ও প্রযুক্তির বিকাশ ও প্রয়োগে নিরলস প্রয়াস গত সাড়ে এগারো বছরের অধিককাল ধরে কাজ করে চলেছেন। এদেশে ছাত্র সমাজের মাত্র ১৬% কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তবে কোভিড-১৯ এর সময়ে প্রকৃত পক্ষে মহামারীর সময়ে ই- স্বাস্থ্যসেবা তেমন আশানুরূপ হয়নি। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ই-স্বাস্থ্য সেবা দিতে তেমন দক্ষতার পরিচয় দেননি। তুলনামূলকভাবে ব্যাংকিং খাতে ডিজিটাল কর্মসূচী ও পরিষেবা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এদেশে বেশিরভাগ ব্যাংকিং ব্যবস্থা রিয়েল টাইম গ্রস পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি হচ্ছে। তবে সমাজে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ব্যক্তিবর্গের জন্য ই-ব্যাংকিংয়ের খরচ বেশি। তবে দেশের ব্যাংকিং খাতের তহবিল পরিচালনাকে এমনভাবে ডিজিটালাইজেশন করা উচিত যাতে করে ঋণ খেলাপী সংস্কৃতি এবং দেশ থেকে অর্থ পাচার প্রক্রিয়াটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা দ্বারা কোনভাবেই পৃষ্ঠপোষকতা না পায়। এদেশে চলতি বছর থেকে ২০২৫ এর মধ্যবর্তী সময়ে তিনটি ধাপে পঞ্চম জি চালু করার কথা রয়েছে। এদিকে ইউজিসির সহায়তায় এডিবির অর্থায়নে দেশে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নত আইসিটি শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে চলেছে। অর্থনৈতিক উদ্যোক্তা তৈরির ক্ষেত্রে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স যুগোপযোগী ভূমিকা পালন করছে। বিধায় ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সকেও আইসিটি শিক্ষা বিস্তারে অর্থায়নের বিষয়টি সরকার ভাবতে পারে। এসিআইএর দুটো এ্যাপ কৃষকদের জন্য রয়েছে- খামারি এবং ফসলি-এ গুলোকে অবশ্যই কৃষকদের ব্যবহার উপযোগী করতে সহজ ও কৃষকবান্ধব হওয়া দরকার এবং কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিপণনের ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন করা উচিত। কৃষিক্ষেত্রে সরকারী এ্যাপস তৈরি করলে তা সরকারীভাবে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে স্বচ্ছতা বাড়াতে পারে। এদিকে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে বিশেষত ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনাতেও ডিজিটাল লেনদেন অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
দেশে বিদ্যমান অবিচ্ছিন্ন উন্নতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশকে তার উদ্ভাবনী ও ধীশক্তির দৃশ্যমান উন্নতি সাধন করতে পারে। এ দেশে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষত কর্পোরেট ভ্যালুয়েশনে সজাগ থাকা দরকার এবং আইপিওএর ক্ষেত্রে সুষ্ঠু দাম নির্ধারণ করা গেলে বিদেশীরা বিনিয়োগে উৎসাহী হবে। আচরণগত অর্থনীতির বহুল চর্চা, আর্থিক তত্ত্বাবধানের বিষয়টি স্পষ্ট করত ব্যক্তির সঙ্গে আচরণের সংবেদনশীল যোগাযোগের মাধ্যমের একটি বহুমাত্রিক কলাকৌশল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। শিল্প ও শিক্ষা জোটের মধ্যকার সম্পর্কিত ব্যবসা ও অর্থনীতির সংযোগ ঘটানোর ক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষত উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে ইনকিউবেটার স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবহারিক জ্ঞানের ধারণা দেয়া উচিত। যদি দেশে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার মধ্যে সংযোগ ঘটানো না যায়, তবে সার্বিক জনকল্যাণের বিবেচনায় অর্থনৈতিক লেনদেন অর্থহীন হয়ে পড়তে পারে। দেশে সামগ্রিক অর্থে উচ্চতর নৈতিক মূল্যবোধ প্রয়োজন, যাতে লিঙ্গ বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থায় মানব সম্প্রদায়ের অগ্রগতির বিকাশ সাধন হয়। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে দীর্ঘ মেয়াদী টৈকসই সাধন সরার মাধ্যমে মূল দক্ষতা এবং কার্যক্ষমতাকে এমনভাবে সন্নিবেশিত করতে হবে, যাতে করে মানব উন্নয়ন সর্বাগ্রে এদেশের ক্ষেত্রে বিবেচিত হয়। উদ্যোক্তাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে পণ্যের গুণগত মান নক্সার উন্নতি সাধন এবং শিক্ষা থেকে আরম্ভ করে পর্যটন, ই-টেন্ডার, স্বাস্থ্য, প্যারামেডিক্স, নার্সিং, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট প্রভৃতির জন্য সহজে ব্যবহারযোগ্য হয় সমস্ত পরিষেবাগুলো। বস্তুত কৃষি খাত থেকে শুরু করে ওষুধ খাত, তৈরি পোশাক খাত, হিমায়িত পণ্যসহ সবক্ষেত্রে দেশী এবং বিদেশী সংযোগ স্থাপন ও সরবরাহজনিত সমস্যা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে ই-ব্যবস্থা সর্বোত্তম ব্যবহার সাধন করতে পারে। দেশে আমদানি বিকল্পায়ন শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং রফতানিমুখী শিল্পায়ন উভয়ের ক্ষেত্রেই বিগ-ডাটার- ব্যবহার করা যেতে পারে। আর্থিক সংস্থাগুলো এবং কম্পিটিটিভ ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে যারা দেশ থেকে পুঁজি পাচার করেছে এবং সক্রিয় রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও বিগ ডাটা ব্যবহার করে দোষীদের খুঁজে বের করা যেতে পারে। পর সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের ক্ষেত্রে এবং অপরাধীদের ধরতে গেলেও বিগ ডাটার ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। সঠিক ক্রিয়াকলাপ মধ্যম ও নিম্ন পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে সীড মানি, ক্রাউড ফান্ডিং এবং ডিজিটাল উদ্যোগ শুরুর ক্ষেত্রে স্টার্টআপ অর্থের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একটি কার্যকর ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রসারমানতাকে ধরে রাখতে হলে, ডিজিটাইজেশনের বাস্তবতার আলোকে পরিবর্তনসমূহ বিবেচনায় এনে যথাযথ তদারকির মাধ্যমে কার্যকর করতে হবে।
কৃষি উদ্যোক্তা কিংবা সামুদ্রিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজার জাতকরণ, বিপণন এবং বিতরণের ক্ষেত্রে দেশে আরও শক্তিশালী ডিজিটাইজেশন করার দরকার রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য একটি তথ্য ভা-ার স্থাপন এবং অর্থনৈতিক কার্যপদ্ধতি ও ক্রিয়া কর্মকা-ে অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে প্রসারিত হওয়া বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। দেশে ডিজিটাল কর্মকাণ্ডে তৃণমূল থেকে মধ্যম ও উচ্চ মধ্যম পর্যায় পর্যন্ত জ্ঞানবান ব্যক্তিবর্গের সন্নিবেশ ঘটানোর জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সদিচ্ছার ব্যবস্থা দেশেই করা যেতে পারে। অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির চেয়ে বরং আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার ও পরিধি বৃদ্ধিকল্পে ডিজিটাল শ্রম বাহিনীর উন্মেষ ঘটাতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এখনও আমাদের দেশে ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের ক্ষেত্রে আইসিটি ক্ষেত্রে দক্ষতার সঠিক প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। সরকারের যেহেতু সদিচ্ছা আছে তাই মাঠ পর্যায়ে ন্যূনতম সততা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি সাধন এবং যথাযথ বাস্তবায়নসহ সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং মানবকেন্দ্রিক বিকাশ পদ্ধতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যেটি ডিজিটাল অর্থনীতির রূপান্তর কার্যক্রমে বিগ ডাটার নক্সা দ্বারা সহায়কভাবে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে। সরকার যেখানে একটি উন্নয়শীল দেশ হিসেবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং কর্মক্ষম দক্ষতার ব্যাপক বিস্তৃতিকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে, সেখানে মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুগে যুগে একদল থাকে, যারা কিনা উদ্ভাবনী এবং সৃজনশীলতার প্রয়োজনীয় সাহায্য বিস্তৃত করার জন্য দৃষ্টিভঙ্গিকে একটি উচ্চ মানের বাস্তবায়ন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। বাধাবিহীন ইন্টারনেট শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলে যাতে বৈষম্যের সৃষ্টি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে ইন্টারনেটের অপব্যবহারের মাধ্যমে যাতে দেশে শিশু ও নারী নির্যাতন না হয়, সে জন্য সাইবার পুলিশী কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে হবে। কিছু কিছু ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার গ্রাহকদের অযথা ব্যালেন্স কেটে নিয়ে যায় যার বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার অনলাইনে কমপ্লেন করে ফলোদয় হয়নি- এটি দূর করতে হবে। আবার দেশে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ হলেও এক শ্রেণীর অনলাইন বিক্রেতা নানা ধরনের জুয়া খেলার ব্যবস্থা এখনও অবাধে চালু রেখেছে- এটি অবশ্যই বন্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। দেশে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহজনিত সমস্যা দূরীকরণে অনলাইন কার্যক্রম কাজ করে চলেছে। এক্ষেত্রে উদ্যোগ, উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতা ডিজিটাল অর্থনীতিকে বেগবান করে সরকারের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় গতিময়তা দিতে পারে। দেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষত মহামারীর সময়ে আরও দরকার হয়ে পড়েছে। স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশ সাধনের জন্য যুব সমাজ বিদেশ ফেরত এবং নারীদের ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে সমন্বয় সাধনে সহায়তা করা দরকার। এক্ষেত্রে সরকারী-বেসরকারী খাত থেকে পরিপূরকভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা উচিত। ডিজিটাল মিডিয়া, গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা, সংবাদ ও অনুষ্ঠানাদি, ভিডিও কনফারেন্সিং বিজ্ঞাপন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আত্মপ্রত্যয়ী হওয়ার পথে ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিজিটাল লেনদেনের জন্য নীতিগতভাবে সুদৃঢ় এবং দক্ষ মানব সম্পদের একান্ত প্রয়োজন। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিম-লে নতুন উদ্যোগের জন্য বাস্তবভিত্তিক নিয়মনীতি চালু করে প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় তরুণ সমাজ ‘উদ্যোক্তা হবে’- কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষিত উদ্যোক্তার বিকল্প নেই। ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বর্তমানে মাস্টার্স প্রোগ্রামে উদ্যোক্তা অর্থনীতি এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন এন্টিপ্রিউনিরশিপ চালু করেছে। এতে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা-প্রশিক্ষণের জন্য চাকরিকালীন প্রশিক্ষণে প্রেরণ করা যেতে পারে। ভোক্তা কল্যাণের জন্য ডিজিটাল অর্থনীতিকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এদেশে বরফ ভাঙ্গন পদ্ধতির সঠিক প্রায়োগিক কৌশলের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে কর্মসংস্থানের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ব্লক চেন প্রযুক্তিতে কিভাবে রোবট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মৌলিক ও প্রাথমিক জ্ঞানের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে, ডিজিটাইজেশন এবং বিগ ডাটা সম্পর্কিত প্রাথমিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ মহিলা শ্রমিকদের শিক্ষার জন্য পাঠ্যক্রম প্রস্তুত করত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। আইসিটি, ডিজিটাল অর্থনীতি, বিগ ডাটা, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ব্লক চেন প্রযুক্তি এবং রোবটিক্সের ওপর স্নাতক পর্যায়ে মানবিক, সমাজবিজ্ঞান এমনকি চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে স্বল্প মেয়াদের জন্য হলেও বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। অসৎ উপায়ে ধনী হওয়ার যে খেলা সমাজে একটি শ্রেণীর মধ্যে বিদ্যমান, তা দূর করতে হলে অবশ্যই দুর্নীতি এবং ঘুষকে নিরুৎসাহিত করে প্রতিটি সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাকে তথ্যের প্রতি সাম্য সুনিশ্চিত করতে হবে। শিশু বয়স থেকে প্রতিভার উন্মেষ ঘটাতে হবে এবং ডিজিটাইজেশন ব্যবহারের জন্য নৈতিকতা নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : ম্যাক্রোঁ ও ফাইন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট এবং আইটি এক্সপার্ট

Collected:-

    Thanks for the information.

    Achieving the best SEO (Search Engine Optimization[…]

    Creating a website easily on WordPress is a popula[…]

    Creating a website on BigCommerce offers a seamles[…]