Get on Google Play

সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য
#2539
১৮৯১ সালে সংঘটিত মুলায়দার যুদ্ধে উসমানিয়দের অনুগত রাশিদি বাহিনীর হাতে সৌদিরা পরজিত হলে দ্বিতীয় সৌদি আমিরাতের পতন ঘটে। পরাজিত সৌদি আমির আবদুর রহমান বিন ফয়সাল তাঁর পুত্র আবদুল আযীয আস সউদকে নিয়ে কোন রকম প্রাণ রক্ষা করে দক্ষিণ-পূর্বের মুররা নামক বেদুইন গোত্রে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এবং পরবর্তীতে আব্দুর রহমান তার পুত্র কে নিয়ে কুয়েতের আল সাবা রাজপরিবারে আশ্রয় গ্রহন করেন।
তারপরও দৃঢ়চিত্তা সৌদিরা তাদের মনোবল হারাবার নয়। তারা পুনরায় শক্তি অর্জন করে উসমানীয়দের অনুগত রাশিদিয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯০১ খ্রিঃ উভয় পক্ষের মাঝে সংঘটিত সেরিফের যুদ্ধে সৌদিরা পুনরায় পরাজয় বরণ করে। উক্ত যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে আবদুর রহমান তাঁর হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারের সব আশা হারিয়ে ফেলেন।
কিন্তু আব্দুর রহমানের পুত্র আবদুল আযীয আস সউদ আবারও আশার আলো দেখেন। তিনি ছিলেন সাহসী বীর যুদ্ধা এবং দক্ষ কুটনীতিবিদ। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, ১৭৯২ সালে ওয়াহাবী মতমাদের প্রতিষ্টাতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহ্হাব ইন্তেকাল করলেও তার অনুসারীর সংখ্যা কম ছিলনা। তারা সৌদি আরবে ওয়াহাবী মতবাদ প্রতিষ্টার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল।
আব্দুল আযীয তাদেরকে নিজের দলভুক্ত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে সফল হন। অতঃপর ১৯০১ সালে সৌদি রাজবংশ ও ওয়াহাবী মতবাদের পুনরুত্থানের সূচনা হয়। সৌদি রাজপুত্র আব্দুল আযীয সর্বদা পিতৃপুরুষদের হারানো রাজ্য পুনুরদ্ধার করতে চাইতেন। অবশেষে তিনি ১৯০১ সালের শেষের দিকে কুয়েতের আমির মুবারকের কাছে উসমানিয়াদের অনুগত রাশিদিয়দের নিয়ন্ত্রিত রিয়াদ আক্রমণের জন্য সাহায্য চান।
কুয়েতের আমির তাকে সনান্দে কিছু ঘোড়া এবং অস্ত্র-সরান্জম দিয়ে সহযোগীতা করেন। ১৯০২ সালের ১৩ জানুয়ারী আব্দুর রহমানের যুবক পুত্র আব্দুল আযীয আস সউদ অসীম সাহসিকতার সাথে মাত্র ৪০ জন অনুচর নিয়ে আতর্কিত রিয়াদ
আক্রমণ করেন। এবং রশীদ বংশের ওয়ালী আজলানকে পরাজিত ও হত্যা করে ওয়াহাবীদের পূর্বতন শহর দখল করে। তিনি এখানে রিয়াদ আমিরাত প্রতিষ্টা করেন যা ইতিহাসে তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্র নামে পরিচিত। এই তৃতীয় সৌদি রাষ্ট্র থেকেই পরবর্তী সময়ে আধুনিক সৌদি রাষ্ট্রের উত্থান হয়।
এর পর সৌদি রাজবংশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। এদিকে ওয়াহাবীগণ ও তার নেতৃত্বে দ্রুত সংঘবদ্ধ হতে থাকে। এমনকি আব্দুল আযীয ওয়াহাবী বেদুঈনদের নিয়ে “ ইখওয়ান” নামক একটি সৈন্য বাহিনী গঠন করেন। যারা ছিল অসীম সাহসী এবং শক্তিশালী মরুযুদ্ধা। বিশেষ করে এদের নেতৃত্বে ছিল সুলতান বিন বাজাদ আল উতাইবি এবং ফয়সাল আল দাউয়িশ।
পরবর্তীতে উসমানীয়দের অনুগত রাশিদিয়রা রিয়াদ পুনরুদ্ধার করতে চাইলেও সৌদি-ওয়াহাবী জোটের কাছে তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এই সফলতার পর বৃদ্ধ আব্দুর রহমান তার পুত্র আব্দুল আযীয আস সউদকে সৌদি রাজবংশের আমির ঘোষণা করে অবসরে চলে যান।
এরপর সউদরা নজদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একে একে রাশিদিয়দের হটিয়ে একেকটি করে শহর রিয়াদ আমিরাতের সঙ্গে সংযুক্ত করতে থাকেন। পরবর্তী ১৯০৭ সালের মধ্যে সৌদিরা নজদের বিরাট এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে আসে। এইভাবে নিজেদের সার্বভৌম সৌদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকে।
ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় , যে সময় তিমিরি বিদারী হয়ে সৌদি রাষ্ট্রের উত্থান হচ্ছিল, ঠিক একই সময় তিন মহাদেশ বিস্তিৃত, পৃথিবী কাপানো উসমানীয় সাম্রাজ্য ঘোর অমানিশায় ডুবে যাচ্ছিল। ১৯০৮ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান ছিলেন আব্দুল হামিদ। একদা পশ্চিমা সমর্থিত তরুন তুর্কীরা এক বিদ্রোহের মাধ্যমে তাকে সিংহাসনচ্যুত করে, তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা রিশাদকে পঞ্চম মুহাম্মদ উপাধি প্রধান করে সিংহাসনে বসায়।
মূলত এই সময় থেকে উসমানীয় সুলতানদের ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং সাম্রাজ্যে বিচ্ছৃংখলার সূত্রপাত হয়। এই সুযোগে ইউরোপীয় পরাশক্তি অর্থাৎ ব্রিটেন,রাশিয়া,ফ্রান্স,ইতালি,অস্ট্রিয়া ইত্যাদি সম্রাজ্য সমূহ উসমনীয় সাম্রাজ্যকে গ্রাস করতে থাকে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের গোড়ার দিকে প্রায় সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য তাদের অধীনে ছিল। এমনকি পরবর্তীতে উসমানীয় সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইংরেজ ও ফ্রান্স মধ্যপ্রচ্যেও প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।
ক্রমান্বয়ে সৌদি রাজবংশের উপর প্রভাব বিস্তার করতে চেষ্টা করে দোকানদারের জাতি ইংরেজরা। ব্রিটিশ সরকার দেখল, এটি তো একটি উদীয়মান শক্তি এবং এটি যেহেতু তুরস্কের বিরুদ্ধে আর ব্রিটিশদের শত্রু ছিল তুরস্ক সুতরাং এই শক্তিকে যদি আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া যায়, তাহলে ওরাই তুর্কিদের ধ্বংস করবে। তাহলে ব্রিটিশদেরকে নতুন করে কোন শক্তি প্রয়োগ করতে হবে না। বরং তাদের লাভই হবে। সেজন্য তারা রিয়াদ দখল করা আবদুল আজিজ ইবনে সৌদকে মেনে নিয়ে সমর্থন দেয়।
এই ষড়যন্ত্রকারী জাতি যেভাবে ১৭৫৭সালে পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ্দৌলাকে পরাজিতে করে বাংলা দখল করে। একই ভাবে নজদের সৌদি এবং রশিদিয় বংশের মধ্যে যুদ্ধ লাগানোর জন্য তারা ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এই ষড়যন্ত্রের পেছনে মূল কারিগর ছিলেন ব্রিটিশ প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন এইচ.আই,শেক্সপিয়র।
মুসলমানদের ভাগ্যকাশে আবারও কালো মেঘের ঘনঘাটা দেখা দিল। যখন ১৯১৪ সালের ২৮ জুন বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো শহরে অস্ট্রিয়ার যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্ডিনান্ড এক সার্বের গুলিতে নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে সভ্য পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম ভয়াবহতর ও রক্তক্ষয়ী সমর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৮খ্রি:) শুরু হয় । মুসলমানদের কারণে যুদ্ধটি সংঘটিত না হলেও, এই যুদ্ধ শেষে অধিকাংশ মুসলিম দেশ দখল করে নিল অমুসলমানরাই।
এই যুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্য অক্ষশক্তি(জার্মান,অস্ট্রিয়া) এবং ব্রিটেন মিত্র(ফ্রান্স,রাশিয়া,ইতালি,যুক্তরাষ্ট্র,জাপান) শক্তির সাথে যোগ দেয় ।
সৌদি রাজবংশ উসমানীয়দের বিরুধী হওয়ায়, ব্রিটিশরা সৌদিদের উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার ফন্দি করে। অবশেষে সৌদিরা মিত্র শক্তিতে যোগদান করতে বাধ্য হয়। এবং রিয়াদে ব্রিটিশরা শেক্সপিয়ারের মাধ্যমে সৌদিদের সাথে উসমানিয়দের অনুগদ রাশিদীয়দের সাথে যুদ্ধ লাগায়।
১৯১৫ সালে সংঘটিত এই যুদ্ধে আজমাইন গোত্রের বিশ্বাসঘাতকার ফলে সৌদিরা পরাজিত হয়। এই যুদ্ধে আকস্মিকভাবে শেক্সপিয়ার নিহত হয়।
শেক্সপিয়ারকে হারিয়ে বিপর‌্যস্ত সৌদিরা ১৯১৫ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশদের সাথে দারিন চুক্তি করে। এই চুক্তিতে ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে সাক্ষর করে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক জেনারেল পার্সি কক্স। চুক্তি মোতাবেক সৌদি রাষ্ট্র ব্রিটিশদের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। এই সময় নজদের রিয়াদ অঞ্চল নিয়ে সৌদি বংশের ”রিয়াদ আমিরাত, অন্যদিকে হাইল অঞ্চল নিয়ে রশিদিয়রা ”হাইল আমিরাত” নামে দুটি রাষ্ট্র পরিচালনা করতে থাকে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ক্যাপ্টেন শেক্সপেয়ারের মুত্যুর পর আরবের ব্রিটিশ প্রতিনিধি হিসেবে আসেন ক্যাপ্টেন লরেন্স। তিনিও শেক্সপিয়ারের মতই ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন। ক্যাপ্টেন লরেন্স বছরাধিক কাল পর‌্যন্ত ছদ্মবেশে আরবদের মধ্যে ঘুরে বেড়িয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে তাদেরকে উসমানীয় সুলতানের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুললেন। এবং তিনি এতে সফলও হয়েছিলেন।
পূর্বে উল্লেখিত হিজাজ ছিল বর্তমান সৌদি রাষ্ট্রের অন্যতম একটি প্রদেশ। এর প্রধান শহর মক্কা,মদিনা,তায়েফ এবং জেদ্দা। এবং হিজাজের শাসক ছিল মক্কার শরিফরা, যারা ছিল ইমাম হাসানের বংশধর। সুতরাং মক্কা-মদীনা তথা হিজাজের শাসক হিসেবে তাদের শরিফ বা সম্ভ্রান্ত বলে অভিহিত করা হত। তাদের শাসনকে শরিফাত বলা হত। ১৯১৬ সালে হিজাজের শরিফ ছিলেন আলি হায়দার পাশা। তখন হিজাজ ছিল উসমানীয় সাম্রজ্যের অধীনে। তিনি উসমানীয়দের প্রতি অনুগত হয়ে হিজাজ শাসন করতেন।
কিন্তু ১৯১৬ সালে হুসাইন বিন আলী হিজাজের শরিফত লাভ করার পর, সৌদি বংশের সাথে ব্রিটিশদের সখ্য দেখে চিন্তিত হয়ে ওঠেন। ব্রিটিশদের প্ররোচনায় কান দিয়ে অবশেষে তিনিও ১৯১৬ সালের জুন মাসে তুরস্কের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মিত্রপক্ষে যোগ দেন এবং নিজেকে ’আরব দেশ সমূহের বাদশাহ” বলে ঘোষণা করেন। যদিও মিত্র শক্তি তাকে কেবলমাত্র হিজাজের বাদশাহ বলে স্বীকার করে।
এর ফলে ব্রিটেনের মদদে নজদের সৌদি বংশ এবং হিজাজের শরিফরা উসমানীয়দের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহ তৈরি করে। যা ইতিহাসে প্যান আরব বিদ্রোহ নামে পরিচিত। ব্রিটিশ সামরিক অফিসার টি.ই. লরেন্সের প্রত্যক্ষ পরিচালনায়, বিশ্বাসঘাতক হুসাইন মিডল-ইস্টার্ন ফ্রন্টে উসমানীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলে বহু উসমানীয় সৈন্য নিহত এবং বন্দী হয়। ফলশ্রুতীতে উসমানীয়রা মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশ তথা মিত্র শক্তির নিকট পরাজিত হয়। এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় তথা অক্ষ শক্তির পরাজিত হওয়ার পিছনে উক্ত মক্কার শরিফ তথা হেজাজের বাদশাহ হুসাইন বিন আলির নেতৃত্বে আরব বিদ্রোহের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।
[চলমান……..]
====================
মো: এমরান হোছাইন।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,চ.বি।
    Similar Topics
    TopicsStatisticsLast post
    0 Replies 
    388 Views
    by sajib
    0 Replies 
    224 Views
    by kajol
    0 Replies 
    4184 Views
    by masum
    0 Replies 
    83 Views
    by rafique
    0 Replies 
    823 Views
    by rajib
    long long title how many chars? lets see 123 ok more? yes 60

    We have created lots of YouTube videos just so you can achieve [...]

    Another post test yes yes yes or no, maybe ni? :-/

    The best flat phpBB theme around. Period. Fine craftmanship and [...]

    Do you need a super MOD? Well here it is. chew on this

    All you need is right here. Content tag, SEO, listing, Pizza and spaghetti [...]

    Lasagna on me this time ok? I got plenty of cash

    this should be fantastic. but what about links,images, bbcodes etc etc? [...]