Get on Google Play

সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য
#1787
শুরুতেই বলে নেই, বাংলাদেশে সমুদ্রে অবরোধ দেবার মত সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেন নেই? সেটার জন্য আলোচনার শেষ অংশটুকু।

ভিন্ন বিষয় নিয়ে শুরু করি। ইতালির ফ্লোরেন্স শহরের নাম শুনেনি এরকম মানুষ খুব কম আছে। ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু এই ক্ষুদ্র শহরটিকে কেন্দ্র করে। মেদিচি ফ্যামিলির হাত ধরে শিল্প, সাহিত্য, ট্রেডে পুরা ইউরোপের সেরা শহর ছিল এই ফ্লোরেন্স। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি এর মত মানুষের স্মৃতি বিজড়িত এই শহরটি ছিল কট্টরপন্থী পোপের গলার কাটা। চারিদিকে পোপের প্রভাব থাকা সত্তেও ফ্লোরেন্সের বিরুদ্ধে সরাসরি যাওয়া সম্ভবপর ছিল না ভ্যাটিকানের।

কারণ কিছুই না। অবরোধ দিয়েও লাভ নাই। কারণ ফ্লোরেন্সের ছিল বিশাল সমুদ্র বন্দর। আর সমুদ্রকে কেন্দ্র করে শক্তিশালী অর্থনীতি।

সমুদ্র কতটা গুরুত্ববহ সেটা বুঝতে গেলে আগে চোখ রাখতে হবে সেই সব দেশের উপর যার চারিদিক ভূমি দিয়ে ঘেরা অথবা যারা সমুদ্র বঞ্চিত। অর্থাৎ সমুদ্রে প্রবেশের সুযোগ নাই। যাকে এক কথায় আমরা বলতে পারি ল্যান্ড লকড কান্ট্রি। উদাহরণ হিসাবে নেপাল বা ভুটানের কথা বলা যায়। অমিত সম্ভাবনাময় দেশ হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র সমুদ্র যোগাযোগ না থাকায় পার্শ্ববর্তী দেশ গুলার উপর আমদানি রপ্তানির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। মধেসিদের আন্দলন চলাকালীন সময়ে ভারতের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় মধেসিরা। এর ফলে পুরা দেশে ভয়াবহ সঙ্কট দেখা দেয়। এমনকি জ্বালানি তেলের সঙ্কটে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কারন তেল আনতে গেলেও ভারতকে লাগবে।

অপরদিকে যদি আমরা সিঙ্গাপুরের দিকে চোখ রাখি তাহলে দেখব, আমাদের ঢাকা শহরের মত আয়তনের ছোট একটি দেশ হবার পরেও শুধুমাত্র সমুদ্রকে কাজে লাগিয়ে আজ সারা বিশ্বে উন্নত দেশগুলার একটি হতে পেরেছে তারা। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান করার মত জায়গাও তাদের নাই। শুধু পুনঃরপ্তানী আর ট্রেডের উপর নির্ভর করে শাসন করে চলেছে বিশাল সমুদ্রকে। বাংলাদেশ আজ তাদের সমুদ্র বন্দরের অন্যতম ব্যাবহারকারী।

এবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসা যাক। ধরুন এমন একটা পরিস্থিতি হল, আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলা বাংলাদেশকে উচিত শিক্ষা দিতে চায়। বার্মা তাদের বর্ডার সম্পুর্ন বন্ধ করে দিল। সেই সাথে ভারত। আমি বলছিনা এরকম কিছু হবে। শুধু একটা সম্ভাবনার খাতিরে অনুমান করুন।

ঠিক এরকম মূহুর্তে বাংলাদেশ কি না খেয়ে মরবে??? উত্তর হচ্ছে না। কেন না? এর কারন বংলাদেশের ট্রেডের ৯৫% এর বেশি হয় সমুদ্র পথে। যেখানে সারা বিশ্বের ট্রেডের ৯০% হয় এই সমুদ্রকে ব্যবহার করেই। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর আর মংলা বন্দর দিয়ে ২০১৮ সালেই প্রায় $৮০ বিলিয়নের বেশি ট্রেড হয়েছে। তাই যদি কখনো এমন হয় যে আমাদের ল্যান্ড পোর্ট গুলা সব বন্ধ, তার পরো আমাদের অর্থনীতি থমকে থাকবে না।

বাংলাদেশের ৫৮০ কিমি এর বিশাল সমুদ্রসীমা রয়েছে। এটা আমাদের জন্য আশীর্বাদ তখনই, যখন এর পূর্ন সম্ভাবনা আমরা কাজে লাগাতে পারব।

সম্ভাব্য নেভাল ব্লকেড

যদি এমন হয় শত্রু দেশ আমাদের অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিতে চায় অথবা দ্রুত আমাদের পতন চাই তখন আমরা কী করব? শত্রুর জন্য সব থেকে সুবিধাজনক পন্থা হবে যদি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটারের ঢুকবার সুযোগ বন্ধ করে দেয়। এক্ষেত্রে যেটা হতে পারে শত্রু দেশ তাদের শক্তিশালী ফ্রিগেট বা ডেস্ট্রয়ার গুলা আমাদের সমুদ্রসীমার শেষে মোতায়েন করে যেকোন বানিজ্যিক জাহাজকে আমাদের জলসীমায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের বহির্বিশ্বের সাথে সমুদ্র যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থনীতি ধসে যাবে। আর ঠিক এই জায়গায় আমাদের আর্মি অথবা বিমান বাহীনি সম্পূর্ন নিরুপায়। তাদের পক্ষে করার মত তেমন কিছুই থাকবে না। যতই শক্তিশালি হোক।

এজন্যই আমাদের দরকার শক্তিশালী নৌবাহিনী। সম্ভাব্য অবরোধের ক্ষেত্রে নেভি যেটা করতে পারে সেটা হল বানিজ্যিক জাহাজগুলিকে এসকোর্ট করে ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার পর্যন্ত পৌছে দেওয়া। এখানে বলে রাখা ভাল কোস্টাল এরিয়ার পেট্রল জাহাজ এখানে কাজে আসবে না। গভীর সমুদ্র পর্যন্ত যাবার জন্য প্রয়োজন বেশি সি স্টেটের ফ্রিগেট। জানিনা হয়ত একারনেই আমাদের নেভির শিপগুলার ক্ষেত্রে সি স্টেটের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়।

বাংলাদেশের সামরিক বাহীনির ব্যয় পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় বাংলাদেশ ঠিক এই দিকটাকেই জোর দিয়ে নেভিকে দ্রুত সক্ষম করবার চেষ্টা করতেছে যাতে করে সম্ভাব্য যেকোন প্রকার হুমকি দ্রুত মোকাবেলা করা যায়। CDDL এ বাংলাদেশ তাদের চাহিদা মাফিক ৬-৮ টা ফ্রিগেট বানাবে। সেই সাথে কর্ভেট তো আছেই।

নেভাল ব্লকেডে সাবমেরিনের ভূমিকা

বাংলাদেশ সাবমেরিন কেনার পর ইউটিউবে ইন্ডিয়ান এক টিভি চ্যানেলের টকশো দেখতেছিলাম। সেখনে অংশগ্রহন করেন বাংলাদেশে ইন্ডিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূতদ্বয়, নিরাপত্তা বিশ্লেষক সহ আরো অনেকে। সেখনে সবার একটাই কথা, সাবমেরিন হল স্ট্রাটিজিক অস্ত্র। বাংলাদেশের মত দেশ, যাদের কোন শত্রু নেই, তাদের কেন সবমেরিন লাগবে?

মশাই, আমেরিকা বড় দেশ। শক্তিশালী দেশ সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই। তারা কিন্তু সম্ভ্যাব্য এলিয়েন এট্যাক মোকাবেলার প্রস্তুতিও রেখে নিয়েছে।

সেখানে বাংলাদেশ কেন সম্ভাব্য নেভাল ব্লকেডের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখবেনা? আমাদের সম্পদ কম। এরপরো ভবিষ্যতে জাতীয় স্বার্থেই সম্ভাব্য সব হুমকির বিরুদ্ধে প্রস্তুত আমাদের থাকতেই হবে। আর সমুদ্রে একটা ব্লকেড আমাদের পুরা দেশকে হুমকির ভেতর ফেলতে পারে। এজন্যই এটা আমাদের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হওয়া উচিত।

বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, যেকোন দেশের ব্লকেড ছুটানোর অতি উত্তম নিরাপত্তা ব্যাবস্থা হল সাবমেরিন। পানির নীচে সাবমেরিন খুজে পাওয়া খুব সোজা কাজ নয়। আর যেকোন দেশ সমুদ্রে অবরোধের আগে দ্বিতীয় বার ভাববে শুধু এই সবমেরিনের জন্য।

এখন হয়ত বুঝতে পারছেন সমুদ্রসীমার রায় হবার পর বাংলাদেশ কেন নেভির পিছে এতটা ব্যয় করতেছে। ২০৩০ নাগাদ যে পরিমান ফ্রিগেট এবং সাবমেরিন আমদের বহরে থকবে সেটার প্রেক্ষিতে বলা যায়, আমাদের সমুদ্রে কেউ অবরোধ দিতে আসবে না। শত্রুকে পরজিত করতে পারা বিষয় না। শত্রুর যদি পর্যাপ্ত ক্ষতিসাধন করার মত ক্ষমতা থাকে আপনার তাহলে শত্রু কখনো আপনাকে খুব বেশি ঘাটাবে না।

আর বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ দেশ। সবার সাথে সুসম্পর্কে বিশ্বাসী। তাই আমরাও আশা করিনা এরকম পরিস্থিতি কখনো হবে। তবে আমরা আমাদের সম্ভাব্য হুমকি মাথায় রেখে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে যাব।
    Similar Topics
    TopicsStatisticsLast post
    0 Replies 
    3696 Views
    by rafique
    0 Replies 
    2360 Views
    by raihan
    0 Replies 
    2336 Views
    by masum
    0 Replies 
    2244 Views
    by shanta
    0 Replies 
    1582 Views
    by masum

    নারী যে নারী প্রিয় কথা বলে-- প্রিয়ংবদা যে নারী[…]

    খোলস / চামড়া / শাবক হরিণের চামড়ার আসন-- অজিনাসন[…]

    ইচ্ছা হনন / হত্যা করার ইচ্ছা-- জিঘাংসা জানবার ইচ[…]

    ডাক অশ্বের ডাক-- হ্রেষা ময়ূরের ডাক-- কেকা বাঘে[…]