- Tue Jul 31, 2018 9:52 pm#411
৩৬ তম বিসিএসঃ যারা গেজেটে বাদ পড়েছেন, তাদের করনীয় ( সকল সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)
................................................................
Shamim Anwar
এএসপি ( RAB), ৩৪ তম বিসিএস ( পুলিশ),
[বর্তমানে র্যাব-৯ এর এএসপি পদে কর্মরত]
...............................................................
গেজেট প্রকাশের পর হতে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত সময়কে নাকি বলা হয় চাকুরি জীবনের হানিমুন পিরিয়ড। ৩৬ তম বিসিএসের গেজেটভুক্ত হওয়া দুই হাজারের অধিক ভাগ্যবানেরা নিশ্চয়ই তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সেই 'হানিমুনের' সূচনালগ্নে প্রিয়জনদের ক্রমাগত শুভেচ্ছা-অভিনন্দন - প্রশংসার বৃষ্টিতে ভিজে চলেছেন। তাই ধরে নিতে পারি, আমার মতো একজনের অভিনন্দন না পেলেও তাদের তেমন কিছুই আসবে-যাবে না। পক্ষান্তরে আনন্দের এই ক্ষণে বন্ধু-সহপাঠীদের উল্লাসধ্বনির মাঝে যে কতিপয় দুর্ভাগার হাহাকার চাপা পরে আছে, সোনার পেয়ালা হাতে পেয়েও সেটি হারিয়ে যাওয়ার স্বাক্ষী হয়ে বুকভরা কান্না চেপে যারা অনিশ্চিত ভবিষতের অশুভ ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনে অযোগ্যঘোষিত হয়ে গেজেট বঞ্চিত সেই ভাগ্যবিড়ম্বিতদের উদ্দেশে দুয়েকটি কথা বলার তাড়না থেকেই আমার আজকের এই লেখা। আশা করি, এর মধ্য দিয়ে হয়ত ক্ষীণ সলতের নিভুনিভু জ্বলতে থাকা প্রদীপ নিয়ে বিস্তৃত অকূল পাথার পাড়ি দেওয়ার সময়ে একটা গন্তব্যের দিশা অন্তত তারা খুজে পাবেন।
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে প্রথমে জানা প্রয়োজন, বিসিএসসহ যে কোন সরকারি চাকুরির পুলিশ ভেরিফিকেশনে একজন প্রার্থী কি কি কারনে বাদ পড়তে বা অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন--
১. মামলা বা গুরুতর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে
২.আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রার্থী কর্তৃক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার তথ্যপ্রমাণ থাকলে
৩. স্থায়ী ঠিকানার বিষয়ে ভুল তথ্য প্রদান করে চাকুরিতে সুপারিশকৃত হয়ে থাকলে
৪.অমুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করে থাকলে
৫. কোন সরকারি চাকুরিতে নিয়োজিত থাকলে, ইউনিট প্রধান কর্তৃক যাচাইকারি কর্মকর্তার সম্মুখে গুরুতর শৃঙ্খলা অভিযোগ উত্থাপিত হলে
৬. দেশবিরোধী সন্দেহভাজন গোষ্ঠীভুক্ত হয়ে থাকলে ( যেমন আপনি বা আপনার বাবামা ভাইবোন বা কোন নিকটাত্মীয় যদি জামায়াত বা এ ধরনের কোন সংগঠনের সক্রিয় সদস্যহয়ে থাকেন)
৭.এছাড়াও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সাথে অশোভন আচরন বা অসহযোগিতাপুর্ণ মনোভাব প্রদর্শনও হয়ে উঠতে পারে কারো কারো বিপদের কারন।
#গেজেটে নাম না আসলে #করনীয় :
আপনার জীবনের কঠিনতম এই সময়টা নিঃসন্দেহে চরম হতাশার। কিন্তু হতাশায় ডুবে থাকাটা যেহেতু এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে কোনরকম সাহায্য করছে না, তাই এ সময়ে আপনার একমাত্র করনীয় হল মুহুর্তকাল সময়ও অপচয় না করে এই সুকঠিন বিপদকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে কাজে নেমে পড়া।
১. কথায় আছেনা, 'একতাই বল'। ঘোর অমানিশার নিকষ কালো এ রাতে একা পথচলার চিন্তা বাদ দিয়ে, অন্য সহযোদ্ধাদের হাতে হাত রেখে বিপদ থেকে উদ্ধার প্রচেষ্টায় ব্রতী হোন। প্রথমেই খুঁজে বের করুন আপনার সেই দুর্ভাগা সহযাত্রীদের যারা নানা কারনে আপনার মতো একই ভাগ্য বরণ করেছেন। জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তিঅপ্রাপ্তির প্রশ্ন যেখানে জড়িয়ে, সেখানে লজ্জাসংকোচের বিলাসিতা না করে আপনার সংশ্লিষ্ট ফোরামে ছোট একটা পোস্ট দিন। দেখবেন, অনেকেই যোগাযোগ করছেন। সবার মধ্যে একটা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তৈরি করুন। মনে রাখবেন, আগামী কয়েক মাস/ বছর একমাত্র এরাই আপনার সুখদুঃখের একমাত্র সারথি।
২. কালবিলম্ব না করে যতদ্রুত সম্ভব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করুন।সেখান থেকে আপনি জানার চেষ্টা করবেন, ঠিক কি কারনে আপনি অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। যদি কোন তথ্যগত কারনে বাদ পড়ে থাকেন, সেই তথ্য যথাযথ প্রক্রিয়ায় জমা দিন। আর বাদ পড়ার কারন যদি হয় কোন অপরাধের দায়ে ( রাজনৈতিক - শৃঙ্খলা - আইনগত) ভুলভাবে অভিযুক্ত হওয়া, তাহলে পুনভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আবেদন করুন।
৩. আপনার বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলা থাকার কারনে যদি বাদ পড়ে থাকেন, তাহলে পূন:ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়া শুরুর আগেই যতদ্রুত সম্ভব সেটি নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সত্য বা মিথ্যা যেমন মামলাই হোক ( যদিও একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা হল, মামলা তদন্ত বা অন্য যে কোন অধিক্ষেত্রে আজ পর্যন্ত আমি কাউকে বলতে শুনিনি যে, তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলাটি সত্যি। ষড়যন্ত্র তত্ত্বই এক্ষেত্রে আপাত জনপ্রিয় ধারনা হিসেবে প্রদর্শিত হতে দেখা যায় ) মামলার বাদীপক্ষকে যেভাবে পারেন, ম্যানেজ করার চেষ্টা করুন । প্রয়োজনে মেম্বার-চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহায়তা নিন।
৪. যদি এলাকার /শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশীরা ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আপনার গেজেটের পথ রুদ্ধ করে থাকেন, তাহলে পুন:তদন্তকারীকে সে বিষয়ে অবহিত করে সঠিক তথ্য প্রমাণাদি উপস্থাপন ও আপনার উপযুক্ততা প্রমান করার চেষ্টা করবেন
৫. মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বা কোটার প্রাপ্যতা সম্পর্কে কোন ঝামেলা যদি হয় আপনার গেজেট আটকে যাওয়ার কারন, তাহলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সহযোগিতা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়-এর মাধ্যমে সেটি নিষ্পত্তি করে নিন।
৬. তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং (আপনি সরকারি চাকুরিরত থাকলে) আপনার ইউনিট প্রধানের সাথে বিরাজমান বিরূপ সম্পর্ককে ( যদি থাকে) অবিলম্বে মধুময় সম্পর্ক দ্বারা প্রতিস্থাপন করে নিন। বিপদে আপনিই পড়েছেন, তাই সবক্ষেত্রে আপনার বিচারবুদ্ধির সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ভুল করবেন না।
৭. আর সত্যিকারেই যদি আপনি দেশবিরোধী, উন্নয়নবিরূপ, নাশকতাপন্থি শক্তির সক্রিয়-পদস্থ সদস্য হয়ে থাকেন,তাহলে স্যরি, আপনার জন্য এক বালতি সহানুভূতি ছাড়া আমার কাছে আর কোন আশার বাণী নেই। এমনকি আমি নিজেও ( এবং আমি নিশ্চিত, আমার অন্যসব সহকর্মীবৃন্দও) চাই না যে, আপনার মতে কুলাঙ্গার আমার সহকর্মী হন।
৮. সবশেষে বলব, এই পূন:গেজেটের পুরো ব্যাপারটি ধৈর্যের চরম পরীক্ষা নেওয়া একটি কষ্টকর-দীর্ঘ ভ্রমণ মাত্র। আপনি নিজের সম্পর্কে যদি নিঃসংশয় থেকে থাকেন, তাহলে এখানে আপনার সফলতার সম্ভাবনা ১০০%। যোগ্যতাবলে অর্জন করে নেওয়া প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে নিয়োজিত হবার সুযোগ থেকে কেউ আপনাকে চিরকাল বঞ্চিত রাখতে পারবে না। আজ হোক, দুইদিন পর হোক, আপনার প্রাপ্য গেজেট আপনি পাবেনই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করি, ৩৪ তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে মোট সুপারিশকৃত ১৫০ জনের মধ্যে ৭ জন প্রথম গেজেটে বাদ পড়ার ফলে আমাদের সাথে মৌলিক প্রশিক্ষণে যোগ দিতে পারেন নি। কিন্তু পুন: ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দুয়েকজন বাদে তারা সবাইই পরবর্তীতে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। সুতরাং হাল ছেড়ে না দিয়ে নিজের তীব্র ইচ্ছাশক্তি জাগিয়ে তুলে দাঁতেদাঁত চেপে লড়াই অব্যাহত রাখুন আর দিন গুনতে থাকুন। জয় হবেই।
আর মনে রাখবেন, পূন:ভেরিফিকেশন করে গেজেটে আপনার নাম প্রকাশের প্রয়োজনটা যতটা না মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দের, তারচেয়ে বেশি আপনার। তাই নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা ও নিয়মিত পারসু করে যাওয়ার বিকল্প নেই। পাশাপাশি অন্তত পুন:গেজেটে আপনার নাম প্রকাশিত হবার আগ পর্যন্ত সময়ে থানার ওসি, জেলা পুলিশের এএসপি, এডিশনাল এসপি ( ডিএসবি), ইউএনও, এনএসআই এর জেলা ও উপজেলার কর্মকর্তাবৃন্দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। কারনটা তো বোঝেনই, কী আর বলব!
(আর যদি প্রয়োজন মনে করেন, যে কোন সময়, যে কোন পরামর্শের জন্য নিঃসঙ্কোচে আমাকে নক করতে পারবেন। কথা দিচ্ছি, ক্ষুদ্রজ্ঞানে আপনার এ সময়ের করনীয় বিষয়ক দিকনির্দেশনাগুলো দেওয়ার সাধ্যমত চেষ্টা করব। আসলে 'যারা সফল হয়েছেন' তাদের তুলনায় 'যারা সফল হবেন' তাদের সাথে থাকাটাই আমার বেশি পছন্দ। আপনারা সবাই আমার শুভকামনা জানবেন)।
................................................................
Shamim Anwar
এএসপি ( RAB), ৩৪ তম বিসিএস ( পুলিশ),
[বর্তমানে র্যাব-৯ এর এএসপি পদে কর্মরত]
...............................................................
গেজেট প্রকাশের পর হতে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত সময়কে নাকি বলা হয় চাকুরি জীবনের হানিমুন পিরিয়ড। ৩৬ তম বিসিএসের গেজেটভুক্ত হওয়া দুই হাজারের অধিক ভাগ্যবানেরা নিশ্চয়ই তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সেই 'হানিমুনের' সূচনালগ্নে প্রিয়জনদের ক্রমাগত শুভেচ্ছা-অভিনন্দন - প্রশংসার বৃষ্টিতে ভিজে চলেছেন। তাই ধরে নিতে পারি, আমার মতো একজনের অভিনন্দন না পেলেও তাদের তেমন কিছুই আসবে-যাবে না। পক্ষান্তরে আনন্দের এই ক্ষণে বন্ধু-সহপাঠীদের উল্লাসধ্বনির মাঝে যে কতিপয় দুর্ভাগার হাহাকার চাপা পরে আছে, সোনার পেয়ালা হাতে পেয়েও সেটি হারিয়ে যাওয়ার স্বাক্ষী হয়ে বুকভরা কান্না চেপে যারা অনিশ্চিত ভবিষতের অশুভ ঘণ্টাধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনে অযোগ্যঘোষিত হয়ে গেজেট বঞ্চিত সেই ভাগ্যবিড়ম্বিতদের উদ্দেশে দুয়েকটি কথা বলার তাড়না থেকেই আমার আজকের এই লেখা। আশা করি, এর মধ্য দিয়ে হয়ত ক্ষীণ সলতের নিভুনিভু জ্বলতে থাকা প্রদীপ নিয়ে বিস্তৃত অকূল পাথার পাড়ি দেওয়ার সময়ে একটা গন্তব্যের দিশা অন্তত তারা খুজে পাবেন।
মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে প্রথমে জানা প্রয়োজন, বিসিএসসহ যে কোন সরকারি চাকুরির পুলিশ ভেরিফিকেশনে একজন প্রার্থী কি কি কারনে বাদ পড়তে বা অযোগ্য বিবেচিত হতে পারেন--
১. মামলা বা গুরুতর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে
২.আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রার্থী কর্তৃক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার তথ্যপ্রমাণ থাকলে
৩. স্থায়ী ঠিকানার বিষয়ে ভুল তথ্য প্রদান করে চাকুরিতে সুপারিশকৃত হয়ে থাকলে
৪.অমুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করে থাকলে
৫. কোন সরকারি চাকুরিতে নিয়োজিত থাকলে, ইউনিট প্রধান কর্তৃক যাচাইকারি কর্মকর্তার সম্মুখে গুরুতর শৃঙ্খলা অভিযোগ উত্থাপিত হলে
৬. দেশবিরোধী সন্দেহভাজন গোষ্ঠীভুক্ত হয়ে থাকলে ( যেমন আপনি বা আপনার বাবামা ভাইবোন বা কোন নিকটাত্মীয় যদি জামায়াত বা এ ধরনের কোন সংগঠনের সক্রিয় সদস্যহয়ে থাকেন)
৭.এছাড়াও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সাথে অশোভন আচরন বা অসহযোগিতাপুর্ণ মনোভাব প্রদর্শনও হয়ে উঠতে পারে কারো কারো বিপদের কারন।
#গেজেটে নাম না আসলে #করনীয় :
আপনার জীবনের কঠিনতম এই সময়টা নিঃসন্দেহে চরম হতাশার। কিন্তু হতাশায় ডুবে থাকাটা যেহেতু এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে কোনরকম সাহায্য করছে না, তাই এ সময়ে আপনার একমাত্র করনীয় হল মুহুর্তকাল সময়ও অপচয় না করে এই সুকঠিন বিপদকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে কাজে নেমে পড়া।
১. কথায় আছেনা, 'একতাই বল'। ঘোর অমানিশার নিকষ কালো এ রাতে একা পথচলার চিন্তা বাদ দিয়ে, অন্য সহযোদ্ধাদের হাতে হাত রেখে বিপদ থেকে উদ্ধার প্রচেষ্টায় ব্রতী হোন। প্রথমেই খুঁজে বের করুন আপনার সেই দুর্ভাগা সহযাত্রীদের যারা নানা কারনে আপনার মতো একই ভাগ্য বরণ করেছেন। জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তিঅপ্রাপ্তির প্রশ্ন যেখানে জড়িয়ে, সেখানে লজ্জাসংকোচের বিলাসিতা না করে আপনার সংশ্লিষ্ট ফোরামে ছোট একটা পোস্ট দিন। দেখবেন, অনেকেই যোগাযোগ করছেন। সবার মধ্যে একটা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তৈরি করুন। মনে রাখবেন, আগামী কয়েক মাস/ বছর একমাত্র এরাই আপনার সুখদুঃখের একমাত্র সারথি।
২. কালবিলম্ব না করে যতদ্রুত সম্ভব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করুন।সেখান থেকে আপনি জানার চেষ্টা করবেন, ঠিক কি কারনে আপনি অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। যদি কোন তথ্যগত কারনে বাদ পড়ে থাকেন, সেই তথ্য যথাযথ প্রক্রিয়ায় জমা দিন। আর বাদ পড়ার কারন যদি হয় কোন অপরাধের দায়ে ( রাজনৈতিক - শৃঙ্খলা - আইনগত) ভুলভাবে অভিযুক্ত হওয়া, তাহলে পুনভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আবেদন করুন।
৩. আপনার বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলা থাকার কারনে যদি বাদ পড়ে থাকেন, তাহলে পূন:ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়া শুরুর আগেই যতদ্রুত সম্ভব সেটি নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সত্য বা মিথ্যা যেমন মামলাই হোক ( যদিও একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা হল, মামলা তদন্ত বা অন্য যে কোন অধিক্ষেত্রে আজ পর্যন্ত আমি কাউকে বলতে শুনিনি যে, তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলাটি সত্যি। ষড়যন্ত্র তত্ত্বই এক্ষেত্রে আপাত জনপ্রিয় ধারনা হিসেবে প্রদর্শিত হতে দেখা যায় ) মামলার বাদীপক্ষকে যেভাবে পারেন, ম্যানেজ করার চেষ্টা করুন । প্রয়োজনে মেম্বার-চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহায়তা নিন।
৪. যদি এলাকার /শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশীরা ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আপনার গেজেটের পথ রুদ্ধ করে থাকেন, তাহলে পুন:তদন্তকারীকে সে বিষয়ে অবহিত করে সঠিক তথ্য প্রমাণাদি উপস্থাপন ও আপনার উপযুক্ততা প্রমান করার চেষ্টা করবেন
৫. মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বা কোটার প্রাপ্যতা সম্পর্কে কোন ঝামেলা যদি হয় আপনার গেজেট আটকে যাওয়ার কারন, তাহলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সহযোগিতা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়-এর মাধ্যমে সেটি নিষ্পত্তি করে নিন।
৬. তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং (আপনি সরকারি চাকুরিরত থাকলে) আপনার ইউনিট প্রধানের সাথে বিরাজমান বিরূপ সম্পর্ককে ( যদি থাকে) অবিলম্বে মধুময় সম্পর্ক দ্বারা প্রতিস্থাপন করে নিন। বিপদে আপনিই পড়েছেন, তাই সবক্ষেত্রে আপনার বিচারবুদ্ধির সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ভুল করবেন না।
৭. আর সত্যিকারেই যদি আপনি দেশবিরোধী, উন্নয়নবিরূপ, নাশকতাপন্থি শক্তির সক্রিয়-পদস্থ সদস্য হয়ে থাকেন,তাহলে স্যরি, আপনার জন্য এক বালতি সহানুভূতি ছাড়া আমার কাছে আর কোন আশার বাণী নেই। এমনকি আমি নিজেও ( এবং আমি নিশ্চিত, আমার অন্যসব সহকর্মীবৃন্দও) চাই না যে, আপনার মতে কুলাঙ্গার আমার সহকর্মী হন।
৮. সবশেষে বলব, এই পূন:গেজেটের পুরো ব্যাপারটি ধৈর্যের চরম পরীক্ষা নেওয়া একটি কষ্টকর-দীর্ঘ ভ্রমণ মাত্র। আপনি নিজের সম্পর্কে যদি নিঃসংশয় থেকে থাকেন, তাহলে এখানে আপনার সফলতার সম্ভাবনা ১০০%। যোগ্যতাবলে অর্জন করে নেওয়া প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে নিয়োজিত হবার সুযোগ থেকে কেউ আপনাকে চিরকাল বঞ্চিত রাখতে পারবে না। আজ হোক, দুইদিন পর হোক, আপনার প্রাপ্য গেজেট আপনি পাবেনই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করি, ৩৪ তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে মোট সুপারিশকৃত ১৫০ জনের মধ্যে ৭ জন প্রথম গেজেটে বাদ পড়ার ফলে আমাদের সাথে মৌলিক প্রশিক্ষণে যোগ দিতে পারেন নি। কিন্তু পুন: ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দুয়েকজন বাদে তারা সবাইই পরবর্তীতে গেজেটভুক্ত হয়েছেন। সুতরাং হাল ছেড়ে না দিয়ে নিজের তীব্র ইচ্ছাশক্তি জাগিয়ে তুলে দাঁতেদাঁত চেপে লড়াই অব্যাহত রাখুন আর দিন গুনতে থাকুন। জয় হবেই।
আর মনে রাখবেন, পূন:ভেরিফিকেশন করে গেজেটে আপনার নাম প্রকাশের প্রয়োজনটা যতটা না মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দের, তারচেয়ে বেশি আপনার। তাই নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা ও নিয়মিত পারসু করে যাওয়ার বিকল্প নেই। পাশাপাশি অন্তত পুন:গেজেটে আপনার নাম প্রকাশিত হবার আগ পর্যন্ত সময়ে থানার ওসি, জেলা পুলিশের এএসপি, এডিশনাল এসপি ( ডিএসবি), ইউএনও, এনএসআই এর জেলা ও উপজেলার কর্মকর্তাবৃন্দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। কারনটা তো বোঝেনই, কী আর বলব!
(আর যদি প্রয়োজন মনে করেন, যে কোন সময়, যে কোন পরামর্শের জন্য নিঃসঙ্কোচে আমাকে নক করতে পারবেন। কথা দিচ্ছি, ক্ষুদ্রজ্ঞানে আপনার এ সময়ের করনীয় বিষয়ক দিকনির্দেশনাগুলো দেওয়ার সাধ্যমত চেষ্টা করব। আসলে 'যারা সফল হয়েছেন' তাদের তুলনায় 'যারা সফল হবেন' তাদের সাথে থাকাটাই আমার বেশি পছন্দ। আপনারা সবাই আমার শুভকামনা জানবেন)।