- Sun Jul 22, 2018 3:33 am#379
দুই দিন আগে কি পড়েছিলেন ভুলে গেছেন?
পড়ালেখায় ভালো করতে চান বা ভালো ছাত্র হতে চান ... ... !!! + পড়া মুখস্ত বা মনে রাখার করার সহজ ও শর্টকাট উপায় জানতে চান ... ! তাহলে এই টিউনটি ধর্য্য সহকারে সামান্য সময় ব্যায় করে পড়ুন ... হয়তো এই লেখাটি আপনাকে আপনার লাইফ সম্পর্কে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে সহযোগিতা করবে ... আর যারা ছাত্রজীবন শেষ করে ফেলেছেন তারও পড়ুন... আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরামর্শ দিতে কাজে লাগবে |
কৌশল-১
আগ্রহ নিয়ে খালি মাথায় পড়তে বসুন: খেলা, মুভি দেখার জন্য আপনি যেমন আগ্রহ নিয়ে, জিতার আশা নিয়ে বসো। পড়ার সময়ও একইভাবে, নিজের ভিতর থেকে আগ্রহ নিয়ে, পড়া কঠিন, মনে থাকে না, বুঝি না- এইসব ভুলে, খালি মাথা নিয়ে বসতে হবে। সেই জন্য ভোরে উঠে পড়তে বসলে মাথা ক্লিন থাকে এবং পড়া দ্রুত মাথায় ঢুকে।
কৌশল-২
ছোট ছোট অংশে ভাগ করে পড়ুন: খুব সিম্পল একটা উদাহরণ দেই। ধরুন আপনার একটা ফোন নাম্বার মনে রাখা দরকার। এখন ০১৭১২১৭২০৪৫ পুরাটা একসাথে পড়লে দুই মিনিট পরেই ভুলে যাবা। তাই ভেঙ্গে ভেঙ্গে ০১৭১২ – ১৭২ – ০৪৫ স্টাইলে পড়ুন। পড়ার সময় চিন্তা করুন- “০১৭১২ (আধা সেকেন্ড দম নিয়ে) ১৭২ (আধা সেকেন্ড দম নিয়ে) ০৪৫”, তাহলে মনে রাখা সহজ হবে। এরপর নাম্বারটা ব্রেইনে সেট করার টার্গেট নিয়ে খেয়াল করে করে তিনবার পড়ুন। দুইবার না দেখে কাগজে লিখুন।
দেখবেন এক মাসেও এই নাম্বার ভুলবেন না। শুধু ফোন নাম্বার না, বড় সাইজের প্রকারভেদ, ব্যবসায় নীতি, বিশাল প্রমাণ এই সিস্টেমে ভাগ ভাগ করে পড়ুন।
কৌশল-৩
মেইন পয়েন্টকে Clue হিসেবে ব্যবহার করুন: যেমন ধরুন নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র- “কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই ঘটে।” পড়ার সময় নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করবেন- এই সূত্রের মেইন পয়েন্ট কি?
একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন এই সূত্রের মেইন পয়েন্ট হচ্ছে- “ভরবেগের পরিবর্তন”।
এবং ভরবেগের পরিবর্তনের দুইটা বৈশিষ্ট্য বলছে।
এক: ভরবেগের পরিবর্তন- বলের সমানুপাতিক।
দুই: ভরবেগের পরিবর্তন- বলের দিকে।
এখন আপনার ব্রেইনে সূত্রের নামের সাথে মেইন পয়েন্টের কানেকশন সেট করা লাগবে। যাতে সূত্রের নাম শুনার সাথে সাথেই মূল বিষয়বস্তু ব্রেইনে ভেসে উঠে। সেজন্য প্রথমে সূত্রের নাম লিখবেন তারপর কোলন(
দিয়ে মেইন পয়েন্ট লিখবেন। অনেকটা এইভাবে “নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র: ভরবেগের পরিবর্তন- বলের সমানুপাতিক, বলের দিকে”। এরপর থেকে যতবার সূত্রের নাম দেখবেন ততবার কানেকশন এবং ক্লু দিয়ে পুরা সূত্র ইজিলি মনে করতে পারবেন। যদি হাইলাইটার, কলম বা পেন্সিল দিয়ে দাগিয়ে পড়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে শুধু মেইন পয়েন্ট বা ক্লু গুলাকে দাগান। যাতে রিভাইজ দেয়ার সময় চোখ আগে দাগানো অংশের নিচে চলে যায়।
কৌশল-৪
পড়ার টপিকের সাথে লাইফের ঘটনা মিশাও: আপনি এক সপ্তাহ আগে কি খাইছিলেন ভুলে গেছো। কিন্তু কয়েক মাস আগে ঈদের দিন সকালে কি খাইছিলেন বা কয়েক বছর আগে এসএসসি রেজাল্টের সময় কই ছিলেন, ঠিকই মনে আছে। তারমানে কোন কিছুর সাথে ইমোশন বা ইস্পেশাল আগ্রহ থাকলে সেই জিনিস আমরা ভুলি না। সো, প্ৰত্যেকটা চ্যাপ্টারের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের সাথে একটা ইমোশন বা লাইফের স্পেশাল ঘটনা মিশাতে পারলে সেই জিনিস সহজে ভুলবেন না। ধরুন, ফিজিক্সের F = ma সূত্র পড়ার সময় ভাবলা- বাসা থেকে মেসে আসার সময় আমি যে বল দিয়ে আমার লাগেজটাকে টানতেছিলেনম সেই বল (Force) ছিলো F, লাগেজের মধ্যে যা যা ছিলো সেগুলার ভর(mass) হচ্ছে m আর a হচ্ছে আমার বলের কারণে লাগেজ যে ত্বরণ(acceleration) হইছিলো। তাই লাগেজ টানার সময় আমি F = ma পরিমাণ কাজ করছি। আর আমি যেহেতু জুনের ১১ তারিখ বাসা থেকে মেসে উঠছিলেনম তাই জুনের ১১ তারিখ আমার F=ma দিবস। দেখছো, কোন ঘটনা বা স্মৃতির সাথে পড়াকে মিলাতে পারলে সেটা মনে রাখা অনেক সহজ এবং মজার হয়ে যায়।
কৌশল-৫
যত বেশি লিখে লিখে পড়বে তত ভালো: দেখে দেখে পড়ার চাইতে হালকা সাউন্ড বা মনে মনে উচ্চারণ করে পড়া ভালো। কন্সট্রেশন বেশিক্ষণ থাকে। তবে অংক, সূত্রের প্রমাণ, জটিল গ্রাফ অবশ্যই লিখে লিখে পড়বা। দশবার রিডিং পড়ার চাইতে একবার লিখে পড়া বেশি ইফেক্টিভ। যদিও সবকিছু ১০০% লিখে লিখে পড়তে গেলে বেশি সময় লেগে যাবে। তাই গুরুত্বপূর্ণ সূত্র, প্রমাণ বা থিওরি অন্তত একবার না দেখে লিখবে। ম্যাথ কখনোই সমাধান সামনে খোলা রেখে করবেন না। বরং পাশের রুমে রাখবা। যতবার আটকে যাবা ততবার উঠে গিয়ে দেখে আসবা। তারপরেও না দেখে দেখে করার প্রাকটিস করুন নচেৎ পরীক্ষার হলে গিয়ে আটকে যাবা।
কৌশল-৬
নিজেই নিজের টিচার হয়ে যাও: ক্লাসের বন্ধুদের সাথে আড্ডায় পড়ালেখার টপিক নিয়ে আলোচনা করুন। কোন কিছু পড়া শুরু করার আগে কোন ফ্রেন্ডের কাছ থেকে বুঝে নিতে পারলে- পড়া বুঝা ও মনে রাখা অনেক সহজ এবং দ্রুত হয়। আর ফ্রেন্ড খুঁজে না পাইলে নিজেই নিজের টিচার হয়ে নিজেকে কোন জিনিস বুঝানোর চেষ্টা করুন। কারো কাছে পড়া বুঝতে গেলে তার কাছে ১ ঘন্টার বেশি থাকবা না। আপনি কাউকে পড়া বুঝাতে গেলে গেলে, ১ ঘন্টার বেশি সময় দিবা না।
কৌশল-৭
পড়ার টেবিল, পড়ার রুম: যে সাবজেক্ট পড়বা সেই সাবজেক্টের বই ছাড়া অন্য বই টেবিলে রাখা যাবে না। পড়ার টেবিল দরজার পাশে, ড্রয়িং রুমে রাখবা না। মানুষ আসতে যাইতে ডিস্টার্ব হবে। আবার বারান্দা বা জানালার পাশেও পড়ার টেবিল রাখবা না। নচেৎ কিছুক্ষণ পর পর বাইরে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই ১৫-২০ মিনিট নষ্ট করে ফেলবা। পড়ার রুমে কোন ইলেক্ট্রনিক্স যেমন টিভি, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন রাখা যাবে না। মোবাইল বন্ধ করে পাশের রুমে রেখে আসবা। পড়ার সময় ডিকশনারি ব্যবহার করা লাগলে প্রিন্ট করা ডিকশনারি ব্যবহার করবেন।
কৌশল-৮
রঙ্গিন করে এঁকে পড়ুন : অনেকগুলা বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য, প্রকারভেদ মনে না থাকলে। সেগুলার প্রথম বর্ণ দিয়ে একটা শব্দ বা ছন্দ তৈরি করুন ফেলো। ভূগোল বা বিজ্ঞানের কঠিন কোন চিত্র বা গ্রাফ থাকলে, গ্রাফের কিছু অংশ কালো, কিছু অংশ নীল, কিছু অংশ লাল রঙের কলম/পেন্সিল দিয়ে আঁকলে, গ্রাফ মনে রাখা সহজ হবে। কোন চ্যাপ্টারের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাফ, বিদঘুটে পয়েন্টগুলো কয়েকটা গ্রুপে ভাগ করে আলাদা কালারের কলম দিয়ে খাতায় লিখো। তারপর রিকশায়, বাসে বা সেলুনে চুল কাটার সময় সেই খাতা খুলে সামনে রেখে দিবা। ব্যস, ফ্রি ফ্রি রিভাইজ দেয়া হয়ে যাবে। ইম্পরট্যান্ট চার্ট, পয়েন্টগুলা কাগজে লিখে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখো। কয়েকটা গ্রাফ সিলিং এ লাগিয়ে দাও। যাতে দিনের বেলায় বিছানায় শুইলে সেগুলা দেখে দেখে রিভাইজ দেয়া যায়। আর মশারির ভিতর শোয়া লাগলে, মশারির উপরে বই বা খাতা রেখে ভিতর থেকে শুয়ে শুয়ে রিভিশন দাও।
কৌশল-৯
রিভাইজ, রিভাইজ এন্ড রিভাইজ: গবেষণায় দেখা গেছে- আমরা আজকে সারাদিনে যত কিছু, দেখি, শুনি, জানি বা পড়ি তার ৫দিন পরে চারভাগের তিনভাগই ভুলে যাই। তবে এই ভুলে যাওয়া ঠেকানোর জন্য অনেকগুলা ট্রিকস আছে। যেমন- ৪৫ মিনিট পড়ে ১৫ মিনিটের নিবা এবং সেই ব্রেকে পড়াটা মনে মনে রিভাইজ দাও এবং কোথাও আটকে গেলে আরেকবার দেখে নাও। এবং আজকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পড়লে আগামীকাল ঘুমানোর আগে এই জিনিস ২০মিনিটে রিভাইজ দিয়ে দিবা। তারপর এক সপ্তাহ পরে আরেকবার রিভাইজ দিলে এই পড়ার ৯০% জিনিস এক মাস পর্যন্ত আপনার মনে থাকবে। প্রত্যেকটা সাবজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, ক্লু, সামারি পয়েন্টগুলা আলাদা আলাদা খাতায় লিখে রাখবা। চ্যাপ্টার ওয়াইজ। তারপর টিউশনি যাওয়ার পথে- রিক্সায়, বাসে, এমনকি স্টুডেন্টকে অংক করতে দিয়ে সেই খাতা দেখতে থাকবা। যে জিনিসটা আজকে পড়ছো সেটা- গোসল, ভাত খাওয়া, সিঁড়ি দিয়েই নামা, বাসের জন্য অপেক্ষা, এমনকি বাথরুম করার সময় চিন্তা করবেন। যতবেশি চিন্তা করবেন, যতবেশি মনে মনে রিভাইজ দিবা তত বেশি মনে থাকবে।
কৌশল-১০
বইয়ের পিছনে সামারি লিস্ট: প্রায় সব বইয়ের পিছনেই দুই-এক পাতা সাদা পৃষ্ঠা থাকে। আর না থাকলে স্কচ-টেপ বা পিন দিয়ে লাগিয়ে নিবা। তারপর যে জিনিসগুলা ভুলে যাওয়ার চান্স বেশি বা পরে ভালো করে রিভিশন না দিলে পরীক্ষার হলে লিখতে পারবেন না- সেগুলা পেইজ নাম্বার সহ বইয়ের পিছনের সাদা কাগজে লিখে রাখবা। যাতে ৩-৪ ঘন্টা রিভিশন দেয়ার সুযোগ পাইলে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলা পৃষ্ঠা নম্বর দিয়ে খুব সহজেই খুঁজে বের করে রিভিশন দিতে পারো।
কৌশল-১১
ক্লাসে সিনসিয়ার থাকো: পড়ালেখা খুব কঠিন বা বোরিং কিছু না। একটু খেয়াল করলেই পড়ালেখা ইজিয়ার বানায় ফেলা যায়। সেজন্য ক্লাস শুরু হওয়ার সময় থেকে সিনসিয়ার হতে হবে। ক্লাসের ফার্স্ট বেঞ্চে বসে, খেয়াল করে ক্লাস নোট তুলে, সিরিয়াসলি এসাইনমেন্ট করে, বাসায় এসে ঐদিনের লেকচারগুলোকে আধা ঘন্টা করে স্টাডি করলে, পড়া অর্ধেক সহজ হয়ে যায়।
কৌশল-১২
সিরিয়াস স্টুডেন্টদের বন্ধু হও: তিনজন সিরিয়াস স্টুডেন্টের সাথে একজন অগা-মগা থাকলেও সে পড়ালেখায় ভালো করা শুরু করবে। আর আড্ডা, সিনেমা, খেলা দেখার পাগল পোলাপানদের সাথে বন্ধুত্ব হলে পড়ালেখায় তোমাকে ছেড়ে পালাবে। সো, কষ্ট হলেও ভালো স্টুডেন্টদের সাথে থেকে তাদের ফলো করুন। এটলিস্ট সিরিয়াস স্টুডেন্টদের সাথে উঠাবসা করুন- আপনার মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে। পড়ালেখায় মন বসবে। রেজাল্ট ভালো হবে।
কৌশল-১৩
প্রথম অক্ষর নিয়ে মজার কিছু বানাও: বাংলাদেশ সংবিধানে ১১ টা ভাগ আছে। এই ভাগগুলা পড়ার সময় প্রত্যেকটা পয়েন্টের প্রথম অক্ষর খেয়াল করবেন -(প)-প্রজাতন্ত্র, (রি) রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, (ম) মৌলিক অধিকার, (নি) নির্বাহী বিভাগ, (আ) আইন সভা, (বি) বিচার বিভাগ, (নি) নির্বাচন, (ম) মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, (বা) বাংলাদেশের কর্ম বিভাগ, (জ) জরুরী বিধানাবলী, (স) সংবিধান সংশোধন, বি- বিবিধ। এখন প্রথম অক্ষরগুলা দিয়ে মজার কিছু একটা বানায় ফেল। যেমন, “পরীমনি আবি নিমবাজ সবি” তাইলে আর সংবিধানের ভাগগুলা সহজে আর ভুলবেন না।
কৌশল ১৪
নিমনিক (mnemonic) মানে হচ্ছে মনে রাখার বিশেষ কৌশল। আমাদের ব্রেইন অগোছালো কিছুর চাইতে কৌশলে সাজানো বিষয়ের উপর বেশি মনোযোগ দিতে পারে। ফলে কোন কিছু ছক বা টেবিল আকারে সাজিয়ে নিলে কিংবা নিমনিক (mnemonic) তৈরী করে নিলে দ্রুত মেমোরি তৈরী হয় ও মনে থাকে।
পড়ালেখায় ভালো করতে চান বা ভালো ছাত্র হতে চান ... ... !!! + পড়া মুখস্ত বা মনে রাখার করার সহজ ও শর্টকাট উপায় জানতে চান ... ! তাহলে এই টিউনটি ধর্য্য সহকারে সামান্য সময় ব্যায় করে পড়ুন ... হয়তো এই লেখাটি আপনাকে আপনার লাইফ সম্পর্কে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে সহযোগিতা করবে ... আর যারা ছাত্রজীবন শেষ করে ফেলেছেন তারও পড়ুন... আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পরামর্শ দিতে কাজে লাগবে |
কৌশল-১
আগ্রহ নিয়ে খালি মাথায় পড়তে বসুন: খেলা, মুভি দেখার জন্য আপনি যেমন আগ্রহ নিয়ে, জিতার আশা নিয়ে বসো। পড়ার সময়ও একইভাবে, নিজের ভিতর থেকে আগ্রহ নিয়ে, পড়া কঠিন, মনে থাকে না, বুঝি না- এইসব ভুলে, খালি মাথা নিয়ে বসতে হবে। সেই জন্য ভোরে উঠে পড়তে বসলে মাথা ক্লিন থাকে এবং পড়া দ্রুত মাথায় ঢুকে।
কৌশল-২
ছোট ছোট অংশে ভাগ করে পড়ুন: খুব সিম্পল একটা উদাহরণ দেই। ধরুন আপনার একটা ফোন নাম্বার মনে রাখা দরকার। এখন ০১৭১২১৭২০৪৫ পুরাটা একসাথে পড়লে দুই মিনিট পরেই ভুলে যাবা। তাই ভেঙ্গে ভেঙ্গে ০১৭১২ – ১৭২ – ০৪৫ স্টাইলে পড়ুন। পড়ার সময় চিন্তা করুন- “০১৭১২ (আধা সেকেন্ড দম নিয়ে) ১৭২ (আধা সেকেন্ড দম নিয়ে) ০৪৫”, তাহলে মনে রাখা সহজ হবে। এরপর নাম্বারটা ব্রেইনে সেট করার টার্গেট নিয়ে খেয়াল করে করে তিনবার পড়ুন। দুইবার না দেখে কাগজে লিখুন।
দেখবেন এক মাসেও এই নাম্বার ভুলবেন না। শুধু ফোন নাম্বার না, বড় সাইজের প্রকারভেদ, ব্যবসায় নীতি, বিশাল প্রমাণ এই সিস্টেমে ভাগ ভাগ করে পড়ুন।
কৌশল-৩
মেইন পয়েন্টকে Clue হিসেবে ব্যবহার করুন: যেমন ধরুন নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র- “কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই ঘটে।” পড়ার সময় নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করবেন- এই সূত্রের মেইন পয়েন্ট কি?
একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন এই সূত্রের মেইন পয়েন্ট হচ্ছে- “ভরবেগের পরিবর্তন”।
এবং ভরবেগের পরিবর্তনের দুইটা বৈশিষ্ট্য বলছে।
এক: ভরবেগের পরিবর্তন- বলের সমানুপাতিক।
দুই: ভরবেগের পরিবর্তন- বলের দিকে।
এখন আপনার ব্রেইনে সূত্রের নামের সাথে মেইন পয়েন্টের কানেকশন সেট করা লাগবে। যাতে সূত্রের নাম শুনার সাথে সাথেই মূল বিষয়বস্তু ব্রেইনে ভেসে উঠে। সেজন্য প্রথমে সূত্রের নাম লিখবেন তারপর কোলন(
দিয়ে মেইন পয়েন্ট লিখবেন। অনেকটা এইভাবে “নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র: ভরবেগের পরিবর্তন- বলের সমানুপাতিক, বলের দিকে”। এরপর থেকে যতবার সূত্রের নাম দেখবেন ততবার কানেকশন এবং ক্লু দিয়ে পুরা সূত্র ইজিলি মনে করতে পারবেন। যদি হাইলাইটার, কলম বা পেন্সিল দিয়ে দাগিয়ে পড়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে শুধু মেইন পয়েন্ট বা ক্লু গুলাকে দাগান। যাতে রিভাইজ দেয়ার সময় চোখ আগে দাগানো অংশের নিচে চলে যায়।
কৌশল-৪
পড়ার টপিকের সাথে লাইফের ঘটনা মিশাও: আপনি এক সপ্তাহ আগে কি খাইছিলেন ভুলে গেছো। কিন্তু কয়েক মাস আগে ঈদের দিন সকালে কি খাইছিলেন বা কয়েক বছর আগে এসএসসি রেজাল্টের সময় কই ছিলেন, ঠিকই মনে আছে। তারমানে কোন কিছুর সাথে ইমোশন বা ইস্পেশাল আগ্রহ থাকলে সেই জিনিস আমরা ভুলি না। সো, প্ৰত্যেকটা চ্যাপ্টারের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের সাথে একটা ইমোশন বা লাইফের স্পেশাল ঘটনা মিশাতে পারলে সেই জিনিস সহজে ভুলবেন না। ধরুন, ফিজিক্সের F = ma সূত্র পড়ার সময় ভাবলা- বাসা থেকে মেসে আসার সময় আমি যে বল দিয়ে আমার লাগেজটাকে টানতেছিলেনম সেই বল (Force) ছিলো F, লাগেজের মধ্যে যা যা ছিলো সেগুলার ভর(mass) হচ্ছে m আর a হচ্ছে আমার বলের কারণে লাগেজ যে ত্বরণ(acceleration) হইছিলো। তাই লাগেজ টানার সময় আমি F = ma পরিমাণ কাজ করছি। আর আমি যেহেতু জুনের ১১ তারিখ বাসা থেকে মেসে উঠছিলেনম তাই জুনের ১১ তারিখ আমার F=ma দিবস। দেখছো, কোন ঘটনা বা স্মৃতির সাথে পড়াকে মিলাতে পারলে সেটা মনে রাখা অনেক সহজ এবং মজার হয়ে যায়।
কৌশল-৫
যত বেশি লিখে লিখে পড়বে তত ভালো: দেখে দেখে পড়ার চাইতে হালকা সাউন্ড বা মনে মনে উচ্চারণ করে পড়া ভালো। কন্সট্রেশন বেশিক্ষণ থাকে। তবে অংক, সূত্রের প্রমাণ, জটিল গ্রাফ অবশ্যই লিখে লিখে পড়বা। দশবার রিডিং পড়ার চাইতে একবার লিখে পড়া বেশি ইফেক্টিভ। যদিও সবকিছু ১০০% লিখে লিখে পড়তে গেলে বেশি সময় লেগে যাবে। তাই গুরুত্বপূর্ণ সূত্র, প্রমাণ বা থিওরি অন্তত একবার না দেখে লিখবে। ম্যাথ কখনোই সমাধান সামনে খোলা রেখে করবেন না। বরং পাশের রুমে রাখবা। যতবার আটকে যাবা ততবার উঠে গিয়ে দেখে আসবা। তারপরেও না দেখে দেখে করার প্রাকটিস করুন নচেৎ পরীক্ষার হলে গিয়ে আটকে যাবা।
কৌশল-৬
নিজেই নিজের টিচার হয়ে যাও: ক্লাসের বন্ধুদের সাথে আড্ডায় পড়ালেখার টপিক নিয়ে আলোচনা করুন। কোন কিছু পড়া শুরু করার আগে কোন ফ্রেন্ডের কাছ থেকে বুঝে নিতে পারলে- পড়া বুঝা ও মনে রাখা অনেক সহজ এবং দ্রুত হয়। আর ফ্রেন্ড খুঁজে না পাইলে নিজেই নিজের টিচার হয়ে নিজেকে কোন জিনিস বুঝানোর চেষ্টা করুন। কারো কাছে পড়া বুঝতে গেলে তার কাছে ১ ঘন্টার বেশি থাকবা না। আপনি কাউকে পড়া বুঝাতে গেলে গেলে, ১ ঘন্টার বেশি সময় দিবা না।
কৌশল-৭
পড়ার টেবিল, পড়ার রুম: যে সাবজেক্ট পড়বা সেই সাবজেক্টের বই ছাড়া অন্য বই টেবিলে রাখা যাবে না। পড়ার টেবিল দরজার পাশে, ড্রয়িং রুমে রাখবা না। মানুষ আসতে যাইতে ডিস্টার্ব হবে। আবার বারান্দা বা জানালার পাশেও পড়ার টেবিল রাখবা না। নচেৎ কিছুক্ষণ পর পর বাইরে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই ১৫-২০ মিনিট নষ্ট করে ফেলবা। পড়ার রুমে কোন ইলেক্ট্রনিক্স যেমন টিভি, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন রাখা যাবে না। মোবাইল বন্ধ করে পাশের রুমে রেখে আসবা। পড়ার সময় ডিকশনারি ব্যবহার করা লাগলে প্রিন্ট করা ডিকশনারি ব্যবহার করবেন।
কৌশল-৮
রঙ্গিন করে এঁকে পড়ুন : অনেকগুলা বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য, প্রকারভেদ মনে না থাকলে। সেগুলার প্রথম বর্ণ দিয়ে একটা শব্দ বা ছন্দ তৈরি করুন ফেলো। ভূগোল বা বিজ্ঞানের কঠিন কোন চিত্র বা গ্রাফ থাকলে, গ্রাফের কিছু অংশ কালো, কিছু অংশ নীল, কিছু অংশ লাল রঙের কলম/পেন্সিল দিয়ে আঁকলে, গ্রাফ মনে রাখা সহজ হবে। কোন চ্যাপ্টারের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাফ, বিদঘুটে পয়েন্টগুলো কয়েকটা গ্রুপে ভাগ করে আলাদা কালারের কলম দিয়ে খাতায় লিখো। তারপর রিকশায়, বাসে বা সেলুনে চুল কাটার সময় সেই খাতা খুলে সামনে রেখে দিবা। ব্যস, ফ্রি ফ্রি রিভাইজ দেয়া হয়ে যাবে। ইম্পরট্যান্ট চার্ট, পয়েন্টগুলা কাগজে লিখে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখো। কয়েকটা গ্রাফ সিলিং এ লাগিয়ে দাও। যাতে দিনের বেলায় বিছানায় শুইলে সেগুলা দেখে দেখে রিভাইজ দেয়া যায়। আর মশারির ভিতর শোয়া লাগলে, মশারির উপরে বই বা খাতা রেখে ভিতর থেকে শুয়ে শুয়ে রিভিশন দাও।
কৌশল-৯
রিভাইজ, রিভাইজ এন্ড রিভাইজ: গবেষণায় দেখা গেছে- আমরা আজকে সারাদিনে যত কিছু, দেখি, শুনি, জানি বা পড়ি তার ৫দিন পরে চারভাগের তিনভাগই ভুলে যাই। তবে এই ভুলে যাওয়া ঠেকানোর জন্য অনেকগুলা ট্রিকস আছে। যেমন- ৪৫ মিনিট পড়ে ১৫ মিনিটের নিবা এবং সেই ব্রেকে পড়াটা মনে মনে রিভাইজ দাও এবং কোথাও আটকে গেলে আরেকবার দেখে নাও। এবং আজকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পড়লে আগামীকাল ঘুমানোর আগে এই জিনিস ২০মিনিটে রিভাইজ দিয়ে দিবা। তারপর এক সপ্তাহ পরে আরেকবার রিভাইজ দিলে এই পড়ার ৯০% জিনিস এক মাস পর্যন্ত আপনার মনে থাকবে। প্রত্যেকটা সাবজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, ক্লু, সামারি পয়েন্টগুলা আলাদা আলাদা খাতায় লিখে রাখবা। চ্যাপ্টার ওয়াইজ। তারপর টিউশনি যাওয়ার পথে- রিক্সায়, বাসে, এমনকি স্টুডেন্টকে অংক করতে দিয়ে সেই খাতা দেখতে থাকবা। যে জিনিসটা আজকে পড়ছো সেটা- গোসল, ভাত খাওয়া, সিঁড়ি দিয়েই নামা, বাসের জন্য অপেক্ষা, এমনকি বাথরুম করার সময় চিন্তা করবেন। যতবেশি চিন্তা করবেন, যতবেশি মনে মনে রিভাইজ দিবা তত বেশি মনে থাকবে।
কৌশল-১০
বইয়ের পিছনে সামারি লিস্ট: প্রায় সব বইয়ের পিছনেই দুই-এক পাতা সাদা পৃষ্ঠা থাকে। আর না থাকলে স্কচ-টেপ বা পিন দিয়ে লাগিয়ে নিবা। তারপর যে জিনিসগুলা ভুলে যাওয়ার চান্স বেশি বা পরে ভালো করে রিভিশন না দিলে পরীক্ষার হলে লিখতে পারবেন না- সেগুলা পেইজ নাম্বার সহ বইয়ের পিছনের সাদা কাগজে লিখে রাখবা। যাতে ৩-৪ ঘন্টা রিভিশন দেয়ার সুযোগ পাইলে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলা পৃষ্ঠা নম্বর দিয়ে খুব সহজেই খুঁজে বের করে রিভিশন দিতে পারো।
কৌশল-১১
ক্লাসে সিনসিয়ার থাকো: পড়ালেখা খুব কঠিন বা বোরিং কিছু না। একটু খেয়াল করলেই পড়ালেখা ইজিয়ার বানায় ফেলা যায়। সেজন্য ক্লাস শুরু হওয়ার সময় থেকে সিনসিয়ার হতে হবে। ক্লাসের ফার্স্ট বেঞ্চে বসে, খেয়াল করে ক্লাস নোট তুলে, সিরিয়াসলি এসাইনমেন্ট করে, বাসায় এসে ঐদিনের লেকচারগুলোকে আধা ঘন্টা করে স্টাডি করলে, পড়া অর্ধেক সহজ হয়ে যায়।
কৌশল-১২
সিরিয়াস স্টুডেন্টদের বন্ধু হও: তিনজন সিরিয়াস স্টুডেন্টের সাথে একজন অগা-মগা থাকলেও সে পড়ালেখায় ভালো করা শুরু করবে। আর আড্ডা, সিনেমা, খেলা দেখার পাগল পোলাপানদের সাথে বন্ধুত্ব হলে পড়ালেখায় তোমাকে ছেড়ে পালাবে। সো, কষ্ট হলেও ভালো স্টুডেন্টদের সাথে থেকে তাদের ফলো করুন। এটলিস্ট সিরিয়াস স্টুডেন্টদের সাথে উঠাবসা করুন- আপনার মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে। পড়ালেখায় মন বসবে। রেজাল্ট ভালো হবে।
কৌশল-১৩
প্রথম অক্ষর নিয়ে মজার কিছু বানাও: বাংলাদেশ সংবিধানে ১১ টা ভাগ আছে। এই ভাগগুলা পড়ার সময় প্রত্যেকটা পয়েন্টের প্রথম অক্ষর খেয়াল করবেন -(প)-প্রজাতন্ত্র, (রি) রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, (ম) মৌলিক অধিকার, (নি) নির্বাহী বিভাগ, (আ) আইন সভা, (বি) বিচার বিভাগ, (নি) নির্বাচন, (ম) মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, (বা) বাংলাদেশের কর্ম বিভাগ, (জ) জরুরী বিধানাবলী, (স) সংবিধান সংশোধন, বি- বিবিধ। এখন প্রথম অক্ষরগুলা দিয়ে মজার কিছু একটা বানায় ফেল। যেমন, “পরীমনি আবি নিমবাজ সবি” তাইলে আর সংবিধানের ভাগগুলা সহজে আর ভুলবেন না।
কৌশল ১৪
নিমনিক (mnemonic) মানে হচ্ছে মনে রাখার বিশেষ কৌশল। আমাদের ব্রেইন অগোছালো কিছুর চাইতে কৌশলে সাজানো বিষয়ের উপর বেশি মনোযোগ দিতে পারে। ফলে কোন কিছু ছক বা টেবিল আকারে সাজিয়ে নিলে কিংবা নিমনিক (mnemonic) তৈরী করে নিলে দ্রুত মেমোরি তৈরী হয় ও মনে থাকে।