Get on Google Play

চাকরি প্রর্থীদের সমস্যা, প্রশ্ন, মতামত এবং বিভিন্ন পেশা সর্ম্পকে আলোচনা, অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ
#2664
কম, যোগ্যতা আছে কিন্তু তা কাজে লাগানোর উদ্বেগ নেই। জীবনের শুরু থেকে যারা ক্যারিয়ার সচেতন তাদের খুব ভালোভাবে জানা উচিত ক্যারিয়ার কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের নাম নয়। ক্যারিয়ার ধারণ করতে হয় বা ধরে রাখতে হয়।

ক্যারিয়ার এবং জীবনের লক্ষ্য এক নয়:

ক্যারিয়ার আলোচনার শুরুতে একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার ক্যারিয়ার এবং জীবনের লক্ষ্য এক নয়। মানুষ দুনিয়ার জীবনে জীবিকা নির্বাহ বা তার কাংখিত পরিচয় ফুটিয়ে তোলার নিমিত্তে যা অর্জন করা যায় তাই ক্যারিয়ার। কিন্তু জীবনের লক্ষ্য ব্যাপক। জীবনের লক্ষ্যের কোন শেষ বিন্দু নেই, সীমারেখা নেই। জীবনের লক্ষ্য জীবনের মত জীবন্ত। জীবনের সমাপ্তির মাঝে জীবনের লক্ষ্য অর্জনের মাত্রা নির্ধারিত হয়। জীবন থাকা অবস্থায় জীবনের লক্ষ্য অর্জিত হলো কিনা তার বিচার করা সম্ভব নয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় একজন ছাত্র যদি তার ডাক্তার হওয়াকে জীবনের লক্ষ্যে পরিণত করে তাহলে সেই কিন্তু মাত্র পঁচিশ/ত্রিশ বৎসর বয়সের মধ্যে ডাক্তার হয়ে যায়। ডাক্তার হয়ে যাওয়ার পর তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় জীবনের লক্ষ্য কি তাহলে কি জবাব দিবে? ডাক্তার হওয়া যদি জীবনের লক্ষ্য হয় তবে সেই তো লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছে। তাহলে সেই কি বর্তমান জীবনের লক্ষ্যচ্যুত? তাই বলা যায় ডাক্তার হওয়া বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া কোন ব্যক্তির ক্যারিয়ার হতে পারে কিন্তু জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। ক্যারিয়ার জীবনের নির্দিষ্ট একটি সময়ে অর্জন যোগ্য এবং অর্জন হলেই সমাপ্তি। কিন্তু জীবনের লক্ষ্য অপরিবর্তনীয়। অসমাপ্ত জীবনের পথে লক্ষ্য পরিবর্তীত হয় না। জীবনের লক্ষ্য সবসময় মহাকালের দিকে ধাবিত হয়। ক্যরিয়ার অর্জনের পর ধ্বংস হতে পারে কিন্তু জীবনের লক্ষ্য সর্বাবস্থায় অবিনাশী।

ক্যারিয়ার: (Career)
-----------------------
Career শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- জীবনের পথে অগ্রগতি, জীবনায়ন, বিকাশক্রম, জীবিকা অর্জনের উপায় বা বৃত্তি। Cambridge International Dictionary of English এ ক্যারিয়ারে যে সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে তাহলো: শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে অর্জিত এমন এক কর্ম যেখানে সমগ্র কর্মজীবনে গুনগত এবং অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত উত্তোরোত্তর সমৃদ্ধি আসে। দায়িত্বের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায় এবং জীবন যাপনে পর্যাপ্ত অর্থের নিশ্চয়তা থাকে। জীবনের ধাপে ধাপে উন্নতির সোপানে অগ্রসর হওয়ার নাম ক্যারিয়ার।

ক্যারিয়ার অর্জনের উপায়:
-----------------------
আমরা আগেই বলেছি ক্যরিয়ার অর্জনযোগ্য একটি স্তরের নাম। কিন্তু কাজটি মোটেই সহজ নয়। তার জন্য প্রয়োজন বহুবীদ উপায় উপকরণের সমন্বয়। প্রয়োজন ক্যারিয়ার প্লানিং, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে এবং সেই উদ্দেশ্যের যৌক্তিকতা। নিজের উপায় উপকরণ, ঝোঁক প্রবণতা, যোগ্যতা, সাধ ও সাধ্যের মাঝে দারুণ এক সমন্বয় সুনির্দিষ্ট ক্যারিয়ার অর্জনে সহায়ক। এই কথাও সত্যি মানব উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োজন পুরণের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ক্যারিয়ার পরিকল্পনা হওয়া উচিৎ। দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে সময়ের চাহিদা পুরণ এবং ব্যক্তির সামর্থ্য ও উচ্চাংখা ইত্যাদি বিষয় গুলো ক্যারিয়ার পরিকল্পনা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে সামান্য ব্যর্তয় ঘটলে ক্যারিয়ার অর্জন হুমকির মধ্যে পড়ে। অনেক সময় স্বপ্নময় জীবনের পরিসমাপ্তি অন্ধকারকে আলিঙ্গন করতে করতেই শেষ হয়।

ক্যারিয়ার প্লানিং কেন?
-----------------------
সুনির্দিষ্ট বা স্থিরকৃত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য।
যোগ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণের জন্য।
জীবনের লক্ষ্যপানে পৌঁছাতে ক্যারিয়ার নামক বাহনকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে।
ক্যারিয়ার প্লানিং এর প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ধরুণ আপনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাবেন। এ উদ্দেশ্যে ট্রেন স্টেশনে গিয়ে উপস্থিত। কিন্তু ভুল বশত বা অন্য কোন কারণে জেনে নেননি কোন ট্রেনে ঢাকা যাবেন। পাশাপাশি দুটো প্লাটফর্মে দাঁড়ানো দ’ুটো ট্রেনের যে কোনটিতে উঠেই কি আপনি ঢাকা যেতে পারবেন? না পারবেন না। আপনার জীবনের স্থিরকৃত গন্তব্যস্থলেও পৌঁছানোর ব্যাপারে আপনি একই ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে আপনাকে এবং সঠিক সময়েই তা নিতে হবে লক্ষ্যে পৌঁছার জন্যে। আর যদি লক্ষ্যই ঠিক না হয়ে থাকে তবে কোথায় যাবেন আপনি শেষ পর্যন্ত? এই সিদ্ধান্তহীনতা সমস্যা সৃষ্টি করছে সঠিক পেশায় পৌঁছার ব্যাপারে। তাই প্রয়োজন ক্যারিয়ার প্লানিং এবং সেই অনুযায়ী নিজকে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।

ক্যারিয়ার প্লানিং পদ্ধতি:
-----------------------
আত্মপ্রকৃতি যাচাই- নিজের সামর্থ্য ও যোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া।
ঝোঁক প্রবণতা- আবেগ ও আগ্রহকে সমন্বিত করণ।
সম্মেলনকে পেশা নির্দিষ্টকরণ- যে পেশা অবৈধ বা অনৈতিক নয়।
শুধুমাত্র অর্থ নয় জীবনের মৌলিক লক্ষ্যের দিকে মনোনিবেশ- সেবা ও সততা, দক্ষতা ও দেশপ্রেম।
জীবন শৃংখলা ও মহাকালের সাফল্যের নিশ্চয়তা।
[সময়ের কসম; নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে, সৎ কাজ করেছে, অপরকে হক কথা বলতে ও ধৈর্য্যধারণ করতে উপদেশ দিয়েছে। (সূরা আসর)]

ক্যরিয়ার- স্তর বিন্যাস :
-----------------------
মানব জীবন কিছু সময়ের সমষ্টি। ক্যারিয়ার মানব সময়ের কিছু ধাপের কার্যকর বাস্তবতা। যে গুলোকে আমরা নিন্মোক্ত স্তরে সাজাতে পারি-
১. ২৫ বৎসর পর্যন্ত বয়সকে ক্যারিয়ারের স্বপ্নময় স্তর বলা যায়। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবতায় একজন মানুষ এই সময় পর্যন্ত ক্যারিয়ার অর্জনের স্বপ্নময় ভূবনে বিচরণ করে।
২. ২৫ থেকে ৩৫ বৎসর বয়সকে আমরা ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠার স্তর হিসেবে গণ্য করতে পারি। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করতে এই সময়ে একজন ব্যক্তি তীল তীল করে নিজকে সম্মুখে এগিয়ে নেন।
৩. ৩৫ থেকে ৫৫ বৎসর পর্যন্ত সময়কে আমরা একজন ব্যক্তির ক্যারিয়ারের ফলভোগের স্তর হিসেবে গণ্য করতে পারি। জীবনে দীর্ঘকাল ক্যারিয়ারে সংগ্রামে করে কাংখিত মান অর্জনের পর সে তার ক্যারিয়াররের পূর্ণতা পায় আর এই ভোগটিকে ক্যারিয়ারের সুন্দরতম স্তরও বলা যায়।
৪. ৫৫ বৎসরের পরের বয়সকে আমরা ক্যারিয়ারের ক্ষয়িষ্ণু এবং পরিসমাপ্তির বয়স বলতে পারি। ক্যারিয়ার যতই সুন্দর হোক সুনির্দিষ্ট একটি সময় পার করার পর ব্যক্তির ক্যারিয়ারের ভাটা পড়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় অনেক সময় ক্যারিয়ার জীবন অক্ষমতায় রূপ নেয়।

ক্যারিয়ার পরিচয়:
-----------------------
সততা, দক্ষতা ও দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত একদল মানুষ নিন্মোক্ত পেশা গুলোকে তার ক্যারিয়ার হিসাবে বেছে নিতে পারে। এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার পরিকল্পনার পদ্ধতিকে অবশ্যই সামনে রাখতে হবে। যা নিজের ঝোঁক প্রবণতার সাথে সংগতিপূর্ণ।
১. নির্বাহী বিভাগ- সচিব, ম্যাজিস্ট্রেট, ইউ এন ও।
২. বিচার বিভাগ- বিচারপতি, জজ।
৩. প্রশাসন- এস. পি, এস. আই, ও. সি।
৪. সেনাবাহিনী- লেফট্যানেন্ট, কর্ণেল, মেজর।
৫. প্রকৌশলী
৬. বিজ্ঞানী
৭. সাংবাদিকতা- ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া (স্থানীয় ও জাতীয়)
৮. আইনবিদ- এ্যাডভোকেট, ব্যারিস্টার।
৯. ডাক্তার- হোমিও, এ্যালোপ্যাথিক
১০. শিক্ষকতা- বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, স্কুল।
১১. ব্যবসায়ী- ক্ষুদ্রু বিনিয়োগ, মার্চেন্ট, শিল্পপতি, কারখানা, যৌথমূলধনী, অংশীদার মূলক।
১২. জন প্রতিনিধি- মেম্বার, চেয়ারম্যান, মেয়র, কমিশনার।
১৩. কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, প্রযোজক, শিল্পী।
১৪. ট্যুরিজম- ট্যুরিস্ট গাইড, টুরিস্ট ব্যাবস্থাপনা।

ক্যারিয়ার গঠনের প্রয়োজনীয়তা :
-----------------------
ক্যারিয়ার আমার মুক্তির পথ।
দূর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গঠন।
সততা দক্ষতাও দেশপ্রেমের চেতনা।
ক্যারিয়ার গঠনের পদ্ধতি:
বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা।
গুণগত ও যুগযোপযোগী শিক্ষা অর্জন।
প্রতিভার যথার্থ ব্যবহার।
সঠিক মনোভাব।
অধ্যবসায়।
জীবন শৃংখলা।
ভারসাম্যপূর্ণ জীবন।
সময়ের সঠিক মূল্যায়ন/অবসর বলতে কিছু নেই।
নিখাদ আত্মবিশ্বাস।
মানসিক দ্বন্দ্ব সংঘাত দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করা।
ভয় ও দুশ্চিন্তা দূর করুণ।
চ্যালেঞ্জিং মানসিকতা ও ঝুঁকি নেয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করণ।
সামর্থ্যর পূর্ণতা এবং পরিশ্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দান।

শেষকথা: ক্যারিয়ার মানুষ নির্ধারণ করে তার জীবনের প্রয়োজনে জীবিকার স্বার্থে। জীবন ছুটে চলে অন্তহীন গন্তব্যে। যে গন্তব্যে ক্যারিয়ার হয়ে পড়ে বিকল যদি না ক্যারিয়ার এবং জীবনের উদ্দেশ্য একই উৎস থেকে একই লক্ষ্যে গড়ে না উঠে। জীবিকার জন্য ক্যারিয়ার জীবনের উদ্দেশ্য পূরণ করে না কিন্তু জীবনের মহাসাফল্যে গড়ে উঠা ক্যারিয়ার জীবিকার ও নিশ্চিয়তা দেয়। তাই একজন মুমিন যদি তার প্রত্যাশিত ক্যারিয়ারকে ঈমান, ইলম এবং আমলের মানদন্ডে যথার্থ মানের গড়ে তুলতে পারে তাহলেই দুনিয়ার জীবনের পাশাপাশি আখেরাতের সাফল্য নিশ্চিত হবে।
‘‘তোমরা আল্লাহর রঙ্গে রঙ্গীন হও, তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ রং আর কি হতে পারে।’’ (আল কুরআন)

Raisul Islam Hridoy
    Similar Topics
    TopicsStatisticsLast post
    0 Replies 
    20240 Views
    by masum

    বিষয় : রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আপন বিভাগের “[…]

    বিষয় : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্[…]

    Amendment of Vacancy announcement for the post of […]