- Thu Jun 14, 2018 1:48 am#222
২৬ প্রশ্নে বিসিএসের খুঁটিনাটি
লিখেছেন
মাশরুফ হাসান।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার
২৮তম বিসিএস ।
1) সিভিল সার্ভিস জিনিসটা কি?
উত্তরঃ সিভিল সার্ভিস হচ্ছে সরকারী চাকুরি। যে কোন দেশে সরকারী চাকুরি মোটামুটি দু ভাগে বিভক্তঃ মিলিটারি আর সিভিল। মিলিটারি বলতে আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স বোঝায়, আর সিভিল সার্ভিস বলতে প্রশাসন(মানে যাঁরা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলার ডিসি, মন্ত্রনালয়ের সচিব এসব হন), পুলিশ, ট্যাক্স , পররাষ্ট্র, কাস্টমস , অডিট , শিক্ষা ইত্যাদি ২৭ টি সার্ভিসকে বোঝায়। এছাড়া জুডিশিয়াল সার্ভিস আছে, বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আছে- তাঁদের এ আর্টিকেল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
2) ক্যাডার মানে কি?
উত্তরঃ ক্যাডার মানে হচ্ছে কোন সুনির্দিষ্ট কাজ করার জন্যে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি দল।সরকারী চাকুরির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়, তাই এদের সিভিল সার্ভিস ক্যাডার বা বিসিএস ক্যাডার বলা হয়। উল্লেখ্য, এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ত্রধারী সন্তাসী বা দলীয় ক্যাডারের কোন সম্পর্ক নেই।
3) বিসিএস অফিসারদেরকে প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড অফিসার বলা হয় কেন?
উত্তরঃ বাংলাদেশ সরকারের চাকুরিতে চারটি শ্রেনী আছে, যার সর্বোচ্চ শ্রেনীটাকে বলা হয় প্রথম শ্রেনী বা ফার্স্ট ক্লাস। এদের নিয়োগের সময় সরকারী গেজেট বা বিজ্ঞপ্তি বের হয়, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট এদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন।সামগ্রিক দিক বিবেচনায় মান মর্যাদা, দায়িত্ব-কর্তব্যের পরিধি এবং সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড অফিসারগণ তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকেন।
4) ক্যাডার কত প্রকার?
উত্তরঃ বিসিএস ক্যাডার মূলতঃ দুই প্রকার। জেনারেল ( পুলিশ, এডমিন, পররাষ্ট্র ইত্যাদি) এবং টেকনিকাল ( শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সড়ক ও জনপদ ইত্যাদি)। জেনারেল ক্যাডারে যে কেউ যে কোন সাবজেক্ট থেকে পরীক্ষা দিয়ে চাকুরি করতে পারেন, কিন্তু টেকনিকাল ক্যাডারে চাকুরি করতে হলে নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা লাগবে। যেমন , এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ সরকারী ডাক্তার হয়ে চাকুরি করতে পারবেন না।
৫)কাদের জন্য বিসিএস পরীক্ষা?
৬) বিসিএস পরীক্ষা দেবার যোগ্যতা কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, নির্দিষ্ট বয়েসসীমার ভেতরে বয়েস থাকতে হবে, যে কোন বিষয়ে চার বছরের অনার্স বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।তিন বছরের অনার্স ও এক বছরের মাস্টার্স করা প্রার্থীরাও পরীক্ষা দিতে পারবেন।বিদেশে পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীরাও শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে তাদের ডিগ্রি বাংলাদেশের চার বছরের ডিগ্রির সমান- এই সার্টিফিকেট দেখিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলের শেষে এবছরের বিসিএস পরীক্ষার সার্কুলারের লিঙ্ক যোগ করে দিয়েছি, দেখে নিন।
৭) ভাইয়া আমি তো ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার/
আর্কিটেক্ট/ সেক্সোলজিস্ট। আমি কি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশ, ডিপ্লোম্যাট, ট্যাক্স অফিসার ইত্যাদি হতে পারব? নাকি আমি ডাক্তার বলে আমাকে স্বাস্থ্য সার্ভিসেই যেতে হবে?
উত্তরঃ অবশ্যই পারবেন। কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার এই টেকনিকাল ডিগ্রি বিশাল সুবিধা বয়ে আনবে। যেমন, আপনি যদি ডাক্তার হয়ে পুলিশে যোগদান করেন, সেক্ষেত্রে ইউ এন মিশন গুলোতে আপনাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে।আপনি যেমন এক দিক দিয়ে পুলিশের প্রধানও হয়ে যেতে পারেন, আরেক দিক দিয়ে ডাক্তারি প্র্যাকটিসও করতে পারবেন অনুমতি সাপেক্ষে। আপনি ইঞ্জিনিয়ার হলে পুলিশে বিভিন্ন টেকনিকাল ক্রাইমের ট্রেনিং এ আপনাকে প্রাধান্য দেয়া হবে। বহু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার আছেন যারা টেকনিকাল ক্যাডারে না গিয়ে সচিব, রাষ্ট্রদূত ইত্যাদি হয়েছেন। ইংরেজি পড়েছেন বলেই শেকস্পীয়ার হতে হবে, এই ধারণা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
৮ ) ভাইয়া, আমি তো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় , বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়, মফস্বলের ডিগ্রি কলেজ , মঙ্গলগ্রহের এলিয়েন একাডেমি এসব জায়গা থেকে পড়াশোনা করেছি। আমি কি বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারব?
উত্তরঃ ভাই, আপনি যেখানেই পড়েন না কেন, আপনার যদি লাইফে একটার বেশি থার্ড ক্লাস না থাকে এবং আপনি যদি ৬ নম্বর প্রশ্নে বলা শিক্ষাগত যোগ্যতা পূরণ করে থাকেন- আপনি পরীক্ষা দিতে পারবেন।ইংলিশ মিডিয়ামের/মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরাও পরীক্ষা দিতে পারবেন। আপনার প্রতিষ্ঠান না, পরীক্ষার খাতায় আপনি কি লিখছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনি চাকুরি পাবেন কি পাবেন না।
৯) ভাইয়া, সিভিল সার্ভিসের মেডিকেল টেস্ট কেমন হয়? পুলিশের মেডিকেল টেস্ট কি আর্মির মত হয়? এই মেডিকেল টেস্টে কি বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকে?
উত্তরঃ সিভিল সার্ভিসের মেডিকেল টেস্ট একেবারেই সাধারণ এবং বেসিক হয়,যে কোন সরকারী হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন।আপনার যদি অতি গুরুতর কোন সমস্যা না থাকে, সেক্ষেত্রে বাদ পড়ার সম্ভাবনা নেই। পুলিশের মেডিকেল টেস্ট বাকি সব ক্যাডারদের মতই হয়, আলাদা না। শুধুমাত্র উচ্চতা আর ওজনে পার্থক্য আছে কিছুটা, যেটা আপনাদের সুবিধার্থে নীচের ছবিতে দিয়ে দিলামঃ পুলিশের ক্ষেত্রে চোখের নিয়ম হচ্ছে, আপনার চোখ যাই হোক না কেন, যদি চশমা পরার পর সেটা ৬/৬ হয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই।
১০) ভাইয়া, শুনেছি অনার্স কমপ্লিট না করেও বিসিএস পরীক্ষা দেয়া যায়, এটা কি সত্যি?
উত্তরঃ না, অনার্স না করে পরীক্ষা দেয়া যায়না। তবে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত তারিখের মধ্যে অনার্স এর সব পরীক্ষা শেষ হয়েছে কিন্তু রেজাল্ট দেয়া বাকি আছে- এরকম হলে বিভাগীয় পরীক্ষার প্রধানের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে পরীক্ষা দেয়া যায়। পরবর্তীতে ভাইভার সময় মূল সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে হয়।
কোন সার্ভিসে ঢুকবেন?
১২) ভাইয়া, ক্যাডার চয়েস কি বদলানো যায়?
উত্তরঃ না, একবার ফর্ম জমা দেবার পর সেই ক্যাডার চয়েস বদলানোর সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ পরের বার আবার বিসিএস দিয়ে পছন্দের ক্যাডারে কোয়ালিফাই করে সেটাতে চলে গিয়েছেন।
১৩) ভাইয়া, ক্যাডার চয়েসের উপর সিলেকশন কিভাবে হয়?
উত্তরঃ আপনি প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয় এভাবে দশ বারোটা চয়েস দিলেন। পরীক্ষায় আপনার প্রাপ্ত নম্বর এবং আপনার ক্যাডার চয়েসের পছন্দক্রমের উপর নির্ভর করে আপনাকে কোন নির্দিষ্ট ক্যাডারে সিলেক্ট করা হবে। আপনার পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এখানে মূল ভূমিকা পালন করবে। ধরা যাক, আপনার প্রথম পছন্দ পুলিশ, আরেকজনের প্রথম পছন্দ ফরেন সার্ভিস, দ্বিতীয় পছন্দ পুলিশ। দ্বিতীয়জন যদি ফরেন সার্ভিস না পায় কিন্তু আপনার চেয়ে ওর নাম্বার বেশি থাকে- তাহলে দ্বিতীয় পছন্দ হওয়া সত্বেও সে আপনার আগে পুলিশ পাবে।
১৪) কতগুলো ক্যাডার চয়েস দেব?
এ প্রশ্নের উত্তরে আমার অগ্রজ ও সহকর্মী ফরেন সার্ভিস অফিসার সুজন দেবনাথের কথা সরাসরি লিখছি-
“আমার অভিমত হল – যেই চাকরিগুলো হলে আপনি অবশ্যই করবেন, শুধু সেগুলোই চয়েস দিন। এক্ষেত্রে ২টা ইস্যু। (১) যারা বিসিএসে যে কোন ক্যাডার হলেই চাকরি করবেন, তাঁরা সার্কুলার দেখে যেগুলোতে এপ্লাই করতে পারবেন, সবগুলো চয়েস দিয়ে দিন। (২) আর যারা মনে করেন – কয়েকটা ক্যাডার না হলে আসলেই চাকরি করবেন না, তাঁরা প্লিস অন্য ক্যাডার চয়েস দিয়েন না। চাকরি হল আর আপনি জয়েন করলেন না বা কিছুদিন পরে ছেড়ে দিলেন, সেটা সবার জন্য খারাপ। দেশের জন্যও খারাপ।
তখন আমার ২৮–তম এর ফাইনাল রেজাল্ট ও মেডিকেল হয়ে গেছে। কিন্তু গেজেট তখনও হয়নি। সেই সময় ২৯–তম বিসিএসের ভাইভা শুরু হয়ে গেল। এখন ২৮ আর ২৯ দুটোতেই আমার ফার্স্ট চয়েস ফরেন। আমি ২৯–তমের ভাইভা দিতেই গেলাম না। ভাবলাম – একটা পোস্ট নষ্ট করব কেন। আমার পরিচিত বেশ কয়েকজনকে দেখলাম – ২৮তমে ফার্স্ট চয়েস পেয়েও আবার ২৯–এ ভাইভা দিলেন। বললেন, তখনও গেজেট হয়নি। কী হয় কিছু বলা যায় না। রিস্ক তো আছেই। যাই হোক, তাঁরা বেশি সতর্কতামূলকভাবে এটা করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে এটা দোষের নয়। আইনসিদ্ধও বটে। কিন্তু যেটা হয়েছে, অনেকেই ২বার চাকরি পেয়েছে। আর দ্বিতীয়বার জয়েন করেনি। সে পোস্টগুলো ফাঁকা গেছে। কিছু নাকি কোটা থেকে পুরণ করেছে। এতে সরকারের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অনেক পোস্ট খালিই থেকেছে। আর কিছু যোগ্য লোক চাকরি পায়নি। হয়তো তাঁদের বয়স চলে গেছে। তাই আপনি যে চাকরিটা পেলে আসলেই করবেন, শুধু সেটাই চয়েস দিন। তবে যারা ক্যাডার চেঞ্জ করতে আবার পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য ঠিকই আছে”।
১৫) সার্কুলারে কোন একটা ক্যাডারে অল্প ক’টা পোস্ট আছে। তো সেটা কি চয়েসে দিব?
এ প্রশ্নটাও সরাসরি সুজন দেবনাথের ভাষায় উত্তর দিচ্ছিঃ
“আমার ২৮–তম বিসিএস–এর চয়েস নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখি অডিটে মাত্র ২/৩ পোস্ট। তো বন্ধু বলল, এটা চয়েসেই দিবে না। কোটা বাদ দিলে ১/২ পোস্ট – সেটা চয়েসে দিয়ে কী হবে? এটা একেবারেই ভুল কথা। পোস্ট বেশি থাক আর কম থাক নিজে যেই চাকরিটা আগে করতে চান সেভাবেই চয়েস দিন। আর পোস্ট পরবর্তীতে বাড়াতে বা কমাতে পারে। সাধারণত কমায় না। কখনও কখনও বাড়ায়। তাই যেসব ক্যাডারের সার্কুলার হয়েছে, সেগুলোতে আপনার পছন্দমত সিরিয়ালে চয়েস দিয়ে দিন।“
১৭) ভাইয়া, কোচিং করাটা কি জরুরী?
উত্তরঃ এ ব্যাপারে আবারও সুজন ভাইয়ের স্মরন নিইঃ“প্রথমেই বলি আমি প্রিলি, রিটেন বা ভাইভা কোন কিছুর জন্যই কোচিং করি নাই, তবে বন্ধুদের কাছ থেকে কিছু কোচিং টাইপের ম্যাটেরিয়াল জোগাড় করেছিলাম। যদিও পরে একাধিক কোচিং দীর্ঘদিন ধরে আমার নাম ও ছবি তাঁদের প্রোসপেকটাসে দিয়ে গেছে, কেন দিচ্ছে জানতে চাইলে মাপ চেয়েছে কিন্তু পরের বছর আবার দিয়েছে। যাই হোক – আপনাকে আগের প্রশ্ন এবং সিলেবাস দেখে প্রিপারেশান নিতে হবে। তাতে আপনি কোচিং করুন আর নাই করুন। কোচিংয়ে কিছু রেডীমেইড জিনিস (লেকচার শিট টাইপের) দেয়া হয় আর পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেয়া হয়। এ দুটো জিনিস কিছুটা হলেও আপনাকে সাহায্য করবে। আর পড়ানো বা শেখানো সেটা পাওয়া যায় খুব সামান্য। প্রতিটা কোচিংয়েই দু’একজন ভাল শিক্ষক আছে যাদের ক্লাশে আপনি কিছু পাবেন আর বাকি ক্লাশগুলো থেকে কিছুই শেখার নেই। বিশেষজ্ঞ ভাব নিয়ে মার্কেটিং চাপাবাজি চলে। . এখন আসি আপনি ডিসিশান পয়েন্টে আসবেন কিভাবে? আমি আগেই বলেছি দুটা লাভ – ১.ম্যাটেরিয়াল, ২. মডেল টেস্ট। এখন দেখুন আপনি এ দুটো জিনিস নিজে নিজে করতে পারবেন কিনা। পারলে কোচিংয়ের দরকার নেই। আর না পারলে কোচিং করুন। ম্যাটেরিয়াল এখন বাজারে, ইন্টারনেটে বিভিন্ন শর্ট টেকনিক সবই পাওয়া যায়, এগুলো জোগাড় করুন। এরপর দেখুন, আপনি নিজে নিজে পড়ার জন্য সময় দিতে পারছেন কিনা। বন্ধুদের সাথে গ্রুপেও পড়তে পারেন। সাথে মডেল টেস্টের গাইড ও কারেন্ট এফেয়ার্স থেকে মডেল টেস্ট দিন। এগুলো যদি নিজে নিজে করতে পারেন, তাহলে কোচিংয়ের দরকার নেই। আর সময় দিতে ইচ্ছা না করলে কোচিং করুন। কোচিংয়ে যেহেতু পয়সা দিবেন, তাই একটা মানসিক চাহিদা থাকবে আর পরীক্ষার পরিবেশ মিলে কিছু সময় প্রিপারেশানের জন্যই ব্যয় হবে। এতে কিছুটা লাভ হবে। . তবে কোচিংয়ে ভর্তি হয়েই যদি ভাবেন, আপনার কাজ গেছে, তাহলেই ধরা। ভোকাবিউলারি, গ্রামার আর ম্যাথ এগুলো ধরে ধরে পড়ানোর মত লোকজন কোন কোচিংয়ে নেই। আর প্রিপারেশনের সমস্যা এগুলোতেই। বাকিগুলো সময় দিলে হয়েই যাবে কিন্তু এগুলোর জন্য নিজের ডিটারমিনেশান এবং অনেক ক্ষেত্রে কারো হেল্প লাগবে। তো আমার পরামর্শ হচ্ছে, সমস্যা চিহ্নিত করে কিভাবে সেটা সলভ করবেন, না পারলে কার সাহায্য নিবেন সেটা খুঁজে করুন। কোচিং করুন আর নাই করুন, এটা আপনাকে করতেই হবে। যে গ্রামারটা আপনি বুঝছেন না সেটা কোন বইতে কোথায় নিয়ম ও উদাহরণ দিয়ে আছে, আর নিয়মটা আপনি বুঝতে পারছেন কিনা সেটা জানতে হবে। কোন ম্যাথে প্রোবলেম হলে সেটা কার থেকে জেনে নিবেন সেটা ভাবুন। ভোকাবিউলারি শিখতে ও মনে রাখতে উপায় জানুন। আর বাকিগুলো গাইড থেকে,বই থেকে বা কোচিংয়ে সব জায়গায়ই পাবেন।“
আমার কথাঃ আমি কোচিং করেছিলাম, তবে প্রিলি ছাড়া বাকিগুলোতে খুব একটা লাভ হয়নি। কোচিং সেন্টারগুলো ভুলভাল কথা বলে আপনার আত্মবিশ্বাস-এর বারোটা বাজাতে ওস্তাদ, যাতে আপনি ওদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।কোচিং করতে গেলে ওদের চাপাবাজিতে বিভ্রান্ত হবেন না।
১৮) ভাইয়া, আমি মুখস্ত করতে পারিনা, আমার কি বিসিএস হবে?
উত্তরঃ বিসিএস পরীক্ষায় মুখস্ত করে বড়জোর প্রিলি পার হতে পারবেন, চাকুরি পাবেন না। গাদা গাদা সাধারণ জ্ঞান মুখস্ত না করতে পারলে বিসিএস পরীক্ষায় চান্স পাওয়া যায়না- এটা সর্বকালের সেরা মিথ্যা কথা। সাধারন জ্ঞান কতটা কি পড়বেন, উপরে দেয়া লিঙ্কগুলোতে খুব সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। আমার “How I Made It in the tiresome journey of BCS” আর্টিকেলটি পড়ুন, যেটার ড্রপবক্স লিঙ্ক দিয়েছি শুরুতেই ওখানের প্রথম আর্টিকেল এটি।
১৯) ভাইয়া, আমি প্রথম বার বিসিএস দিচ্ছি পরীক্ষা, আমার কি হবে?
উত্তরঃ জ্বি, হবে, যদি ঠিক মত পড়াশোনা করে পরীক্ষা দেন।আমি ২৩ বছর বয়েসে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ মেধাক্রমে চতুর্থ হয়েছিলাম, পরের বিসিএসে তৃতীয়। আমার মত এইচ এস সি তে ৩.৬ জিপিএ পাওয়া প্রাইভেট ভার্সিটির গর্দভ যদি প্রথম বারেই পারে, আপনিও পারবেন। একই কথা যারা শেষবারের মত পরীক্ষা দিচ্ছেন তাদের জন্যেও প্রযোজ্য। ঠিকমত পড়াশোনা করে পূর্বের ভুলগুলো কাটিয়ে উঠুন, আপনারও চাকুরি হবে।
২০) ভাইয়া, আমার হাতের লেখা খারাপ এবং ধীর। কি করব?
উত্তরঃ আমি আমার লেখার যে লিঙ্কটি দিয়েছি, ওটা থেকে ২৫ পৃষ্ঠার ডকুমেন্টটি ডাউনলোড করে বাংলা লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে যে আর্টিকেলটি লিখেছি, ওটা পড়ুন।কি করতে হবে বুঝতে পারবেন।হাতের লেখার সৌন্দর্য এবং স্পীড বিসিএস পরীক্ষার জন্যে চরম জরুরী। উল্লেখ্য, ইংরেজিতে দখল থাকলে পরীক্ষা ইংরেজি ভাষাতেও দিতে পারেন। ২৭ তম বিসিএস পরীক্ষার ফার্স্ট বয় কামরুজ্জামান ভাই পুরো পরীক্ষাটা ইংরেজিতে দিয়েছিলেন।এবার একটু সতর্ক করি, ইংরেজি বা বাংলা যে ভাষাতেই পরীক্ষা দিন না কেন, আপনার উত্তরের মান এবং তা প্রেজেন্টেশনের উপর ফলাফল নির্ভর করবে। ভাব মারতে গিয়ে ভুলভাল ইংরেজি লিখলে চরম ধরা খাবেন।
স্টুপিড কোয়েশ্চেন্সঃ
২১) ভাইয়া, বিসিএস এ নাকি টাকা ছাড়া চাকুরি হয়না? “অমুক ভাই” তো শুনেছি ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে চাকুরি পেয়েছেন, আমার এত টাকা নেই আমি কি করব?
উত্তরঃ ঠিকই শুনেছেন।আমি নিজেও টাকা দিয়েই চাকুরিতে ঢুকেছি। কত টাকা শুনবেন? সাড়ে ছয়শ টাকা। যদ্দুর মনে আছে, আমাদের সময়ে চাকুরির আবেদনপত্রের দাম ছিল পাঁচশ টাকা, আর মেডিকেল টেস্ট করাতে লেগেছিল দেড়শ টাকা- এই সাড়ে ছয়শ টাকা দিয়ে আমি চাকুরি পেয়েছি।
বাংলাদেশের মত দুর্নীতিপ্রবন দেশে প্রায় সব জায়গাতেই দুর্নীতি হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।কেউ কেউ হয়তোবা চাকুরি পায়ও। আপনার যদি এত টাকা, যোগাযোগ, ক্ষমতা ইত্যাদি থাকে, পারলে বিসিএস চাকুরি নিয়ে নিন ওটা ব্যবহার করে।আর যদি তা না থাকে, দয়া করে এসব ফালতু বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে পড়াশোনা করুন, কাজে দেবে।
২২) ভাইয়া, আমার তো “কোটা” নেই, আমার কি বিসিএস হবে?
উত্তরঃ ভাই, যেটা নেই, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন কেন? যাদের কোতা আছে তারা ওটা ব্যবহার করুক, ওদের কথা চিন্তা করে আপনি আপনার সময় নষ্ট করবেন কেন? একশটা সীটের মধ্যে অন্ততঃ ৪৫টা সীট আছে আপনাদের মত নন-কোটা পরীক্ষার্থীদের জন্য। ওতার জন্য লড়াই করুন, আপনার তো দরকার মাত্র একটা সিট!
২৩) ভাইয়া, আমি দেখতে শুনতে হ্যান্ডসাম নই, মাথায় চুল কম– হাইটও কম, গায়ের রঙ কালো। আমার কি চাকুরি হবে??
উত্তরঃ ও ভাইজান, আপনি সরকারী চাকুরির পরীক্ষা দিতে এসেছেন, এসকর্ট সার্ভিসের না। আপনার চেহারা, গায়ের রঙ, গ্রাম থেকে না শহর থেকে এসেছেন- এগুলো কিচ্ছুতে কিচ্ছু যায় আসে না। বোঝা গেল?
২৪) ভাইয়া, ক্যাডার হতে গেলে কত পার্সেন্ট নম্বর পেতে হয়? আমি যদি “এত” পাই তাহলে কি আমি “অমুক” ক্যাডার পাব?
উত্তরঃ ভাই, আপনি কত পাবেন এইটা আগে থেকেই ঠিক করে ফেলতেসেন কিভাবে? আর লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীরা কে কত মার্ক্স পাবে সেটা তো আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না- তাদের নম্বর আপনার চেয়ে বেশি না কম এইটা জানবেন কেমনে? তা যদি না জানেন, কিভাবে নিশ্চিত হবেন অমুক ক্যাডার পাবেন কিনা?? মাথা থেকে এইসব ফাউল চিন্তা ঝেড়ে ফেলে পড়াশোনা করেন, ওতে নাম্বার হয়ত বাড়বে- চাকুরি পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।
২৫) ভাইয়া, পড়াশোনা করতে ইচ্ছা করেনা। একটানা পড়তেও পারিনা। কি করব?
উত্তরঃ গুগলে গিয়ে Pomodoro Technique লিখে সার্চ দিন, ভালভাবে শিখুন এটা, পড়তে গিয়ে কাজে লাগান। সংক্ষেপে বলতে গেলে, একটানা ২৫ মিনিটের বেশি কোন বিষয় পড়বেন না।২৫ মিনিট যে কোন বিষয়ে দুনিয়াদারি ভুলে গিয়ে পড়ুন, ঠিক ২৫ মিনিট পর ৫ মিনিট ব্রেক নিন, তারপর আবার ২৫ মিনিট পড়ুন। POMOTODO নামে একটা এ্যাপ আছে, এটা নামিয়ে নিয়ে কাজে লাগাতে পারেন। আমি নিজে এটা ব্যবহার করে প্রোডাক্টিভিটি বহুগুণ বাড়িয়ে ফেলেছি।বহু পিএইচডি স্টুডেন্ট এটা ব্যবহার করে সারাবিশ্বজুড়ে।বিসিএস পরীক্ষার সময় এটা আমার জানা থাকলে আমার রেজাল্ট আরো ভালো হত।
উপরের ২৫ টা প্রশ্নের উত্তর জানলে এবং উপরে দেয়া রিসোর্সগুলো ঠিকমত কাজে লাগালে আমি বাজী ধরে বলতে পারি, আপনাকে ঠেকাতে পারবে এমন বাপের ব্যাটা এখনো জন্মায়নি।
এবার মাদার অফ অল কোশ্চেন্স বা বোনাস প্রশ্নঃ
২৬) ভাইয়া , আপনার এই এতদিনের চাকুরি এবং বিসিএস পরীক্ষার অভিজ্ঞতার সারমর্ম কি?
উত্তরঃ সারমর্ম একটাই, পোকার খেলায় যেমন বিসিএস পরীক্ষাতেও তেমন- It’s not the cards you are given at hand, its how you play them. আপনার সীমিত সামর্থ্য ও দুর্বলতা মাথায় রেখেই নিজের সর্বোচ্চটুকু দিন, বিজয়মাল্য ছিনিয়ে আনতে পারবেনই।
বিসিএস পরীক্ষা মেধা যাচাই এর পরীক্ষা নয়, এটা হচ্ছে ধৈর্য ধরে লেগে থাকার পরীক্ষা। কি বীভৎস পরিশ্রম আমাকে করতে হয়েছে বিসিএস পরীক্ষায় কোয়ালিফাই করতে গিয়ে, কতবার আক্ষরিক অর্থেই মনে হয়েছে ধুৎ, বাদ দেই, এসব চুল-ছাল আমার জন্যে নয়- সে গল্প আরেকদিন হবে।
এ লেখাটি এতদূর যেহেতু পড়েছেন, আপনি এখন জানেন বিসিএস ক্যাডার হতে হলে আপনাকে কি করতে হবে।
(কালেক্টেড)
লিখেছেন
মাশরুফ হাসান।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার
২৮তম বিসিএস ।
1) সিভিল সার্ভিস জিনিসটা কি?
উত্তরঃ সিভিল সার্ভিস হচ্ছে সরকারী চাকুরি। যে কোন দেশে সরকারী চাকুরি মোটামুটি দু ভাগে বিভক্তঃ মিলিটারি আর সিভিল। মিলিটারি বলতে আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স বোঝায়, আর সিভিল সার্ভিস বলতে প্রশাসন(মানে যাঁরা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলার ডিসি, মন্ত্রনালয়ের সচিব এসব হন), পুলিশ, ট্যাক্স , পররাষ্ট্র, কাস্টমস , অডিট , শিক্ষা ইত্যাদি ২৭ টি সার্ভিসকে বোঝায়। এছাড়া জুডিশিয়াল সার্ভিস আছে, বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আছে- তাঁদের এ আর্টিকেল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
2) ক্যাডার মানে কি?
উত্তরঃ ক্যাডার মানে হচ্ছে কোন সুনির্দিষ্ট কাজ করার জন্যে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি দল।সরকারী চাকুরির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়, তাই এদের সিভিল সার্ভিস ক্যাডার বা বিসিএস ক্যাডার বলা হয়। উল্লেখ্য, এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ত্রধারী সন্তাসী বা দলীয় ক্যাডারের কোন সম্পর্ক নেই।
3) বিসিএস অফিসারদেরকে প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড অফিসার বলা হয় কেন?
উত্তরঃ বাংলাদেশ সরকারের চাকুরিতে চারটি শ্রেনী আছে, যার সর্বোচ্চ শ্রেনীটাকে বলা হয় প্রথম শ্রেনী বা ফার্স্ট ক্লাস। এদের নিয়োগের সময় সরকারী গেজেট বা বিজ্ঞপ্তি বের হয়, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট এদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন।সামগ্রিক দিক বিবেচনায় মান মর্যাদা, দায়িত্ব-কর্তব্যের পরিধি এবং সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড অফিসারগণ তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকেন।
4) ক্যাডার কত প্রকার?
উত্তরঃ বিসিএস ক্যাডার মূলতঃ দুই প্রকার। জেনারেল ( পুলিশ, এডমিন, পররাষ্ট্র ইত্যাদি) এবং টেকনিকাল ( শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সড়ক ও জনপদ ইত্যাদি)। জেনারেল ক্যাডারে যে কেউ যে কোন সাবজেক্ট থেকে পরীক্ষা দিয়ে চাকুরি করতে পারেন, কিন্তু টেকনিকাল ক্যাডারে চাকুরি করতে হলে নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা লাগবে। যেমন , এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ সরকারী ডাক্তার হয়ে চাকুরি করতে পারবেন না।
৫)কাদের জন্য বিসিএস পরীক্ষা?
৬) বিসিএস পরীক্ষা দেবার যোগ্যতা কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, নির্দিষ্ট বয়েসসীমার ভেতরে বয়েস থাকতে হবে, যে কোন বিষয়ে চার বছরের অনার্স বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে।তিন বছরের অনার্স ও এক বছরের মাস্টার্স করা প্রার্থীরাও পরীক্ষা দিতে পারবেন।বিদেশে পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীরাও শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে তাদের ডিগ্রি বাংলাদেশের চার বছরের ডিগ্রির সমান- এই সার্টিফিকেট দেখিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলের শেষে এবছরের বিসিএস পরীক্ষার সার্কুলারের লিঙ্ক যোগ করে দিয়েছি, দেখে নিন।
৭) ভাইয়া আমি তো ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার/
আর্কিটেক্ট/ সেক্সোলজিস্ট। আমি কি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশ, ডিপ্লোম্যাট, ট্যাক্স অফিসার ইত্যাদি হতে পারব? নাকি আমি ডাক্তার বলে আমাকে স্বাস্থ্য সার্ভিসেই যেতে হবে?
উত্তরঃ অবশ্যই পারবেন। কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার এই টেকনিকাল ডিগ্রি বিশাল সুবিধা বয়ে আনবে। যেমন, আপনি যদি ডাক্তার হয়ে পুলিশে যোগদান করেন, সেক্ষেত্রে ইউ এন মিশন গুলোতে আপনাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে।আপনি যেমন এক দিক দিয়ে পুলিশের প্রধানও হয়ে যেতে পারেন, আরেক দিক দিয়ে ডাক্তারি প্র্যাকটিসও করতে পারবেন অনুমতি সাপেক্ষে। আপনি ইঞ্জিনিয়ার হলে পুলিশে বিভিন্ন টেকনিকাল ক্রাইমের ট্রেনিং এ আপনাকে প্রাধান্য দেয়া হবে। বহু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার আছেন যারা টেকনিকাল ক্যাডারে না গিয়ে সচিব, রাষ্ট্রদূত ইত্যাদি হয়েছেন। ইংরেজি পড়েছেন বলেই শেকস্পীয়ার হতে হবে, এই ধারণা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
৮ ) ভাইয়া, আমি তো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় , বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়, মফস্বলের ডিগ্রি কলেজ , মঙ্গলগ্রহের এলিয়েন একাডেমি এসব জায়গা থেকে পড়াশোনা করেছি। আমি কি বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারব?
উত্তরঃ ভাই, আপনি যেখানেই পড়েন না কেন, আপনার যদি লাইফে একটার বেশি থার্ড ক্লাস না থাকে এবং আপনি যদি ৬ নম্বর প্রশ্নে বলা শিক্ষাগত যোগ্যতা পূরণ করে থাকেন- আপনি পরীক্ষা দিতে পারবেন।ইংলিশ মিডিয়ামের/মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরাও পরীক্ষা দিতে পারবেন। আপনার প্রতিষ্ঠান না, পরীক্ষার খাতায় আপনি কি লিখছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনি চাকুরি পাবেন কি পাবেন না।
৯) ভাইয়া, সিভিল সার্ভিসের মেডিকেল টেস্ট কেমন হয়? পুলিশের মেডিকেল টেস্ট কি আর্মির মত হয়? এই মেডিকেল টেস্টে কি বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকে?
উত্তরঃ সিভিল সার্ভিসের মেডিকেল টেস্ট একেবারেই সাধারণ এবং বেসিক হয়,যে কোন সরকারী হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন।আপনার যদি অতি গুরুতর কোন সমস্যা না থাকে, সেক্ষেত্রে বাদ পড়ার সম্ভাবনা নেই। পুলিশের মেডিকেল টেস্ট বাকি সব ক্যাডারদের মতই হয়, আলাদা না। শুধুমাত্র উচ্চতা আর ওজনে পার্থক্য আছে কিছুটা, যেটা আপনাদের সুবিধার্থে নীচের ছবিতে দিয়ে দিলামঃ পুলিশের ক্ষেত্রে চোখের নিয়ম হচ্ছে, আপনার চোখ যাই হোক না কেন, যদি চশমা পরার পর সেটা ৬/৬ হয়, তাহলে কোন সমস্যা নেই।
১০) ভাইয়া, শুনেছি অনার্স কমপ্লিট না করেও বিসিএস পরীক্ষা দেয়া যায়, এটা কি সত্যি?
উত্তরঃ না, অনার্স না করে পরীক্ষা দেয়া যায়না। তবে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত তারিখের মধ্যে অনার্স এর সব পরীক্ষা শেষ হয়েছে কিন্তু রেজাল্ট দেয়া বাকি আছে- এরকম হলে বিভাগীয় পরীক্ষার প্রধানের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে পরীক্ষা দেয়া যায়। পরবর্তীতে ভাইভার সময় মূল সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে হয়।
কোন সার্ভিসে ঢুকবেন?
১২) ভাইয়া, ক্যাডার চয়েস কি বদলানো যায়?
উত্তরঃ না, একবার ফর্ম জমা দেবার পর সেই ক্যাডার চয়েস বদলানোর সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ পরের বার আবার বিসিএস দিয়ে পছন্দের ক্যাডারে কোয়ালিফাই করে সেটাতে চলে গিয়েছেন।
১৩) ভাইয়া, ক্যাডার চয়েসের উপর সিলেকশন কিভাবে হয়?
উত্তরঃ আপনি প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয় এভাবে দশ বারোটা চয়েস দিলেন। পরীক্ষায় আপনার প্রাপ্ত নম্বর এবং আপনার ক্যাডার চয়েসের পছন্দক্রমের উপর নির্ভর করে আপনাকে কোন নির্দিষ্ট ক্যাডারে সিলেক্ট করা হবে। আপনার পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এখানে মূল ভূমিকা পালন করবে। ধরা যাক, আপনার প্রথম পছন্দ পুলিশ, আরেকজনের প্রথম পছন্দ ফরেন সার্ভিস, দ্বিতীয় পছন্দ পুলিশ। দ্বিতীয়জন যদি ফরেন সার্ভিস না পায় কিন্তু আপনার চেয়ে ওর নাম্বার বেশি থাকে- তাহলে দ্বিতীয় পছন্দ হওয়া সত্বেও সে আপনার আগে পুলিশ পাবে।
১৪) কতগুলো ক্যাডার চয়েস দেব?
এ প্রশ্নের উত্তরে আমার অগ্রজ ও সহকর্মী ফরেন সার্ভিস অফিসার সুজন দেবনাথের কথা সরাসরি লিখছি-
“আমার অভিমত হল – যেই চাকরিগুলো হলে আপনি অবশ্যই করবেন, শুধু সেগুলোই চয়েস দিন। এক্ষেত্রে ২টা ইস্যু। (১) যারা বিসিএসে যে কোন ক্যাডার হলেই চাকরি করবেন, তাঁরা সার্কুলার দেখে যেগুলোতে এপ্লাই করতে পারবেন, সবগুলো চয়েস দিয়ে দিন। (২) আর যারা মনে করেন – কয়েকটা ক্যাডার না হলে আসলেই চাকরি করবেন না, তাঁরা প্লিস অন্য ক্যাডার চয়েস দিয়েন না। চাকরি হল আর আপনি জয়েন করলেন না বা কিছুদিন পরে ছেড়ে দিলেন, সেটা সবার জন্য খারাপ। দেশের জন্যও খারাপ।
তখন আমার ২৮–তম এর ফাইনাল রেজাল্ট ও মেডিকেল হয়ে গেছে। কিন্তু গেজেট তখনও হয়নি। সেই সময় ২৯–তম বিসিএসের ভাইভা শুরু হয়ে গেল। এখন ২৮ আর ২৯ দুটোতেই আমার ফার্স্ট চয়েস ফরেন। আমি ২৯–তমের ভাইভা দিতেই গেলাম না। ভাবলাম – একটা পোস্ট নষ্ট করব কেন। আমার পরিচিত বেশ কয়েকজনকে দেখলাম – ২৮তমে ফার্স্ট চয়েস পেয়েও আবার ২৯–এ ভাইভা দিলেন। বললেন, তখনও গেজেট হয়নি। কী হয় কিছু বলা যায় না। রিস্ক তো আছেই। যাই হোক, তাঁরা বেশি সতর্কতামূলকভাবে এটা করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে এটা দোষের নয়। আইনসিদ্ধও বটে। কিন্তু যেটা হয়েছে, অনেকেই ২বার চাকরি পেয়েছে। আর দ্বিতীয়বার জয়েন করেনি। সে পোস্টগুলো ফাঁকা গেছে। কিছু নাকি কোটা থেকে পুরণ করেছে। এতে সরকারের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অনেক পোস্ট খালিই থেকেছে। আর কিছু যোগ্য লোক চাকরি পায়নি। হয়তো তাঁদের বয়স চলে গেছে। তাই আপনি যে চাকরিটা পেলে আসলেই করবেন, শুধু সেটাই চয়েস দিন। তবে যারা ক্যাডার চেঞ্জ করতে আবার পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য ঠিকই আছে”।
১৫) সার্কুলারে কোন একটা ক্যাডারে অল্প ক’টা পোস্ট আছে। তো সেটা কি চয়েসে দিব?
এ প্রশ্নটাও সরাসরি সুজন দেবনাথের ভাষায় উত্তর দিচ্ছিঃ
“আমার ২৮–তম বিসিএস–এর চয়েস নির্ধারণ করতে গিয়ে দেখি অডিটে মাত্র ২/৩ পোস্ট। তো বন্ধু বলল, এটা চয়েসেই দিবে না। কোটা বাদ দিলে ১/২ পোস্ট – সেটা চয়েসে দিয়ে কী হবে? এটা একেবারেই ভুল কথা। পোস্ট বেশি থাক আর কম থাক নিজে যেই চাকরিটা আগে করতে চান সেভাবেই চয়েস দিন। আর পোস্ট পরবর্তীতে বাড়াতে বা কমাতে পারে। সাধারণত কমায় না। কখনও কখনও বাড়ায়। তাই যেসব ক্যাডারের সার্কুলার হয়েছে, সেগুলোতে আপনার পছন্দমত সিরিয়ালে চয়েস দিয়ে দিন।“
১৭) ভাইয়া, কোচিং করাটা কি জরুরী?
উত্তরঃ এ ব্যাপারে আবারও সুজন ভাইয়ের স্মরন নিইঃ“প্রথমেই বলি আমি প্রিলি, রিটেন বা ভাইভা কোন কিছুর জন্যই কোচিং করি নাই, তবে বন্ধুদের কাছ থেকে কিছু কোচিং টাইপের ম্যাটেরিয়াল জোগাড় করেছিলাম। যদিও পরে একাধিক কোচিং দীর্ঘদিন ধরে আমার নাম ও ছবি তাঁদের প্রোসপেকটাসে দিয়ে গেছে, কেন দিচ্ছে জানতে চাইলে মাপ চেয়েছে কিন্তু পরের বছর আবার দিয়েছে। যাই হোক – আপনাকে আগের প্রশ্ন এবং সিলেবাস দেখে প্রিপারেশান নিতে হবে। তাতে আপনি কোচিং করুন আর নাই করুন। কোচিংয়ে কিছু রেডীমেইড জিনিস (লেকচার শিট টাইপের) দেয়া হয় আর পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেয়া হয়। এ দুটো জিনিস কিছুটা হলেও আপনাকে সাহায্য করবে। আর পড়ানো বা শেখানো সেটা পাওয়া যায় খুব সামান্য। প্রতিটা কোচিংয়েই দু’একজন ভাল শিক্ষক আছে যাদের ক্লাশে আপনি কিছু পাবেন আর বাকি ক্লাশগুলো থেকে কিছুই শেখার নেই। বিশেষজ্ঞ ভাব নিয়ে মার্কেটিং চাপাবাজি চলে। . এখন আসি আপনি ডিসিশান পয়েন্টে আসবেন কিভাবে? আমি আগেই বলেছি দুটা লাভ – ১.ম্যাটেরিয়াল, ২. মডেল টেস্ট। এখন দেখুন আপনি এ দুটো জিনিস নিজে নিজে করতে পারবেন কিনা। পারলে কোচিংয়ের দরকার নেই। আর না পারলে কোচিং করুন। ম্যাটেরিয়াল এখন বাজারে, ইন্টারনেটে বিভিন্ন শর্ট টেকনিক সবই পাওয়া যায়, এগুলো জোগাড় করুন। এরপর দেখুন, আপনি নিজে নিজে পড়ার জন্য সময় দিতে পারছেন কিনা। বন্ধুদের সাথে গ্রুপেও পড়তে পারেন। সাথে মডেল টেস্টের গাইড ও কারেন্ট এফেয়ার্স থেকে মডেল টেস্ট দিন। এগুলো যদি নিজে নিজে করতে পারেন, তাহলে কোচিংয়ের দরকার নেই। আর সময় দিতে ইচ্ছা না করলে কোচিং করুন। কোচিংয়ে যেহেতু পয়সা দিবেন, তাই একটা মানসিক চাহিদা থাকবে আর পরীক্ষার পরিবেশ মিলে কিছু সময় প্রিপারেশানের জন্যই ব্যয় হবে। এতে কিছুটা লাভ হবে। . তবে কোচিংয়ে ভর্তি হয়েই যদি ভাবেন, আপনার কাজ গেছে, তাহলেই ধরা। ভোকাবিউলারি, গ্রামার আর ম্যাথ এগুলো ধরে ধরে পড়ানোর মত লোকজন কোন কোচিংয়ে নেই। আর প্রিপারেশনের সমস্যা এগুলোতেই। বাকিগুলো সময় দিলে হয়েই যাবে কিন্তু এগুলোর জন্য নিজের ডিটারমিনেশান এবং অনেক ক্ষেত্রে কারো হেল্প লাগবে। তো আমার পরামর্শ হচ্ছে, সমস্যা চিহ্নিত করে কিভাবে সেটা সলভ করবেন, না পারলে কার সাহায্য নিবেন সেটা খুঁজে করুন। কোচিং করুন আর নাই করুন, এটা আপনাকে করতেই হবে। যে গ্রামারটা আপনি বুঝছেন না সেটা কোন বইতে কোথায় নিয়ম ও উদাহরণ দিয়ে আছে, আর নিয়মটা আপনি বুঝতে পারছেন কিনা সেটা জানতে হবে। কোন ম্যাথে প্রোবলেম হলে সেটা কার থেকে জেনে নিবেন সেটা ভাবুন। ভোকাবিউলারি শিখতে ও মনে রাখতে উপায় জানুন। আর বাকিগুলো গাইড থেকে,বই থেকে বা কোচিংয়ে সব জায়গায়ই পাবেন।“
আমার কথাঃ আমি কোচিং করেছিলাম, তবে প্রিলি ছাড়া বাকিগুলোতে খুব একটা লাভ হয়নি। কোচিং সেন্টারগুলো ভুলভাল কথা বলে আপনার আত্মবিশ্বাস-এর বারোটা বাজাতে ওস্তাদ, যাতে আপনি ওদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।কোচিং করতে গেলে ওদের চাপাবাজিতে বিভ্রান্ত হবেন না।
১৮) ভাইয়া, আমি মুখস্ত করতে পারিনা, আমার কি বিসিএস হবে?
উত্তরঃ বিসিএস পরীক্ষায় মুখস্ত করে বড়জোর প্রিলি পার হতে পারবেন, চাকুরি পাবেন না। গাদা গাদা সাধারণ জ্ঞান মুখস্ত না করতে পারলে বিসিএস পরীক্ষায় চান্স পাওয়া যায়না- এটা সর্বকালের সেরা মিথ্যা কথা। সাধারন জ্ঞান কতটা কি পড়বেন, উপরে দেয়া লিঙ্কগুলোতে খুব সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। আমার “How I Made It in the tiresome journey of BCS” আর্টিকেলটি পড়ুন, যেটার ড্রপবক্স লিঙ্ক দিয়েছি শুরুতেই ওখানের প্রথম আর্টিকেল এটি।
১৯) ভাইয়া, আমি প্রথম বার বিসিএস দিচ্ছি পরীক্ষা, আমার কি হবে?
উত্তরঃ জ্বি, হবে, যদি ঠিক মত পড়াশোনা করে পরীক্ষা দেন।আমি ২৩ বছর বয়েসে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ২৮তম বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ মেধাক্রমে চতুর্থ হয়েছিলাম, পরের বিসিএসে তৃতীয়। আমার মত এইচ এস সি তে ৩.৬ জিপিএ পাওয়া প্রাইভেট ভার্সিটির গর্দভ যদি প্রথম বারেই পারে, আপনিও পারবেন। একই কথা যারা শেষবারের মত পরীক্ষা দিচ্ছেন তাদের জন্যেও প্রযোজ্য। ঠিকমত পড়াশোনা করে পূর্বের ভুলগুলো কাটিয়ে উঠুন, আপনারও চাকুরি হবে।
২০) ভাইয়া, আমার হাতের লেখা খারাপ এবং ধীর। কি করব?
উত্তরঃ আমি আমার লেখার যে লিঙ্কটি দিয়েছি, ওটা থেকে ২৫ পৃষ্ঠার ডকুমেন্টটি ডাউনলোড করে বাংলা লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে যে আর্টিকেলটি লিখেছি, ওটা পড়ুন।কি করতে হবে বুঝতে পারবেন।হাতের লেখার সৌন্দর্য এবং স্পীড বিসিএস পরীক্ষার জন্যে চরম জরুরী। উল্লেখ্য, ইংরেজিতে দখল থাকলে পরীক্ষা ইংরেজি ভাষাতেও দিতে পারেন। ২৭ তম বিসিএস পরীক্ষার ফার্স্ট বয় কামরুজ্জামান ভাই পুরো পরীক্ষাটা ইংরেজিতে দিয়েছিলেন।এবার একটু সতর্ক করি, ইংরেজি বা বাংলা যে ভাষাতেই পরীক্ষা দিন না কেন, আপনার উত্তরের মান এবং তা প্রেজেন্টেশনের উপর ফলাফল নির্ভর করবে। ভাব মারতে গিয়ে ভুলভাল ইংরেজি লিখলে চরম ধরা খাবেন।
স্টুপিড কোয়েশ্চেন্সঃ
২১) ভাইয়া, বিসিএস এ নাকি টাকা ছাড়া চাকুরি হয়না? “অমুক ভাই” তো শুনেছি ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে চাকুরি পেয়েছেন, আমার এত টাকা নেই আমি কি করব?
উত্তরঃ ঠিকই শুনেছেন।আমি নিজেও টাকা দিয়েই চাকুরিতে ঢুকেছি। কত টাকা শুনবেন? সাড়ে ছয়শ টাকা। যদ্দুর মনে আছে, আমাদের সময়ে চাকুরির আবেদনপত্রের দাম ছিল পাঁচশ টাকা, আর মেডিকেল টেস্ট করাতে লেগেছিল দেড়শ টাকা- এই সাড়ে ছয়শ টাকা দিয়ে আমি চাকুরি পেয়েছি।
বাংলাদেশের মত দুর্নীতিপ্রবন দেশে প্রায় সব জায়গাতেই দুর্নীতি হবার সম্ভাবনা থেকে যায়।কেউ কেউ হয়তোবা চাকুরি পায়ও। আপনার যদি এত টাকা, যোগাযোগ, ক্ষমতা ইত্যাদি থাকে, পারলে বিসিএস চাকুরি নিয়ে নিন ওটা ব্যবহার করে।আর যদি তা না থাকে, দয়া করে এসব ফালতু বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে পড়াশোনা করুন, কাজে দেবে।
২২) ভাইয়া, আমার তো “কোটা” নেই, আমার কি বিসিএস হবে?
উত্তরঃ ভাই, যেটা নেই, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন কেন? যাদের কোতা আছে তারা ওটা ব্যবহার করুক, ওদের কথা চিন্তা করে আপনি আপনার সময় নষ্ট করবেন কেন? একশটা সীটের মধ্যে অন্ততঃ ৪৫টা সীট আছে আপনাদের মত নন-কোটা পরীক্ষার্থীদের জন্য। ওতার জন্য লড়াই করুন, আপনার তো দরকার মাত্র একটা সিট!
২৩) ভাইয়া, আমি দেখতে শুনতে হ্যান্ডসাম নই, মাথায় চুল কম– হাইটও কম, গায়ের রঙ কালো। আমার কি চাকুরি হবে??
উত্তরঃ ও ভাইজান, আপনি সরকারী চাকুরির পরীক্ষা দিতে এসেছেন, এসকর্ট সার্ভিসের না। আপনার চেহারা, গায়ের রঙ, গ্রাম থেকে না শহর থেকে এসেছেন- এগুলো কিচ্ছুতে কিচ্ছু যায় আসে না। বোঝা গেল?
২৪) ভাইয়া, ক্যাডার হতে গেলে কত পার্সেন্ট নম্বর পেতে হয়? আমি যদি “এত” পাই তাহলে কি আমি “অমুক” ক্যাডার পাব?
উত্তরঃ ভাই, আপনি কত পাবেন এইটা আগে থেকেই ঠিক করে ফেলতেসেন কিভাবে? আর লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীরা কে কত মার্ক্স পাবে সেটা তো আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না- তাদের নম্বর আপনার চেয়ে বেশি না কম এইটা জানবেন কেমনে? তা যদি না জানেন, কিভাবে নিশ্চিত হবেন অমুক ক্যাডার পাবেন কিনা?? মাথা থেকে এইসব ফাউল চিন্তা ঝেড়ে ফেলে পড়াশোনা করেন, ওতে নাম্বার হয়ত বাড়বে- চাকুরি পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।
২৫) ভাইয়া, পড়াশোনা করতে ইচ্ছা করেনা। একটানা পড়তেও পারিনা। কি করব?
উত্তরঃ গুগলে গিয়ে Pomodoro Technique লিখে সার্চ দিন, ভালভাবে শিখুন এটা, পড়তে গিয়ে কাজে লাগান। সংক্ষেপে বলতে গেলে, একটানা ২৫ মিনিটের বেশি কোন বিষয় পড়বেন না।২৫ মিনিট যে কোন বিষয়ে দুনিয়াদারি ভুলে গিয়ে পড়ুন, ঠিক ২৫ মিনিট পর ৫ মিনিট ব্রেক নিন, তারপর আবার ২৫ মিনিট পড়ুন। POMOTODO নামে একটা এ্যাপ আছে, এটা নামিয়ে নিয়ে কাজে লাগাতে পারেন। আমি নিজে এটা ব্যবহার করে প্রোডাক্টিভিটি বহুগুণ বাড়িয়ে ফেলেছি।বহু পিএইচডি স্টুডেন্ট এটা ব্যবহার করে সারাবিশ্বজুড়ে।বিসিএস পরীক্ষার সময় এটা আমার জানা থাকলে আমার রেজাল্ট আরো ভালো হত।
উপরের ২৫ টা প্রশ্নের উত্তর জানলে এবং উপরে দেয়া রিসোর্সগুলো ঠিকমত কাজে লাগালে আমি বাজী ধরে বলতে পারি, আপনাকে ঠেকাতে পারবে এমন বাপের ব্যাটা এখনো জন্মায়নি।
এবার মাদার অফ অল কোশ্চেন্স বা বোনাস প্রশ্নঃ
২৬) ভাইয়া , আপনার এই এতদিনের চাকুরি এবং বিসিএস পরীক্ষার অভিজ্ঞতার সারমর্ম কি?
উত্তরঃ সারমর্ম একটাই, পোকার খেলায় যেমন বিসিএস পরীক্ষাতেও তেমন- It’s not the cards you are given at hand, its how you play them. আপনার সীমিত সামর্থ্য ও দুর্বলতা মাথায় রেখেই নিজের সর্বোচ্চটুকু দিন, বিজয়মাল্য ছিনিয়ে আনতে পারবেনই।
বিসিএস পরীক্ষা মেধা যাচাই এর পরীক্ষা নয়, এটা হচ্ছে ধৈর্য ধরে লেগে থাকার পরীক্ষা। কি বীভৎস পরিশ্রম আমাকে করতে হয়েছে বিসিএস পরীক্ষায় কোয়ালিফাই করতে গিয়ে, কতবার আক্ষরিক অর্থেই মনে হয়েছে ধুৎ, বাদ দেই, এসব চুল-ছাল আমার জন্যে নয়- সে গল্প আরেকদিন হবে।
এ লেখাটি এতদূর যেহেতু পড়েছেন, আপনি এখন জানেন বিসিএস ক্যাডার হতে হলে আপনাকে কি করতে হবে।
(কালেক্টেড)