- Mon Jun 11, 2018 2:04 am#209
অনার্স পাশ করেই কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা বা তার বেশি বেতনের চাকরি এ দেশের বাজারে কয়টি ? খুব কম । অল্প কিছু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, হাতেগোনা অল্প কয়েকটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ দেয় । এর পরেই আছে আরেকটি সেক্টর – প্রাইভেট ব্যাংক । আমরা অনেকেই কম বেশি জানি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি মানে প্রেসার, টার্গেট , জব সিকিউরিটি নেই আরো কত কি ! কিন্তু এখানেও অনেক ভালো দিক আছে । আসুন যারা জানিনা তারা এই সেক্টরের চাকরির ধরন , বেতন , ক্যারিয়ার ইত্যাদি জেনে নেই ।
দেশে প্রায় ৪০টি দেশি প্রাইভেট ব্যাংক।সারা বছর জুড়ে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো বিভিন্ন পদে সার্কুলার/নিয়োগ দিয়ে থাকে।আসুন জেনে নেই বিভিন্ন পদের রকমফের।
**ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার (MTO)**
অনেকেই মস্করা করে এই পদটিকে বলে ব্যাংকের জামাই পোস্ট । এই পোস্ট ফিউচার লিডার প্রোগ্রাম, স্পেশাল ক্যাডার অফিসার ইত্যাদি নামেও পরিচিত । একজন MTO কে বছর জুড়ে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং দেওয়া হয় , ব্রাঞ্চ – হেড অফিস, সব ডিভিশন , ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হয়। একজন MTO একটা ব্যাংক এর Holistic View পায় । ব্যাংকে আর অন্য কোন পোষ্টে জয়েন করে এত কম সময়ে এই সুজোগ পাওয়া যায়না । তবে সব ব্যাংকের MTO প্রোগ্রাম এক নয় । কিছু কিছু ব্যাংকের MTO প্রোগ্রাম খুব চমৎকার । আবার কিছু কিছু ব্যাংকে নামে মাত্র MTO প্রোগ্রাম আছে । যদিও সব ব্যাংকের MTO দের গুনগত মান সমান হয় না , ব্যাংকিং এ ক্যারিয়ার গড়তে হলে MTO এর বিকল্প নেই । এক/দুই বছর পরেই প্রিন্সিপাল অফিসার হওয়ার সুযোগ থাকায় ১৮/২০ বছরের মধ্যেই ব্যাংকের সর্বচ্চ পদ পাওয়া এমনকি সিইও/এমডি হওয়ার উদাহরনও আছে।
**নিয়োগ প্রক্রিয়া**
একমাত্র MTO পোস্টেই কোন লবিং / তদবির কাজ করে না । এই পোস্ট ছাড়া প্রাইভেট ব্যাংকের এমন কোন পোস্ট নেই যেখানে লবিং হয় না । জানামতে ব্যাংকের মালিক তার আত্বিয়কেও এই পোষ্টে নিতে পারে না । ১০০% স্বচ্ছ নিয়োগ হয় এই পোষ্টে । MTO হিসেবে নিয়োগ পাওয়া হল মেধা আর স্মার্টনেস এর খেলা । তবে সব ব্যাংকের MTO সমান স্মার্ট হয় না । বর্তমান নিয়মে এই পোস্টে আবেদন করতে যে কোন বিষয়ে অনার্স পাশ থাকতে হবে কমপক্ষে সিজিপিএ ৩.০০ নিয়ে এবং বয়স ৩০ এর কম হতে হবে । তবে আবেদনকারীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম সারির না হলে ৩.০০ এর কাছাকাছি সিজিপিএ হলে প্রাথমিকভাবে পরিক্ষার জন্য বাছাই হতে পারা কঠিন । তাই সিজিপিএ যত বেশি তত ভালো । কমার্সের সাবজেক্টে পড়লে এবং এমবিএ করা থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যায় । দৈনিক পত্রিকাগুলোতে সার্কুলার হয় অনলাইনে আবেদন আহ্বান করে । হাজার হাজার আবেদন পত্র থেকে ৩-৫ হাজার প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় । প্রার্থী বাছাই এর জন্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সিজিপিএ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবজেক্ট । কিছু কিছু ব্যাংক আইবিএ,এফবিএস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , আইবিএ জাবি , বিইউপি ,নর্থ সাউথ , ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রার্থীকে তেমন ডাকে না যেমন ইবিএল,দ্যা সিটি,ব্রাক ব্যাংক । আবার কিছু কিছু ব্যাংক জাতীয় থেকে শুরু করে দেশের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রার্থীকে ডাকে যেমন এবি ব্যাংক ।
**পরীক্ষা**
সাধারণত একবসায় একদিনেই দুই অংশে পরীক্ষা হয় - MCQ ও লিখিত । পরীক্ষার প্রাধান বিষয় হল অংক ও ইংরেজি । যে যত তুখোড় এই দুই বিষয়ে তার লিখিত পরীক্ষা পাশ করার সম্ভাবনা তত বেশি । যে কোন বিষয়ে ইংরেজিতে রচনা লেখা , বাংলা থেকে ইংরেজি , ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করার দক্ষতা থাকলে এই পরীক্ষা পাশ করা সহজ । ম্যাথ মুখস্থ না করে বুঝে করতে পারলে দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে । এর বাইরে থাকে অল্প কিছু সাধারন জ্ঞান । বাজারে অনেক গাইড বই পাওয়া যায় MTO পরিক্ষা সহায়ক । হুবহু মুখস্থ করে পরিক্ষা পাশ করার নজির কম । আপনার ক্রিয়েটিভি না থাকলে মুখস্থ করে পাশ করা সম্ভব তবে অনেক বার অনেক দিন ধরে পরিক্ষা দিতে হবে । কারন মেধা দুই ধরনের - ১। অল্প অধ্যায় করে সফলতা অর্জনকারীদের মেধা ক্ষুরধার , এরা নামমাত্র পরিশ্রমে সফল হন , ২। অনেক বার অনুশীলন করতে করতে ব্রেইনে বিষয়বস্তুগুলো গেথে ফেলতে পারলে একটু ধীরে হলেও সফলতা আসতে পারে । তাই ১ নং নম্বরে না থাকলেও ২ নম্বর অনুযায়ী অধ্যাবসায়ে রত থাকতে হবে । অনেকেই আছেন যারা বাজারের মোটামুটি সব বই পড়ে ফেলেছেন , সব বই সমাধান করে ফেলেছেন কিন্তু ব্যাটে বলে লাগছে না । এর কারন বইয়ের উপরে ১০০% ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পরা, তখন বইয়ের বাইরের সুন্দর লজিকগুলো মাথায় ঢুকতে চায় না । হুবহু কমন পাওয়ার আশা ছেড়ে বাজারের প্রচলিত বইগুলো শেষ করে নিজের বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগাতে পারলে সফলতা আসবে হাতের নাগালে । অনেক আবেদনারি বাজারের একটা ব্যাংক পরিক্ষার গাইড বই কিনে পুরোটা সমাধান না করেই টপ ব্যাংকগুলোর কয়েকটিতে MTO তে টিকে যান । আবার কেউ কেউ বাজারের সব কিছু শেষ করেও সফল হতে পারেন না । লিখিত পাশ করলে সাধারণত ব্যাঙ্কভেদে একটি বা দুইটি ভাইভা হয় । আবার কোন কোন ব্যাংকে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট করা হয় , প্রেজেন্টেশন নেওয়া হয় । ভাইভার জন্যে সাধারণত ব্যাঙ্কভেদে ১০০ থেকে ৩০০ জনকে ডাকা হয় । ভাইভা ইংরেজিতে হয় তাই ইংরেজিতে শুদ্ধভাবে কথা বলার অভ্যাস থাকতে হয় । আপনি লিখিত পরিক্ষায় যতই ভালো করেন না কেন আপনার কথাবার্তা/ Attitude ভাইভা বোর্ডে ভালো না লাগাতে পারলে আপনি আউট । এইসব ভাইভায় আপনার Bookish Knowledge যাচাই করা হয় না বললেই চলে । অনেকেই দুই ৪টি ভাইভা গাইড কিনে মুখস্থ করে ফেলেছে কিন্তু ভাইভা পাশ করতে পারে না । কারন উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা ভাইভার একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয় । CGPA বেশি হতে হবে না, শুধু নিজেকে গুছিয়ে সুন্দর ভাবে বিক্রি করতে পারলেই হয়। আপনি ভুল উত্তর দিন সমস্যা নেই আপনার আত্ববিশ্বাস দেখতে চায় তারা । আপনি হয়তো সব উত্তর সঠিকভাবে দিলেন কিন্তু আপনার Attitude পছন্দ না করলে আপনি আউট । আপনি আপনার নিজের কোন কাজ কাউকে দিয়ে করাতে গেলে নিশ্চ্য় যাচাই করে নিশ্চিত হতে চান যে আসলে সে কাজটি আগ্রহ নিয়ে করতে পারবে কিনা । ভাইভা বোর্ডে ঠিক এই জিনিসটাই দেখা হয় । কথাবার্তায় লজিক থাকতে হয় । সবশেষে ব্যাঙ্কভেদে কমপক্ষে ১৫/২০ জন এবং সর্বচ্চ ১০০ জনকে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত করা হয়। সাধারনত চূড়ান্ত ফলাফলের ১ মাসের মধ্যেই জয়েন করতে হয় । সার্কুলার হতে শুরু করে জয়েনিং পর্যন্ত ২-১০ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে ।
**বেতন**
MTO পোষ্টে জয়েন করলে ১/২ বছর প্রবেশন পিরিয়ডে থাকতে হয় । এই সময় মাসে সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কোন কোন ব্যাংক ৬৫ হাজার টাকা (Brac Bank MTO) দেয় । প্রবেশন পিরিয়ড শেষ হলে MTO কে সরাসরি প্রিন্সিপাল অফিসার পদ দেওয়া হয় । কিছু কিছু ব্যাংক সিনিয়র অফিসার পদ দেয় । তখন বেতন বেড়ে যায় ১৫-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত । অর্থাৎ একজন MTO একবছর পরেই ব্যাঙ্কভেদে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮৫ হাজার টাকা (MTB MTO)পর্যন্ত পেতে পারে । ঈদ/পুজো (ফেস্টিভাল) বোনাস পাবেন মুল বেতনের সমান । প্রতি বছর ব্যাংকের লাভের একটা অংশ বছরে একবার দেওয়া হয় যা বেসিক বেতনের ২-৪ গুন হয়ে থাকে । প্রবেশন পিরিয়ডের পর আপনার বেতন ৫০ হাজার টাকা হলে এক বছরের বেতন , ফেস্টিভ্যাল বোনাস , প্রফিট শেয়ারিং সব মিলিয়ে মাসে গড়ে কমপক্ষে ৬০+ হাজার টাকা এবং সর্বোচ ৮৫+ হাজার মত আয় করবেন । প্রায় প্রতি বছর বেসিক বেতনের ৫-১০% ইনক্রিমেন্ট হয়ে থাকে । ৩/৪ বছর পর পর পদোন্নতি হয় সেইসাথে বেতন বৃদ্ধি হতে থাকে ।
**কাজের ধরন**
MTO কে প্রবেশন পিরিয়ডের পর যে কোন ব্রাঞ্চ , ডিপার্টমেন্টে পোস্টিং দেওয়া হয় । MS Word , Excel , PowerPoint ইত্যাদিতে দখল থাকলে খুব ভালো হয় । ব্যাংকের এমডি থেকে এসিসট্যান্ট অফিসার সবাই আসলে কেরানিগীরির কাজ করে ; ফাইল পত্র লেখা/বানানো , সই করা , সই করানো , ইত্যাদি প্রধান কাজ । স্যুট-টাই পড়ে অফিসে বসে কাজ করবেন । কাস্টমারকে সেবা দিতে হবে , ওপারেশনস দেখতে হবে , ফিল্ড ভিজিটে যেতে হবে , লোন এর টাকা রিকোভারি করার জন্য যেতে হবে ইত্যাদি । মাথায় টেনশন ও প্রচুর প্রেসার নিয়ে কাজ করতে হবে , অনেক সময় কাস্টমারের ঝাড়ি খেতে হতে পারে , অফিস শেষ করতে রাত ৭/৮ টা বাজবে । লোনের টাকা পরিশোধ করার জন্য গ্রাহকে অনুরোধ করতে হবে , লোনের টাকা ফেরত না আসলে কেইস হবে, আদালতে সাক্ষী দিতে যেতে হবে ( MBBS ডাক্তাররাও তাদের পেশাগত কারনে আদালতে সাক্ষি দিতে যান)। আপনার স্বাক্ষর করা কোন ডকুমেন্টের মাধ্যমে জালিয়াতি হলে জেলে যেতে হবে । বেশির ভাগ কাজ “রিয়েল টাইম” অর্থাৎ তাৎক্ষনিক সেবা দিতে হবে, চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে। একটা ব্যাংকের প্রধানত তিনটা মুখ্য বিভাগ থাকে – জেনারেল ব্যাংকিং , ক্রেডিট , ফরেন ট্রেড /ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড । জেনারেল ব্যাংকিংয়ের আওতায় মূলত নগদ ক্যাশ, একাউন্ট খোলা-বন্ধ , চেক আদান প্রদান ইত্যাদি কাজ হয়ে থাকে । ক্রেডিটের আওতায় ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লোন দেওয়া ও রিকোভারি ইত্যাদি কাজ হয়ে থাকে । ফরেন ট্রেড বা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড বিভাগ সাধারণত এক্সপোর্ট/ইম্পোর্ট, এলসি, বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি কাজের আওতায় পরে । একজন MTO কে প্রথম বছরে সবগুলো বিভাগের কাজ শেখার সুযোগ দেওয়া হয় । প্রবেশন পিরিয়ডের পর তাকে উপরে উল্লেখিত যে কোন একটি দিভাগে দেওয়া হয় । তবে MTO দেরকে স্থায়ীভাবে ক্রেডিট বা ফরেন ট্রেড /ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড বেশি দেওয়া হয় , জেনারেল ব্যাংকিংয়ে তেমন রাখা হয় না । ব্রাঞ্চ অফিসে থাকলে অফিস টাইম যদিও সকাল ১০ থেকে ৬ টা , আপনার অফিস থেকে বের হতে হতে ৭/৮ টা বেজে যাবে । ২/১ ঘণ্টা বেশি কাজ করলেও ভালো বেতন পাচ্ছেন আপনি । তবে হেড অফিস/ ব্যাক অফিসের কিছু ডিভিশনে থাকলে একটু আগেই বের হতে পারবেন ৬/৭ টার মধ্যে । নারী কর্মীরা পুরুষ কর্মীর চেয়ে একটু আগে বের হতে পারেন । যদিও শুক্র শনি দুই দিন অফিস বন্ধ তবে কোন কোন ব্রাঞ্চ, ডিভিশনে শনিবারে যেতে হতে পারে কিন্তু প্রতি শনিবারে না – মাসে ১/২ শনিবার। প্রতি বছর আপনার রেগুলার কাজের পাশাপাশি আপনাকে লোন বা ডিপোজিট এর টার্গেট দেওয়া হবে। যেমন ২০১৮ সালে আপনাকে বলা হল এই বছর ১ কোটি টাকা ডিপোজিট আনে হবে । আপনি ভালো নেটয়ার্কিং করতে পারলে এক কোটি ডিপোজিট কোন ব্যাপারই না , আবার নেটয়ার্কিং না করতে পারলে লক্ষ টাকাও ডিপোজিট আনা সম্ভব না । সব কাজ গতানুগতিক । সব কাজের ফরম্যাট থাকবে আপনাকে ঐ ফরম্যাট অনুযায়ী কাজ করতে হবে । নিজের ক্রিয়েটিভি দেখানোর সুযোগ কম তবে একেবারে যে নেই তা নয় । টার্গেট না থাকলে এই পেশা অনেক বেশি আকর্ষনীয় হত । তবে প্রাইভেট সেক্টরে মাল্টিন্যাশনাল বলেন আর দেশীয় FMCG কোম্পানী যাই বলেন সব চাকরিতে মোটামুটি টার্গেট থাকবেই ।
**ক্যারিয়ার**
একজন MTO সাধারণত ৬-৯ বছরে মধ্যে ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ (এভিপি ) হতে পারে । অন্য কোন পোষ্টে ব্যাংকে জয়েন করে এত অল্প সময়ে এভিপি কেউ হতে পারে না । ২২/২৩ বছর বয়সে অনার্স শেষ করে MTO তে জয়েন করে ২৯/৩০ বছর বয়সে এভিপি হয়েছেন হচ্ছেন অনেকেই । একজন MTO ৮/১০ বছরে একটা ব্রাঞ্চের ম্যানেজার হওয়ার সুযোগ পায় । প্রমোশন হয় সাধারণত ৩/৫ বছর পর পর । এভাবে MTO তে জয়েন করার ১৫-১৬ বছরের মধ্যে বেতন কমপক্ষে ২ লক্ষ টাকা পার হয়, গাড়ী তো থাকছেই । ভালো পারফর্ম করতে পারলে আরো অনেক বেশি পদোন্নতি ও বেশি আয় করতে পারবেন । অনেক ব্যাংকে প্রতি ৩/৪ বছরে প্রমোশন নাও হতে পারে। মার্কেটে সব ব্যাংক সমান না । কিছু কিছু ব্যাংকে কাজের পরিবেশ ও বেতন খুব ভালো আবার কিছু কিছু ব্যাংকে কাজের পরিবেশ ও বেতন ভালো না । তাই চোখ কান খোলা রেখে যাচাই-বাছাই করে ব্যাংক বদলানো কঠিন কোন ব্যাপার না । বর্তমানে যারা বিভিন্ন ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদে (এমডি , ডিএমডি , এসইভিপি ) আছেন তাদের প্রায় সবার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিলো MTO হিসেবে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসহ এমডিদের মাসিক বেতন কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা হয়ে থাকে । অনেক এমডি মাসে ১২/১৪ লক্ষ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন । দেশীয় বিদেশি ব্যাংকগুলোর এমডিদের বেতন ৩০/৫০ লক্ষ টাকা । তবে MTO হিসেবে জয়েন করলেই যে সবাই এমডি হতে পারবে তা সঠিক নয়। এমডি না হলেও এসইভিপি, ডিপার্টমেন্ট/ ডিভিশন হেড হতে পারবে অনায়াসে। ।
**গাড়ী**
এভিপি হলে ব্যাংক থেকে গাড়ী দেওয়া হয় । বেতন লক্ষ টাকার উপরে তো হবেই সেই সাথে গাড়ির চালক ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচ দেওয়া হয় প্রায় ৪০/৫০ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে মাসিক আয় হবে দেড় লক্ষ টাকার অধিক ।
**বাড়ী**
আপনি যে কোন সময় কম সুদে পারসোনাল লোন ,হোম লোন নিতে পারবেন । সরকারি ব্যাংকে চাকরি করলে যেমন ব্যাংক রেটে(৫%)/স্বল্প সুদে বাড়ী কেনা/বানানোর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা সহজে লোন নেওয়া যায় , তেমনি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করলে অনেক ব্যাংক স্বল্প সুদে(৭/৮/৯%) তাদের মধ্যম পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায়ের কর্মীদের বাড়ী কেনা/বানানোর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা লোন দিয়ে থাকে । অর্থাৎ সরকারি ব্যাংকের কিস্তি আর প্রাইভেট ব্যাংকের কিস্তি ব্যাবধান খুব বেশি হবে না । আর যেহেতু আপনার বেতনের পরিমান ভালো তাই আপনি সহজেই আপনার ব্যাংক থেকে বা অন্য কোন ব্যাংক থেকে যে কোন সময় লোন নিয়ে ফ্লাট / হোম কিনতে পারবেন ।
**ছুটি**
বছরে ১০/১৫ দিন ক্যাসুয়াল লিভ / নৈমত্তিক ছুটি পাওয়া যায় । সেইসাথে চাকরি স্থায়ী হলে প্রতি বছর ১৫ দিনের অত্যাবশ্যিক ছুটি পাবেন ।
**চিকিৎসা খরচ**
অনেক ব্যাংকে ওয়েলফেয়ার ফান্ড থাকে । আপনার চিকিৎসার খরচের কাগজ-পত্র দেখিয়ে আপনার চিকিৎসার খরচের কিছু অংশ ব্যাংক থেকে পাবেন । আপনার বড় কোন রোগ হলে অই ফান্ড থেকে সাহায্য পেতে পারেন ।
পেনশন ???
**প্রভিডেন্ড ফান্ড**
প্রতি মাসে আপনার বেতন থেকে কিছু অংশ কেটে রেখে দেওয়া হবে । ব্যাংক ওই কেটে রাখা অংশের সাথে কিছু টাকা যোগ করে জমা করতে থাকবে, ব্যাঙ্কভেদে সামান্য পার্থক্য থাকতে পারে । চাকরির বয়স ৫/৬ বছরের অধিক হলে আপনি চাকরি ছেড়ে গেলে এই টাকা পাবেন ।এর আগে চাকরি ছেড়ে গেলে এই টাকা পাবেন না । যদি ২০/২৫ বছর চাকরি করেন তাহলে ভালো একটা টাকা জমা হবে যা অবসর গ্রহণের সময় দেওয়া হয় ।
**গ্রাচুয়িটি**
অনেক ব্যাংকেই চাকরির বয়স ৯/১০ বছর হলে আপনি চাকরি বদলাতে চাইলে ঐ সময় আপনার বেসিক বেতনকে বছর সংখ্যার ১/২ দুই গুন আকারে গুন করে যা আসে সেই পরিমান টাকা পাবেন । অর্থাৎ কেউ যদি ১০ বছর চাকরি করে ১০x২ =২০ , এবং তখন যদি বেসিক বেতন ৫০,০০০ টাকা হয় তাহলে ১০ লক্ষ টাকা পাবেন ।
ধরুন আপনি ২৫/৩০ বছর একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করে অবসর নিলেন । অবসর কালিন আপনার বেসিক বেতন হল ৭০/৮০ হাজার টাকা ( যদিও আসল পরিমান এর বেশি হবেই) । এখন প্রশ্ন হল অবসরের সময় কিছু পাবেন কি ? অবশ্যই পাবেন । উপরে উল্লেখিত প্রভিডেন্ড ফান্ড+গ্রাচুয়িটি মিলে খুব কম করে হলেও ৭০/৮০ লক্ষ লক্ষ টাকা পাবেন ।যেহেতু বেতন বেশি তাই ইচ্ছে করলে বিভিন্নক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকছে। চাকরির পাশাপাশি দ্বিতীয় কোন পেশায় জরিত হওয়ার চিন্তা করতে হচ্ছেনা। সরকারি চাকরির শেষ সময়ে ৬০ বছর বয়সে পেনসনের কোটি টাকা আপনি বৃদ্ধ বয়সে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবেন ! যুবক বয়সে তো টাকা থাকলে বেশি কাজে লাগাতে পারবেন, উপভোগ করতে পারবেন ।
**চাকরির নিরাপত্তা /জব সিকিউরিটি **
প্রাইভেট চাকরি আজ আছে কাল নাই , এই চাকরির কোন মুল্য আছে ? ????
লক্ষাধিক মানুষ প্রাইভেট ব্যাংকিং পেশার সাথে জড়িত আছেন । আপনার বাসার আশে-পাশে, আত্বিয়-স্বজনদের খোজ নিয়ে দেখুন তো কতজন লোক পাবেন যারা প্রাইভেট ব্যাংকে MTO হিসেবে জয়েন করে চাকরি করত হঠাত একদিন চাকরি চলে যায় । আশা করি পাবেন না । এ দেশের উন্নয়নে বা ব্যাবসা বাণিজ্যের উন্নতিতে প্রাইভেট ব্যাংকের অবদান খুই গুরুত্বপুর্ণ । অনন্ত জলিলের মত ব্যাবসায়িরা ব্যাংকের সহযোগিতায় শূন্য থেকে এত দুর আসতে পেরেছেন । কাই আপনি সরাসরি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছেন । আপনি বড় কোন ভুল করলে পানিশমেন্ট পোস্টিং হতে পারে । খুব মারাত্তক ভুল করলে চাকরি চলে যেতে পারে । খুব মারাত্তক ভুল না করলে এবং স্বাভাবিক ভাবে কাজ করে গেলে চাকরি সাবলীলভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব । ভয় পাওয়ার কারন নেই , আপনার ভালো দক্ষতা থাকলে বাকি ৩৯ টা ব্যাংকের যে কোন একটিতে জব পেয়ে যেতে পারেন । চাকরির পাশাপাশি যদি CDCS,CIMA,CFA,FRM, CAMS ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেইট অর্জন করতে পারেন সেইসাথে মাইক্রোসফট এক্সেল, ফাইন্যানশ্যাল মডেলিং ইত্যাদিতে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার চলার পথ মসৃণ হবে । অর্থাৎ আপনি নিজেকে গড়ে নিতে পারলে , ভালো দক্ষতা অর্জন করতে পারলে আপনাকে কেউ সহজে ঠেকাতে/আটকাতে পারবে না । একটি স্বনামধন্য প্রাইভেট ব্যাংকের এমডি প্রথম সারির সরকারি চাকরি পেয়েও একটি প্রাইভেট ব্যাংকে MTO হিসেবে জয়েন করেছিলেন । চাকরির শেষ পর্যায়ে এসে তিনি এমডি হিসেবে মাসে ১৩/১৪ লক্ষ টাকা বেতন পাচ্ছেন , উন্নত জীবন যাপন করছেন । তার জব সিকিউরিটি এক্কেবারেই নেই , ছিলোনা !!!
**ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা ভালো না , কলাপ্স করতে আর বেশি দিন নেই !!**
তাই নাকি ? এই সেক্টর কলাপ্স করলে / ধ্বসে পড়লে পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পরবে । শিল্পপতি-ব্যাবসায়ীরা পথে বসে পরবে । এই সেক্টরে তাদের স্বার্থ বেশি তাই সেক্টরকে টিকে রাখার মাথা ব্যাথা তাদেরই বেশি ।গার্মেন্টস-টেক্সটাইল,ফার্মাসিউটিক্যাল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রেখেছে অনেক দিন । এই সেক্টরগুলো ব্যাংকের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে । ব্যাংক না থাকলে এই দেশে মেগা প্রজেক্ট গুলো আমরা দেখতাম না তবে বর্তমানে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারনে প্রতিযোগিতা তুমুল । বিশেষজ্ঞরা বলেন ভবিশ্যতে কয়েকটা ব্যাংক মিলে একটা ব্যাংক হতে পারে অর্থাৎ ছোট ছোট ব্যাংক গুলো বড় ব্যাংকের সাথে একীভূত (Merge) হয়ে যেতে পারে । ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং উঠে যেতে পারে । অর্থাৎ ব্রাঞ্চ নামে কিছু থাকবে না , ছোট ছোট বুথ টাইপের কিছু থাকবে । তাই বলে আপনার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে না , আপনাকে ব্যাক অফিসে নেওয়া হবে । হাজারো হোক টেকনোলজি সিস্টেম , কম্পিউটার তো আর নিজে নিজে চলতে পারে না , তাকে চালাতে হয় । তাই ভয়ের কোন কারন নেই ।
**পাওয়ার/ক্ষমতা ???**
না , প্রাইভেট ব্যাংকে “পাওয়ার” নেই । এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়লে নিজ ব্যাংকের অধীনস্থদের বাইরে আপনার কোন বিশেষ ক্ষমতা থাকবে না। কেউ আপনাকে ভয় পাবে না । বানিজ্যিক সরকারী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এই কথাগুলো প্রযোজ্য ; “ক্ষমতা” নেই । উচ্চ শিক্ষিত-উন্নত দেশগুলোতে আমাদের দেশের মত চাকরির মাধ্যমে “ক্ষমতা” ব্যাপারটির অস্তিত্ব নেই । এখন আপনি নিজেকে উচ্চ শিক্ষিত-উন্নত দেশগুলোর মানুষের মত Cosmopolitan ভাবেন নাকি Conservative ভাবেন তা আপনার নিজস্ব ব্যাপার। conservative ভাবলে এই চাকরি আপনার জন্যে না। প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করা মানে আপনি ক্যাপিটালিজমের ঘোরতর সমর্থক । Time Value of Money বিবেচনা করলে প্রাইভেট ব্যাংকে ক্যারিয়ার গঠনে যৌক্তিকতা বেশি ।
**যাই বলেন ভাই হাজারো হোক এটা তো আর সরকারি না !!!!!**
আচ্ছা আপনি একটু প্রেসার নিয়ে কাজ করে সরকারি ব্যাংকের বেতনের কয়েক গুন বেশি ভালো বেতন পাচ্ছেন, বাড়ী-গাড়ী করতে পারছেন , অবসরের সময় ভালো আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন আর কি চান ? প্রাইভেট ব্যাংকে আপনার “উপরি পাওনা” পাওয়ার কোন সুযোগ নেই । তাছাড়া বাকি সব তো প্রায় সমান । দুর্নিতি না করে , অবৈধ আয় না করে সৎভাবে স্বচ্ছল জীবন যাপন করতে পারবেন । চাকরিতে দুর্নিতি করে , অবৈধ আয় করে শেষ জীবনে হজ্জ করে পাপমুক্ত হওয়া আর ব্যাংকের সুদের চাকরি করা সমান হবে নাকি হবে না সে আলোচনা এখানে বিষয়বস্তু নয় । আপনি জানেনকি প্রাইভেট ব্যাংকে ১০+ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অনেক ব্যাংকার আছেন যাদের চাকরি জীবন শুরু হয়েছিল সরকারি সোনালি,রুপালি,জনতা,অগ্রণী ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার/সিনিয়র অফিসার হিসেবে । পরবর্তিতে তারা সরকারি ব্যাংক থেকে প্রাইভেট ব্যাংকে চলে এসেছেন । বেসরকারি ব্যাংকগুলোর থেকে বেশিরভাগ সরকারী ব্যাংকগুলোর খুব করুণ অবস্থা ; মূলধন শঙ্কট , খেলাপি ঋণে জর্জরিত এবং অনেকক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত নিম্ন মানের সেবা দিয়েও কোন রকমে টিকে আছে । উন্নত দেশে হলে অনেক আগেই এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যেত । তাই যাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেশি তারা বেসরকারি ব্যাংকের MTO তে ঝুঁকতে পারেন নিঃসন্দেহে । প্রাইভেট সেক্টরে মাল্টিন্যাশনাল ছাড়া ব্যাংক এর MTO হিসেবে জয়েন করলে এই চাকরির মত স্ট্রাকচার্ড ,শুরু থেকেই ভালো বেতন, সপ্তাহে দুই দিন ছুটি , কয়েক বছর পড়েই লক্ষাধিক টাকা বেতন, নিয়মিত পদোন্নতি এমন চাকরি খুব কম ।
(Disclaimer : পোস্টটি শুধুমাত্র প্রাইভেট ব্যাংকে MTO ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরার জন্য এবং প্রাইভেট ব্যাংকেও ক্যারিয়ার গঠন করা যায় তা তুলে ধরার জন্য , অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই । কোন চাকরিকে বড় বা ছোট হিসেবে দেখানোর চেস্টা করা হয়নি। সুদ এবং ধর্ম এই আলোচনায় প্রযোজ্য নয় । শুধুমাত্র বাস্তবতার নিরিক্ষে বিশেষ ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরা হয়েছে । বানান ভুল হলে আছে অনেক । তথ্যে ভুল থাকলে পরামর্শ প্রযোজ্য । দ্বিমত হলে যুক্তি তর্ক মার্জনীয়)
সংগৃহিত:
মাহি
জুনিয়র এসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেনট
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড
দেশে প্রায় ৪০টি দেশি প্রাইভেট ব্যাংক।সারা বছর জুড়ে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো বিভিন্ন পদে সার্কুলার/নিয়োগ দিয়ে থাকে।আসুন জেনে নেই বিভিন্ন পদের রকমফের।
**ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার (MTO)**
অনেকেই মস্করা করে এই পদটিকে বলে ব্যাংকের জামাই পোস্ট । এই পোস্ট ফিউচার লিডার প্রোগ্রাম, স্পেশাল ক্যাডার অফিসার ইত্যাদি নামেও পরিচিত । একজন MTO কে বছর জুড়ে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং দেওয়া হয় , ব্রাঞ্চ – হেড অফিস, সব ডিভিশন , ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে ধারনা দেওয়া হয়। একজন MTO একটা ব্যাংক এর Holistic View পায় । ব্যাংকে আর অন্য কোন পোষ্টে জয়েন করে এত কম সময়ে এই সুজোগ পাওয়া যায়না । তবে সব ব্যাংকের MTO প্রোগ্রাম এক নয় । কিছু কিছু ব্যাংকের MTO প্রোগ্রাম খুব চমৎকার । আবার কিছু কিছু ব্যাংকে নামে মাত্র MTO প্রোগ্রাম আছে । যদিও সব ব্যাংকের MTO দের গুনগত মান সমান হয় না , ব্যাংকিং এ ক্যারিয়ার গড়তে হলে MTO এর বিকল্প নেই । এক/দুই বছর পরেই প্রিন্সিপাল অফিসার হওয়ার সুযোগ থাকায় ১৮/২০ বছরের মধ্যেই ব্যাংকের সর্বচ্চ পদ পাওয়া এমনকি সিইও/এমডি হওয়ার উদাহরনও আছে।
**নিয়োগ প্রক্রিয়া**
একমাত্র MTO পোস্টেই কোন লবিং / তদবির কাজ করে না । এই পোস্ট ছাড়া প্রাইভেট ব্যাংকের এমন কোন পোস্ট নেই যেখানে লবিং হয় না । জানামতে ব্যাংকের মালিক তার আত্বিয়কেও এই পোষ্টে নিতে পারে না । ১০০% স্বচ্ছ নিয়োগ হয় এই পোষ্টে । MTO হিসেবে নিয়োগ পাওয়া হল মেধা আর স্মার্টনেস এর খেলা । তবে সব ব্যাংকের MTO সমান স্মার্ট হয় না । বর্তমান নিয়মে এই পোস্টে আবেদন করতে যে কোন বিষয়ে অনার্স পাশ থাকতে হবে কমপক্ষে সিজিপিএ ৩.০০ নিয়ে এবং বয়স ৩০ এর কম হতে হবে । তবে আবেদনকারীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম সারির না হলে ৩.০০ এর কাছাকাছি সিজিপিএ হলে প্রাথমিকভাবে পরিক্ষার জন্য বাছাই হতে পারা কঠিন । তাই সিজিপিএ যত বেশি তত ভালো । কমার্সের সাবজেক্টে পড়লে এবং এমবিএ করা থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যায় । দৈনিক পত্রিকাগুলোতে সার্কুলার হয় অনলাইনে আবেদন আহ্বান করে । হাজার হাজার আবেদন পত্র থেকে ৩-৫ হাজার প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় । প্রার্থী বাছাই এর জন্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সিজিপিএ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবজেক্ট । কিছু কিছু ব্যাংক আইবিএ,এফবিএস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , আইবিএ জাবি , বিইউপি ,নর্থ সাউথ , ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রার্থীকে তেমন ডাকে না যেমন ইবিএল,দ্যা সিটি,ব্রাক ব্যাংক । আবার কিছু কিছু ব্যাংক জাতীয় থেকে শুরু করে দেশের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রার্থীকে ডাকে যেমন এবি ব্যাংক ।
**পরীক্ষা**
সাধারণত একবসায় একদিনেই দুই অংশে পরীক্ষা হয় - MCQ ও লিখিত । পরীক্ষার প্রাধান বিষয় হল অংক ও ইংরেজি । যে যত তুখোড় এই দুই বিষয়ে তার লিখিত পরীক্ষা পাশ করার সম্ভাবনা তত বেশি । যে কোন বিষয়ে ইংরেজিতে রচনা লেখা , বাংলা থেকে ইংরেজি , ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করার দক্ষতা থাকলে এই পরীক্ষা পাশ করা সহজ । ম্যাথ মুখস্থ না করে বুঝে করতে পারলে দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে । এর বাইরে থাকে অল্প কিছু সাধারন জ্ঞান । বাজারে অনেক গাইড বই পাওয়া যায় MTO পরিক্ষা সহায়ক । হুবহু মুখস্থ করে পরিক্ষা পাশ করার নজির কম । আপনার ক্রিয়েটিভি না থাকলে মুখস্থ করে পাশ করা সম্ভব তবে অনেক বার অনেক দিন ধরে পরিক্ষা দিতে হবে । কারন মেধা দুই ধরনের - ১। অল্প অধ্যায় করে সফলতা অর্জনকারীদের মেধা ক্ষুরধার , এরা নামমাত্র পরিশ্রমে সফল হন , ২। অনেক বার অনুশীলন করতে করতে ব্রেইনে বিষয়বস্তুগুলো গেথে ফেলতে পারলে একটু ধীরে হলেও সফলতা আসতে পারে । তাই ১ নং নম্বরে না থাকলেও ২ নম্বর অনুযায়ী অধ্যাবসায়ে রত থাকতে হবে । অনেকেই আছেন যারা বাজারের মোটামুটি সব বই পড়ে ফেলেছেন , সব বই সমাধান করে ফেলেছেন কিন্তু ব্যাটে বলে লাগছে না । এর কারন বইয়ের উপরে ১০০% ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পরা, তখন বইয়ের বাইরের সুন্দর লজিকগুলো মাথায় ঢুকতে চায় না । হুবহু কমন পাওয়ার আশা ছেড়ে বাজারের প্রচলিত বইগুলো শেষ করে নিজের বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগাতে পারলে সফলতা আসবে হাতের নাগালে । অনেক আবেদনারি বাজারের একটা ব্যাংক পরিক্ষার গাইড বই কিনে পুরোটা সমাধান না করেই টপ ব্যাংকগুলোর কয়েকটিতে MTO তে টিকে যান । আবার কেউ কেউ বাজারের সব কিছু শেষ করেও সফল হতে পারেন না । লিখিত পাশ করলে সাধারণত ব্যাঙ্কভেদে একটি বা দুইটি ভাইভা হয় । আবার কোন কোন ব্যাংকে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট করা হয় , প্রেজেন্টেশন নেওয়া হয় । ভাইভার জন্যে সাধারণত ব্যাঙ্কভেদে ১০০ থেকে ৩০০ জনকে ডাকা হয় । ভাইভা ইংরেজিতে হয় তাই ইংরেজিতে শুদ্ধভাবে কথা বলার অভ্যাস থাকতে হয় । আপনি লিখিত পরিক্ষায় যতই ভালো করেন না কেন আপনার কথাবার্তা/ Attitude ভাইভা বোর্ডে ভালো না লাগাতে পারলে আপনি আউট । এইসব ভাইভায় আপনার Bookish Knowledge যাচাই করা হয় না বললেই চলে । অনেকেই দুই ৪টি ভাইভা গাইড কিনে মুখস্থ করে ফেলেছে কিন্তু ভাইভা পাশ করতে পারে না । কারন উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা ভাইভার একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয় । CGPA বেশি হতে হবে না, শুধু নিজেকে গুছিয়ে সুন্দর ভাবে বিক্রি করতে পারলেই হয়। আপনি ভুল উত্তর দিন সমস্যা নেই আপনার আত্ববিশ্বাস দেখতে চায় তারা । আপনি হয়তো সব উত্তর সঠিকভাবে দিলেন কিন্তু আপনার Attitude পছন্দ না করলে আপনি আউট । আপনি আপনার নিজের কোন কাজ কাউকে দিয়ে করাতে গেলে নিশ্চ্য় যাচাই করে নিশ্চিত হতে চান যে আসলে সে কাজটি আগ্রহ নিয়ে করতে পারবে কিনা । ভাইভা বোর্ডে ঠিক এই জিনিসটাই দেখা হয় । কথাবার্তায় লজিক থাকতে হয় । সবশেষে ব্যাঙ্কভেদে কমপক্ষে ১৫/২০ জন এবং সর্বচ্চ ১০০ জনকে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত করা হয়। সাধারনত চূড়ান্ত ফলাফলের ১ মাসের মধ্যেই জয়েন করতে হয় । সার্কুলার হতে শুরু করে জয়েনিং পর্যন্ত ২-১০ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে ।
**বেতন**
MTO পোষ্টে জয়েন করলে ১/২ বছর প্রবেশন পিরিয়ডে থাকতে হয় । এই সময় মাসে সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কোন কোন ব্যাংক ৬৫ হাজার টাকা (Brac Bank MTO) দেয় । প্রবেশন পিরিয়ড শেষ হলে MTO কে সরাসরি প্রিন্সিপাল অফিসার পদ দেওয়া হয় । কিছু কিছু ব্যাংক সিনিয়র অফিসার পদ দেয় । তখন বেতন বেড়ে যায় ১৫-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত । অর্থাৎ একজন MTO একবছর পরেই ব্যাঙ্কভেদে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮৫ হাজার টাকা (MTB MTO)পর্যন্ত পেতে পারে । ঈদ/পুজো (ফেস্টিভাল) বোনাস পাবেন মুল বেতনের সমান । প্রতি বছর ব্যাংকের লাভের একটা অংশ বছরে একবার দেওয়া হয় যা বেসিক বেতনের ২-৪ গুন হয়ে থাকে । প্রবেশন পিরিয়ডের পর আপনার বেতন ৫০ হাজার টাকা হলে এক বছরের বেতন , ফেস্টিভ্যাল বোনাস , প্রফিট শেয়ারিং সব মিলিয়ে মাসে গড়ে কমপক্ষে ৬০+ হাজার টাকা এবং সর্বোচ ৮৫+ হাজার মত আয় করবেন । প্রায় প্রতি বছর বেসিক বেতনের ৫-১০% ইনক্রিমেন্ট হয়ে থাকে । ৩/৪ বছর পর পর পদোন্নতি হয় সেইসাথে বেতন বৃদ্ধি হতে থাকে ।
**কাজের ধরন**
MTO কে প্রবেশন পিরিয়ডের পর যে কোন ব্রাঞ্চ , ডিপার্টমেন্টে পোস্টিং দেওয়া হয় । MS Word , Excel , PowerPoint ইত্যাদিতে দখল থাকলে খুব ভালো হয় । ব্যাংকের এমডি থেকে এসিসট্যান্ট অফিসার সবাই আসলে কেরানিগীরির কাজ করে ; ফাইল পত্র লেখা/বানানো , সই করা , সই করানো , ইত্যাদি প্রধান কাজ । স্যুট-টাই পড়ে অফিসে বসে কাজ করবেন । কাস্টমারকে সেবা দিতে হবে , ওপারেশনস দেখতে হবে , ফিল্ড ভিজিটে যেতে হবে , লোন এর টাকা রিকোভারি করার জন্য যেতে হবে ইত্যাদি । মাথায় টেনশন ও প্রচুর প্রেসার নিয়ে কাজ করতে হবে , অনেক সময় কাস্টমারের ঝাড়ি খেতে হতে পারে , অফিস শেষ করতে রাত ৭/৮ টা বাজবে । লোনের টাকা পরিশোধ করার জন্য গ্রাহকে অনুরোধ করতে হবে , লোনের টাকা ফেরত না আসলে কেইস হবে, আদালতে সাক্ষী দিতে যেতে হবে ( MBBS ডাক্তাররাও তাদের পেশাগত কারনে আদালতে সাক্ষি দিতে যান)। আপনার স্বাক্ষর করা কোন ডকুমেন্টের মাধ্যমে জালিয়াতি হলে জেলে যেতে হবে । বেশির ভাগ কাজ “রিয়েল টাইম” অর্থাৎ তাৎক্ষনিক সেবা দিতে হবে, চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে। একটা ব্যাংকের প্রধানত তিনটা মুখ্য বিভাগ থাকে – জেনারেল ব্যাংকিং , ক্রেডিট , ফরেন ট্রেড /ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড । জেনারেল ব্যাংকিংয়ের আওতায় মূলত নগদ ক্যাশ, একাউন্ট খোলা-বন্ধ , চেক আদান প্রদান ইত্যাদি কাজ হয়ে থাকে । ক্রেডিটের আওতায় ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লোন দেওয়া ও রিকোভারি ইত্যাদি কাজ হয়ে থাকে । ফরেন ট্রেড বা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড বিভাগ সাধারণত এক্সপোর্ট/ইম্পোর্ট, এলসি, বৈদেশিক মুদ্রা ইত্যাদি কাজের আওতায় পরে । একজন MTO কে প্রথম বছরে সবগুলো বিভাগের কাজ শেখার সুযোগ দেওয়া হয় । প্রবেশন পিরিয়ডের পর তাকে উপরে উল্লেখিত যে কোন একটি দিভাগে দেওয়া হয় । তবে MTO দেরকে স্থায়ীভাবে ক্রেডিট বা ফরেন ট্রেড /ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড বেশি দেওয়া হয় , জেনারেল ব্যাংকিংয়ে তেমন রাখা হয় না । ব্রাঞ্চ অফিসে থাকলে অফিস টাইম যদিও সকাল ১০ থেকে ৬ টা , আপনার অফিস থেকে বের হতে হতে ৭/৮ টা বেজে যাবে । ২/১ ঘণ্টা বেশি কাজ করলেও ভালো বেতন পাচ্ছেন আপনি । তবে হেড অফিস/ ব্যাক অফিসের কিছু ডিভিশনে থাকলে একটু আগেই বের হতে পারবেন ৬/৭ টার মধ্যে । নারী কর্মীরা পুরুষ কর্মীর চেয়ে একটু আগে বের হতে পারেন । যদিও শুক্র শনি দুই দিন অফিস বন্ধ তবে কোন কোন ব্রাঞ্চ, ডিভিশনে শনিবারে যেতে হতে পারে কিন্তু প্রতি শনিবারে না – মাসে ১/২ শনিবার। প্রতি বছর আপনার রেগুলার কাজের পাশাপাশি আপনাকে লোন বা ডিপোজিট এর টার্গেট দেওয়া হবে। যেমন ২০১৮ সালে আপনাকে বলা হল এই বছর ১ কোটি টাকা ডিপোজিট আনে হবে । আপনি ভালো নেটয়ার্কিং করতে পারলে এক কোটি ডিপোজিট কোন ব্যাপারই না , আবার নেটয়ার্কিং না করতে পারলে লক্ষ টাকাও ডিপোজিট আনা সম্ভব না । সব কাজ গতানুগতিক । সব কাজের ফরম্যাট থাকবে আপনাকে ঐ ফরম্যাট অনুযায়ী কাজ করতে হবে । নিজের ক্রিয়েটিভি দেখানোর সুযোগ কম তবে একেবারে যে নেই তা নয় । টার্গেট না থাকলে এই পেশা অনেক বেশি আকর্ষনীয় হত । তবে প্রাইভেট সেক্টরে মাল্টিন্যাশনাল বলেন আর দেশীয় FMCG কোম্পানী যাই বলেন সব চাকরিতে মোটামুটি টার্গেট থাকবেই ।
**ক্যারিয়ার**
একজন MTO সাধারণত ৬-৯ বছরে মধ্যে ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ (এভিপি ) হতে পারে । অন্য কোন পোষ্টে ব্যাংকে জয়েন করে এত অল্প সময়ে এভিপি কেউ হতে পারে না । ২২/২৩ বছর বয়সে অনার্স শেষ করে MTO তে জয়েন করে ২৯/৩০ বছর বয়সে এভিপি হয়েছেন হচ্ছেন অনেকেই । একজন MTO ৮/১০ বছরে একটা ব্রাঞ্চের ম্যানেজার হওয়ার সুযোগ পায় । প্রমোশন হয় সাধারণত ৩/৫ বছর পর পর । এভাবে MTO তে জয়েন করার ১৫-১৬ বছরের মধ্যে বেতন কমপক্ষে ২ লক্ষ টাকা পার হয়, গাড়ী তো থাকছেই । ভালো পারফর্ম করতে পারলে আরো অনেক বেশি পদোন্নতি ও বেশি আয় করতে পারবেন । অনেক ব্যাংকে প্রতি ৩/৪ বছরে প্রমোশন নাও হতে পারে। মার্কেটে সব ব্যাংক সমান না । কিছু কিছু ব্যাংকে কাজের পরিবেশ ও বেতন খুব ভালো আবার কিছু কিছু ব্যাংকে কাজের পরিবেশ ও বেতন ভালো না । তাই চোখ কান খোলা রেখে যাচাই-বাছাই করে ব্যাংক বদলানো কঠিন কোন ব্যাপার না । বর্তমানে যারা বিভিন্ন ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদে (এমডি , ডিএমডি , এসইভিপি ) আছেন তাদের প্রায় সবার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিলো MTO হিসেবে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্যান্য সুযোগ সুবিধাসহ এমডিদের মাসিক বেতন কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা হয়ে থাকে । অনেক এমডি মাসে ১২/১৪ লক্ষ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন । দেশীয় বিদেশি ব্যাংকগুলোর এমডিদের বেতন ৩০/৫০ লক্ষ টাকা । তবে MTO হিসেবে জয়েন করলেই যে সবাই এমডি হতে পারবে তা সঠিক নয়। এমডি না হলেও এসইভিপি, ডিপার্টমেন্ট/ ডিভিশন হেড হতে পারবে অনায়াসে। ।
**গাড়ী**
এভিপি হলে ব্যাংক থেকে গাড়ী দেওয়া হয় । বেতন লক্ষ টাকার উপরে তো হবেই সেই সাথে গাড়ির চালক ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচ দেওয়া হয় প্রায় ৪০/৫০ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে মাসিক আয় হবে দেড় লক্ষ টাকার অধিক ।
**বাড়ী**
আপনি যে কোন সময় কম সুদে পারসোনাল লোন ,হোম লোন নিতে পারবেন । সরকারি ব্যাংকে চাকরি করলে যেমন ব্যাংক রেটে(৫%)/স্বল্প সুদে বাড়ী কেনা/বানানোর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা সহজে লোন নেওয়া যায় , তেমনি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করলে অনেক ব্যাংক স্বল্প সুদে(৭/৮/৯%) তাদের মধ্যম পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায়ের কর্মীদের বাড়ী কেনা/বানানোর জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা লোন দিয়ে থাকে । অর্থাৎ সরকারি ব্যাংকের কিস্তি আর প্রাইভেট ব্যাংকের কিস্তি ব্যাবধান খুব বেশি হবে না । আর যেহেতু আপনার বেতনের পরিমান ভালো তাই আপনি সহজেই আপনার ব্যাংক থেকে বা অন্য কোন ব্যাংক থেকে যে কোন সময় লোন নিয়ে ফ্লাট / হোম কিনতে পারবেন ।
**ছুটি**
বছরে ১০/১৫ দিন ক্যাসুয়াল লিভ / নৈমত্তিক ছুটি পাওয়া যায় । সেইসাথে চাকরি স্থায়ী হলে প্রতি বছর ১৫ দিনের অত্যাবশ্যিক ছুটি পাবেন ।
**চিকিৎসা খরচ**
অনেক ব্যাংকে ওয়েলফেয়ার ফান্ড থাকে । আপনার চিকিৎসার খরচের কাগজ-পত্র দেখিয়ে আপনার চিকিৎসার খরচের কিছু অংশ ব্যাংক থেকে পাবেন । আপনার বড় কোন রোগ হলে অই ফান্ড থেকে সাহায্য পেতে পারেন ।
পেনশন ???
**প্রভিডেন্ড ফান্ড**
প্রতি মাসে আপনার বেতন থেকে কিছু অংশ কেটে রেখে দেওয়া হবে । ব্যাংক ওই কেটে রাখা অংশের সাথে কিছু টাকা যোগ করে জমা করতে থাকবে, ব্যাঙ্কভেদে সামান্য পার্থক্য থাকতে পারে । চাকরির বয়স ৫/৬ বছরের অধিক হলে আপনি চাকরি ছেড়ে গেলে এই টাকা পাবেন ।এর আগে চাকরি ছেড়ে গেলে এই টাকা পাবেন না । যদি ২০/২৫ বছর চাকরি করেন তাহলে ভালো একটা টাকা জমা হবে যা অবসর গ্রহণের সময় দেওয়া হয় ।
**গ্রাচুয়িটি**
অনেক ব্যাংকেই চাকরির বয়স ৯/১০ বছর হলে আপনি চাকরি বদলাতে চাইলে ঐ সময় আপনার বেসিক বেতনকে বছর সংখ্যার ১/২ দুই গুন আকারে গুন করে যা আসে সেই পরিমান টাকা পাবেন । অর্থাৎ কেউ যদি ১০ বছর চাকরি করে ১০x২ =২০ , এবং তখন যদি বেসিক বেতন ৫০,০০০ টাকা হয় তাহলে ১০ লক্ষ টাকা পাবেন ।
ধরুন আপনি ২৫/৩০ বছর একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করে অবসর নিলেন । অবসর কালিন আপনার বেসিক বেতন হল ৭০/৮০ হাজার টাকা ( যদিও আসল পরিমান এর বেশি হবেই) । এখন প্রশ্ন হল অবসরের সময় কিছু পাবেন কি ? অবশ্যই পাবেন । উপরে উল্লেখিত প্রভিডেন্ড ফান্ড+গ্রাচুয়িটি মিলে খুব কম করে হলেও ৭০/৮০ লক্ষ লক্ষ টাকা পাবেন ।যেহেতু বেতন বেশি তাই ইচ্ছে করলে বিভিন্নক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকছে। চাকরির পাশাপাশি দ্বিতীয় কোন পেশায় জরিত হওয়ার চিন্তা করতে হচ্ছেনা। সরকারি চাকরির শেষ সময়ে ৬০ বছর বয়সে পেনসনের কোটি টাকা আপনি বৃদ্ধ বয়সে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারবেন ! যুবক বয়সে তো টাকা থাকলে বেশি কাজে লাগাতে পারবেন, উপভোগ করতে পারবেন ।
**চাকরির নিরাপত্তা /জব সিকিউরিটি **
প্রাইভেট চাকরি আজ আছে কাল নাই , এই চাকরির কোন মুল্য আছে ? ????
লক্ষাধিক মানুষ প্রাইভেট ব্যাংকিং পেশার সাথে জড়িত আছেন । আপনার বাসার আশে-পাশে, আত্বিয়-স্বজনদের খোজ নিয়ে দেখুন তো কতজন লোক পাবেন যারা প্রাইভেট ব্যাংকে MTO হিসেবে জয়েন করে চাকরি করত হঠাত একদিন চাকরি চলে যায় । আশা করি পাবেন না । এ দেশের উন্নয়নে বা ব্যাবসা বাণিজ্যের উন্নতিতে প্রাইভেট ব্যাংকের অবদান খুই গুরুত্বপুর্ণ । অনন্ত জলিলের মত ব্যাবসায়িরা ব্যাংকের সহযোগিতায় শূন্য থেকে এত দুর আসতে পেরেছেন । কাই আপনি সরাসরি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছেন । আপনি বড় কোন ভুল করলে পানিশমেন্ট পোস্টিং হতে পারে । খুব মারাত্তক ভুল করলে চাকরি চলে যেতে পারে । খুব মারাত্তক ভুল না করলে এবং স্বাভাবিক ভাবে কাজ করে গেলে চাকরি সাবলীলভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব । ভয় পাওয়ার কারন নেই , আপনার ভালো দক্ষতা থাকলে বাকি ৩৯ টা ব্যাংকের যে কোন একটিতে জব পেয়ে যেতে পারেন । চাকরির পাশাপাশি যদি CDCS,CIMA,CFA,FRM, CAMS ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেইট অর্জন করতে পারেন সেইসাথে মাইক্রোসফট এক্সেল, ফাইন্যানশ্যাল মডেলিং ইত্যাদিতে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার চলার পথ মসৃণ হবে । অর্থাৎ আপনি নিজেকে গড়ে নিতে পারলে , ভালো দক্ষতা অর্জন করতে পারলে আপনাকে কেউ সহজে ঠেকাতে/আটকাতে পারবে না । একটি স্বনামধন্য প্রাইভেট ব্যাংকের এমডি প্রথম সারির সরকারি চাকরি পেয়েও একটি প্রাইভেট ব্যাংকে MTO হিসেবে জয়েন করেছিলেন । চাকরির শেষ পর্যায়ে এসে তিনি এমডি হিসেবে মাসে ১৩/১৪ লক্ষ টাকা বেতন পাচ্ছেন , উন্নত জীবন যাপন করছেন । তার জব সিকিউরিটি এক্কেবারেই নেই , ছিলোনা !!!
**ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা ভালো না , কলাপ্স করতে আর বেশি দিন নেই !!**
তাই নাকি ? এই সেক্টর কলাপ্স করলে / ধ্বসে পড়লে পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পরবে । শিল্পপতি-ব্যাবসায়ীরা পথে বসে পরবে । এই সেক্টরে তাদের স্বার্থ বেশি তাই সেক্টরকে টিকে রাখার মাথা ব্যাথা তাদেরই বেশি ।গার্মেন্টস-টেক্সটাইল,ফার্মাসিউটিক্যাল অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রেখেছে অনেক দিন । এই সেক্টরগুলো ব্যাংকের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে । ব্যাংক না থাকলে এই দেশে মেগা প্রজেক্ট গুলো আমরা দেখতাম না তবে বর্তমানে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারনে প্রতিযোগিতা তুমুল । বিশেষজ্ঞরা বলেন ভবিশ্যতে কয়েকটা ব্যাংক মিলে একটা ব্যাংক হতে পারে অর্থাৎ ছোট ছোট ব্যাংক গুলো বড় ব্যাংকের সাথে একীভূত (Merge) হয়ে যেতে পারে । ব্রাঞ্চ ব্যাংকিং উঠে যেতে পারে । অর্থাৎ ব্রাঞ্চ নামে কিছু থাকবে না , ছোট ছোট বুথ টাইপের কিছু থাকবে । তাই বলে আপনার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে না , আপনাকে ব্যাক অফিসে নেওয়া হবে । হাজারো হোক টেকনোলজি সিস্টেম , কম্পিউটার তো আর নিজে নিজে চলতে পারে না , তাকে চালাতে হয় । তাই ভয়ের কোন কারন নেই ।
**পাওয়ার/ক্ষমতা ???**
না , প্রাইভেট ব্যাংকে “পাওয়ার” নেই । এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়লে নিজ ব্যাংকের অধীনস্থদের বাইরে আপনার কোন বিশেষ ক্ষমতা থাকবে না। কেউ আপনাকে ভয় পাবে না । বানিজ্যিক সরকারী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এই কথাগুলো প্রযোজ্য ; “ক্ষমতা” নেই । উচ্চ শিক্ষিত-উন্নত দেশগুলোতে আমাদের দেশের মত চাকরির মাধ্যমে “ক্ষমতা” ব্যাপারটির অস্তিত্ব নেই । এখন আপনি নিজেকে উচ্চ শিক্ষিত-উন্নত দেশগুলোর মানুষের মত Cosmopolitan ভাবেন নাকি Conservative ভাবেন তা আপনার নিজস্ব ব্যাপার। conservative ভাবলে এই চাকরি আপনার জন্যে না। প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করা মানে আপনি ক্যাপিটালিজমের ঘোরতর সমর্থক । Time Value of Money বিবেচনা করলে প্রাইভেট ব্যাংকে ক্যারিয়ার গঠনে যৌক্তিকতা বেশি ।
**যাই বলেন ভাই হাজারো হোক এটা তো আর সরকারি না !!!!!**
আচ্ছা আপনি একটু প্রেসার নিয়ে কাজ করে সরকারি ব্যাংকের বেতনের কয়েক গুন বেশি ভালো বেতন পাচ্ছেন, বাড়ী-গাড়ী করতে পারছেন , অবসরের সময় ভালো আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন আর কি চান ? প্রাইভেট ব্যাংকে আপনার “উপরি পাওনা” পাওয়ার কোন সুযোগ নেই । তাছাড়া বাকি সব তো প্রায় সমান । দুর্নিতি না করে , অবৈধ আয় না করে সৎভাবে স্বচ্ছল জীবন যাপন করতে পারবেন । চাকরিতে দুর্নিতি করে , অবৈধ আয় করে শেষ জীবনে হজ্জ করে পাপমুক্ত হওয়া আর ব্যাংকের সুদের চাকরি করা সমান হবে নাকি হবে না সে আলোচনা এখানে বিষয়বস্তু নয় । আপনি জানেনকি প্রাইভেট ব্যাংকে ১০+ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অনেক ব্যাংকার আছেন যাদের চাকরি জীবন শুরু হয়েছিল সরকারি সোনালি,রুপালি,জনতা,অগ্রণী ব্যাংকের প্রবেশনারি অফিসার/সিনিয়র অফিসার হিসেবে । পরবর্তিতে তারা সরকারি ব্যাংক থেকে প্রাইভেট ব্যাংকে চলে এসেছেন । বেসরকারি ব্যাংকগুলোর থেকে বেশিরভাগ সরকারী ব্যাংকগুলোর খুব করুণ অবস্থা ; মূলধন শঙ্কট , খেলাপি ঋণে জর্জরিত এবং অনেকক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত নিম্ন মানের সেবা দিয়েও কোন রকমে টিকে আছে । উন্নত দেশে হলে অনেক আগেই এ ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যেত । তাই যাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেশি তারা বেসরকারি ব্যাংকের MTO তে ঝুঁকতে পারেন নিঃসন্দেহে । প্রাইভেট সেক্টরে মাল্টিন্যাশনাল ছাড়া ব্যাংক এর MTO হিসেবে জয়েন করলে এই চাকরির মত স্ট্রাকচার্ড ,শুরু থেকেই ভালো বেতন, সপ্তাহে দুই দিন ছুটি , কয়েক বছর পড়েই লক্ষাধিক টাকা বেতন, নিয়মিত পদোন্নতি এমন চাকরি খুব কম ।
(Disclaimer : পোস্টটি শুধুমাত্র প্রাইভেট ব্যাংকে MTO ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরার জন্য এবং প্রাইভেট ব্যাংকেও ক্যারিয়ার গঠন করা যায় তা তুলে ধরার জন্য , অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই । কোন চাকরিকে বড় বা ছোট হিসেবে দেখানোর চেস্টা করা হয়নি। সুদ এবং ধর্ম এই আলোচনায় প্রযোজ্য নয় । শুধুমাত্র বাস্তবতার নিরিক্ষে বিশেষ ক্ষেত্রগুলো তুলে ধরা হয়েছে । বানান ভুল হলে আছে অনেক । তথ্যে ভুল থাকলে পরামর্শ প্রযোজ্য । দ্বিমত হলে যুক্তি তর্ক মার্জনীয়)
সংগৃহিত:
মাহি
জুনিয়র এসিসটেন্ট ভাইস প্রেসিডেনট
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড