- Wed Sep 11, 2019 6:00 pm#1685
“আমি নিজেই কিছু দিন আগে ছাত্র ছিলাম। ইন্টারমিডিয়েটে একেক বছর যদি ৭০ হাজার, ৮০ হাজার পাশ করে বা এক লক্ষ, দুই লক্ষ। আমি সারাদেশে এত পরিমাণ বিশ্ববিদ্যালয় করে দিলাম যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে গ্রাজুয়েট হয়ে বের হল। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিবছর দুই লক্ষ শিক্ষার্থীকে আমি গ্রাজুয়েশন বা ডিগ্রি দিচ্ছি কিন্তু এই দুই লক্ষের কত জনের কর্মসংস্থান বাস্তবে আমাদের দেশে রয়েছে?
আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন, বিসিএস পরীক্ষায় লড়তে হবে, দু চারটা ব্যাংকে প্রতিযোগিতা করতে হবে। ফাস্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস ও আরো কিছু, সব মিলিয়ে যে পরিমাণ শিক্ষার্থীকে আপনি উচ্চ শিক্ষা দিচ্ছেন তার কত ভাগকে আপনি কর্মসংস্থান তৈরি করে দিতে পারছেন? আপনি যদি কর্মসংস্থান দিতে না পারেন তাহলে কেন এত পরিমাণ গ্রাজুয়েট বানাবেন? আপনি ইচ্ছে করে ডেকে এনে কাউকে বেকার বানিয়ে দিচ্ছেন।
এই বেকারদের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা আমি দুটো জায়গাতে দেব। প্রথম দায় হচ্ছে পলেসি মেকার এবং শিক্ষকদের। আমি নিজের ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করব। আসলে আমি কতটা চিন্তা করছি যে আমি যাদেরকে পড়াচ্ছি, চার বছর পর আমার এই শিক্ষার্থী আসলে কোন ক্ষেত্রে চাকরি করবে? যদি আমি নিজে নিজেকে এই প্রশ্ন করি তাহলে সবচেয়ে বেশি ফলাফল আমার কাছ থেকে আসবে। আমি যদি প্রতিদিন ১০ মিনিট করেও চিন্তা করি যে, আমি আমার শিক্ষার্থীদেরকে চার বছর পরে কোন জায়গায় পাঠাবো, কোন জায়গাটাতে বলবো যে- এখানে তোমার সুযোগ রয়েছে, এখানে তুমি ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবে। এটি যদি একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে না থাকে কিংবা একজন পলেসি মেকার হিসেবে এই জনসমাজ, তরুণ সমাজের কাছে আমার না থাকে তাহলে ব্যর্থতাটা সেখানে রয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে আমি যাদের প্রশ্নবিদ্ধ করবো তারা হচ্ছে শিক্ষার্থী সমাজ। আপনি মনে করুন যে মাধ্যমিক লেভেল, উচ্চ মাধ্যমিক লেভেল পার করে যখনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন, আপনার মাথায় চিন্তা থাকে- ‘সব ঠিক আছে, আমার কেবলমাত্র কাজ হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা’। আমার একাডেমিক পড়াশুনা, ডিপার্টমেন্টের পড়াশুনা এগুলো নিয়ে কাজ করার কোন দরকার নেই। আমি একজন ব্যকবেঞ্চার হব, আমি পিছনের দিকে বসব। তারপর হচ্ছে আমার একাডেমিক পড়াশুনা নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হবে না। কোন রকম একটা প্রান্তিক ফলাফল নিয়ে দুই, তিন বা এরকম একটা ফলাফল নিয়ে বের হয়ে যাব।
তারপর আমি পাবলিক পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আমি বিসিএস, ব্যাংক জব এগুলো নিয়ে চিন্তা করব। আপনি নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন- আপনি কি কখনো ভেবেছেন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে বসে আপনার শিক্ষকদের কাছে জানতে চেয়েছেন উদাহরণ স্বরূপ- আমি ইংরেজি বিভাগে পড়ছি/ বাংলা বিভাগে পড়ছি / আরবি বিভাগে পড়ছি / দর্শনে পড়ছি / ইতিহাসে পড়ছি, আপনি কি কখনো জানতে চেয়েছেন চার বছর পর আমি ঠিক কোন ক্ষেত্রে কাজ করব? তাহলে আমি কেন এখানে ভর্তি হয়েছি? আমি যখন পড়ার বিষয় পছন্দ করি তখন সেটার প্রতি আমার ভাললাগা রয়েছে, টার্গেট রয়েছে। আমি এই বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করব এবং এই নির্দষ্ট পেশায় যোগদান করব। যদি এরকম ঠিক করা কোন টার্গেট, পেশা না থাকে তাহলে এই দায়বদ্ধতা আপনাদের (শিক্ষার্থী)।
দায়বদ্ধতা আমি দুটি জায়গায় দিয়ে আমি এখন সমাধানের কথা বলব। সেটা হচ্ছে- একটি ভারতীয় বিজ্ঞাপন আপনারা অনেকই হয়ত দেখে থাকবেন, একটা টি-শার্ট ও জিন্সের অর্থাৎ পোশাকের শো-রুম, সেখানে একদিন দেখা য়ায় শুধুমাত্র এক্সএল সাইজের কালো রঙের টিশার্ট ছাড়া আর কিছু নেই। সবাই শোরুমে যেয়ে জিন্স খোঁজে কিন্তু সেখানে পায় কেবল ব্লাক টি-শার্ট। শর্টস খোঁজে সেটা নেই, ভিন্ন কালারের টি-শার্ট খোঁজে সেটা নেই। ক্রেতারা জিজ্ঞেস করে- এখানে তো এই এই পোশাক ছিল কিন্তু এখন কেন নেই? তখন তিনটা বাচ্চা তারা এসে বলে- আপনারা যেমন এখন একটামাত্র অপশন দেখে বলছেন এখানে তিনটা ছিল কিন্তু এখন নেই কেন? আমাদের জীবনে আমরা যখন পড়াশুনা শুরু করি তখন আমাদের পিতামাতা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে- আমার সন্তান ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হবে! কিন্তু আমাদের কোন নিজস্ব পছন্দ থাকে না। আমি আসলে কি হতে চাই, আমার যদি কোন সৃজনশীল গুণ থাকে সে জায়গায় কেন আমি যেতে পারছি না?
এই উদাহরণটি টানার অর্থ হচ্ছে- উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে আপনার জন্য পলিটেকনিক-কারিগরি দিক খোলা থাকবে, আপনার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তিগত দিক খোলা থাকবে। আপনার জন্য যখন অনেকগুলো সুযোগ খোলা থাকবে তখন আপনি চিন্তা করতে পারবেন আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তাহলে পাঁচ বছর পর এই জায়গাতে থাকতে পারব, আর যদি পলিটেকনিকে পড়ি তাহলে পাঁচ বছর পরে নিজের জন্য কিছু একটা উপার্জন করতে পারব। এ রকম বিষয়গুলো যদি আমি শিক্ষার্থীদের কাছে দিতে পারি তাহলে তার যেটা দরকার সেটা চিন্তা করতে পারবে। তাই প্রথমেই আমাদের চিন্তা করতে হবে। যখন আমাদের কাছে সুযোগ খোলা থাকে না তখন এই পরিস্থিতি আসে এবং সেখানটায় আমরা দেখি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ১৫০০ সিটের জন্য ৬ লক্ষ আবেদন করে।
আজকে যারা কেন্দ্রেীয় গ্রন্থাগার নিয়ে কথা বলছিলেন যে, ৮টায় লাইব্রেরি খুলবে কিন্তু ৬টা থেকে সিরিয়াল পড়ে। যদি আমি আপনাদের প্রশ্ন করি- ৬টা থেকে যে সিরিয়াল পরে সেটা কি লাইব্রেরির কোন বই পড়ার জন্যে? তাহলে সেখানে কেন যাচ্ছে? কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এমন একটা জায়গা যেখানে মানুষ জ্ঞান আরোহন করতে যাবে, জ্ঞান চর্চা করবে। আপনি সেখাটায় চাকরির পড়ার জন্য যাচ্ছেন। ঠিক আছে, আপনি সরাকারে বলেন, এমন একটা জায়গা করে দিতে যেখানে সরকারের চাকরি করার জন্য পড়াশোনা করবে। সেখানে পাবলিক সার্ভিসের জন্য পড়াশুনা করবে যা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির মত হবে না। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি যেখানটায় অনেক জ্ঞান থাকে, সেই জ্ঞান নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা যাবে।
আপনি তিন তলায়, দুই তলায় যেয়ে দেখেন। সেখানে যে রেফারেন্স বই আছে সেগুলোর উপর বালির স্তূপ পড়ে আছে। শিক্ষার্থীরা সেগুলোকে ধরেও দেখে না। আমরা যদি সেগুলোকে ব্যবহার না করি তাহলে এই লাইব্রেরির কি দরকার? আমি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অনুরোধ করব, নিজেকে অন্তত একবার প্রশ্ন করবেন এই দায়িত্বটুকু আপনারও ছিল কি না? আপনি যে নিজেকে এই রকম একটি অমানবিক প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন যেখানটায় আপনি ৪ লক্ষের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে পনেরশ’র মধ্যে কেউ একজন হবেন! তারপর নিজের ক্যারিয়ার সাজাবেন।
এটা চিন্তা করাও বেশ কঠিন যে আপনি এত লম্বা একটা প্রতিযোগিতা করে তারপর সেখান থেকে বের হয়ে আসবেন! কেন আপনি চিন্তা করতে পারেন না যে আপনি একজন উদ্যোগতা হবেন, কেন চিন্তা করছেন না আপনি ভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন? কেন চিন্তা করছেন না আপনি একজন ভাল গবেষক হবেন একজন শিক্ষাবিদ হবেন। কেন অন্য অপশন নিয়ে চিন্তা করছেন না, কেন শুধু একটা অপশন নিয়ে নিজের জীবনটা এভাবে বিকিয়ে দিচ্ছেন? আমি আপনাদের সাবাইকে এ বিষয়ে ভাবার অনুরোধ রাখছি এবং বিশ্বাস করি যদি এগুলো নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা চিন্তা করতে শুরু করে শিক্ষকরা চিন্তা করে, পলেসি মেকাররা তাদের জায়গা থেকে চিন্তা করে তবে অবশ্যই বাংলাদেশে পরিবর্তন আসবে।”
লেখকঃ মেহেদি হাসান, ঢাবি প্রভাষক
আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন, বিসিএস পরীক্ষায় লড়তে হবে, দু চারটা ব্যাংকে প্রতিযোগিতা করতে হবে। ফাস্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস ও আরো কিছু, সব মিলিয়ে যে পরিমাণ শিক্ষার্থীকে আপনি উচ্চ শিক্ষা দিচ্ছেন তার কত ভাগকে আপনি কর্মসংস্থান তৈরি করে দিতে পারছেন? আপনি যদি কর্মসংস্থান দিতে না পারেন তাহলে কেন এত পরিমাণ গ্রাজুয়েট বানাবেন? আপনি ইচ্ছে করে ডেকে এনে কাউকে বেকার বানিয়ে দিচ্ছেন।
এই বেকারদের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা আমি দুটো জায়গাতে দেব। প্রথম দায় হচ্ছে পলেসি মেকার এবং শিক্ষকদের। আমি নিজের ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করব। আসলে আমি কতটা চিন্তা করছি যে আমি যাদেরকে পড়াচ্ছি, চার বছর পর আমার এই শিক্ষার্থী আসলে কোন ক্ষেত্রে চাকরি করবে? যদি আমি নিজে নিজেকে এই প্রশ্ন করি তাহলে সবচেয়ে বেশি ফলাফল আমার কাছ থেকে আসবে। আমি যদি প্রতিদিন ১০ মিনিট করেও চিন্তা করি যে, আমি আমার শিক্ষার্থীদেরকে চার বছর পরে কোন জায়গায় পাঠাবো, কোন জায়গাটাতে বলবো যে- এখানে তোমার সুযোগ রয়েছে, এখানে তুমি ক্যারিয়ার গঠন করতে পারবে। এটি যদি একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে না থাকে কিংবা একজন পলেসি মেকার হিসেবে এই জনসমাজ, তরুণ সমাজের কাছে আমার না থাকে তাহলে ব্যর্থতাটা সেখানে রয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে আমি যাদের প্রশ্নবিদ্ধ করবো তারা হচ্ছে শিক্ষার্থী সমাজ। আপনি মনে করুন যে মাধ্যমিক লেভেল, উচ্চ মাধ্যমিক লেভেল পার করে যখনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন, আপনার মাথায় চিন্তা থাকে- ‘সব ঠিক আছে, আমার কেবলমাত্র কাজ হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা’। আমার একাডেমিক পড়াশুনা, ডিপার্টমেন্টের পড়াশুনা এগুলো নিয়ে কাজ করার কোন দরকার নেই। আমি একজন ব্যকবেঞ্চার হব, আমি পিছনের দিকে বসব। তারপর হচ্ছে আমার একাডেমিক পড়াশুনা নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হবে না। কোন রকম একটা প্রান্তিক ফলাফল নিয়ে দুই, তিন বা এরকম একটা ফলাফল নিয়ে বের হয়ে যাব।
তারপর আমি পাবলিক পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আমি বিসিএস, ব্যাংক জব এগুলো নিয়ে চিন্তা করব। আপনি নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন- আপনি কি কখনো ভেবেছেন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে বসে আপনার শিক্ষকদের কাছে জানতে চেয়েছেন উদাহরণ স্বরূপ- আমি ইংরেজি বিভাগে পড়ছি/ বাংলা বিভাগে পড়ছি / আরবি বিভাগে পড়ছি / দর্শনে পড়ছি / ইতিহাসে পড়ছি, আপনি কি কখনো জানতে চেয়েছেন চার বছর পর আমি ঠিক কোন ক্ষেত্রে কাজ করব? তাহলে আমি কেন এখানে ভর্তি হয়েছি? আমি যখন পড়ার বিষয় পছন্দ করি তখন সেটার প্রতি আমার ভাললাগা রয়েছে, টার্গেট রয়েছে। আমি এই বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করব এবং এই নির্দষ্ট পেশায় যোগদান করব। যদি এরকম ঠিক করা কোন টার্গেট, পেশা না থাকে তাহলে এই দায়বদ্ধতা আপনাদের (শিক্ষার্থী)।
দায়বদ্ধতা আমি দুটি জায়গায় দিয়ে আমি এখন সমাধানের কথা বলব। সেটা হচ্ছে- একটি ভারতীয় বিজ্ঞাপন আপনারা অনেকই হয়ত দেখে থাকবেন, একটা টি-শার্ট ও জিন্সের অর্থাৎ পোশাকের শো-রুম, সেখানে একদিন দেখা য়ায় শুধুমাত্র এক্সএল সাইজের কালো রঙের টিশার্ট ছাড়া আর কিছু নেই। সবাই শোরুমে যেয়ে জিন্স খোঁজে কিন্তু সেখানে পায় কেবল ব্লাক টি-শার্ট। শর্টস খোঁজে সেটা নেই, ভিন্ন কালারের টি-শার্ট খোঁজে সেটা নেই। ক্রেতারা জিজ্ঞেস করে- এখানে তো এই এই পোশাক ছিল কিন্তু এখন কেন নেই? তখন তিনটা বাচ্চা তারা এসে বলে- আপনারা যেমন এখন একটামাত্র অপশন দেখে বলছেন এখানে তিনটা ছিল কিন্তু এখন নেই কেন? আমাদের জীবনে আমরা যখন পড়াশুনা শুরু করি তখন আমাদের পিতামাতা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে- আমার সন্তান ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হবে! কিন্তু আমাদের কোন নিজস্ব পছন্দ থাকে না। আমি আসলে কি হতে চাই, আমার যদি কোন সৃজনশীল গুণ থাকে সে জায়গায় কেন আমি যেতে পারছি না?
এই উদাহরণটি টানার অর্থ হচ্ছে- উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে আপনার জন্য পলিটেকনিক-কারিগরি দিক খোলা থাকবে, আপনার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তিগত দিক খোলা থাকবে। আপনার জন্য যখন অনেকগুলো সুযোগ খোলা থাকবে তখন আপনি চিন্তা করতে পারবেন আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তাহলে পাঁচ বছর পর এই জায়গাতে থাকতে পারব, আর যদি পলিটেকনিকে পড়ি তাহলে পাঁচ বছর পরে নিজের জন্য কিছু একটা উপার্জন করতে পারব। এ রকম বিষয়গুলো যদি আমি শিক্ষার্থীদের কাছে দিতে পারি তাহলে তার যেটা দরকার সেটা চিন্তা করতে পারবে। তাই প্রথমেই আমাদের চিন্তা করতে হবে। যখন আমাদের কাছে সুযোগ খোলা থাকে না তখন এই পরিস্থিতি আসে এবং সেখানটায় আমরা দেখি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ১৫০০ সিটের জন্য ৬ লক্ষ আবেদন করে।
আজকে যারা কেন্দ্রেীয় গ্রন্থাগার নিয়ে কথা বলছিলেন যে, ৮টায় লাইব্রেরি খুলবে কিন্তু ৬টা থেকে সিরিয়াল পড়ে। যদি আমি আপনাদের প্রশ্ন করি- ৬টা থেকে যে সিরিয়াল পরে সেটা কি লাইব্রেরির কোন বই পড়ার জন্যে? তাহলে সেখানে কেন যাচ্ছে? কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি এমন একটা জায়গা যেখানে মানুষ জ্ঞান আরোহন করতে যাবে, জ্ঞান চর্চা করবে। আপনি সেখাটায় চাকরির পড়ার জন্য যাচ্ছেন। ঠিক আছে, আপনি সরাকারে বলেন, এমন একটা জায়গা করে দিতে যেখানে সরকারের চাকরি করার জন্য পড়াশোনা করবে। সেখানে পাবলিক সার্ভিসের জন্য পড়াশুনা করবে যা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির মত হবে না। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি যেখানটায় অনেক জ্ঞান থাকে, সেই জ্ঞান নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা যাবে।
আপনি তিন তলায়, দুই তলায় যেয়ে দেখেন। সেখানে যে রেফারেন্স বই আছে সেগুলোর উপর বালির স্তূপ পড়ে আছে। শিক্ষার্থীরা সেগুলোকে ধরেও দেখে না। আমরা যদি সেগুলোকে ব্যবহার না করি তাহলে এই লাইব্রেরির কি দরকার? আমি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অনুরোধ করব, নিজেকে অন্তত একবার প্রশ্ন করবেন এই দায়িত্বটুকু আপনারও ছিল কি না? আপনি যে নিজেকে এই রকম একটি অমানবিক প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন যেখানটায় আপনি ৪ লক্ষের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে পনেরশ’র মধ্যে কেউ একজন হবেন! তারপর নিজের ক্যারিয়ার সাজাবেন।
এটা চিন্তা করাও বেশ কঠিন যে আপনি এত লম্বা একটা প্রতিযোগিতা করে তারপর সেখান থেকে বের হয়ে আসবেন! কেন আপনি চিন্তা করতে পারেন না যে আপনি একজন উদ্যোগতা হবেন, কেন চিন্তা করছেন না আপনি ভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন? কেন চিন্তা করছেন না আপনি একজন ভাল গবেষক হবেন একজন শিক্ষাবিদ হবেন। কেন অন্য অপশন নিয়ে চিন্তা করছেন না, কেন শুধু একটা অপশন নিয়ে নিজের জীবনটা এভাবে বিকিয়ে দিচ্ছেন? আমি আপনাদের সাবাইকে এ বিষয়ে ভাবার অনুরোধ রাখছি এবং বিশ্বাস করি যদি এগুলো নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা চিন্তা করতে শুরু করে শিক্ষকরা চিন্তা করে, পলেসি মেকাররা তাদের জায়গা থেকে চিন্তা করে তবে অবশ্যই বাংলাদেশে পরিবর্তন আসবে।”
লেখকঃ মেহেদি হাসান, ঢাবি প্রভাষক