- Sat Aug 03, 2019 11:45 am#1572
সাধারণের মধ্যে বিসিএস নিয়ে কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা আছে। এ প্রসঙ্গে লিখেছেন রহমত আলী। তিনি ৩৭তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন।
১. বিসিএস একটি মুখস্থনির্ভর সাধারণ জ্ঞানের
পরীক্ষামাত্র--
যাঁদের বিসিএসের সিলেবাস বা পরীক্ষার প্রক্রিয়া
সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, তাঁরাই সাধারণত
এমনটা ভেবে থাকেন। ফেসবুকে নানান রকম ট্রল
দেখে বা আশপাশ থেকে শুনে কেউ কেউ এই
ধারণা পোষণ করেন। আদতে বিসিএস পরীক্ষায়
সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, কম্পিউটার জ্ঞান কিংবা মানসিক দক্ষতারও পরীক্ষা নেওয়া হয়। তোতাপাখির মতো মুখস্থ করলেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায় না। বড়জোর টেনেটুনে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করা যেতে পারে। ভাইভাতে আপনাকে অবশ্যই সৃজনশীলতা ও মেধার পরিচয় দিতে হবে।
২. পরীক্ষার আগে মাস কয়েক পড়লেই ক্যাডার
হওয়া যায়--
প্রায়ই একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হই, ‘কবে থেকে আপনি বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?’ আমি বলি, ‘ক্লাস ওয়ান থেকে।’ শুনে অনেকে চমকে যায়। কিন্তু সত্যিই তো। ক্লাস ওয়ান থেকে আমি লেখা শিখেছি, পড়া শিখেছি। এক সময় দ্রুত লেখার চর্চা করেছি, পত্রিকা পড়েছি, গল্প পড়েছি, সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছি। এই সবই তো বিসিএসের প্রস্তুতি। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিয়ে পাস করার পর লাইব্রেরির সামনে সকাল থেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর একটা সিট নিশ্চিত করে দিন-রাত পড়েন। এরপর যখন চাকরি পান না, তখন এ দেশের পরীক্ষা পদ্ধতিকে গালিগালাজ করেন। বিসিএসের সিলেবাসটাই এমন, যে বিষয়ে আপনার দুর্বলতা যত বেশি, সে বিষয়েই বেশি করে প্রস্তুতি নিতে হবে। মূল কথা হলো, ছাত্রজীবনে ফাঁকিবাজি করে যেসব পড়া এড়িয়ে যাবেন, সেই ঘাটতি পরে পূরণ করা অনেক কঠিন। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা ভালো।
৩. বিসিএসের প্রস্তুতি মানেই একাডেমিক পড়াকে
ছুটিতে পাঠানো--
বিসিএস দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির ব্যাপার, এর সিলেবাস
একাডেমিক সিলেবাস থেকে একেবারে ভিন্ন।
এসব কারণে যাঁরা একাডেমিক পড়াশোনাকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রথম বর্ষ থেকেই বিসিএসের বই নিয়ে সারা দিন পড়ে থাকেন, তাঁরা বোকার স্বর্গে আছেন।
বিসিএসের প্রস্তুতি একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং এখানে আপনি পরীক্ষা দিলেই যে সফল হবেন, সেই নিশ্চয়তাও কিন্তু নেই। তাই আপনি যদি
একাডেমিক পড়াশোনা ভালোভাবে করেন এবং
পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতিও নেন, তবে আপনার
সামনে নিজের বিষয়সংক্রান্ত সুযোগ খোলা
থাকবে, আবার বিসিএসও হাতে থাকবে। আর যদি
আপনার বিষয়ের ওপর প্রফেশনাল/টেকনিক্যাল
ক্যাডার থাকে, সে বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা
দিতেই হবে। আর হ্যাঁ, জেনারেল ক্যাডারের
ভাইভাতেও কিন্তু পড়ার বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হয়।
৪. শুধু ভালো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বিসিএসে টেকে--
মূলত যাঁরা মফস্বল এলাকায় থাকেন, ভালো
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি কিংবা রেজাল্ট
তুলনামূলকভাবে ভালো নয়, তাঁরা এ ধরনের
হীনমন্যতায় ভোগেন। তাঁরা ভাবেন, শুধু ভালো
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ছাত্রছাত্রীরাই ক্যাডার হতে
পারে। আসলে বিসিএসের সাফল্যের সঙ্গে
একাডেমিক রেজাল্ট কিংবা কোথায় পড়েছেন—
সেটার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রিলিমিনারি কিংবা
লিখিত পরীক্ষায় নিশ্চয়ই আপনার ভার্সিটি কিংবা রেজাল্ট আপনাকে পাস করিয়ে দেবে না। আপনার ভিত কতটা শক্ত, আপনি নিজে কতটা প্রস্তুত, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
৫. ভাইভা বোর্ডেই ক্যাডার নির্ধারণ করা হয়ে যায়--
৪ নম্বর পয়েন্টটা পড়ে নিশ্চয়ই অনেকে
ভাবছেন, ‘তাতে কী? ভাইভা বোর্ডে তো ঠিকই
ভার্সিটি কিংবা একাডেমিক রেজাল্ট দেখে ভালো
ক্যাডার দিয়ে দেবে!’ অবাক হয়ে দেখেছি,
অনেক ক্যাডারের মধ্যেও এই ভ্রান্ত ধারণা
রয়েছে যে ভাইভা বোর্ডে ঠিক হয়ে যায়—
আপনি কোন ক্যাডার পাবেন। বিসিএসের প্রিলিমিনারি টেস্টে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা ৯০০
নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় মোট নম্বরের ন্যূনতম
৫০ শতাংশ নম্বর পান, তাঁরাই ভাইভায় ডাক পান। আর ভাইভা হচ্ছে ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষামাত্র, যেখানে ন্যূনতম ১০০ নম্বর পেলে আপনি পাস করবেন। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর একত্রিত করে মেধাক্রমের ভিত্তিতে বিপিএসসি ক্যাডারদের তালিকা সুপারিশ করে, সেই সঙ্গে যাঁরা উভয় পরীক্ষায় পাস করেও ক্যাডার পান না, তাঁদের থেকে মেধাক্রমের ভিত্তিতে প্রথম/দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার গেজেটেড পদে সুপারিশ
করে থাকে। বুঝতেই পারছেন, আপনার ক্যাডার
নির্ধারণের ক্ষমতা ভাইভা বোর্ডের নেই।
৬. বিসিএস ক্যাডার হতে সহশিক্ষা কার্যক্রমের
কোনো প্রয়োজন নেই--
শুধু বিসিএস নয়, যেকোনো চাকরির ভাইভা
বোর্ডেই আত্মবিশ্বাস আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
এই আত্মবিশ্বাস এবং যোগাযোগের দক্ষতা গড়ে
ওঠে সহশিক্ষা কার্যক্রমের (এক্সট্রা কারিকুলার
অ্যাকটিভিটি) মাধ্যমে। একজন বিতার্কিক নিশ্চয়ই
নিজেকে উপস্থাপন কিংবা যুক্তিতর্কের ক্ষেত্রে
অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকেন, তাই না? মঞ্চে
গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা যাঁর আছে, তাঁর নিশ্চয়ই
মুখোমুখি বসে কথা বলার জড়তা থাকবে না। এটাই
বাস্তবতা।
৭. বিসিএসের রেজাল্ট হওয়ার পরপরই সবাই চাকরিতে যোগদান করে--
রেজাল্ট হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি এবং হচ্ছি, তা হলো, ‘বাবা, তোমার জয়েনিং কবে?’ আমার সঙ্গে সুপারিশপ্রাপ্ত অনেক ক্যাডারের কাছ থেকে শুনেছি, তাঁদের এলাকার মানুষ নাকি আড়ালে বলে, ‘গিয়া দেখ, মনে হয় ভুয়া ক্যাডার। জয়েন করতে এত দিন লাগে নাকি!’ আসলে বিসিএসের ফল প্রকাশের পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রথমে তথ্য যাচাই করে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। তারপর গেজেট প্রকাশিত করতে মাস কয়েক সময় লেগেই যায়। সর্বশেষ ৩৬তম বিসিএসের রেজাল্টের সাড়ে নয় মাস পর তাঁদের গেজেট প্রকাশিত হয়। বিসিএস মানেই দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, আর দশটা চাকরির মতো এখানে নিয়োগপ্রক্রিয়া এতটা সহজ নয়।
৮. প্রথম বিসিএসেই ভালো ক্যাডার পাওয়া যায় না--
এই ধারণাটা যদি ভুল না-ই হতো, তাহলে লেখাটা আমি না লিখে আজ হয়তো অন্য কেউ লিখত! শুধু আমিই নই, ৩৭তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হওয়া হালিমুল হারুন, প্রশাসন ক্যাডারের প্রথম ত্বকী ফয়সাল—তাঁদেরও এটাই প্রথম বিসিএস ছিল। আপনার প্রস্তুতি ভালো হলে প্রথম বিসিএসেই হবে, আর প্রস্তুতি ভালো না হলে বারবার পরীক্ষা দিলেও
হবে না—এটাই তো স্বাভাবিক।
৯. অনৈতিক উপায় অবলম্বন না করে বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায় না--
এই ধারণা একেবারেই হাওয়া থেকে পাওয়া। যাঁরা
কখনোই বিসিএস পরীক্ষা দেননি বা এ সম্পর্কে
কোনো ধারণা নেই—তাঁরাই এ ধরনের কথা
বলেন। আপনাকে যদি কেউ বলে, টাকার বিনিময়ে
বিসিএস ক্যাডার পাইয়ে দেবে, তার থেকে ১০০ হাত
দূরে থাকুন।
১০. বিসিএস ক্যাডার হওয়ার উদ্দেশ্যই হলো ঘুষ খেয়ে বড়লোক হওয়া--
যাঁরা এ ধরনের কথা বলেন, ৯ নম্বর পয়েন্টের
শেষ অংশটা তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনি যদি বিসিএস পরীক্ষা দিতে চান, যদি নিজের কাছে সৎ থাকেন, আশপাশের মানুষের কথা শুনে নিরুৎসাহিত হবেন না। মূলত বিনা অভিজ্ঞতায় কেবল ‘অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট’ দিয়েই আবেদনের সুযোগ, প্রত্যেক বছরই কোনো না কোনো বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া, গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে দেশের উন্নয়ন ও সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ এবং সরকারি চাকরির বেতন, চাকরির নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুবিধাই বিসিএসকে শিক্ষিত তরুণদের পছন্দের প্রথম অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
১. বিসিএস একটি মুখস্থনির্ভর সাধারণ জ্ঞানের
পরীক্ষামাত্র--
যাঁদের বিসিএসের সিলেবাস বা পরীক্ষার প্রক্রিয়া
সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, তাঁরাই সাধারণত
এমনটা ভেবে থাকেন। ফেসবুকে নানান রকম ট্রল
দেখে বা আশপাশ থেকে শুনে কেউ কেউ এই
ধারণা পোষণ করেন। আদতে বিসিএস পরীক্ষায়
সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, কম্পিউটার জ্ঞান কিংবা মানসিক দক্ষতারও পরীক্ষা নেওয়া হয়। তোতাপাখির মতো মুখস্থ করলেই বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায় না। বড়জোর টেনেটুনে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করা যেতে পারে। ভাইভাতে আপনাকে অবশ্যই সৃজনশীলতা ও মেধার পরিচয় দিতে হবে।
২. পরীক্ষার আগে মাস কয়েক পড়লেই ক্যাডার
হওয়া যায়--
প্রায়ই একটা প্রশ্নের মুখোমুখি হই, ‘কবে থেকে আপনি বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?’ আমি বলি, ‘ক্লাস ওয়ান থেকে।’ শুনে অনেকে চমকে যায়। কিন্তু সত্যিই তো। ক্লাস ওয়ান থেকে আমি লেখা শিখেছি, পড়া শিখেছি। এক সময় দ্রুত লেখার চর্চা করেছি, পত্রিকা পড়েছি, গল্প পড়েছি, সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছি। এই সবই তো বিসিএসের প্রস্তুতি। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিয়ে পাস করার পর লাইব্রেরির সামনে সকাল থেকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর একটা সিট নিশ্চিত করে দিন-রাত পড়েন। এরপর যখন চাকরি পান না, তখন এ দেশের পরীক্ষা পদ্ধতিকে গালিগালাজ করেন। বিসিএসের সিলেবাসটাই এমন, যে বিষয়ে আপনার দুর্বলতা যত বেশি, সে বিষয়েই বেশি করে প্রস্তুতি নিতে হবে। মূল কথা হলো, ছাত্রজীবনে ফাঁকিবাজি করে যেসব পড়া এড়িয়ে যাবেন, সেই ঘাটতি পরে পূরণ করা অনেক কঠিন। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করা ভালো।
৩. বিসিএসের প্রস্তুতি মানেই একাডেমিক পড়াকে
ছুটিতে পাঠানো--
বিসিএস দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির ব্যাপার, এর সিলেবাস
একাডেমিক সিলেবাস থেকে একেবারে ভিন্ন।
এসব কারণে যাঁরা একাডেমিক পড়াশোনাকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রথম বর্ষ থেকেই বিসিএসের বই নিয়ে সারা দিন পড়ে থাকেন, তাঁরা বোকার স্বর্গে আছেন।
বিসিএসের প্রস্তুতি একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং এখানে আপনি পরীক্ষা দিলেই যে সফল হবেন, সেই নিশ্চয়তাও কিন্তু নেই। তাই আপনি যদি
একাডেমিক পড়াশোনা ভালোভাবে করেন এবং
পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতিও নেন, তবে আপনার
সামনে নিজের বিষয়সংক্রান্ত সুযোগ খোলা
থাকবে, আবার বিসিএসও হাতে থাকবে। আর যদি
আপনার বিষয়ের ওপর প্রফেশনাল/টেকনিক্যাল
ক্যাডার থাকে, সে বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা
দিতেই হবে। আর হ্যাঁ, জেনারেল ক্যাডারের
ভাইভাতেও কিন্তু পড়ার বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হয়।
৪. শুধু ভালো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বিসিএসে টেকে--
মূলত যাঁরা মফস্বল এলাকায় থাকেন, ভালো
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি কিংবা রেজাল্ট
তুলনামূলকভাবে ভালো নয়, তাঁরা এ ধরনের
হীনমন্যতায় ভোগেন। তাঁরা ভাবেন, শুধু ভালো
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ছাত্রছাত্রীরাই ক্যাডার হতে
পারে। আসলে বিসিএসের সাফল্যের সঙ্গে
একাডেমিক রেজাল্ট কিংবা কোথায় পড়েছেন—
সেটার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রিলিমিনারি কিংবা
লিখিত পরীক্ষায় নিশ্চয়ই আপনার ভার্সিটি কিংবা রেজাল্ট আপনাকে পাস করিয়ে দেবে না। আপনার ভিত কতটা শক্ত, আপনি নিজে কতটা প্রস্তুত, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
৫. ভাইভা বোর্ডেই ক্যাডার নির্ধারণ করা হয়ে যায়--
৪ নম্বর পয়েন্টটা পড়ে নিশ্চয়ই অনেকে
ভাবছেন, ‘তাতে কী? ভাইভা বোর্ডে তো ঠিকই
ভার্সিটি কিংবা একাডেমিক রেজাল্ট দেখে ভালো
ক্যাডার দিয়ে দেবে!’ অবাক হয়ে দেখেছি,
অনেক ক্যাডারের মধ্যেও এই ভ্রান্ত ধারণা
রয়েছে যে ভাইভা বোর্ডে ঠিক হয়ে যায়—
আপনি কোন ক্যাডার পাবেন। বিসিএসের প্রিলিমিনারি টেস্টে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা ৯০০
নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় মোট নম্বরের ন্যূনতম
৫০ শতাংশ নম্বর পান, তাঁরাই ভাইভায় ডাক পান। আর ভাইভা হচ্ছে ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষামাত্র, যেখানে ন্যূনতম ১০০ নম্বর পেলে আপনি পাস করবেন। এরপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর একত্রিত করে মেধাক্রমের ভিত্তিতে বিপিএসসি ক্যাডারদের তালিকা সুপারিশ করে, সেই সঙ্গে যাঁরা উভয় পরীক্ষায় পাস করেও ক্যাডার পান না, তাঁদের থেকে মেধাক্রমের ভিত্তিতে প্রথম/দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার গেজেটেড পদে সুপারিশ
করে থাকে। বুঝতেই পারছেন, আপনার ক্যাডার
নির্ধারণের ক্ষমতা ভাইভা বোর্ডের নেই।
৬. বিসিএস ক্যাডার হতে সহশিক্ষা কার্যক্রমের
কোনো প্রয়োজন নেই--
শুধু বিসিএস নয়, যেকোনো চাকরির ভাইভা
বোর্ডেই আত্মবিশ্বাস আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
এই আত্মবিশ্বাস এবং যোগাযোগের দক্ষতা গড়ে
ওঠে সহশিক্ষা কার্যক্রমের (এক্সট্রা কারিকুলার
অ্যাকটিভিটি) মাধ্যমে। একজন বিতার্কিক নিশ্চয়ই
নিজেকে উপস্থাপন কিংবা যুক্তিতর্কের ক্ষেত্রে
অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকেন, তাই না? মঞ্চে
গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা যাঁর আছে, তাঁর নিশ্চয়ই
মুখোমুখি বসে কথা বলার জড়তা থাকবে না। এটাই
বাস্তবতা।
৭. বিসিএসের রেজাল্ট হওয়ার পরপরই সবাই চাকরিতে যোগদান করে--
রেজাল্ট হওয়ার পর সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি এবং হচ্ছি, তা হলো, ‘বাবা, তোমার জয়েনিং কবে?’ আমার সঙ্গে সুপারিশপ্রাপ্ত অনেক ক্যাডারের কাছ থেকে শুনেছি, তাঁদের এলাকার মানুষ নাকি আড়ালে বলে, ‘গিয়া দেখ, মনে হয় ভুয়া ক্যাডার। জয়েন করতে এত দিন লাগে নাকি!’ আসলে বিসিএসের ফল প্রকাশের পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রথমে তথ্য যাচাই করে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। তারপর গেজেট প্রকাশিত করতে মাস কয়েক সময় লেগেই যায়। সর্বশেষ ৩৬তম বিসিএসের রেজাল্টের সাড়ে নয় মাস পর তাঁদের গেজেট প্রকাশিত হয়। বিসিএস মানেই দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, আর দশটা চাকরির মতো এখানে নিয়োগপ্রক্রিয়া এতটা সহজ নয়।
৮. প্রথম বিসিএসেই ভালো ক্যাডার পাওয়া যায় না--
এই ধারণাটা যদি ভুল না-ই হতো, তাহলে লেখাটা আমি না লিখে আজ হয়তো অন্য কেউ লিখত! শুধু আমিই নই, ৩৭তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হওয়া হালিমুল হারুন, প্রশাসন ক্যাডারের প্রথম ত্বকী ফয়সাল—তাঁদেরও এটাই প্রথম বিসিএস ছিল। আপনার প্রস্তুতি ভালো হলে প্রথম বিসিএসেই হবে, আর প্রস্তুতি ভালো না হলে বারবার পরীক্ষা দিলেও
হবে না—এটাই তো স্বাভাবিক।
৯. অনৈতিক উপায় অবলম্বন না করে বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায় না--
এই ধারণা একেবারেই হাওয়া থেকে পাওয়া। যাঁরা
কখনোই বিসিএস পরীক্ষা দেননি বা এ সম্পর্কে
কোনো ধারণা নেই—তাঁরাই এ ধরনের কথা
বলেন। আপনাকে যদি কেউ বলে, টাকার বিনিময়ে
বিসিএস ক্যাডার পাইয়ে দেবে, তার থেকে ১০০ হাত
দূরে থাকুন।
১০. বিসিএস ক্যাডার হওয়ার উদ্দেশ্যই হলো ঘুষ খেয়ে বড়লোক হওয়া--
যাঁরা এ ধরনের কথা বলেন, ৯ নম্বর পয়েন্টের
শেষ অংশটা তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনি যদি বিসিএস পরীক্ষা দিতে চান, যদি নিজের কাছে সৎ থাকেন, আশপাশের মানুষের কথা শুনে নিরুৎসাহিত হবেন না। মূলত বিনা অভিজ্ঞতায় কেবল ‘অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট’ দিয়েই আবেদনের সুযোগ, প্রত্যেক বছরই কোনো না কোনো বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া, গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে দেশের উন্নয়ন ও সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ এবং সরকারি চাকরির বেতন, চাকরির নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুবিধাই বিসিএসকে শিক্ষিত তরুণদের পছন্দের প্রথম অবস্থানে নিয়ে এসেছে।