- Tue Oct 01, 2019 1:01 am#1828
✔মাইকেল মধুসূদন দত্ত
কাব্যগ্রন্থ- চতুর্দশপদী কবিতাবলী
ছন্দ- অক্ষরবৃত্ত
এটি একটি সনেট (১৪ মাত্রার ১৪ চরণের কবিতা)
১৮৬০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি প্রথম এই সনেট লেখার কথা বলেন। তখন এটির নাম ছিলো ‘কবি-মাতৃভাষা’। পরে কিছু পরিবর্তিত রূপে ‘বঙ্গভাষা’ নামে ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’তে সংকলিত হয়।
সনেট
সনেটে ১৪টি পংক্তি থাকে। এই পংক্তিগুলো ৮ পংক্তি ও ৬ পংক্তির দুটি স্তবকে বিভাজিত থাকে। ৮ পংক্তির স্তবককে অষ্টক ও ৬ পংক্তির স্তবককে ষটক বলে।
প্রতি পংক্তি ১৪ মাত্রার হয়। (অনেকে ১৮ মাত্রার পংক্তির সনেটও লিখেছেন। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
পুরো সনেট একটি মাত্র ভাব বা বিষয় নিয়ে রচিত হয়। অষ্টকে ভাবের প্রবর্তনা ও ষটকে ভাবের পরিণতি/পরিসমাপ্তি থাকে। অর্থাৎ, অষ্টকে ভাব বা বিষয় বা সমস্যার বর্ণনা থাকে। আর ষটকে তার ফলাফল বা সমাধান থাকে। যেমন, ‘বঙ্গভাষা’ সনেটের অষ্টকে কবির নিজ মাতৃভাষা ত্যাগ করে বিদেশি ভাষায় সাহিত্য রচনার ভুল করার বর্ণনা আছে। এটিই ভাবের প্রবর্তনা। কবিতার এ অংশে তিনি সমস্যার কথা বলেছেন। আর ষটকে স্বপ্নে দেবীর আদেশ পেয়ে আবার নিজ মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু করার ইঙ্গিতের মাধ্যমে ভাবের পরিণতি বা পরিসমাপ্তি ঘটেছে। অন্য কথায়, তার যে সমস্যা তিনি তুলে ধরেছিলেন, সেই সমস্যার অবসান ঘটে।
সনেটে অন্ত্যমিলের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ রীতি মেনে চলা হয়। এই অন্ত্যমিলের উপর নির্ভর করে সনেটের গঠন মূলত ২ প্রকার। একটি পেত্রার্কীয় রীতি, আরেকটি শেকসপীয়রীয় রীতি। তবে মাইকেল ‘বঙ্গভাষা’ সনেটে এর কোনোটিই পুরোপুরি মানেননি। বরং তিনি শেকসপীয়রীয় রীতির সঙ্গে পেত্রার্কীয় রীতি মিলিয়ে নিয়েছেন।
বঙ্গভাষা’র অন্ত্যমিল- কখকখ খকখক গঘঘগ ঙঙ
এখানে
অষ্টকের প্রথম চতুষ্টক (প্রথম ৪ পংক্তি)-কখকখ- শেকসপীয়রীয় রীতিতে রচিত।
অষ্টকের দ্বিতীয় চতুষ্টক (শেষ ৪ পংক্তি)-খকখক- অনিয়মিত শেকসপীয়রীয় রীতিতে রচিত।
ষটকের প্রথম চতুষ্টক (প্রথম ৪ পংক্তি)-গঘঘগ- পেত্রার্কীয় রীতিতে রচিত।
ষটকের শেষ দ্বিপদী (শেষ ২ পংক্তি)-ঙঙ- আবার শেকসপীয়রীয় রীতিতে রচিত।
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি। (পাশ্চাত্য সাহিত্যক্ষেত্রে সাহিত্যচর্চার কথা বলা হয়েছে।)
কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল-কানন। (মাতৃভাষা ছেড়ে ভিনদেশি ভাষায় সাহিত্য রচনাকেই বলা হয়েছে পদ্মবন পাশে রেখে শ্যাওলার ভেতর জলকেলি করা। অর্থাৎ শৈবাল বলতে পাশ্চাত্য সাহিত্য/ভাষা ও কমল-কানন বলতে মাতৃভাষা/বাংলা ভাষার কথা বলা হয়েছে।)
মাতৃভাষা-রূপ খনি, পূর্ণ মণিজালে।। (বাংলা ভাষার সমৃদ্ধ সাহিত্যিক ঐতিহ্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।)
শব্দার্থ ও টীকা
পরদেশে- বিদেশের সাহিত্যক্ষেত্রে
আচরি- আচরণ করে
কাটাইনু- কাটালাম
পরিহরি- সঁপে, সমর্পণ করে
কায়- দেহ, শরীর
মনঃ- মন, অন্তর, অন্তঃকরণ, চিত্ত
মজিনু- মগ্ন হলাম
বিফল তপে- নিষ্ফল বা ব্যর্থ তপস্যায়
অবরেণ্যে- যা বরণ করার যোগ্য নয়, গ্রহণযোগ্য নয়
বরি- বরণ করে
কেলিনু- খেলা করলাম
শৈবাল- শ্যাওলা, পাশ্চাত্য সাহিত্যক্ষেত্র বোঝানো হয়েছে
কমল-কানন- পদ্মবন, মাতৃভাষা বাংলার সাহিত্যক্ষেত্র বোঝানো হয়েছে
আজ্ঞা- আদেশ, নির্দেশ
পালিলাম- পালন করলাম, মান্য করলাম
কালে- যথাসময়ে, একসময়ে
লেখক পরিচিতি
জন্ম : ১৮২৪, যশোরের সাগরদাড়ি
মৃত্যু : ১৮৭৩
আধুনিক বাংলা কবিতার জনক
অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক
বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক মহাকাব্যের রচয়িতা (মেঘনাদ বধ কাব্য)
প্রথম বাংলা সনেট রচয়িতা
হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালে ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন; ইংরেজিতে সাহিত্য রচনা শুরু করেন, খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়ে ‘মাইকেল’ নাম গ্রহণ করেন। পরে ভুল বুঝতে পারলে ও মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে তিনি বাংলায় সাহিত্য রচনা করতে শুরু করেন।
গ্রিক, ল্যাটিন, হিব্রু, ফরাসি, জার্মান, ইতালিয়, ইংরেজিসহ ১৩/১৪টি ভাষা শিখেছিলেন।
গ্রন্থ-
মহাকাব্য- মেঘনাদ বধ
কাব্যগ্রন্থ- তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী (সনেট)
নাটক- শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী
প্রহসন- একেই কি বলে সভ্যতা, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ।
Raisul Islam Hridoy
কাব্যগ্রন্থ- চতুর্দশপদী কবিতাবলী
ছন্দ- অক্ষরবৃত্ত
এটি একটি সনেট (১৪ মাত্রার ১৪ চরণের কবিতা)
১৮৬০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি প্রথম এই সনেট লেখার কথা বলেন। তখন এটির নাম ছিলো ‘কবি-মাতৃভাষা’। পরে কিছু পরিবর্তিত রূপে ‘বঙ্গভাষা’ নামে ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’তে সংকলিত হয়।
সনেট
সনেটে ১৪টি পংক্তি থাকে। এই পংক্তিগুলো ৮ পংক্তি ও ৬ পংক্তির দুটি স্তবকে বিভাজিত থাকে। ৮ পংক্তির স্তবককে অষ্টক ও ৬ পংক্তির স্তবককে ষটক বলে।
প্রতি পংক্তি ১৪ মাত্রার হয়। (অনেকে ১৮ মাত্রার পংক্তির সনেটও লিখেছেন। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
পুরো সনেট একটি মাত্র ভাব বা বিষয় নিয়ে রচিত হয়। অষ্টকে ভাবের প্রবর্তনা ও ষটকে ভাবের পরিণতি/পরিসমাপ্তি থাকে। অর্থাৎ, অষ্টকে ভাব বা বিষয় বা সমস্যার বর্ণনা থাকে। আর ষটকে তার ফলাফল বা সমাধান থাকে। যেমন, ‘বঙ্গভাষা’ সনেটের অষ্টকে কবির নিজ মাতৃভাষা ত্যাগ করে বিদেশি ভাষায় সাহিত্য রচনার ভুল করার বর্ণনা আছে। এটিই ভাবের প্রবর্তনা। কবিতার এ অংশে তিনি সমস্যার কথা বলেছেন। আর ষটকে স্বপ্নে দেবীর আদেশ পেয়ে আবার নিজ মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু করার ইঙ্গিতের মাধ্যমে ভাবের পরিণতি বা পরিসমাপ্তি ঘটেছে। অন্য কথায়, তার যে সমস্যা তিনি তুলে ধরেছিলেন, সেই সমস্যার অবসান ঘটে।
সনেটে অন্ত্যমিলের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ রীতি মেনে চলা হয়। এই অন্ত্যমিলের উপর নির্ভর করে সনেটের গঠন মূলত ২ প্রকার। একটি পেত্রার্কীয় রীতি, আরেকটি শেকসপীয়রীয় রীতি। তবে মাইকেল ‘বঙ্গভাষা’ সনেটে এর কোনোটিই পুরোপুরি মানেননি। বরং তিনি শেকসপীয়রীয় রীতির সঙ্গে পেত্রার্কীয় রীতি মিলিয়ে নিয়েছেন।
বঙ্গভাষা’র অন্ত্যমিল- কখকখ খকখক গঘঘগ ঙঙ
এখানে
অষ্টকের প্রথম চতুষ্টক (প্রথম ৪ পংক্তি)-কখকখ- শেকসপীয়রীয় রীতিতে রচিত।
অষ্টকের দ্বিতীয় চতুষ্টক (শেষ ৪ পংক্তি)-খকখক- অনিয়মিত শেকসপীয়রীয় রীতিতে রচিত।
ষটকের প্রথম চতুষ্টক (প্রথম ৪ পংক্তি)-গঘঘগ- পেত্রার্কীয় রীতিতে রচিত।
ষটকের শেষ দ্বিপদী (শেষ ২ পংক্তি)-ঙঙ- আবার শেকসপীয়রীয় রীতিতে রচিত।
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি। (পাশ্চাত্য সাহিত্যক্ষেত্রে সাহিত্যচর্চার কথা বলা হয়েছে।)
কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল-কানন। (মাতৃভাষা ছেড়ে ভিনদেশি ভাষায় সাহিত্য রচনাকেই বলা হয়েছে পদ্মবন পাশে রেখে শ্যাওলার ভেতর জলকেলি করা। অর্থাৎ শৈবাল বলতে পাশ্চাত্য সাহিত্য/ভাষা ও কমল-কানন বলতে মাতৃভাষা/বাংলা ভাষার কথা বলা হয়েছে।)
মাতৃভাষা-রূপ খনি, পূর্ণ মণিজালে।। (বাংলা ভাষার সমৃদ্ধ সাহিত্যিক ঐতিহ্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।)
শব্দার্থ ও টীকা
পরদেশে- বিদেশের সাহিত্যক্ষেত্রে
আচরি- আচরণ করে
কাটাইনু- কাটালাম
পরিহরি- সঁপে, সমর্পণ করে
কায়- দেহ, শরীর
মনঃ- মন, অন্তর, অন্তঃকরণ, চিত্ত
মজিনু- মগ্ন হলাম
বিফল তপে- নিষ্ফল বা ব্যর্থ তপস্যায়
অবরেণ্যে- যা বরণ করার যোগ্য নয়, গ্রহণযোগ্য নয়
বরি- বরণ করে
কেলিনু- খেলা করলাম
শৈবাল- শ্যাওলা, পাশ্চাত্য সাহিত্যক্ষেত্র বোঝানো হয়েছে
কমল-কানন- পদ্মবন, মাতৃভাষা বাংলার সাহিত্যক্ষেত্র বোঝানো হয়েছে
আজ্ঞা- আদেশ, নির্দেশ
পালিলাম- পালন করলাম, মান্য করলাম
কালে- যথাসময়ে, একসময়ে
লেখক পরিচিতি
জন্ম : ১৮২৪, যশোরের সাগরদাড়ি
মৃত্যু : ১৮৭৩
আধুনিক বাংলা কবিতার জনক
অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক
বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক মহাকাব্যের রচয়িতা (মেঘনাদ বধ কাব্য)
প্রথম বাংলা সনেট রচয়িতা
হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালে ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন; ইংরেজিতে সাহিত্য রচনা শুরু করেন, খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়ে ‘মাইকেল’ নাম গ্রহণ করেন। পরে ভুল বুঝতে পারলে ও মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে তিনি বাংলায় সাহিত্য রচনা করতে শুরু করেন।
গ্রিক, ল্যাটিন, হিব্রু, ফরাসি, জার্মান, ইতালিয়, ইংরেজিসহ ১৩/১৪টি ভাষা শিখেছিলেন।
গ্রন্থ-
মহাকাব্য- মেঘনাদ বধ
কাব্যগ্রন্থ- তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী (সনেট)
নাটক- শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী
প্রহসন- একেই কি বলে সভ্যতা, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ।
Raisul Islam Hridoy