- Sun Jun 16, 2019 10:24 pm#1451
বাংলা
ভাষায় ব্যবহৃত অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদের একটি পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।বাংলা ভাষায় যে সকল প্রক্রিয়ায় নতুন পদ বা শব্দ তৈরি হয় সমাস তার একটি।সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাঙলায় এসেছে।
যেমনঃ দোয়াত ও কলম = দোয়াতকলম, পীত অম্বর যার = পীতাম্বর (শ্রীকৃষ্ণ)। সমাসের প্রক্রিয়ায় সমাসবদ্ধ বা সমাসনিষ্পন্ন পদটিকে বলে সমস্তপদ। যেমন: এখানে দোয়াতকলম, পীতাম্বর হলো সমস্ত পদ । সমস্ত পদ কতগুলো পদের মিলিত রুপ, এই প্রতিটি পদকে বলে সমস্যমান পদ। সমস্ত পদকে বিস্তৃত করে যে বাক্যাংশ পাওয়া যায় তাকে বলে সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য।
অর্থবাচকতা
সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপ, সমর্থন, সংগ্রহ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ ।
সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য
সন্ধিতে মিলন ঘটে সন্নিহিত বর্ণের, সমাসে মিলন ঘটে পাশাপাশি থাকা একাধিক পদের।যেমন: সংখ্যা+অতীত= সংখ্যাতীত (সন্ধি সাধিত); সংখ্যাকে অতীত= সংখ্যাতীত (সমাস সাধিত)। এভাবে একই শব্দ বা পদকে সন্ধিতে আবার সমাসেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
প্রকারভেদ
⚙সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যথাঃ দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু এবং অব্যয়ীভাব সমাস।
তবে দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কে তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ হিসেবে সমাস মূলত চারটি। যথা: দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি ও অব্যয়ীভাব সমাস।
এছাড়া আরও কিছু অপ্রধান সমাস আছে, যেমন: প্রাদি, নিত্য, অলুক, উপপদ ইত্যাদি।
দ্বন্দ্ব সমাস
▶যে সমাসে প্রতিটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে এবং ব্যাসবাক্যে একটি সংযোজক অব্যয়(কখনো বিয়োজক)দ্বারা যুক্ত থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
▶দ্বন্দ্ব সমাস আট প্রকার:
১/ সমার্থক দ্বন্দ্ব: কাজ-কর্ম-- কাজ ও কর্ম
২/ বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব: দিন-রাত-- দিন ও রাত
৩/বিকল্পর্থক দ্বন্দ্ব: হার-জিৎ-- হার অথবা জিৎ
৪/সমাহার দ্বন্দ্ব: দুধ- কলা-- দুধ ও কলা।
৫/মিলনার্থক দ্বন্দ্ব: চাল-ডাল--চাল ও ডাল।
৬/ অলোপ দ্বন্দ্ব: কাগজে-কলমে--কাগজে ও কলমে
৭/বহুপদী দ্বন্দ্ব: রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-- রূপ,রস,গন্ধ,স্পর্শ।
৮/একশেষ দ্বন্দ্ব: আমরা-- আমি,তুমি, সে
☑বহুব্রীহি সমাস
যে সমাসের পূর্বপদ ও পরপদ কারো অর্থ প্রাধান্য পায় না , সম্পূর্ণ তৃতীয় একটি অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
প্রধানত বহুব্রীহি সমাস সাত প্রকার:
১/ সমানাধিকরন বহুব্রীহি: দশানন--দশ আনন যার
২/ ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি: পাপমতি-- পাপে মতি যার
৩/ মধ্যপদোলোপি বহুব্রীহি: বিরালাক্ষী-- বিড়ালের অক্ষির মতো অক্ষি যার
৪/ অলোপ বহুব্রীহি: মুখেভাত-- মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে।
৫/ ব্যাতিহার বহুব্রীহি: লাঠালাঠি-- লাঠিতে লাঠিতে লড়াই।
৬/ না বহুব্রীহি: নির্বাক-- নেই বাক যার।
৭/সহার্থক বহুব্রীহি: সবাক-- বাকের সহিত বর্তমান
☑কর্মধারয় সমাস
বিশেষ্যের সাথে বিশেষণের সমাসকে কর্মধারয় সমাস বলে। যথাঃ নীল যে উৎপল = নীলোৎপল। কর্মধারয় সমাসে উত্তর পদের অর্থ প্রধান হয়।
কর্মধারয় সমাস প্রধানত পাঁচ প্রকার। যথাঃ- (১) সাধারণ কর্মধারয়: বিশেষণ ও বিশেষ্য, বিশেষ্য ও বিশেষ্য অথবা বিশেষণ ও বিশেষণ পদের মধ্যে এই সমাস হয়ে থাকে। যেমন, নীল যে আকাশ=নীলাকাশ।
(২) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাসে কোন কোন স্থানে মধ্যপদের লোপ হয়। সেজন্যেই একে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যথা: হিমালয় নামক পবর্ত = হিমালয়পবর্ত। এখানে ‘নামক’ মধ্যপদের লোপ হয়েছে।
(৩)উপমিত কর্মধারয় সমাস
সমান ধর্মবাচক পদের প্রয়োগ না থাকলে উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: মুখ চন্দ্রসদৃশ = মুখচন্দ্র।
(৪)রূপক কর্মধারয় সমাস
উপমেয় পদে উপমানের আরোপ করে যে সমাস হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এতে উপমেয় পদে রূপ শব্দের যোগ থাকে। যেমন: বিদ্যারূপ ধন = বিদ্যাধন। এখানে ‘রূপ’ শব্দের যোগ রয়েছে।
(৫)উপমান কর্মধারয় সমাস
উপমানবাচক পদের সাথে সমান ধর্মবাচক পদের মিলনে যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: শশের (খরগোশের) ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত।
☑তৎপুরুষ সমাস
➡দ্বিতীয়াদি বিভক্তান্ত পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। এতে উত্তরপদের অর্থ প্রাধান্য থাকে। যেমনঃ লবণ দ্বারা অক্ত (যুক্ত) = লবণাক্ত। "'তৎপুরুষ"' শব্দটির অর্থ হল "তার পুরুষ"। তার পুরুষ এই শব্দ গুলির একপদীকরণে তৎপুরুষ শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে। এখানে পূর্ব পদ থেকে সম্বন্ধ পদের বিভক্তি 'র' লোপ পেয়েছে ও উত্তর পদের অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। এইভাবে এই সমাসের অধিকাংশ উদাহরণে পূর্ব পদের বিভক্তি লোপ পায় ও উত্তর পদের অর্থ প্রাধান্য থাকে এবং তৎপুরুষ শব্দটি হল এই রীতিতে নিষ্পন্ন সমাষের একটি বিশিষ্ট উদাহরণ।তাই উদাহরণের নামেই এর সাধারণ নামকরণ করা হয়েছে তৎপুরুষ সমাস।
☸তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ-
(১)দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ
দ্বিতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ স্বর্গকে গত = স্বর্গগত।
(২)তৃতীয়া-তৎপুরুষ
তৃতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে তৃতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ রজ্জু দ্বারা বন্ধ = রজ্জুবন্ধ।
(৩)চতুর্থী-তৎপুরুষ
চতুর্থী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে চতুর্থী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ যজ্ঞের নিমিত্ত ভূমি = যজ্ঞভূমি।
(৪)পঞ্চমী-তৎপুরুষ
পঞ্চমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে পঞ্চমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ মুখ হইতে ভ্রষ্ট = মুখভ্রষ্ট।
(৫)ষষ্ঠী-তৎপুরুষ
ষষ্ঠী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে ষষ্ঠী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দীনের বন্ধু = দীনবন্ধু।
(৬)সপ্তমী-তৎপুরুষ
সপ্তমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে সপ্তমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দিবাতে নিদ্রা = দিবানিদ্রা।
☸এছাড়াও, নঞ্ অব্যয় পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে নঞ্তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ ন উক্ত = অনুক্ত।
বাংলা
ভাষায় ব্যবহৃত অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদের একটি পদে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সমাস বলে।বাংলা ভাষায় যে সকল প্রক্রিয়ায় নতুন পদ বা শব্দ তৈরি হয় সমাস তার একটি।সমাসের রীতি সংস্কৃত থেকে বাঙলায় এসেছে।
যেমনঃ দোয়াত ও কলম = দোয়াতকলম, পীত অম্বর যার = পীতাম্বর (শ্রীকৃষ্ণ)। সমাসের প্রক্রিয়ায় সমাসবদ্ধ বা সমাসনিষ্পন্ন পদটিকে বলে সমস্তপদ। যেমন: এখানে দোয়াতকলম, পীতাম্বর হলো সমস্ত পদ । সমস্ত পদ কতগুলো পদের মিলিত রুপ, এই প্রতিটি পদকে বলে সমস্যমান পদ। সমস্ত পদকে বিস্তৃত করে যে বাক্যাংশ পাওয়া যায় তাকে বলে সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য।
অর্থবাচকতা
▶সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপ, সমর্থন, সংগ্রহ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ ।
সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য
▶সন্ধিতে মিলন ঘটে সন্নিহিত বর্ণের, সমাসে মিলন ঘটে পাশাপাশি থাকা একাধিক পদের।যেমন: সংখ্যা+অতীত= সংখ্যাতীত (সন্ধি সাধিত); সংখ্যাকে অতীত= সংখ্যাতীত (সমাস সাধিত)। এভাবে একই শব্দ বা পদকে সন্ধিতে আবার সমাসেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
প্রকারভেদ
▶সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যথাঃ দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু এবং অব্যয়ীভাব সমাস।
তবে দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কে তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ হিসেবে সমাস মূলত চারটি। যথা: দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি ও অব্যয়ীভাব সমাস।
এছাড়া আরও কিছু অপ্রধান সমাস আছে, যেমন: প্রাদি, নিত্য, অলুক, উপপদ ইত্যাদি।
দ্বন্দ্ব সমাস
▶যে সমাসে প্রতিটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে এবং ব্যাসবাক্যে একটি সংযোজক অব্যয়(কখনো বিয়োজক)দ্বারা যুক্ত থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
▶দ্বন্দ্ব সমাস আট প্রকার:
১/ সমার্থক দ্বন্দ্ব: কাজ-কর্ম-- কাজ ও কর্ম
২/ বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব: দিন-রাত-- দিন ও রাত
৩/বিকল্পর্থক দ্বন্দ্ব: হার-জিৎ-- হার অথবা জিৎ
৪/সমাহার দ্বন্দ্ব: দুধ- কলা-- দুধ ও কলা।
৫/মিলনার্থক দ্বন্দ্ব: চাল-ডাল--চাল ও ডাল।
৬/ অলোপ দ্বন্দ্ব: কাগজে-কলমে--কাগজে ও কলমে
৭/বহুপদী দ্বন্দ্ব: রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-- রূপ,রস,গন্ধ,স্পর্শ।
৮/একশেষ দ্বন্দ্ব: আমরা-- আমি,তুমি, সে
☑বহুব্রীহি সমাস
♻যে সমাসের পূর্বপদ ও পরপদ কারো অর্থ প্রাধান্য পায় না , সম্পূর্ণ তৃতীয় একটি অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
⚜প্রধানত বহুব্রীহি সমাস সাত প্রকার:
১/ সমানাধিকরন বহুব্রীহি: দশানন--দশ আনন যার
২/ ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি: পাপমতি-- পাপে মতি যার
৩/ মধ্যপদোলোপি বহুব্রীহি: বিরালাক্ষী-- বিড়ালের অক্ষির মতো অক্ষি যার
৪/ অলোপ বহুব্রীহি: মুখেভাত-- মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে।
৫/ ব্যাতিহার বহুব্রীহি: লাঠালাঠি-- লাঠিতে লাঠিতে লড়াই।
৬/ না বহুব্রীহি: নির্বাক-- নেই বাক যার।
৭/সহার্থক বহুব্রীহি: সবাক-- বাকের সহিত বর্তমান
☑কর্মধারয় সমাস
✔বিশেষ্যের সাথে বিশেষণের সমাসকে কর্মধারয় সমাস বলে। যথাঃ নীল যে উৎপল = নীলোৎপল। কর্মধারয় সমাসে উত্তর পদের অর্থ প্রধান হয়।
✔কর্মধারয় সমাস প্রধানত পাঁচ প্রকার। যথাঃ- (১) সাধারণ কর্মধারয়: বিশেষণ ও বিশেষ্য, বিশেষ্য ও বিশেষ্য অথবা বিশেষণ ও বিশেষণ পদের মধ্যে এই সমাস হয়ে থাকে। যেমন, নীল যে আকাশ=নীলাকাশ।
(২) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাসে কোন কোন স্থানে মধ্যপদের লোপ হয়। সেজন্যেই একে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যথা: হিমালয় নামক পবর্ত = হিমালয়পবর্ত। এখানে ‘নামক’ মধ্যপদের লোপ হয়েছে।
(৩)উপমিত কর্মধারয় সমাস
সমান ধর্মবাচক পদের প্রয়োগ না থাকলে উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: মুখ চন্দ্রসদৃশ = মুখচন্দ্র।
(৪)রূপক কর্মধারয় সমাস
উপমেয় পদে উপমানের আরোপ করে যে সমাস হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এতে উপমেয় পদে রূপ শব্দের যোগ থাকে। যেমন: বিদ্যারূপ ধন = বিদ্যাধন। এখানে ‘রূপ’ শব্দের যোগ রয়েছে।
(৫)উপমান কর্মধারয় সমাস
উপমানবাচক পদের সাথে সমান ধর্মবাচক পদের মিলনে যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: শশের (খরগোশের) ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত।
☑তৎপুরুষ সমাস
দ্বিতীয়াদি বিভক্তান্ত পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। এতে উত্তরপদের অর্থ প্রাধান্য থাকে। যেমনঃ লবণ দ্বারা অক্ত (যুক্ত) = লবণাক্ত। "'তৎপুরুষ"' শব্দটির অর্থ হল "তার পুরুষ"। তার পুরুষ এই শব্দ গুলির একপদীকরণে তৎপুরুষ শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে। এখানে পূর্ব পদ থেকে সম্বন্ধ পদের বিভক্তি 'র' লোপ পেয়েছে ও উত্তর পদের অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। এইভাবে এই সমাসের অধিকাংশ উদাহরণে পূর্ব পদের বিভক্তি লোপ পায় ও উত্তর পদের অর্থ প্রাধান্য থাকে এবং তৎপুরুষ শব্দটি হল এই রীতিতে নিষ্পন্ন সমাষের একটি বিশিষ্ট উদাহরণ।তাই উদাহরণের নামেই এর সাধারণ নামকরণ করা হয়েছে তৎপুরুষ সমাস।
♻তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ-
(১)দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ
দ্বিতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ স্বর্গকে গত = স্বর্গগত।
(২)তৃতীয়া-তৎপুরুষ
তৃতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে তৃতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ রজ্জু দ্বারা বন্ধ = রজ্জুবন্ধ।
(৩)চতুর্থী-তৎপুরুষ
চতুর্থী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে চতুর্থী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ যজ্ঞের নিমিত্ত ভূমি = যজ্ঞভূমি।
(৪)পঞ্চমী-তৎপুরুষ
পঞ্চমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে পঞ্চমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ মুখ হইতে ভ্রষ্ট = মুখভ্রষ্ট।
(৫)ষষ্ঠী-তৎপুরুষ
ষষ্ঠী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে ষষ্ঠী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দীনের বন্ধু = দীনবন্ধু।
(৬)সপ্তমী-তৎপুরুষ
সপ্তমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে সপ্তমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দিবাতে নিদ্রা = দিবানিদ্রা।
এছাড়াও, নঞ্ অব্যয় পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে নঞ্তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ ন উক্ত = অনুক্ত।
☑দ্বিগু সমাস
♻তদ্ধিতার্থে, উত্তরপদ পরে ও সমাহার বুঝালে সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।
তদ্ধিতার্থে; যথাঃ পঞ্চ (পাঁচটি) গো দ্বারা ক্রীত = পঞ্চগু।
উত্তরপদ পরে, যথাঃ পঞ্চ হস্ত প্রমাণ ইহার = পঞ্চহস্তপ্রমাণ। (এখানে প্রমাণ শব্দ উত্তরপদ পরে থাকায় পঞ্চ ও হস্ত এই দুই পদের দ্বিগু সমাস হয়েছে)।
সমাহারে; যথাঃ ত্রি (তিন) লোকের সমাহার = ত্রিলোক।
দ্বিগু শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল 'দুটি গরু' কিন্তু ব্যাকরণ সম্মত অর্থ হল 'দুটি গরুর মূল্যে কেনা।
☑অব্যয়ীভাব সমাস
⚜অব্যয় পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয় এবং যাতে পূর্ব পদের অর্থেরই প্রাধান্য থাকে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমনঃ আত্মাকে অধি (অধিকার করিয়া) = অধ্যাত্ম।
☑অন্যান্য সমাস
▶ছয়টি প্রধান সমাস ছাড়াও কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। যেমন: প্রাদি, নিত্য, অলুক, উপপদ ইত্যাদি। এসব সমাসের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায় না। এজন্য এগুলোকে অপ্রধান মনে করা হয়।
☑নিত্য সমাস
যে সমাসে সমস্যমান পদ দ্বারা সমাস-বাক্য হয় না, অন্য পদের দ্বারা সমস্ত পদের অর্থ প্রকাশ করতে হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে। তদর্থবাচক ব্যাখ্যামূলক শব্দ বা বাক্যাংশ যোগে এগুলোর অর্থ বিশদ করতে হয়। যেমন: অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর, কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র, অন্য গৃহ = গৃহান্তর, (বিষাক্ত) কাল (যম) তুল্য (কাল বর্ণের নয়) সাপ = কালসাপ, তুমি আমি ও সে = আমরা, দুই এবং নব্বই = বিরানব্বই।
☑অলুক সমাস
☸যে সমাসে সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না, তাকে অলুক সমাস বলে। যেমন: দুধে-ভাতে, জলে-স্থলে, দেশে-বিদেশে, হাতে-কলমে, ঘোড়ার ডিম, মাটির মানুষ, মামার বাড়ি, গায়ে পড়া, গায়ে হলুদ, হাতেখড়ি, মুখে-ভাত ইত্যাদি।
☑উপপদ সমাস
➡কৃদন্ত-পদের পূর্বে যে পদ থাকে, তাকে উপপদ বলে এবং উপপদের সাথে কৃদন্ত-পদের যে সমাস হয়, তাকে উপপদ সমাস বলে। যেমন: কুম্ভ করে যে = কুম্ভকার।
☑প্রাদি সমাস
⚙প্র, পরা প্রভৃতি ২০টি উপসর্গের সাথে কৃৎ প্রত্যয়সাধিত বিশেষ্য পদের সমাস হলে, তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন: সম্ (সম্যক্) যে আদর = সমাদর, প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন, পরি (চতুর্দিকে) যে ভ্রমণ = পরিভ্রমণ, অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ = অনুতাপ, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) ভাত (আলোকিত) = প্রভাত, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) গতি = প্রগতি ইত্যাদি।
☑বাক্যাশ্রয়ী সমাস
যে সমাসে সমাসবদ্ধ পদগুলি একমাত্রায় লেখা হয় না এমনকি সবসময় পদসংযোজক চিহ্ন দ্বারাও যুক্ত করে লেখা হয় না - বিচ্ছিন্নভাবে লিখিত এই সমাসকে বলা হয় বাক্যাশ্রয়ী সমাস। যেমন ; 'বসে আঁকো প্রতিযোগিতা', 'সব পেয়েছির দেশ' ইত্যাদি।
♻সমাস চিনার উপায়ঃ-
১) সাদা ও কালো = সাদা-কালো; আপনি আলাদা করতে পারবেন এবং পূর্ব পদ ও পরপদের প্রাধান্য সমান। অর্থাৎ আপনি এদেরকে পৃথক করতে পারবেন। এরকম সমাস কে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
২) চার পায়ের সমাহার = চতুষ্পদী; সমাহার থাকলে এটি হবে দিগু সমাস। ব্যাকরণের ভাষায়, যে সমাসের পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং সমাসটি সমাহার বা সমষ্টি অর্থ প্রকাশ করে, তাকে দ্বিগু সমাস বলা হয়।
৩) কূলের সমীপে = উপকূল; ‘প্রতি’; ‘উপ’, ‘গর' এরকম উপসর্গ বা অব্যয় পদ পূর্বে বসে সমাস হলে তা অব্যয়ীভাব সমাস। এবং অব্যয়ের অর্থই প্রাধান্য পাচ্ছে।
৪) দশ আনন যার = দশানন; আপনি হয়ত ভাবছেন এটিকে "দশ আননের সমাহার" এভাবে লিখবেন, কিন্তু দশানন বলতে দশটি মাথা নয় বরং দশটি মাথা আছে এরকম ব্যক্তিকে বুঝায়। এখন দেখুন, এটি পূর্ব পদ 'দশ' কিংবা পরপদ 'আনন' কোনটিকে প্রাধান্য দিচ্ছে না। যে সমাসে দুই পদের অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে তৃতীয় অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলা হয়।
৫) বনে বাস = বনবাস; এখানে শুধু একটি বিভক্তি 'এ' লোপ পেয়েছে। যে সমাসের পূর্বপদের বিভক্তি (২য়া থেকে ৭মী) লোপ পায় এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।
৬) ন জানা = অজানা। পূর্বপদে না বোধক অব্যয় যুক্ত হয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।
৭) পল মিশ্রিত অন্ন =পলান্ন; প্রথমত দুটি পদই বিশেষ্য। এটিকে আপনি ভাবতে পারেন 'পল ও অন্ন' লিখলেও হবে। কিন্তু সাধারণভাবে চিন্তা করুন, পলান্ন বলতে আমরা এমন অন্ন বুঝাই যাতে পল মিশ্রিত আছে। একটি পদ লোপ পায় এবং বিশেষণ-বিশেষ্যে, বিশেষণ-বিশেষণে, বিশেষ্য-বিশেষ্যে সমস্তপদ হলে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়।মনে রাখবেন তত্পুরুষ সমাসে শুধু বিভক্তি লোপ পায়।
৮) যে চালাক সেই চতুর = চালাকচতুর; প্রথমত দুটি পদই বিশেষণ। এটিকে আপনি ভাবতে পারেন 'চালাক ও চতুর' লিখলেও হবে। কিন্তু সাধারণভাবে চিন্তা করুন, চালাকচতুর বলতে আমরা একজন মানুষকে বুঝায় যে চালাক-চতুর অর্থাৎ আপনি চালাক ও চতুর কে এখানে আলাদা করতে পারবেন না। একটি ব্যক্তি বা বস্তুকে বুঝায় এবং বিশেষণ-বিশেষ্যে, বিশেষণ-বিশেষণে, বিশেষ্য-বিশেষ্যে সমস্তপদ হলে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়। বহুব্রীহি সমাসেও একটি বস্তু বা ব্যক্তিকে বুঝায় কিন্তু বহুব্রীহির ক্ষেত্রে কোন পদের অর্থই প্রাধান্য পায় না।
৯) বজ্রে্র ন্যায় কঠিন= বজ্রকঠিন; এখানে (বজ্র) noun এবং (কঠিন)adjective ব্যবহৃত হয়েছে এবং একটি তুলনা বুঝাচ্ছে, এটি কর্মধারয় সমাস। যদি noun এবং adjective থাকে তা উপমান কর্মধারয়।
১০) পুরুষ সিংহের ন্যয় = পুরুষসিংহ; এখানে (পুরুষ) noun এবং (সিংহ)noun ব্যবহৃত হয়েছে এবং একটি তুলনা বুঝাচ্ছে, এটি কর্মধারয় সমাস। যদি noun এবং noun থাকে তা উপমিত কর্মধারয়।
১১) মন রূপ মাঝি = মনমাঝি; এখানে একটি তুলনা বুঝাচ্ছে কিন্তু তুলনাটি রুপার্থক। এরকম সমাস হবে রূপক কর্মধারয়।
১২) যে সমাসের ব্যাসবাক্য হয় না, কিংবা ব্যাসবাক্য করতে গেলে অন্য পদের সাহায্য নিতে হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে
অন্য দেশ = দেশান্তর;
ঈষৎ লাল = লালচে,
অন্যকাল = কালান্তর
কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র
সমস্তগ্রাম = গ্রামশুদ্ধ
কেবল মাত্র = তন্মাত্র
অন্যস্থান = স্থানান্তর
অন্যগ্রাম = গ্রামান্তর
অন্যগৃহ = গৃহান্তর
১৩) প্রাদি সমাস
প্রাদি সমাস মূলত অব্যয়ীভাব সমাসের বৈচিত্র্য। প্রাদি সমাসে সাধারণত প্র, পরা, অনু ইত্যাদি উপসর্গ পূর্বপদে বসে।
প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন
পরি (চতুর্দিকে) ভ্রমণ = পরিভ্রমণ
অনু (পশ্চাৎ) তাপ = অনুতাপ
১৪) উপপদ তৎপুরুষ: পকেট মারে যে = পকেটমার; ছেলে ধরে যে = ছেলে ধরা, জল দেয় যে =জলদ ইত্যাদি। পূর্বপদে নামপদ এবং পরপদে ক্রিয়া থেকে যে সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।
তাহলে, সারসংক্ষেপ:
১) সমাহার থাকলে দিগু সমাস।
২) সব পদের প্রাধান্য থাকলে দ্বন্দ্ব সমাস।
৩) বিভক্তি লোপ পেলে তা তত্পুরুষ সমাস। কোন বিভক্তি লোপ না পেলে তা অলুক তত্পুরুষ সমাস। আর negative অর্থে সমাস হলে নঞ তৎপুরুষ।
৪) প্র, পরা, অনু অব্যয় যুক্ত সমাস প্রাদি সমাস। অন্যান্য অব্যয় বা উপসর্গ যোগ হলে অব্যয়ীভাব সমাস।
৫) তুলনা করলে কর্মধারয় সমাস। বিশেষ্য-বিশেষ্যে অথবা বিশেষ্য-বিশেষণ দিয়ে (ক)মধ্যপদ লোপ পেয়ে, (খ) দুটি পদ দিয়ে একই ব্যক্তি/বস্তুকে নির্দেশ করে সমস্তপদ হলে তা কর্মধারয় সমাস।
৬) কোন পদের প্রাধান্য না নিয়ে নতুন কোন পদ (ব্যক্তি, বস্তু, ঘটনা) নির্দেশ করলে তা বহুব্রীহি সমাস।
এবার আপনার কাজ হল সমস্তপদ ও ব্যাসবাক্য দেখা এবং বুঝে নেওয়া আপনি সমাস নির্ণয় করতে পারছেন কিনা।
Raisul Islam Hridoy
সন্ধিতে মিলন ঘটে সন্নিহিত বর্ণের, সমাসে মিলন ঘটে পাশাপাশি থাকা একাধিক পদের।যেমন: সংখ্যা+অতীত= সংখ্যাতীত (সন্ধি সাধিত); সংখ্যাকে অতীত= সংখ্যাতীত (সমাস সাধিত)। এভাবে একই শব্দ বা পদকে সন্ধিতে আবার সমাসেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
⚙সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যথাঃ দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু এবং অব্যয়ীভাব সমাস।
তবে দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কে তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ হিসেবে সমাস মূলত চারটি। যথা: দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি ও অব্যয়ীভাব সমাস।
এছাড়া আরও কিছু অপ্রধান সমাস আছে, যেমন: প্রাদি, নিত্য, অলুক, উপপদ ইত্যাদি।
▶যে সমাসে প্রতিটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে এবং ব্যাসবাক্যে একটি সংযোজক অব্যয়(কখনো বিয়োজক)দ্বারা যুক্ত থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
▶দ্বন্দ্ব সমাস আট প্রকার:
১/ সমার্থক দ্বন্দ্ব: কাজ-কর্ম-- কাজ ও কর্ম
২/ বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব: দিন-রাত-- দিন ও রাত
৩/বিকল্পর্থক দ্বন্দ্ব: হার-জিৎ-- হার অথবা জিৎ
৪/সমাহার দ্বন্দ্ব: দুধ- কলা-- দুধ ও কলা।
৫/মিলনার্থক দ্বন্দ্ব: চাল-ডাল--চাল ও ডাল।
৬/ অলোপ দ্বন্দ্ব: কাগজে-কলমে--কাগজে ও কলমে
৭/বহুপদী দ্বন্দ্ব: রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-- রূপ,রস,গন্ধ,স্পর্শ।
৮/একশেষ দ্বন্দ্ব: আমরা-- আমি,তুমি, সে
☑বহুব্রীহি সমাস
যে সমাসের পূর্বপদ ও পরপদ কারো অর্থ প্রাধান্য পায় না , সম্পূর্ণ তৃতীয় একটি অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
১/ সমানাধিকরন বহুব্রীহি: দশানন--দশ আনন যার
২/ ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি: পাপমতি-- পাপে মতি যার
৩/ মধ্যপদোলোপি বহুব্রীহি: বিরালাক্ষী-- বিড়ালের অক্ষির মতো অক্ষি যার
৪/ অলোপ বহুব্রীহি: মুখেভাত-- মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে।
৫/ ব্যাতিহার বহুব্রীহি: লাঠালাঠি-- লাঠিতে লাঠিতে লড়াই।
৬/ না বহুব্রীহি: নির্বাক-- নেই বাক যার।
৭/সহার্থক বহুব্রীহি: সবাক-- বাকের সহিত বর্তমান
☑কর্মধারয় সমাস
(২) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাসে কোন কোন স্থানে মধ্যপদের লোপ হয়। সেজন্যেই একে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যথা: হিমালয় নামক পবর্ত = হিমালয়পবর্ত। এখানে ‘নামক’ মধ্যপদের লোপ হয়েছে।
(৩)উপমিত কর্মধারয় সমাস
সমান ধর্মবাচক পদের প্রয়োগ না থাকলে উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: মুখ চন্দ্রসদৃশ = মুখচন্দ্র।
(৪)রূপক কর্মধারয় সমাস
উপমেয় পদে উপমানের আরোপ করে যে সমাস হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এতে উপমেয় পদে রূপ শব্দের যোগ থাকে। যেমন: বিদ্যারূপ ধন = বিদ্যাধন। এখানে ‘রূপ’ শব্দের যোগ রয়েছে।
(৫)উপমান কর্মধারয় সমাস
উপমানবাচক পদের সাথে সমান ধর্মবাচক পদের মিলনে যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: শশের (খরগোশের) ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত।
☑তৎপুরুষ সমাস
➡দ্বিতীয়াদি বিভক্তান্ত পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। এতে উত্তরপদের অর্থ প্রাধান্য থাকে। যেমনঃ লবণ দ্বারা অক্ত (যুক্ত) = লবণাক্ত। "'তৎপুরুষ"' শব্দটির অর্থ হল "তার পুরুষ"। তার পুরুষ এই শব্দ গুলির একপদীকরণে তৎপুরুষ শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে। এখানে পূর্ব পদ থেকে সম্বন্ধ পদের বিভক্তি 'র' লোপ পেয়েছে ও উত্তর পদের অর্থ প্রাধান্য পাচ্ছে। এইভাবে এই সমাসের অধিকাংশ উদাহরণে পূর্ব পদের বিভক্তি লোপ পায় ও উত্তর পদের অর্থ প্রাধান্য থাকে এবং তৎপুরুষ শব্দটি হল এই রীতিতে নিষ্পন্ন সমাষের একটি বিশিষ্ট উদাহরণ।তাই উদাহরণের নামেই এর সাধারণ নামকরণ করা হয়েছে তৎপুরুষ সমাস।
☸তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ-
(১)দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ
দ্বিতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ স্বর্গকে গত = স্বর্গগত।
(২)তৃতীয়া-তৎপুরুষ
তৃতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে তৃতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ রজ্জু দ্বারা বন্ধ = রজ্জুবন্ধ।
(৩)চতুর্থী-তৎপুরুষ
চতুর্থী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে চতুর্থী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ যজ্ঞের নিমিত্ত ভূমি = যজ্ঞভূমি।
(৪)পঞ্চমী-তৎপুরুষ
পঞ্চমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে পঞ্চমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ মুখ হইতে ভ্রষ্ট = মুখভ্রষ্ট।
(৫)ষষ্ঠী-তৎপুরুষ
ষষ্ঠী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে ষষ্ঠী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দীনের বন্ধু = দীনবন্ধু।
(৬)সপ্তমী-তৎপুরুষ
সপ্তমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে সপ্তমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দিবাতে নিদ্রা = দিবানিদ্রা।
☸এছাড়াও, নঞ্ অব্যয় পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে নঞ্তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ ন উক্ত = অনুক্ত।
যেমনঃ দোয়াত ও কলম = দোয়াতকলম, পীত অম্বর যার = পীতাম্বর (শ্রীকৃষ্ণ)। সমাসের প্রক্রিয়ায় সমাসবদ্ধ বা সমাসনিষ্পন্ন পদটিকে বলে সমস্তপদ। যেমন: এখানে দোয়াতকলম, পীতাম্বর হলো সমস্ত পদ । সমস্ত পদ কতগুলো পদের মিলিত রুপ, এই প্রতিটি পদকে বলে সমস্যমান পদ। সমস্ত পদকে বিস্তৃত করে যে বাক্যাংশ পাওয়া যায় তাকে বলে সমাসবাক্য, ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য।
▶সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপ, সমর্থন, সংগ্রহ, মিলন, একাধিক পদের একপদীকরণ ।
▶সন্ধিতে মিলন ঘটে সন্নিহিত বর্ণের, সমাসে মিলন ঘটে পাশাপাশি থাকা একাধিক পদের।যেমন: সংখ্যা+অতীত= সংখ্যাতীত (সন্ধি সাধিত); সংখ্যাকে অতীত= সংখ্যাতীত (সমাস সাধিত)। এভাবে একই শব্দ বা পদকে সন্ধিতে আবার সমাসেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
▶সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যথাঃ দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, দ্বিগু এবং অব্যয়ীভাব সমাস।
তবে দ্বিগু সমাসকে অনেক ব্যাকরণবিদ কর্মধারয় সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আবার কেউ কেউ কর্মধারয়কে তৎপুরুষ সমাসের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ হিসেবে সমাস মূলত চারটি। যথা: দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি ও অব্যয়ীভাব সমাস।
এছাড়া আরও কিছু অপ্রধান সমাস আছে, যেমন: প্রাদি, নিত্য, অলুক, উপপদ ইত্যাদি।
▶যে সমাসে প্রতিটি সমস্যমান পদের অর্থের সমান প্রাধান্য থাকে এবং ব্যাসবাক্যে একটি সংযোজক অব্যয়(কখনো বিয়োজক)দ্বারা যুক্ত থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
▶দ্বন্দ্ব সমাস আট প্রকার:
১/ সমার্থক দ্বন্দ্ব: কাজ-কর্ম-- কাজ ও কর্ম
২/ বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব: দিন-রাত-- দিন ও রাত
৩/বিকল্পর্থক দ্বন্দ্ব: হার-জিৎ-- হার অথবা জিৎ
৪/সমাহার দ্বন্দ্ব: দুধ- কলা-- দুধ ও কলা।
৫/মিলনার্থক দ্বন্দ্ব: চাল-ডাল--চাল ও ডাল।
৬/ অলোপ দ্বন্দ্ব: কাগজে-কলমে--কাগজে ও কলমে
৭/বহুপদী দ্বন্দ্ব: রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-- রূপ,রস,গন্ধ,স্পর্শ।
৮/একশেষ দ্বন্দ্ব: আমরা-- আমি,তুমি, সে
☑বহুব্রীহি সমাস
♻যে সমাসের পূর্বপদ ও পরপদ কারো অর্থ প্রাধান্য পায় না , সম্পূর্ণ তৃতীয় একটি অর্থ প্রকাশ পায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।
⚜প্রধানত বহুব্রীহি সমাস সাত প্রকার:
১/ সমানাধিকরন বহুব্রীহি: দশানন--দশ আনন যার
২/ ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি: পাপমতি-- পাপে মতি যার
৩/ মধ্যপদোলোপি বহুব্রীহি: বিরালাক্ষী-- বিড়ালের অক্ষির মতো অক্ষি যার
৪/ অলোপ বহুব্রীহি: মুখেভাত-- মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে।
৫/ ব্যাতিহার বহুব্রীহি: লাঠালাঠি-- লাঠিতে লাঠিতে লড়াই।
৬/ না বহুব্রীহি: নির্বাক-- নেই বাক যার।
৭/সহার্থক বহুব্রীহি: সবাক-- বাকের সহিত বর্তমান
☑কর্মধারয় সমাস
✔বিশেষ্যের সাথে বিশেষণের সমাসকে কর্মধারয় সমাস বলে। যথাঃ নীল যে উৎপল = নীলোৎপল। কর্মধারয় সমাসে উত্তর পদের অর্থ প্রধান হয়।
✔কর্মধারয় সমাস প্রধানত পাঁচ প্রকার। যথাঃ- (১) সাধারণ কর্মধারয়: বিশেষণ ও বিশেষ্য, বিশেষ্য ও বিশেষ্য অথবা বিশেষণ ও বিশেষণ পদের মধ্যে এই সমাস হয়ে থাকে। যেমন, নীল যে আকাশ=নীলাকাশ।
(২) মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাসে কোন কোন স্থানে মধ্যপদের লোপ হয়। সেজন্যেই একে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। যথা: হিমালয় নামক পবর্ত = হিমালয়পবর্ত। এখানে ‘নামক’ মধ্যপদের লোপ হয়েছে।
(৩)উপমিত কর্মধারয় সমাস
সমান ধর্মবাচক পদের প্রয়োগ না থাকলে উপমেয় ও উপমান পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: মুখ চন্দ্রসদৃশ = মুখচন্দ্র।
(৪)রূপক কর্মধারয় সমাস
উপমেয় পদে উপমানের আরোপ করে যে সমাস হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এতে উপমেয় পদে রূপ শব্দের যোগ থাকে। যেমন: বিদ্যারূপ ধন = বিদ্যাধন। এখানে ‘রূপ’ শব্দের যোগ রয়েছে।
(৫)উপমান কর্মধারয় সমাস
উপমানবাচক পদের সাথে সমান ধর্মবাচক পদের মিলনে যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন: শশের (খরগোশের) ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত।
☑তৎপুরুষ সমাস
♻তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। যথাঃ-
(১)দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ
দ্বিতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে দ্বিতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ স্বর্গকে গত = স্বর্গগত।
(২)তৃতীয়া-তৎপুরুষ
তৃতীয়া-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে তৃতীয়া-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ রজ্জু দ্বারা বন্ধ = রজ্জুবন্ধ।
(৩)চতুর্থী-তৎপুরুষ
চতুর্থী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে চতুর্থী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ যজ্ঞের নিমিত্ত ভূমি = যজ্ঞভূমি।
(৪)পঞ্চমী-তৎপুরুষ
পঞ্চমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে পঞ্চমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ মুখ হইতে ভ্রষ্ট = মুখভ্রষ্ট।
(৫)ষষ্ঠী-তৎপুরুষ
ষষ্ঠী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে ষষ্ঠী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দীনের বন্ধু = দীনবন্ধু।
(৬)সপ্তমী-তৎপুরুষ
সপ্তমী-বিভক্ত্যন্ত পদ পূর্বে থেকে সমাস হলে, তাকে সপ্তমী-তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ দিবাতে নিদ্রা = দিবানিদ্রা।
এছাড়াও, নঞ্ অব্যয় পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে নঞ্তৎপুরুষ বলে। যেমনঃ ন উক্ত = অনুক্ত।
☑দ্বিগু সমাস
♻তদ্ধিতার্থে, উত্তরপদ পরে ও সমাহার বুঝালে সংখ্যাবাচক শব্দ পূর্বে থেকে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।
তদ্ধিতার্থে; যথাঃ পঞ্চ (পাঁচটি) গো দ্বারা ক্রীত = পঞ্চগু।
উত্তরপদ পরে, যথাঃ পঞ্চ হস্ত প্রমাণ ইহার = পঞ্চহস্তপ্রমাণ। (এখানে প্রমাণ শব্দ উত্তরপদ পরে থাকায় পঞ্চ ও হস্ত এই দুই পদের দ্বিগু সমাস হয়েছে)।
সমাহারে; যথাঃ ত্রি (তিন) লোকের সমাহার = ত্রিলোক।
দ্বিগু শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল 'দুটি গরু' কিন্তু ব্যাকরণ সম্মত অর্থ হল 'দুটি গরুর মূল্যে কেনা।
☑অব্যয়ীভাব সমাস
⚜অব্যয় পদ পূর্বে থেকে যে সমাস হয় এবং যাতে পূর্ব পদের অর্থেরই প্রাধান্য থাকে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমনঃ আত্মাকে অধি (অধিকার করিয়া) = অধ্যাত্ম।
☑অন্যান্য সমাস
▶ছয়টি প্রধান সমাস ছাড়াও কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। যেমন: প্রাদি, নিত্য, অলুক, উপপদ ইত্যাদি। এসব সমাসের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায় না। এজন্য এগুলোকে অপ্রধান মনে করা হয়।
☑নিত্য সমাস
যে সমাসে সমস্যমান পদ দ্বারা সমাস-বাক্য হয় না, অন্য পদের দ্বারা সমস্ত পদের অর্থ প্রকাশ করতে হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে। তদর্থবাচক ব্যাখ্যামূলক শব্দ বা বাক্যাংশ যোগে এগুলোর অর্থ বিশদ করতে হয়। যেমন: অন্য গ্রাম = গ্রামান্তর, কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র, অন্য গৃহ = গৃহান্তর, (বিষাক্ত) কাল (যম) তুল্য (কাল বর্ণের নয়) সাপ = কালসাপ, তুমি আমি ও সে = আমরা, দুই এবং নব্বই = বিরানব্বই।
☑অলুক সমাস
☸যে সমাসে সমস্যমান পদের বিভক্তি লোপ পায় না, তাকে অলুক সমাস বলে। যেমন: দুধে-ভাতে, জলে-স্থলে, দেশে-বিদেশে, হাতে-কলমে, ঘোড়ার ডিম, মাটির মানুষ, মামার বাড়ি, গায়ে পড়া, গায়ে হলুদ, হাতেখড়ি, মুখে-ভাত ইত্যাদি।
☑উপপদ সমাস
➡কৃদন্ত-পদের পূর্বে যে পদ থাকে, তাকে উপপদ বলে এবং উপপদের সাথে কৃদন্ত-পদের যে সমাস হয়, তাকে উপপদ সমাস বলে। যেমন: কুম্ভ করে যে = কুম্ভকার।
☑প্রাদি সমাস
⚙প্র, পরা প্রভৃতি ২০টি উপসর্গের সাথে কৃৎ প্রত্যয়সাধিত বিশেষ্য পদের সমাস হলে, তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন: সম্ (সম্যক্) যে আদর = সমাদর, প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন, পরি (চতুর্দিকে) যে ভ্রমণ = পরিভ্রমণ, অনুতে (পশ্চাতে) যে তাপ = অনুতাপ, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) ভাত (আলোকিত) = প্রভাত, প্র (প্রকৃষ্ট রূপে) গতি = প্রগতি ইত্যাদি।
☑বাক্যাশ্রয়ী সমাস
♻সমাস চিনার উপায়ঃ-
১) সাদা ও কালো = সাদা-কালো; আপনি আলাদা করতে পারবেন এবং পূর্ব পদ ও পরপদের প্রাধান্য সমান। অর্থাৎ আপনি এদেরকে পৃথক করতে পারবেন। এরকম সমাস কে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
২) চার পায়ের সমাহার = চতুষ্পদী; সমাহার থাকলে এটি হবে দিগু সমাস। ব্যাকরণের ভাষায়, যে সমাসের পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং সমাসটি সমাহার বা সমষ্টি অর্থ প্রকাশ করে, তাকে দ্বিগু সমাস বলা হয়।
৩) কূলের সমীপে = উপকূল; ‘প্রতি’; ‘উপ’, ‘গর' এরকম উপসর্গ বা অব্যয় পদ পূর্বে বসে সমাস হলে তা অব্যয়ীভাব সমাস। এবং অব্যয়ের অর্থই প্রাধান্য পাচ্ছে।
৪) দশ আনন যার = দশানন; আপনি হয়ত ভাবছেন এটিকে "দশ আননের সমাহার" এভাবে লিখবেন, কিন্তু দশানন বলতে দশটি মাথা নয় বরং দশটি মাথা আছে এরকম ব্যক্তিকে বুঝায়। এখন দেখুন, এটি পূর্ব পদ 'দশ' কিংবা পরপদ 'আনন' কোনটিকে প্রাধান্য দিচ্ছে না। যে সমাসে দুই পদের অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে তৃতীয় অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলা হয়।
৫) বনে বাস = বনবাস; এখানে শুধু একটি বিভক্তি 'এ' লোপ পেয়েছে। যে সমাসের পূর্বপদের বিভক্তি (২য়া থেকে ৭মী) লোপ পায় এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।
৬) ন জানা = অজানা। পূর্বপদে না বোধক অব্যয় যুক্ত হয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।
৭) পল মিশ্রিত অন্ন =পলান্ন; প্রথমত দুটি পদই বিশেষ্য। এটিকে আপনি ভাবতে পারেন 'পল ও অন্ন' লিখলেও হবে। কিন্তু সাধারণভাবে চিন্তা করুন, পলান্ন বলতে আমরা এমন অন্ন বুঝাই যাতে পল মিশ্রিত আছে। একটি পদ লোপ পায় এবং বিশেষণ-বিশেষ্যে, বিশেষণ-বিশেষণে, বিশেষ্য-বিশেষ্যে সমস্তপদ হলে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়।মনে রাখবেন তত্পুরুষ সমাসে শুধু বিভক্তি লোপ পায়।
৮) যে চালাক সেই চতুর = চালাকচতুর; প্রথমত দুটি পদই বিশেষণ। এটিকে আপনি ভাবতে পারেন 'চালাক ও চতুর' লিখলেও হবে। কিন্তু সাধারণভাবে চিন্তা করুন, চালাকচতুর বলতে আমরা একজন মানুষকে বুঝায় যে চালাক-চতুর অর্থাৎ আপনি চালাক ও চতুর কে এখানে আলাদা করতে পারবেন না। একটি ব্যক্তি বা বস্তুকে বুঝায় এবং বিশেষণ-বিশেষ্যে, বিশেষণ-বিশেষণে, বিশেষ্য-বিশেষ্যে সমস্তপদ হলে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়। বহুব্রীহি সমাসেও একটি বস্তু বা ব্যক্তিকে বুঝায় কিন্তু বহুব্রীহির ক্ষেত্রে কোন পদের অর্থই প্রাধান্য পায় না।
৯) বজ্রে্র ন্যায় কঠিন= বজ্রকঠিন; এখানে (বজ্র) noun এবং (কঠিন)adjective ব্যবহৃত হয়েছে এবং একটি তুলনা বুঝাচ্ছে, এটি কর্মধারয় সমাস। যদি noun এবং adjective থাকে তা উপমান কর্মধারয়।
১০) পুরুষ সিংহের ন্যয় = পুরুষসিংহ; এখানে (পুরুষ) noun এবং (সিংহ)noun ব্যবহৃত হয়েছে এবং একটি তুলনা বুঝাচ্ছে, এটি কর্মধারয় সমাস। যদি noun এবং noun থাকে তা উপমিত কর্মধারয়।
১১) মন রূপ মাঝি = মনমাঝি; এখানে একটি তুলনা বুঝাচ্ছে কিন্তু তুলনাটি রুপার্থক। এরকম সমাস হবে রূপক কর্মধারয়।
১২) যে সমাসের ব্যাসবাক্য হয় না, কিংবা ব্যাসবাক্য করতে গেলে অন্য পদের সাহায্য নিতে হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে
অন্য দেশ = দেশান্তর;
ঈষৎ লাল = লালচে,
অন্যকাল = কালান্তর
কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র
সমস্তগ্রাম = গ্রামশুদ্ধ
কেবল মাত্র = তন্মাত্র
অন্যস্থান = স্থানান্তর
অন্যগ্রাম = গ্রামান্তর
অন্যগৃহ = গৃহান্তর
১৩) প্রাদি সমাস
প্রাদি সমাস মূলত অব্যয়ীভাব সমাসের বৈচিত্র্য। প্রাদি সমাসে সাধারণত প্র, পরা, অনু ইত্যাদি উপসর্গ পূর্বপদে বসে।
প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন
পরি (চতুর্দিকে) ভ্রমণ = পরিভ্রমণ
অনু (পশ্চাৎ) তাপ = অনুতাপ
১৪) উপপদ তৎপুরুষ: পকেট মারে যে = পকেটমার; ছেলে ধরে যে = ছেলে ধরা, জল দেয় যে =জলদ ইত্যাদি। পূর্বপদে নামপদ এবং পরপদে ক্রিয়া থেকে যে সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।
তাহলে, সারসংক্ষেপ:
১) সমাহার থাকলে দিগু সমাস।
২) সব পদের প্রাধান্য থাকলে দ্বন্দ্ব সমাস।
৩) বিভক্তি লোপ পেলে তা তত্পুরুষ সমাস। কোন বিভক্তি লোপ না পেলে তা অলুক তত্পুরুষ সমাস। আর negative অর্থে সমাস হলে নঞ তৎপুরুষ।
৪) প্র, পরা, অনু অব্যয় যুক্ত সমাস প্রাদি সমাস। অন্যান্য অব্যয় বা উপসর্গ যোগ হলে অব্যয়ীভাব সমাস।
৫) তুলনা করলে কর্মধারয় সমাস। বিশেষ্য-বিশেষ্যে অথবা বিশেষ্য-বিশেষণ দিয়ে (ক)মধ্যপদ লোপ পেয়ে, (খ) দুটি পদ দিয়ে একই ব্যক্তি/বস্তুকে নির্দেশ করে সমস্তপদ হলে তা কর্মধারয় সমাস।
৬) কোন পদের প্রাধান্য না নিয়ে নতুন কোন পদ (ব্যক্তি, বস্তু, ঘটনা) নির্দেশ করলে তা বহুব্রীহি সমাস।
এবার আপনার কাজ হল সমস্তপদ ও ব্যাসবাক্য দেখা এবং বুঝে নেওয়া আপনি সমাস নির্ণয় করতে পারছেন কিনা।
Raisul Islam Hridoy