- Tue Jun 18, 2019 3:30 pm#1460
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দসমূহের একটি বিপুল অংশ প্রত্যয়জাত শব্দ। প্রকৃতির সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার ফলে এ শব্দগুলো গঠিত হয়। নবগঠিত এসব শব্দ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভের জন্য প্রকৃতি ও প্রত্যয় সংক্রান্ত পরিষ্কার ধারণা থাকা আবশ্যক। বক্ষ্যমাণ অধ্যায়ে উল্লেখিত বিষয়ের আলোচনা সন্নিবেশিত হলো। যে বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি ধাতু বা শব্দের উত্তর (পরে) যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে। যেমন: চল + আ = চলা, দেশ + ই = দেশী। এখানে চল ধাতুর সঙ্গে ‘আ’ বর্ণ যুক্ত হয়ে ‘চলা’ শব্দ গঠিত হয়েছে এবং দেশ শব্দের সঙ্গে ‘ঈ’ বর্ণ যুক্ত হয়ে ‘দেশী’ শব্দ গঠিত হয়েছে। এখানে ‘আ’ এবং ‘ঈ’ হচ্ছে প্রত্যয়।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “ধাতু বা শব্দের উত্তর ভিন্ন ভিন্ন অর্থে যে বর্ণ বা বর্ণসমূহ যুক্ত হইয়া শব্দ প্রস্তুত হয়, তাহাদিগকে প্রত্যয় বলে।”
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপ্যাধায়ের মত, “যাহা ধাতুর উত্তর যুক্ত হইয়া নাম শব্দ (বা নতুন ধাতু) গঠন করে কিংবা নাম শব্দের উত্তর যুক্ত হইয়া নতুন শব্দ গঠন করে তাহাকে প্রত্যয় বলে।”
ড. এনামুল হকের মতে, “নাম প্রকৃতির আগে-পাছে কিছু যোগ না করিলেও এইগুলি শব্দ রূপে গণ্য হয় তথাপি বাক্যে প্রয়োগ করিতে গেলে এই নাম প্রকৃতির সহিত বিভক্তির চিহ্ন যোগ করিতে হয়। ধাতুগুলি প্রত্যয় বা বিভক্তিযুক্ত না হইয়া শব্দ রূপে ব্যবহৃত হয় না। যে-সমস্ত ধাতু শব্দরূপে ব্যবহৃত হইতে দেখা যায়, সেইগুলিতে একটি শূন্য প্রত্যয় আছে বলিয়া ধরিয়া লইতে হয়।”
■ প্রত্যয়ের প্রকারভেদ
প্রত্যয় শব্দ গঠন করে। তাই প্রত্যয় কখনও ধাতুর শেষে আবার কখনও শব্দের শেষে যুক্ত হয়। ‘ধাতু’ হচ্ছে ক্রিয়ার মূল অংশ। প্রত্যয়ের সাথে গঠিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে উৎস হিসেবে মূলে কখনও ধাতু আবার কখনও শব্দ পাওয়া যায়। শব্দের এই মূলের নাম প্রকৃতি। ধাতু বা শব্দ যার সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে যে মূল অংশের নাম প্রকৃতি। যেমনÑ মিঠা + আই = মিঠাই। এখানে ‘মিঠা’ হচ্ছে প্রকৃতি, এর সঙ্গে ‘আই’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘মিঠাই’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। এভাবে শব্দের বিশ্লেষণ করলে প্রকৃতি ও প্রত্যয় পাওয়া যায়। অন্য কথায় প্রকৃতি ও প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, আর সেই শব্দ ভাষায় ব্যবহৃত হয়। প্রত্যয়ের ব্যাপারে ধাতু ও শব্দের পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন থাকা অবশ্যক।
ধাতু ও শব্দের শেষে প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যয়কে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনÑ ১. কৃৎ-প্রত্যয় ও ২. তদ্ধিত প্রত্যয়।
১. কৃৎ-প্রত্যয়:- যেসব প্রত্যয় ক্রিয়ার মূল বা ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাদেরকে কৃৎ-প্রত্যয় বলে। কৃৎ-প্রত্যয় যোগে যেসব শব্দ গঠিত হয় তাদেরকে কৃদন্ত শব্দ বলে। যেমনÑ বাট + না = বাটনা, রাঁধ + না = রান্না। কৃৎ-প্রত্যয় ক্ষেত্রে বুঝানোর জন্য প্রকৃতির পূর্বে ধাতুর চিহ্ন (√) ব্যবহার করা হয়। যেমনÑ ফুট + অন্ত =ফুটন্ত। এখানে ‘ফুট’ হচ্ছে ধাতু বা প্রকৃতি, এর পূর্বে (√) চিহ্ন দিতে হবে, ‘অন্ত’ হচ্ছে প্রত্যয় এবং নবগঠিত ‘ফুটন্ত’ শব্দটি হচ্ছে কৃদন্ত শব্দ।
২. তদ্ধিত প্রত্যয় ঃ শব্দের উত্তর (পরে) যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাদেরকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে যেসব শব্দ গঠিত হয় তাদেরকে তদ্ধিতান্ত শব্দ বলে। যেমনÑ বাড়ি + ওয়ালা = বাড়িওয়ালা, ছাপা + খানা = ছাপাখানা, এখানে ‘বাড়ি’ ও ‘ছাপা’ শব্দের সাথে যথাক্রমে ‘ওয়ালা’ ও ‘খানা’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বাড়িওয়ালা ও ছাপাখানা শব্দদ্বয় গঠিত হয়েছে। তাই বাড়িওয়ালা ও ছাপাখানা তদ্ধিতান্ত শব্দ।
বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দ বুঝবার জন্য পুংলিঙ্গ শব্দের শেষে এক ধরনের প্রত্যয় যুক্ত হয়ে তার স্ত্রীলিঙ্গ রূপ গঠিত হয়, এগুলোকে স্ত্রী প্রত্যয় বলে। যেমনÑ পিতামহ + ঈ = পিতামহী। এখানে ‘ঈ’ স্ত্রী প্রত্যয়। একে তদ্ধিত প্রত্যয় বলা সমীচীন নয়।
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ সংস্কৃতের নিজস্ব প্রত্যয়যোগে সাধিত হয়, আবার খাঁটি বাংলা শব্দও বাংলার নিজস্ব প্রত্যয় দ্বারা নিষ্পন্ন। বাংলা ভাষায় অসংখ্য তৎসম শব্দের প্রবেশ ঘটেছে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সাধিত শব্দের প্রকৃতি জানতে হলে এরূপ শব্দের ব্যুপত্তি জানা দরকার। তাই বাংলা ভাষায় ব্যাকরণে নিজস্ব প্রত্যয় ছাড়াও সংস্কৃত প্রত্যয় সম্পর্কে আলোচনা থাকে। এ কারণে বাংলা ভাষার ব্যাকরণে প্রত্যয়কে বাংলা ও সংস্কৃত এ শ্রেণীতে নির্ণয় করা চলে। বাংলা ভাষায়Ñ ১. বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়, ২. সংস্কৃত কৃৎ-প্রত্যয়, ৩. বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় ও ৪. সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়Ñ এ চার শ্রেণীর প্রত্যয় পাওয়া যায়। এছাড়া বাংলা ভাষায় কিছু বিদেশী প্রত্যয়ও ব্যবহৃত হয়।
■ প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্য
প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্যসমূহ নিম্নরূপ :
প্রকৃতি প্রত্যয়
১. প্রত্যয় সাধিত শব্দ থেকে প্রত্যয় বাদ দিলে যে অংশটুকু থাকে, তার নামই প্রকৃতি। যেমনÑ ধন + ঈ = ধনী। এখানে ‘ধন’ হল প্রকৃতি। ১. শব্দ বা ধাতুর শেষে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয় তার নামই প্রত্যয়। যেমনÑ সাপ + উড়ে = সাপুড়ে। এখানে ‘উড়ে’ হচ্ছে প্রত্যয়।
২. প্রকৃতি হল শব্দ মূল বা ধাতু। ২. প্রত্যয় হল নতুন শব্দ গঠন করার একটা সহজ উপাদান। প্রকৃতির সাথে যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠন করাই প্রত্যয়ের লক্ষ্য।
৩. প্রকৃতির নিজস্ব অর্থ আছে। ৩.প্রত্যয় অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি মাত্র। এদের নিজস্ব কোন অর্থ নেই।
■ উপসর্গ ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্য :
উপসর্গ ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্যসমূহরূপ :
উপসর্গ প্রত্যয়
১. উপসর্গ শব্দ বা ধাতুর আগে বসে নতুন শব্দ গঠন করে। ১. প্রত্যয় ধাতু বা শব্দের পরে বসে নতুন শব্দ গঠন করে।
২. উপসর্গ অন্য শব্দের পূর্বে বসে তার অর্থেও পরিবর্তন ঘটায়। ২. প্রত্যয় ধাতু বা শব্দের পরে বসে শুধুমাত্র নতুন শব্দ তৈরিতে সাহায্য করে।
৩. যেসব অব্যয়সূচক শব্দ বা শব্দাংশ কৃদন্ত বা নাম শব্দের পূর্বে বসে অর্থেও সম্প্রসারণ, সংকোচন ও পরিবর্তন ঘটায় তাকে উপসর্গ বলে। যেমন: ‘জন্মা’ একটা শব্দ। এর আগে ‘বি’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে ‘বিজন্মা’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। ৩. যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে। যেমনÑ ‘কৃ’ ধাতুর সাথে ‘তব্য’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘কর্তব্য’ শব্দটি গঠিত হয়।
৪. উপসর্গ বিভক্তির মত ব্যবহৃত হয় না। ৪. প্রত্যয়-সাধিত শব্দের সাথে কেবলমাত্র বিভক্তি যুক্ত হলেই তা বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
■ প্রত্যয ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্য :
প্রত্যয় ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্যসমূহরূপ :
প্রত্যয় বিভক্তি
১. যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি কোন শব্দ বা ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে প্রত্যয় বলে। যেমন: নাচ্ + অন = নাচন, হাত + আ = হাতা। এখানে ‘নাচ’ ধাতুর সাথে ‘অন’ প্রত্যয় যোগে ‘নাচন’ এবং ‘হাত’ শব্দের সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে ‘হাতা’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। কাজেই ‘অন’ ও ‘আ’ এখানে প্রত্যয়। ১. বাক্যের বিভিন্ন শব্দের সঙ্গে অন্বয় সাধনের জন্য নামপদ বা ক্রিয়াপদের সাথে যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয় তাকে বিভক্তি বলে। যেমন : কাজলকে বাড়িতে দেখেছি। এখানে কাজলের সাথে ‘কে’ যুক্ত হয়ে ‘কাজলকে’ এবং বাড়ির সাথে ‘তে’ যুক্ত হয়ে ‘বাড়িতে’ হয়েছে। কাজেই ‘কে’ এবং ‘তে’ এখানে বিভক্তি।
২. ধাতু বা শব্দের পরে প্রত্যয় যোগে যে নতুন শব্দ গঠিত হয় তাকে সাধিত শব্দ বলে। ২. সাধিত শব্দের সাথে বিভক্তি যোগ হলে সাধিত শব্দটি পদে পরিণত হয়। অর্থাৎ প্রত্যয়-সাধিত শব্দ কেবলমাত্র বিভক্তি যুক্ত হলেই বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
৩. প্রত্যয়ের নিজস্ব কোন অর্থ নেই। ৩. বিভক্তিরও নিজস্ব কোন অর্থ নেই, শুধু বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি তথা চিহ্ন মাত্র। যেমন: এ, য়, তে, কে, রে, র ইত্যাদি।
■ প্রত্যয়ের সম্বন্ধীয় কয়েকটি প্রয়োজনীয় নিয়ম
১. ধাতু ও প্রত্যয়কে এক সঙ্গে উচ্চারণ করার সময় ধাতুর অন্ত্যধ্বনি ও প্রত্যয়ের আদি ধ্বনি অনেক সময় পরস্পরের প্রভাবে সমতা প্রাপ্ত হয়। যেমনÑ রাঁধ + না (রান্ + না) = রান্না, কাঁধ + না (কান + না) = কান্না ইত্যাদি।
২. ধাতু ও প্রত্যয় যোগে গঠিত কৃদন্ত শব্দ উচ্চারণ করার কালে এদের উভয়ের বা যে-কোন একটির স্বর বা ব্যঞ্জন ধ্বনি লোপ পায়। যেমনÑ মিঠা + আই = মিঠাই, পড়া + আন = পড়ান ইত্যাদি।
৩. ধাতু বা প্রত্যয়কে এক সঙ্গে উচ্চারণ করার কালে জিহ্বা বিশ্রাম না নিয়ে অনেক সময় ধাতুর অন্ত্যধ্বনি থেকে প্রত্যয়ের আদি ধ্বনিতে প্রবেশ করে, তখন এ দুটি ধ্বনির মধ্যে একটি তৃতীয় ধ্বনির আগমন হয়। যেমনÑ যা + আ (যা + ওয় + আ) =য়াওয়া; পা + আ (পা + ওয় + আ) = পাওয়া ইত্যাদি।
৪. ধাতুর উত্তর (পর) প্রত্যয় যুক্ত হলে অনেক সময় ধাতুর মূল বর্ণস্থিত স্বরের গুণ বা বৃদ্ধি পায়। যেমনÑ (ক) ই, ঈ স্থলে ‘এ’, উ, ঊ স্থলে ‘ও’ এবং ঋ স্থলে ‘অর’ হওয়াকে গুণ বলে। যেমনÑ √লিখ + আ = লেখা, √কৃ + তা = কর্তা, √ফুট + আ = ফোটা ইত্যাদি।
(খ) ‘অ’ স্থানে আ; ই, ঈ, এ স্থানে ঐ; উ, ঊ, ও স্থানে ঔ এবং ‘ঔ’ স্থানে ‘আর’ হওয়াকে বৃদ্ধি বলে। যেমনÑ √পচ + ণক = পাচক, শিশু + ষ্ণ = শৈশব, যুব + অন = যৌবন, √কৃ + ঘ্যণ = কার্য ইত্যাদি।
৫. ধাতুর সাথে প্রত্যয় যোগে অনেক সময় পদমধ্যে অন্তঃসন্ধি হয়। যেমন: চ + ত =ক্ত, মুচ্ + তি =
মুক্তি ইত্যাদি।
৬. সংস্কৃত প্রত্যয়ের বর্ণগুলোর অনেক বর্ণই লোপ পায়; এগুলোকে ‘ইৎ’ বলে। যেমন: গম্ + অনট =
গমন। এখানে ‘অনট’ প্রত্যয়ের ‘অন’ যুক্ত হয় এবং ‘অট’ লোপ পায়। এই ‘অট’-কে ‘ইৎ’ বলে। নিচেন ছকে ‘ইৎ’ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখানো হল :
মূল প্রত্যয় শব্দে ব্যবহৃত অংশ ডবলুপ্ত বা ‘ইৎ’ অংশ
অনট অন ট
ক্তি তি ক
অল অ ল
ঘাণ য (্য) ঘ, ণ
ণক অক ণ
শানচ্ আন শ, চ
ণিন ইন (ঈ) ণ
ক্ত ত ক
ন্যৎ ঐ ন, ৎ
ঘঞ অ ঘ, ঞ
তৃচ্ ত (ণ) চ
সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়ের ক্ষেত্রে
মূল প্রত্যয় শব্দে ব্যবহৃত অংশ বিলুপ্ত বা ‘ইৎ’ অংশ
ষ্ণ অ স, ঞ
ষ্ণিক ইক ষ্ণ
ইমন ইম ই
ঈন ঈ ই
নীয় ঈয় ন
বতুপ বৎ উ, প
ষ্ণেয় এয় ষ্ণ
ষ্ণি ই ষ্ণ
ষ্ণ্য য (্য) ষ্ণ
মতুপ মৎ উ, প
ণীণ ঈন ন
■ প্রত্যয় নির্ণয়
প্রকৃতি ও প্রত্যয় নির্ণয় করতে হলে নি¤œলিখিত দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা প্ররেয়াজন। যেমন:
ক. গাইয়ে = √গাই + ইয়া = (কর্তৃবাচ্য) গাহইয়া˃গাঅইয়া˃গাইয়ে (অভিশ্রুতিতি); অর্থ ‘যে গান করে’। কৃৎ-প্রত্যয়।
খ. পান্তা = পানি + তা = পানিতা˃ই লোপ হয়ে পান্তা; অর্থ ‘পানিতে ভিজা’। তদ্ধিত প্রত্যয়।
গ. অভিনীত = অভি + √নী (নিয়ে যাওয়া) + ক্ত (কর্মবাচ্য) = অভিনয়; অর্থ ‘অপরের কাজ অনুকরণ করে নিয়ে আসা হয়েছে এমন’। কৃৎ-প্রত্যয়
ঘ. বৈচিত্র্য = বিচিত্র (অর্থ রঙীন) + ষ্ণ্য = বৈচিত্র্য (ভাবার্থে); তদ্ধিত প্রত্যয়।
সংক্ষেপে প্রকৃত ও প্রত্যয় নির্ণয় পদ্ধতি নি¤œরূপ : কোন শব্দের প্রকৃতি ও প্রত্যয় নির্ধারিত করতে হলে কোনটি প্রকৃতি ও কোনটি প্রত্যয় তা পৃথকভাবে দেখাতে হবে। কৃৎ-প্রত্যয় হলে ধাতুর চিহ্ন (√) প্রকৃতির পূর্বে ব্যবহার করতে হবে এবং এ সঙ্গে যোগ চিহ্ন দিয়ে প্রত্যয় দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে ‘প্রকৃতি + প্রত্যয় = শব্দ’ উপরে লিখে নিয়ে শব্দের বিশ্লেষণ দেখানোই শ্রেয়। যেমন:
প্রকৃতি + প্রত্যয় = শব্দ প্রত্যয়ের নাম
√লড় + আই = লড়াই কৃৎপ্রত্যয়
√খা + ইয়ে = খাইয়ে কৃৎ-প্রত্যয়
√জমি + দার = জমিদারতদ্ধিত প্রত্যয়
√মিঠা + আই = মিঠাই তদ্ধিত প্রত্যয়
বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়
১. অ-প্রত্যয় : ‘প্রবণতা, ঈষদ্ভাব প্রায় কিন্তু পূর্ণ নয়’ এমন ভাব প্রকাশ করতে ধাতুর উত্তর (পরে) অ (উ, ও) প্রত্যয় যুক্ত হয় এবং দ্বিত্ব প্রয়োগ হয়। যেমন:
√কাঁদ + অ : কাঁদ + অ = কাঁদ কাঁদ √ডুব + অ : ডুব + অ = ডুব ডুব (ডুবু ডুবু)
√পড় + অ : পড় + অ = পড় পড় (পড়ো পড়ো) √মার + অ : মার + অ = মার মার
২. আ-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য, করণবাচ্য ও ভাববাচ্যের ধাতুর পরে আ-প্রত্যয় হয়। যেমন:
√ঝর + আ = ঝরা √হাস + আ = হাসা √খা + আ = খাওয়া
√শোন + আ = শোনা √ভর + আ = ভরা √কাঁচ + আ = কাঁচা
√কাট + আ = কাটা √র্ম + আ = মরা √ছাড় + আ = ছাড়া
√জান + আ = জানা
৩. অন-প্রত্যয় : অন-প্রত্যয়ান্ত শব্দগুলো সাধারণ ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
√বাঁধ + অন = বাঁধন √সাজ্ + অন = সাজন √হাঁট + অন = হাঁটন
√র্ম + অন = মরণ √নাচ + অন = নাচন √মাজ + অন = মাজন
√গড় + অন = গড়ন √জীব + অন = জীবন √কাঁদ + অন = কাঁদন
৪. অক-প্রত্যয় : অক-প্রতায়ান্ত শব্দ সাধারণত বিশেষ পদরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
√ফাট্ + অক =ফাটক √সড় + অক = সড়ক √নাট + অক = নাটক
√ঝল + অক = ঝলক √দুল + অক = দোলক √ঘট্ + অক = ঘটক
√বৈঠ + অক = বৈঠক √চট্ + অক = চটক
৫. আই-প্রত্যয় : করণবাচ্য ও ভাববাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘আই’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√ফাড়্ + আই = ফাড়াই √ছাঁট্ + আই = ছাঁটাই √যাচ্ + আই = যাচাই
√খোদ + আই = খোদাই √ঢাল্ + আই = ঢালাই √মাড়্ + আই = মাড়াই
√সিল্ + আই = সেলাই √লড়্ + আই = লড়াই
৬. উয়া-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্য ধাতুর উত্তর ‘উয়া’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। উয়া-প্রত্যয় বিকল্পে ও-প্রত্যয় হয়। যেমন:
√পড়্ + উয়া = পড়–য়া √চল + উয়া = চলুয়া √হাল্ + উয়া = হালুয়া
√সাজ + উয়া = সাজুয়া √খা + উয়া = খাওয়া √ঝড় + উয়া = ঝড়োয়া˃ঝড়ো
৭. উ-প্রত্যয় : ‘উ’ প্রত্যয়ান্ত সাধিত শব্দ বিশেষ্য বা বিশেষণ হয়। যেমন:
√ঢাল্ + উ = ঢালু √ডাক + উ = ডাকু √ঝাড় + উ = ঝাড়–
√চাল্ + উ = চালু √উড় + উ = উড়– √ডুব + উ = ডুবু
৮. উক-প্রত্যয় ঃ স্বভাব বুঝাতে বিশ্লেষণ পদ গঠনে ‘উক’ প্রত্যয় হয়। যেমনÑ
√পিট + উক = পেটুক √মিশ + উক = মিশুক √খা + উক = খাউক
√হিনস + উক = হিংসুক √নিন্দা + উক = নিন্দুক √ভা + উক = ভাবুক
৯. ই-প্রত্যয় : কর্মবাচ্য, করণবাচ্য, অপাদানবাচ্য, অধিকরণবাচ্য ও ভাববাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘ই’ প্রত্যয় হয়। যেমন:
√ঝর + ই = ঝরি √হাস + ই = হাসি √কর + ই = করি
√বুল + ই = বুলি √বেড় + ই = বেড়ি √হাঁচ + ই = হাঁচি
√খা + ই = খাই √ভাজ + ই = ভাজি
১০. ইয়া ইয়ে-প্রত্যয় : ‘প্রবীণ বা নিপুণ অর্থে’ কর্তৃবাচ্যের ধাতুর উত্তর ইয়া ইয়ে প্রত্যয় হয়। যেমন:
√কাঁদন + ইয়া = কাঁদনিয়া˃কাঁদুনে√বাজ্ + ইয়ে = বাজিয়ে কহ্ + ইয়া = কহহিয়া˃কইয়ে
√খেল + ইয়ে = খেলিয়ে √গাহ্্্ + ইয়া = গাহহিয়া˃গাইয়ে √নাচ + ইয়ে = নাচিয়ে
আবার অসমাপিকা ক্রিয়া বুঝাতেও ‘ইয়া’ প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন:
√পড়্ + ইয়া = পড়িয়া √বহ্ + ইয়া = বহিয়া √চল + ইয়া = চলিয়া
√কাঁদ্ + ইয়া = কাঁদিয়া √হাস + ইয়া = হাসিয়া √শুন + ইয়া = শুনিয়া
১১. আল-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য ও করণবাচ্যের ধাতুর উত্তর আল-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√রাখ্ + আল = রাখাল √মাত্ + আল = মাতাল √বাচ্ + আল = বাচাল
√ধার + আল = ধারাল √নাগ্ + আল = নাগাল √মিশ্ + আল = মিশাল
১২. তি-প্রত্যয় ঃ কর্তৃবাচ্য ও ভাববাছ্যের উত্তর ‘তি’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমনÑ
√কম্ + তি = কমতি √চল্ + তি = চলতি √র্ফি + তি = ফিরতি
√উঠ্ + তি = উঠতি √ঘাট্ + তি = ঘাটতি √বস্ + তি = বসতি
১৩. না-প্রত্যয় : কর্মবাচ্য, করণবাচ্য ও ভাববাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘না’ প্রত্যয় যুক্ত হয়্। যেমন:
√শুক + না = শুকনা √বাট + না = বাটনা √দুল + না = দোলনা
√ঝর + না = ঝরনা √রাঁধ + না = রাঁধনা˃রান্না √ঢাক + না = ঢাকনা
√খেল + না = খেলনা √মাগ + না = মাগনা
১৪. আনি-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্য, করণবাচ্য ও ভাববাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘আনি’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√রাঙ + আনি = রাঙানি √খাট + আনি = খাটানি˃খাটুনি √শাস + আনি = শাসানি
√চির + আনি = চিরণী˃চিরুণী √শুন + আনি = শুনানি √জ্বাল + আনি = জ্বালানি
√উড় + আনি = উড়ানি √হাঁপ + আনি = হাঁপানি
১৫. আরু-প্রত্যয় : কর্তায় দক্ষতা ও পেশা বুঝাতে কর্তৃবাচ্যের ধাতু উত্তর ‘আরু’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√ডুব + আরু = ডুবারু √সাঁত + আরু = সাঁতারু √খোঁজ + আরু = খোঁজারু
১৬. আও-প্রত্যয় : ভাববাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘আও’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√বাঁচ্ + আও = বাঁচাও √দুল্ + আও = দোলাও˃দুলাও √চড়্ + আও = চড়াও
√র্ঘি + আও = ঘিরাও √র্স + আও = সরাও √পাকড়্ + আও = পাকড়াও
১৭. আনো-প্রত্যয় : ধাতুর উত্তর ‘আনো’ প্রত্যয় যোগে ক্রিয়াবাচক বা বিশ্লেষন পদ গঠিত হয়। যেমন:
√কামড় + আনো = কামড়ানো √নাচ + আনো = নাচানো √বাঁধ + আনো = বাঁধানো
√পাল + আনো = পালানো √কাঁদ + আনো = কাঁদানো √দৌড় + আনো = দৌড়ানো
১৮. অল-প্রত্যয় : ভাববাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘অল’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√পিছ্ + অল = পিছল √ফাট + অল = ফাটল √জী + অল = জীয়ল˃জীওল
১৯. আইত-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘আইত’ (আত) প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√ডাক + আইত = ডাকাইত˃ডাকাত √সঙ্গ + আইত = সাঙ্গাইত˃সাঙ্গাত √সেব + আইত = সেবাইত
২০. আন-প্রত্যয় : প্রযোজক ধাতু ও কর্মবাচ্যের ধাতুর পরে ‘আন’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√ছোড় + আন = ছোড়ান √দেখ + আন = দেখান √গড় + আন = গড়ান
√খা + আন = খাওয়ান √ঠকা + আন = ঠকান √জান + আন = জানান
২১. অন্ত-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘অন্ত’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√চল + অন্ত = চলন্ত √ডুব্ + অন্ত = ডুবন্ত √ঝুল + অন্ত = ঝুলন্ত
√ঘুম + অন্ত = ঘুমন্ত √ফুট্ + অন্ত = ফুটন্ত √ফল + অন্ত = ফলন্ত
২২. তা-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে ধাতুর উত্তর ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত ঞয়। যেমন:
√পড় + তা = পড়তা √চল্ + তা = চলতা √জান্ + তা = জান্তা
√ফির + তা = ফিরতা
২৩. অনা- প্রত্যয় : বিশেষ্য পদ গঠনে সাধারণত ধাতুর উত্তর ‘অনা’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√বাজ + অনা = বাজনা √মাগ্ + অনা = মাগনা √ঝর + অনা = ঝরনা
√খেল্ + অনা = খেলনা √বঞ্চ + অনা = বঞ্চনা √দুল্ + অনা = দোলনা
২৪. অত-প্রত্যয় : বিশেষণ পদ গঠনে ধাতুর উত্তর ‘অত’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√বস্ + অত = বসত √ফির + অত = ফেরত √মান + অত = মানত
বিদেশী কৃৎ-প্রত্যয় :
ক. সই-প্রত্যয় যোগে; যেমন: মাপ + সই = √মাপসই।
খ. বাজ-প্রত্যয় যোগে; যেমন: চাল + বাজ = √চালবাজ
■ বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়ের কতিপয় উদাহরণ
প্রকৃতি + প্রত্যয় = শব্দ প্রকৃতি + প্রত্যয় = শব্দ প্রকৃতি + প্রত্যয় = শব্দ
কাঁদ্ + অ = কাঁদ গুণ্ + তি = গুণতি ডুব্ + অ = ডুব
নাচ্ + অন = নাচন ঝুল + অ = ঝুল কাঁদ + অন = কাঁদন
নিব্ + অ = নিব খা + অন = খাওন র্ম + অ = মর
ঝাড়্ + অন = ঝড়ান ছুট + অ = ছুট কাঁপ + অন = কাঁপন
খুঁজ + অন = খোঁজন র্ম + অন = মরণচল্ + আ = চলা
ফল্ + অন = ফলন চাহ্ + আ = চাওয়া যোগ্ + অন = যোগান
পা + আ = পাওয়া চড়্ + অক = চড়ক দেখ্ + আ = দেখা
ফাট্ + অক = ফাটক ছাড়্ + আ = ছাড়া মুড়্ + অক = মোড়ক
ফুট্ + আ = ফোটা ঝল্ + অক = ঝলক চুর + ই = চুরি
দে + অনা = দেনা
Raisul Islam Hridoy
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, “ধাতু বা শব্দের উত্তর ভিন্ন ভিন্ন অর্থে যে বর্ণ বা বর্ণসমূহ যুক্ত হইয়া শব্দ প্রস্তুত হয়, তাহাদিগকে প্রত্যয় বলে।”
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপ্যাধায়ের মত, “যাহা ধাতুর উত্তর যুক্ত হইয়া নাম শব্দ (বা নতুন ধাতু) গঠন করে কিংবা নাম শব্দের উত্তর যুক্ত হইয়া নতুন শব্দ গঠন করে তাহাকে প্রত্যয় বলে।”
ড. এনামুল হকের মতে, “নাম প্রকৃতির আগে-পাছে কিছু যোগ না করিলেও এইগুলি শব্দ রূপে গণ্য হয় তথাপি বাক্যে প্রয়োগ করিতে গেলে এই নাম প্রকৃতির সহিত বিভক্তির চিহ্ন যোগ করিতে হয়। ধাতুগুলি প্রত্যয় বা বিভক্তিযুক্ত না হইয়া শব্দ রূপে ব্যবহৃত হয় না। যে-সমস্ত ধাতু শব্দরূপে ব্যবহৃত হইতে দেখা যায়, সেইগুলিতে একটি শূন্য প্রত্যয় আছে বলিয়া ধরিয়া লইতে হয়।”
■ প্রত্যয়ের প্রকারভেদ
প্রত্যয় শব্দ গঠন করে। তাই প্রত্যয় কখনও ধাতুর শেষে আবার কখনও শব্দের শেষে যুক্ত হয়। ‘ধাতু’ হচ্ছে ক্রিয়ার মূল অংশ। প্রত্যয়ের সাথে গঠিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে উৎস হিসেবে মূলে কখনও ধাতু আবার কখনও শব্দ পাওয়া যায়। শব্দের এই মূলের নাম প্রকৃতি। ধাতু বা শব্দ যার সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে যে মূল অংশের নাম প্রকৃতি। যেমনÑ মিঠা + আই = মিঠাই। এখানে ‘মিঠা’ হচ্ছে প্রকৃতি, এর সঙ্গে ‘আই’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘মিঠাই’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। এভাবে শব্দের বিশ্লেষণ করলে প্রকৃতি ও প্রত্যয় পাওয়া যায়। অন্য কথায় প্রকৃতি ও প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, আর সেই শব্দ ভাষায় ব্যবহৃত হয়। প্রত্যয়ের ব্যাপারে ধাতু ও শব্দের পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন থাকা অবশ্যক।
ধাতু ও শব্দের শেষে প্রত্যয় যুক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যয়কে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যেমনÑ ১. কৃৎ-প্রত্যয় ও ২. তদ্ধিত প্রত্যয়।
১. কৃৎ-প্রত্যয়:- যেসব প্রত্যয় ক্রিয়ার মূল বা ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাদেরকে কৃৎ-প্রত্যয় বলে। কৃৎ-প্রত্যয় যোগে যেসব শব্দ গঠিত হয় তাদেরকে কৃদন্ত শব্দ বলে। যেমনÑ বাট + না = বাটনা, রাঁধ + না = রান্না। কৃৎ-প্রত্যয় ক্ষেত্রে বুঝানোর জন্য প্রকৃতির পূর্বে ধাতুর চিহ্ন (√) ব্যবহার করা হয়। যেমনÑ ফুট + অন্ত =ফুটন্ত। এখানে ‘ফুট’ হচ্ছে ধাতু বা প্রকৃতি, এর পূর্বে (√) চিহ্ন দিতে হবে, ‘অন্ত’ হচ্ছে প্রত্যয় এবং নবগঠিত ‘ফুটন্ত’ শব্দটি হচ্ছে কৃদন্ত শব্দ।
২. তদ্ধিত প্রত্যয় ঃ শব্দের উত্তর (পরে) যেসব প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাদেরকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে যেসব শব্দ গঠিত হয় তাদেরকে তদ্ধিতান্ত শব্দ বলে। যেমনÑ বাড়ি + ওয়ালা = বাড়িওয়ালা, ছাপা + খানা = ছাপাখানা, এখানে ‘বাড়ি’ ও ‘ছাপা’ শব্দের সাথে যথাক্রমে ‘ওয়ালা’ ও ‘খানা’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বাড়িওয়ালা ও ছাপাখানা শব্দদ্বয় গঠিত হয়েছে। তাই বাড়িওয়ালা ও ছাপাখানা তদ্ধিতান্ত শব্দ।
বাংলা স্ত্রীবাচক শব্দ বুঝবার জন্য পুংলিঙ্গ শব্দের শেষে এক ধরনের প্রত্যয় যুক্ত হয়ে তার স্ত্রীলিঙ্গ রূপ গঠিত হয়, এগুলোকে স্ত্রী প্রত্যয় বলে। যেমনÑ পিতামহ + ঈ = পিতামহী। এখানে ‘ঈ’ স্ত্রী প্রত্যয়। একে তদ্ধিত প্রত্যয় বলা সমীচীন নয়।
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ সংস্কৃতের নিজস্ব প্রত্যয়যোগে সাধিত হয়, আবার খাঁটি বাংলা শব্দও বাংলার নিজস্ব প্রত্যয় দ্বারা নিষ্পন্ন। বাংলা ভাষায় অসংখ্য তৎসম শব্দের প্রবেশ ঘটেছে। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সাধিত শব্দের প্রকৃতি জানতে হলে এরূপ শব্দের ব্যুপত্তি জানা দরকার। তাই বাংলা ভাষায় ব্যাকরণে নিজস্ব প্রত্যয় ছাড়াও সংস্কৃত প্রত্যয় সম্পর্কে আলোচনা থাকে। এ কারণে বাংলা ভাষার ব্যাকরণে প্রত্যয়কে বাংলা ও সংস্কৃত এ শ্রেণীতে নির্ণয় করা চলে। বাংলা ভাষায়Ñ ১. বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়, ২. সংস্কৃত কৃৎ-প্রত্যয়, ৩. বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় ও ৪. সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়Ñ এ চার শ্রেণীর প্রত্যয় পাওয়া যায়। এছাড়া বাংলা ভাষায় কিছু বিদেশী প্রত্যয়ও ব্যবহৃত হয়।
■ প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্য
প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্যসমূহ নিম্নরূপ :
প্রকৃতি প্রত্যয়
১. প্রত্যয় সাধিত শব্দ থেকে প্রত্যয় বাদ দিলে যে অংশটুকু থাকে, তার নামই প্রকৃতি। যেমনÑ ধন + ঈ = ধনী। এখানে ‘ধন’ হল প্রকৃতি। ১. শব্দ বা ধাতুর শেষে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয় তার নামই প্রত্যয়। যেমনÑ সাপ + উড়ে = সাপুড়ে। এখানে ‘উড়ে’ হচ্ছে প্রত্যয়।
২. প্রকৃতি হল শব্দ মূল বা ধাতু। ২. প্রত্যয় হল নতুন শব্দ গঠন করার একটা সহজ উপাদান। প্রকৃতির সাথে যুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠন করাই প্রত্যয়ের লক্ষ্য।
৩. প্রকৃতির নিজস্ব অর্থ আছে। ৩.প্রত্যয় অর্থহীন বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি মাত্র। এদের নিজস্ব কোন অর্থ নেই।
■ উপসর্গ ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্য :
উপসর্গ ও প্রত্যয়ের মধ্যে পার্থক্যসমূহরূপ :
উপসর্গ প্রত্যয়
১. উপসর্গ শব্দ বা ধাতুর আগে বসে নতুন শব্দ গঠন করে। ১. প্রত্যয় ধাতু বা শব্দের পরে বসে নতুন শব্দ গঠন করে।
২. উপসর্গ অন্য শব্দের পূর্বে বসে তার অর্থেও পরিবর্তন ঘটায়। ২. প্রত্যয় ধাতু বা শব্দের পরে বসে শুধুমাত্র নতুন শব্দ তৈরিতে সাহায্য করে।
৩. যেসব অব্যয়সূচক শব্দ বা শব্দাংশ কৃদন্ত বা নাম শব্দের পূর্বে বসে অর্থেও সম্প্রসারণ, সংকোচন ও পরিবর্তন ঘটায় তাকে উপসর্গ বলে। যেমন: ‘জন্মা’ একটা শব্দ। এর আগে ‘বি’ উপসর্গ যুক্ত হয়ে ‘বিজন্মা’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। ৩. যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে। যেমনÑ ‘কৃ’ ধাতুর সাথে ‘তব্য’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘কর্তব্য’ শব্দটি গঠিত হয়।
৪. উপসর্গ বিভক্তির মত ব্যবহৃত হয় না। ৪. প্রত্যয়-সাধিত শব্দের সাথে কেবলমাত্র বিভক্তি যুক্ত হলেই তা বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
■ প্রত্যয ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্য :
প্রত্যয় ও বিভক্তির মধ্যে পার্থক্যসমূহরূপ :
প্রত্যয় বিভক্তি
১. যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি কোন শব্দ বা ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে প্রত্যয় বলে। যেমন: নাচ্ + অন = নাচন, হাত + আ = হাতা। এখানে ‘নাচ’ ধাতুর সাথে ‘অন’ প্রত্যয় যোগে ‘নাচন’ এবং ‘হাত’ শব্দের সাথে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে ‘হাতা’ শব্দটি গঠিত হয়েছে। কাজেই ‘অন’ ও ‘আ’ এখানে প্রত্যয়। ১. বাক্যের বিভিন্ন শব্দের সঙ্গে অন্বয় সাধনের জন্য নামপদ বা ক্রিয়াপদের সাথে যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি যুক্ত হয় তাকে বিভক্তি বলে। যেমন : কাজলকে বাড়িতে দেখেছি। এখানে কাজলের সাথে ‘কে’ যুক্ত হয়ে ‘কাজলকে’ এবং বাড়ির সাথে ‘তে’ যুক্ত হয়ে ‘বাড়িতে’ হয়েছে। কাজেই ‘কে’ এবং ‘তে’ এখানে বিভক্তি।
২. ধাতু বা শব্দের পরে প্রত্যয় যোগে যে নতুন শব্দ গঠিত হয় তাকে সাধিত শব্দ বলে। ২. সাধিত শব্দের সাথে বিভক্তি যোগ হলে সাধিত শব্দটি পদে পরিণত হয়। অর্থাৎ প্রত্যয়-সাধিত শব্দ কেবলমাত্র বিভক্তি যুক্ত হলেই বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
৩. প্রত্যয়ের নিজস্ব কোন অর্থ নেই। ৩. বিভক্তিরও নিজস্ব কোন অর্থ নেই, শুধু বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি তথা চিহ্ন মাত্র। যেমন: এ, য়, তে, কে, রে, র ইত্যাদি।
■ প্রত্যয়ের সম্বন্ধীয় কয়েকটি প্রয়োজনীয় নিয়ম
১. ধাতু ও প্রত্যয়কে এক সঙ্গে উচ্চারণ করার সময় ধাতুর অন্ত্যধ্বনি ও প্রত্যয়ের আদি ধ্বনি অনেক সময় পরস্পরের প্রভাবে সমতা প্রাপ্ত হয়। যেমনÑ রাঁধ + না (রান্ + না) = রান্না, কাঁধ + না (কান + না) = কান্না ইত্যাদি।
২. ধাতু ও প্রত্যয় যোগে গঠিত কৃদন্ত শব্দ উচ্চারণ করার কালে এদের উভয়ের বা যে-কোন একটির স্বর বা ব্যঞ্জন ধ্বনি লোপ পায়। যেমনÑ মিঠা + আই = মিঠাই, পড়া + আন = পড়ান ইত্যাদি।
৩. ধাতু বা প্রত্যয়কে এক সঙ্গে উচ্চারণ করার কালে জিহ্বা বিশ্রাম না নিয়ে অনেক সময় ধাতুর অন্ত্যধ্বনি থেকে প্রত্যয়ের আদি ধ্বনিতে প্রবেশ করে, তখন এ দুটি ধ্বনির মধ্যে একটি তৃতীয় ধ্বনির আগমন হয়। যেমনÑ যা + আ (যা + ওয় + আ) =য়াওয়া; পা + আ (পা + ওয় + আ) = পাওয়া ইত্যাদি।
৪. ধাতুর উত্তর (পর) প্রত্যয় যুক্ত হলে অনেক সময় ধাতুর মূল বর্ণস্থিত স্বরের গুণ বা বৃদ্ধি পায়। যেমনÑ (ক) ই, ঈ স্থলে ‘এ’, উ, ঊ স্থলে ‘ও’ এবং ঋ স্থলে ‘অর’ হওয়াকে গুণ বলে। যেমনÑ √লিখ + আ = লেখা, √কৃ + তা = কর্তা, √ফুট + আ = ফোটা ইত্যাদি।
(খ) ‘অ’ স্থানে আ; ই, ঈ, এ স্থানে ঐ; উ, ঊ, ও স্থানে ঔ এবং ‘ঔ’ স্থানে ‘আর’ হওয়াকে বৃদ্ধি বলে। যেমনÑ √পচ + ণক = পাচক, শিশু + ষ্ণ = শৈশব, যুব + অন = যৌবন, √কৃ + ঘ্যণ = কার্য ইত্যাদি।
৫. ধাতুর সাথে প্রত্যয় যোগে অনেক সময় পদমধ্যে অন্তঃসন্ধি হয়। যেমন: চ + ত =ক্ত, মুচ্ + তি =
মুক্তি ইত্যাদি।
৬. সংস্কৃত প্রত্যয়ের বর্ণগুলোর অনেক বর্ণই লোপ পায়; এগুলোকে ‘ইৎ’ বলে। যেমন: গম্ + অনট =
গমন। এখানে ‘অনট’ প্রত্যয়ের ‘অন’ যুক্ত হয় এবং ‘অট’ লোপ পায়। এই ‘অট’-কে ‘ইৎ’ বলে। নিচেন ছকে ‘ইৎ’ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখানো হল :
মূল প্রত্যয় শব্দে ব্যবহৃত অংশ ডবলুপ্ত বা ‘ইৎ’ অংশ
অনট অন ট
ক্তি তি ক
অল অ ল
ঘাণ য (্য) ঘ, ণ
ণক অক ণ
শানচ্ আন শ, চ
ণিন ইন (ঈ) ণ
ক্ত ত ক
ন্যৎ ঐ ন, ৎ
ঘঞ অ ঘ, ঞ
তৃচ্ ত (ণ) চ
সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয়ের ক্ষেত্রে
মূল প্রত্যয় শব্দে ব্যবহৃত অংশ বিলুপ্ত বা ‘ইৎ’ অংশ
ষ্ণ অ স, ঞ
ষ্ণিক ইক ষ্ণ
ইমন ইম ই
ঈন ঈ ই
নীয় ঈয় ন
বতুপ বৎ উ, প
ষ্ণেয় এয় ষ্ণ
ষ্ণি ই ষ্ণ
ষ্ণ্য য (্য) ষ্ণ
মতুপ মৎ উ, প
ণীণ ঈন ন
■ প্রত্যয় নির্ণয়
প্রকৃতি ও প্রত্যয় নির্ণয় করতে হলে নি¤œলিখিত দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা প্ররেয়াজন। যেমন:
ক. গাইয়ে = √গাই + ইয়া = (কর্তৃবাচ্য) গাহইয়া˃গাঅইয়া˃গাইয়ে (অভিশ্রুতিতি); অর্থ ‘যে গান করে’। কৃৎ-প্রত্যয়।
খ. পান্তা = পানি + তা = পানিতা˃ই লোপ হয়ে পান্তা; অর্থ ‘পানিতে ভিজা’। তদ্ধিত প্রত্যয়।
গ. অভিনীত = অভি + √নী (নিয়ে যাওয়া) + ক্ত (কর্মবাচ্য) = অভিনয়; অর্থ ‘অপরের কাজ অনুকরণ করে নিয়ে আসা হয়েছে এমন’। কৃৎ-প্রত্যয়
ঘ. বৈচিত্র্য = বিচিত্র (অর্থ রঙীন) + ষ্ণ্য = বৈচিত্র্য (ভাবার্থে); তদ্ধিত প্রত্যয়।
সংক্ষেপে প্রকৃত ও প্রত্যয় নির্ণয় পদ্ধতি নি¤œরূপ : কোন শব্দের প্রকৃতি ও প্রত্যয় নির্ধারিত করতে হলে কোনটি প্রকৃতি ও কোনটি প্রত্যয় তা পৃথকভাবে দেখাতে হবে। কৃৎ-প্রত্যয় হলে ধাতুর চিহ্ন (√) প্রকৃতির পূর্বে ব্যবহার করতে হবে এবং এ সঙ্গে যোগ চিহ্ন দিয়ে প্রত্যয় দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে ‘প্রকৃতি + প্রত্যয় = শব্দ’ উপরে লিখে নিয়ে শব্দের বিশ্লেষণ দেখানোই শ্রেয়। যেমন:
প্রকৃতি + প্রত্যয় = শব্দ প্রত্যয়ের নাম
√লড় + আই = লড়াই কৃৎপ্রত্যয়
√খা + ইয়ে = খাইয়ে কৃৎ-প্রত্যয়
√জমি + দার = জমিদারতদ্ধিত প্রত্যয়
√মিঠা + আই = মিঠাই তদ্ধিত প্রত্যয়
বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়
১. অ-প্রত্যয় : ‘প্রবণতা, ঈষদ্ভাব প্রায় কিন্তু পূর্ণ নয়’ এমন ভাব প্রকাশ করতে ধাতুর উত্তর (পরে) অ (উ, ও) প্রত্যয় যুক্ত হয় এবং দ্বিত্ব প্রয়োগ হয়। যেমন:
√কাঁদ + অ : কাঁদ + অ = কাঁদ কাঁদ √ডুব + অ : ডুব + অ = ডুব ডুব (ডুবু ডুবু)
√পড় + অ : পড় + অ = পড় পড় (পড়ো পড়ো) √মার + অ : মার + অ = মার মার
২. আ-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য, করণবাচ্য ও ভাববাচ্যের ধাতুর পরে আ-প্রত্যয় হয়। যেমন:
√ঝর + আ = ঝরা √হাস + আ = হাসা √খা + আ = খাওয়া
√শোন + আ = শোনা √ভর + আ = ভরা √কাঁচ + আ = কাঁচা
√কাট + আ = কাটা √র্ম + আ = মরা √ছাড় + আ = ছাড়া
√জান + আ = জানা
৩. অন-প্রত্যয় : অন-প্রত্যয়ান্ত শব্দগুলো সাধারণ ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
√বাঁধ + অন = বাঁধন √সাজ্ + অন = সাজন √হাঁট + অন = হাঁটন
√র্ম + অন = মরণ √নাচ + অন = নাচন √মাজ + অন = মাজন
√গড় + অন = গড়ন √জীব + অন = জীবন √কাঁদ + অন = কাঁদন
৪. অক-প্রত্যয় : অক-প্রতায়ান্ত শব্দ সাধারণত বিশেষ পদরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন:
√ফাট্ + অক =ফাটক √সড় + অক = সড়ক √নাট + অক = নাটক
√ঝল + অক = ঝলক √দুল + অক = দোলক √ঘট্ + অক = ঘটক
√বৈঠ + অক = বৈঠক √চট্ + অক = চটক
৫. আই-প্রত্যয় : করণবাচ্য ও ভাববাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘আই’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√ফাড়্ + আই = ফাড়াই √ছাঁট্ + আই = ছাঁটাই √যাচ্ + আই = যাচাই
√খোদ + আই = খোদাই √ঢাল্ + আই = ঢালাই √মাড়্ + আই = মাড়াই
√সিল্ + আই = সেলাই √লড়্ + আই = লড়াই
৬. উয়া-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্য ধাতুর উত্তর ‘উয়া’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। উয়া-প্রত্যয় বিকল্পে ও-প্রত্যয় হয়। যেমন:
√পড়্ + উয়া = পড়–য়া √চল + উয়া = চলুয়া √হাল্ + উয়া = হালুয়া
√সাজ + উয়া = সাজুয়া √খা + উয়া = খাওয়া √ঝড় + উয়া = ঝড়োয়া˃ঝড়ো
৭. উ-প্রত্যয় : ‘উ’ প্রত্যয়ান্ত সাধিত শব্দ বিশেষ্য বা বিশেষণ হয়। যেমন:
√ঢাল্ + উ = ঢালু √ডাক + উ = ডাকু √ঝাড় + উ = ঝাড়–
√চাল্ + উ = চালু √উড় + উ = উড়– √ডুব + উ = ডুবু
৮. উক-প্রত্যয় ঃ স্বভাব বুঝাতে বিশ্লেষণ পদ গঠনে ‘উক’ প্রত্যয় হয়। যেমনÑ
√পিট + উক = পেটুক √মিশ + উক = মিশুক √খা + উক = খাউক
√হিনস + উক = হিংসুক √নিন্দা + উক = নিন্দুক √ভা + উক = ভাবুক
৯. ই-প্রত্যয় : কর্মবাচ্য, করণবাচ্য, অপাদানবাচ্য, অধিকরণবাচ্য ও ভাববাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘ই’ প্রত্যয় হয়। যেমন:
√ঝর + ই = ঝরি √হাস + ই = হাসি √কর + ই = করি
√বুল + ই = বুলি √বেড় + ই = বেড়ি √হাঁচ + ই = হাঁচি
√খা + ই = খাই √ভাজ + ই = ভাজি
১০. ইয়া ইয়ে-প্রত্যয় : ‘প্রবীণ বা নিপুণ অর্থে’ কর্তৃবাচ্যের ধাতুর উত্তর ইয়া ইয়ে প্রত্যয় হয়। যেমন:
√কাঁদন + ইয়া = কাঁদনিয়া˃কাঁদুনে√বাজ্ + ইয়ে = বাজিয়ে কহ্ + ইয়া = কহহিয়া˃কইয়ে
√খেল + ইয়ে = খেলিয়ে √গাহ্্্ + ইয়া = গাহহিয়া˃গাইয়ে √নাচ + ইয়ে = নাচিয়ে
আবার অসমাপিকা ক্রিয়া বুঝাতেও ‘ইয়া’ প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন:
√পড়্ + ইয়া = পড়িয়া √বহ্ + ইয়া = বহিয়া √চল + ইয়া = চলিয়া
√কাঁদ্ + ইয়া = কাঁদিয়া √হাস + ইয়া = হাসিয়া √শুন + ইয়া = শুনিয়া
১১. আল-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য ও করণবাচ্যের ধাতুর উত্তর আল-প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√রাখ্ + আল = রাখাল √মাত্ + আল = মাতাল √বাচ্ + আল = বাচাল
√ধার + আল = ধারাল √নাগ্ + আল = নাগাল √মিশ্ + আল = মিশাল
১২. তি-প্রত্যয় ঃ কর্তৃবাচ্য ও ভাববাছ্যের উত্তর ‘তি’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমনÑ
√কম্ + তি = কমতি √চল্ + তি = চলতি √র্ফি + তি = ফিরতি
√উঠ্ + তি = উঠতি √ঘাট্ + তি = ঘাটতি √বস্ + তি = বসতি
১৩. না-প্রত্যয় : কর্মবাচ্য, করণবাচ্য ও ভাববাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘না’ প্রত্যয় যুক্ত হয়্। যেমন:
√শুক + না = শুকনা √বাট + না = বাটনা √দুল + না = দোলনা
√ঝর + না = ঝরনা √রাঁধ + না = রাঁধনা˃রান্না √ঢাক + না = ঢাকনা
√খেল + না = খেলনা √মাগ + না = মাগনা
১৪. আনি-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্য, করণবাচ্য ও ভাববাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘আনি’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√রাঙ + আনি = রাঙানি √খাট + আনি = খাটানি˃খাটুনি √শাস + আনি = শাসানি
√চির + আনি = চিরণী˃চিরুণী √শুন + আনি = শুনানি √জ্বাল + আনি = জ্বালানি
√উড় + আনি = উড়ানি √হাঁপ + আনি = হাঁপানি
১৫. আরু-প্রত্যয় : কর্তায় দক্ষতা ও পেশা বুঝাতে কর্তৃবাচ্যের ধাতু উত্তর ‘আরু’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√ডুব + আরু = ডুবারু √সাঁত + আরু = সাঁতারু √খোঁজ + আরু = খোঁজারু
১৬. আও-প্রত্যয় : ভাববাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘আও’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√বাঁচ্ + আও = বাঁচাও √দুল্ + আও = দোলাও˃দুলাও √চড়্ + আও = চড়াও
√র্ঘি + আও = ঘিরাও √র্স + আও = সরাও √পাকড়্ + আও = পাকড়াও
১৭. আনো-প্রত্যয় : ধাতুর উত্তর ‘আনো’ প্রত্যয় যোগে ক্রিয়াবাচক বা বিশ্লেষন পদ গঠিত হয়। যেমন:
√কামড় + আনো = কামড়ানো √নাচ + আনো = নাচানো √বাঁধ + আনো = বাঁধানো
√পাল + আনো = পালানো √কাঁদ + আনো = কাঁদানো √দৌড় + আনো = দৌড়ানো
১৮. অল-প্রত্যয় : ভাববাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘অল’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√পিছ্ + অল = পিছল √ফাট + অল = ফাটল √জী + অল = জীয়ল˃জীওল
১৯. আইত-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘আইত’ (আত) প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√ডাক + আইত = ডাকাইত˃ডাকাত √সঙ্গ + আইত = সাঙ্গাইত˃সাঙ্গাত √সেব + আইত = সেবাইত
২০. আন-প্রত্যয় : প্রযোজক ধাতু ও কর্মবাচ্যের ধাতুর পরে ‘আন’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√ছোড় + আন = ছোড়ান √দেখ + আন = দেখান √গড় + আন = গড়ান
√খা + আন = খাওয়ান √ঠকা + আন = ঠকান √জান + আন = জানান
২১. অন্ত-প্রত্যয় : কর্তৃবাচ্যের ধাতুর উত্তর ‘অন্ত’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√চল + অন্ত = চলন্ত √ডুব্ + অন্ত = ডুবন্ত √ঝুল + অন্ত = ঝুলন্ত
√ঘুম + অন্ত = ঘুমন্ত √ফুট্ + অন্ত = ফুটন্ত √ফল + অন্ত = ফলন্ত
২২. তা-প্রত্যয় : বিশেষণ গঠনে ধাতুর উত্তর ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত ঞয়। যেমন:
√পড় + তা = পড়তা √চল্ + তা = চলতা √জান্ + তা = জান্তা
√ফির + তা = ফিরতা
২৩. অনা- প্রত্যয় : বিশেষ্য পদ গঠনে সাধারণত ধাতুর উত্তর ‘অনা’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√বাজ + অনা = বাজনা √মাগ্ + অনা = মাগনা √ঝর + অনা = ঝরনা
√খেল্ + অনা = খেলনা √বঞ্চ + অনা = বঞ্চনা √দুল্ + অনা = দোলনা
২৪. অত-প্রত্যয় : বিশেষণ পদ গঠনে ধাতুর উত্তর ‘অত’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:
√বস্ + অত = বসত √ফির + অত = ফেরত √মান + অত = মানত
বিদেশী কৃৎ-প্রত্যয় :
ক. সই-প্রত্যয় যোগে; যেমন: মাপ + সই = √মাপসই।
খ. বাজ-প্রত্যয় যোগে; যেমন: চাল + বাজ = √চালবাজ
■ বাংলা কৃৎ-প্রত্যয়ের কতিপয় উদাহরণ
প্রকৃতি + প্রত্যয় = শব্দ প্রকৃতি + প্রত্যয় = শব্দ প্রকৃতি + প্রত্যয় = শব্দ
কাঁদ্ + অ = কাঁদ গুণ্ + তি = গুণতি ডুব্ + অ = ডুব
নাচ্ + অন = নাচন ঝুল + অ = ঝুল কাঁদ + অন = কাঁদন
নিব্ + অ = নিব খা + অন = খাওন র্ম + অ = মর
ঝাড়্ + অন = ঝড়ান ছুট + অ = ছুট কাঁপ + অন = কাঁপন
খুঁজ + অন = খোঁজন র্ম + অন = মরণচল্ + আ = চলা
ফল্ + অন = ফলন চাহ্ + আ = চাওয়া যোগ্ + অন = যোগান
পা + আ = পাওয়া চড়্ + অক = চড়ক দেখ্ + আ = দেখা
ফাট্ + অক = ফাটক ছাড়্ + আ = ছাড়া মুড়্ + অক = মোড়ক
ফুট্ + আ = ফোটা ঝল্ + অক = ঝলক চুর + ই = চুরি
দে + অনা = দেনা
Raisul Islam Hridoy