Get on Google Play

দৈনন্দিন বিজ্ঞান বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান
#3682
পৃথিবীর নিজেরই বিস্ময় ও মায়াজালের শেষ নেই, তার ওপর মহাবিশ্বকে নিয়ে ভাবনা! কিন্তু মানুষমাত্রই জ্ঞানপিপাসু। কোনো গোলকধাঁধা মাথায় একবার গেঁথে গেলে মানুষ তার রহস্য উম্মোচন করে তবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। পদার্থবিদদের কাছে এই মহাবিশ্বের সব থেকে বড় একটি গোলকধাঁধার নাম হলো ব্ল্যাকহোল, বাংলায় আমরা যাকে কৃষ্ণগহ্বর বা কৃষ্ণবিবর বলে থাকি।
ব্ল্যাকহোল-সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ২০২০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক রজার পেনরোজ, জার্মানির রেইনহার্ড গেঞ্জেল ও আমেরিকার আন্দ্রেয়া ঘেজ। ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে মানুষ জেনেছে অনেক আগেই। কিন্তু এখন কেন কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল নিয়ে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলো, সেই কৌতূহল অনেকের। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের সাধারণ তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে অঙ্কের মাধ্যমে পেনরোজ প্রমাণ করেছেন যে ব্ল্যাকহোল, হ্যাঁ ব্ল্যাকহোল কোনো কল্পনা নয় অথাবা দূর থেকে দেখার ওপর ভিত্তি করে কনো অনুমান নয়। ব্ল্যাকহোল মহাকাশে একটি বাস্তবতা। ১৯৬৫ সালেই গবেষণায় ব্যাখ্যা করেছিলেন পেনরোজ। এত দিনে সেই গবেষণার স্বীকৃতি পেলেন তিনি। অন্যদিকে জার্মানির রেইনহার্ড গেঞ্জেল এবং আমেরিকার আন্দ্রেয়া ঘেজ যৌথভাবে আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অদৃশ্য ও ভারী একধরনের বস্তু (সুপারম্যাসিভ কমপ্যাক্ট অবজেক্ট) আবিষ্কার করেছেন?
ব্ল্যাকহোল শব্দটি দ্বারা কিন্তু কোনো গর্ত বোঝায় না। সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারে ব্ল্যাহোল বা কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের এমন একটি বিশেষ স্থান,যার মহাকর্ষীয় শক্তি এতই শক্তিশালী যে সেখান থেকে সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন এন্টিটি ‘আলো’ পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না। এক কথায় সর্বগ্রাসী। মহাকাশীয় এই দানবের কাছে পথ হারায় আলোকতরঙ্গ। এটি অনেকটা ভ্যাকুয়াম ক্নিনারের মতো, যার কাছাকাছি থাকলে এই গহ্বর সেটি শুষে নেয়। হতে পারে সেটি কোনো গ্রহ, উপগ্রহ, ধূমকেতু অথবা স্পেসক্রাফট্ পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার এর নামকরণ করেন ব্ল্যাকিহোল। বিজ্ঞানীদের ধারণামতে, এই ব্ল্যাকহোল গ্রাস করে নিয়েছে অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন আসতে পারে, মহাকর্ষীয় শক্তি কী? এই মাহবিশ্বের যে কোনো দুটি বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ, তা-ই হচ্ছে মাহকর্ষীয় শক্তি। ব্ল্যাকহোল একধরনের নক্ষত্র বা তারকা। এদের অস্বাভাবিক আকার, ভর, ও ঘনত্ব থাকে। যখন একটি তারকার জীবনকাল শেষ হয়ে যায়, তখন তার মহাকর্ষশক্তি এতটাই প্রবল হয় যে সেখান থেকে আলো বের হতে পারে না। জীবনকাল শেষ হয়ে যাওয়া মানে তারকাটির নির্দিষ্ট জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়া। যতক্ষণ পর্যন্ত তারকাটির অভ্যন্তরীণ হাইড্রোজেন গ্যাস অবশিষ্ট থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত এর ভেতরে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া চলতে থাকে। হাইড্রোজেন শেষ হয়ে গেলে এর কেন্দ্রীয় মূল বস্তু সংকুচিত হতে থাকে। এভাবে একটি তারকার মৃত্যুই জন্ম দেয় ব্ল্যাকহোলের।
বিজ্ঞানীদের মতে, সবচেয়ে ছোট ব্ল্যাকহোলটির জন্ম ঠিক এই মহাবিশ্বের জন্মের সময়। ব্ল্যাকহোল যে বিপুল পরিমাণ ভরবিশিষ্ট কোনো বস্তু, যার মাহকর্ষীয় প্রভাবে আলোকতরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না, এ ধারণা সর্বপ্রথম প্রদান করেন ভূতত্ত্ববিদ জন মিশেল। ১৭৯৬ সালে একই মতবাদ প্রদান করেণ গণিতবিদ পিয়েরে সিমন ল্যাপলেস। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ১৯১৬ সালে তার ‘জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত্ব’ দিয়ে ধারণা দেন যে ব্ল্যাকহোল থাকা সম্ভব। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান গেবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল সায়েন্সে ফাউন্ডেশন ব্ল্যাকহোলের একটি ছবি প্রকাশ করে। মহাকাশবিজ্ঞানীরা এই প্রথমবারের মতো একটি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোলেন ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন। পৃথিবী থেকে এই ব্ল্যাকহোল ৫০ কোটি ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরে এবং এটার ভর ( এর মধ্যকার পদার্থের পরিমাণ) সূর্যের চাইতে ৬৫০ কোটি গুণ বেশি। ছবি তোলার কাজটি করেছে ইভেন্ট হরাইজন নামে এক প্রকল্পের টেলিস্কোপ (ইএইচটি), যা বানানো হয়েছে পৃথিবীর আটটি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী আটটি রেডিও টেলিস্কোপের নেটওয়ার্ক দিয়ে। সেই রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে ব্ল্যাকহোলের ছবি তোলা।
ব্ল্যাকহোল ছোটও হতে পারে আবার বড়ও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে ছোট ব্ল্যাকহোল একটি পরমাণু আকারের হতে পারে। সবচেয়ে বড় ব্ল্যাকহোলটিকে বলা হয় সুপারমেসিভ। ব্ল্যাকহোলকে ভাগ করা হয় তার মাঝে থাকা ভর, আধান ও কৌণিক ভরবেগের ওপর ভিত্তি করে।
স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ব্ল্যাকহোল কি কখনো পৃথিবীকে গিলে ফেলতে পারে? এর উত্তর হচ্ছে, না। ব্ল্যাকহোল এতটাই দূরে অবস্থিত যে সৌরজগতের কাছাকাছি আসার আপাতত কোনো সম্ভাবনাই নেই। বিজ্ঞানের মতে, পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে যে ছোট্ট কৃষ্ণগহ্বরটি রয়েছে, তার দূরত্ব সাড়ে ৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। আর যে বড় ব্ল্যাকহোল পৃথিবী বা সৌরমণ্ডল গিলে ফেলতে পারে, তার দূরত্ব এই সৌরজগৎ থেকে ২৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে।

সংগৃহীত:-

    ১.দানশীলতা আনুষ্ঠানিক সমাজকর্মের –ভিত্তি ২. […]

    ১৬.বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানটি মাইক্রোক্রেডিট সম্ম[…]

    বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন প্রশাসন ব[…]

    প্রকৃত নামঃ গন্ধর্ব নারায়ন মিত্র জন্মঃ ১০ এপ্রিল[…]