- Thu Dec 13, 2018 12:38 pm#1240
বর্তমানের সবচেয়ে আলোচিত শব্দ ব্রেক্সিট। শব্দটির প্রথম উদয় হয় ২০১২ সালে। মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়াকে ব্রেক্সিট বলে।অথবা ব্রিটিশ এক্সিটের সংক্ষেপিত রূপই হলো ব্রেক্সিট ।
১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ড হিথের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ইউরোপিয়ান কমিউনিটির সঙ্গে ব্রিটেন সংযুক্ত হয়। বর্তমানে দেশটি ইইউ'র সঙ্গে থাকতে রাজি নয়,থাকতে না চাওয়ার কারণ কয়েকটি রয়েছে।প্রথমত অভিবাসীদের চাপ অর্থাৎ ইইউ'র নিয়ম অনুযায়ী ইইউয়ের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মানুষ ভিসা ছাড়াই এক দেশ অবাধে অন্য দেশে যেতে পারবে৷ এটা যুক্তরাজ্যের পছন্দ নয় কারণ অভিবাসীদের আধিক্য দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে,যা নিয়ে ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি বাড়ছে। এজন্য ডেভিড ক্যামেরন দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে চার বছরের জন্য অভিবাসীদের সুবিধা ভাতা বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন। এতে খুশি হতে পারেননি ইইউভুক্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। কারণ সদস্য দেশের নাগরিকদের সুবিধা ভাতা প্রদানে বৈষম্য করা হলে ইইউ'র প্রতিষ্ঠার আসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়।একারণেই যুক্তরাজ্যকে ইইউতে রাখা না রাখার ব্যাপারের প্রশ্ন তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, ইইউয়ের প্রচলন করা একক মুদ্রাব্যবস্থা 'ইউরো' ব্রিটিশদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।তৃতীয়ত,ব্রিটেনের অধিকাংশ মানুষ নিজেদের জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক যেমন মুদ্রা পাউন্ড-স্টার্লিং,জাতীয় পতাকা ইত্যাদির উপর অন্যের হস্তক্ষেপ চান নাহ। চতুর্থত,ইইউয়ের আইনকানুন সব ক্ষেত্রে ব্রিটেনের সঙ্গে সমগামী নয়। তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে অতিমাত্রায় সম্পৃক্ততার কারণে ব্রিটেন তার জাতীয় ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য হারাতে চায় না। ব্রিটিশরা ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে শুধুমাত্র উন্মুক্ত ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চেয়েছিল,অতি সম্পৃক্ত থেকে নিজেদের ঐতিহ্য হারাতে চায় নি।ইত্যাদি কারণে ব্রিটেন ইইউ'র থেকে বেরিয়ে আসতে চায় এবং সেজন্য ডেভিড ক্যামেরণ ইইউ’র সঙ্গে সমঝোতার পর দেশে ফিরে ব্রেক্সিটের জন্য গণভোটের তারিখ ঘোষণা করেন। ২০১৬ সালের ২৩ জুন গণভোটে অণুষ্ঠিত হয়। জনগণই ঐ গণভোটে চূড়ান্ত রায় দেন।ইইউতে থাকার বিপক্ষে ৫২ শতাংশ ও পক্ষে ৪৮ শতাংশ ভোট পড়ে। শুধুমাত্র পক্ষে লন্ডন ও স্কটল্যান্ড শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছিল।যাকগে,গণভোটে ইইউ'র সাথে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের রায়ের পর একই বছরের ২৪ জুন ডেভিড ক্যামেরণ প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন, ক্যামেরুনের পদত্যাগের পর যুক্তরাজ্যের ৭৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন টেরেসা মে। অতঃপর দফায় দফায় বৈঠক, বিবৃতি করে ২০১৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার তথা ব্রেক্সিট বিল পাস করতে সম্মত হয় যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট এবং ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর ইইউ ও যুক্তরাজ্য একটা খসড়া চুক্তিতে সম্মত হয়,যা ২৫ নভেম্বর অনুমোদন দেয় ইইউ। তবে অনেকে মনে করেন,এটার পুর্নাঙ্গ সমাধান এখনো হয় নি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী?
ইউরোপীয় দেশগুলো নিয়ে গঠিত হওয়া আন্তর্জাতিক জোট সংস্থা, যা ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপীয় কমিউনিটির ভিত্তিতে বিকশিত হয়।অর্থাৎ বিস্তারিত বললে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বের বাণিজ্য অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছিল। যুদ্ধের পর ১৯৫১ সালে ইউরোপের কয়লা ও ইস্পাতের সাধারণ বাজারজাত প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ফ্রান্স,জার্মানি,ইতালি,বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও লোকসেম্মবার্গ ছয়টি দেশ প্যারিসে ইসিএসসি (ইউরোপিয়ান কোল অ্যান্ড স্টিল কমিউনিটি) সৃষ্টির চুক্তিতে স্বাক্ষর করে,যা প্যারিস চুক্তি নামে খ্যাত ।
এরপর ১৯৫৭ সালের ২৫ শে মার্চ উপরোক্ত ছটি দেশ ইউরোপীয় সাধারণ অর্থনৈতিক বাজার ও ইউরোপীয় আণবিক শক্তি সাধারণ সংস্থার প্রতিষ্ঠার জন্য ইইসি ও ইউরেটম চুক্তি স্বাক্ষর করে,যা রোম চুক্তি নামে পরিচিত। ১৯৬৫ সালের ৮ এপ্রিল তিনটি ইউরোপীয় জোট অর্থাৎ ইসিএসসি, ইইসি ও ইউরেটম একীভূত হয়ে প্রতিষ্ঠা করে ইইউরোপীয় কমিউনিটি ,যা ১৯৬৭ সালে জুলাই মাসে ব্রাসেলসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯৯১ সালে ১১ই ডিসেম্বর ইউরোপীয় কমিউনিটি অর্থনৈতিক মুদ্রা ইউনিয়ন ও ইউরোপীয় রাজনৈতিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তি স্বাক্ষর করে,এই চুক্তিটি ম্যাসট্রিচট চুক্তি নামে পরিচিত।এই চুক্তির মাধ্যমে ইইউ অভিন্ন মুদ্রাব্যবস্থা ইউরো চালু করে। সে যাকগে!১৯৯৩ সালের নভেম্বর থেকে চুক্তিটি কার্যকর হলে ইউরোপীয় কমিউনিটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাম ধারণ করে এবং বর্তমানের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্র হলো ২৮টি, ব্রিটেনবাদ পড়লে হবে ২৭টি। সর্বশেষ রাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলস। সরকারি ভাষা ২৪ টি৷ইউরোপে শান্তি ও স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১২ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে।
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
সুস্থ থাকুন,নিরাপদে থাকুন।
মোঃ মমিনুল ইসলাম
১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ড হিথের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ইউরোপিয়ান কমিউনিটির সঙ্গে ব্রিটেন সংযুক্ত হয়। বর্তমানে দেশটি ইইউ'র সঙ্গে থাকতে রাজি নয়,থাকতে না চাওয়ার কারণ কয়েকটি রয়েছে।প্রথমত অভিবাসীদের চাপ অর্থাৎ ইইউ'র নিয়ম অনুযায়ী ইইউয়ের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মানুষ ভিসা ছাড়াই এক দেশ অবাধে অন্য দেশে যেতে পারবে৷ এটা যুক্তরাজ্যের পছন্দ নয় কারণ অভিবাসীদের আধিক্য দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে,যা নিয়ে ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি বাড়ছে। এজন্য ডেভিড ক্যামেরন দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিরুৎসাহিত করতে চার বছরের জন্য অভিবাসীদের সুবিধা ভাতা বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেন। এতে খুশি হতে পারেননি ইইউভুক্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। কারণ সদস্য দেশের নাগরিকদের সুবিধা ভাতা প্রদানে বৈষম্য করা হলে ইইউ'র প্রতিষ্ঠার আসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়।একারণেই যুক্তরাজ্যকে ইইউতে রাখা না রাখার ব্যাপারের প্রশ্ন তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, ইইউয়ের প্রচলন করা একক মুদ্রাব্যবস্থা 'ইউরো' ব্রিটিশদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।তৃতীয়ত,ব্রিটেনের অধিকাংশ মানুষ নিজেদের জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক যেমন মুদ্রা পাউন্ড-স্টার্লিং,জাতীয় পতাকা ইত্যাদির উপর অন্যের হস্তক্ষেপ চান নাহ। চতুর্থত,ইইউয়ের আইনকানুন সব ক্ষেত্রে ব্রিটেনের সঙ্গে সমগামী নয়। তাছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে অতিমাত্রায় সম্পৃক্ততার কারণে ব্রিটেন তার জাতীয় ঐতিহ্য ও বৈশিষ্ট্য হারাতে চায় না। ব্রিটিশরা ইউরোপীয় সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে শুধুমাত্র উন্মুক্ত ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চেয়েছিল,অতি সম্পৃক্ত থেকে নিজেদের ঐতিহ্য হারাতে চায় নি।ইত্যাদি কারণে ব্রিটেন ইইউ'র থেকে বেরিয়ে আসতে চায় এবং সেজন্য ডেভিড ক্যামেরণ ইইউ’র সঙ্গে সমঝোতার পর দেশে ফিরে ব্রেক্সিটের জন্য গণভোটের তারিখ ঘোষণা করেন। ২০১৬ সালের ২৩ জুন গণভোটে অণুষ্ঠিত হয়। জনগণই ঐ গণভোটে চূড়ান্ত রায় দেন।ইইউতে থাকার বিপক্ষে ৫২ শতাংশ ও পক্ষে ৪৮ শতাংশ ভোট পড়ে। শুধুমাত্র পক্ষে লন্ডন ও স্কটল্যান্ড শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছিল।যাকগে,গণভোটে ইইউ'র সাথে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের রায়ের পর একই বছরের ২৪ জুন ডেভিড ক্যামেরণ প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন, ক্যামেরুনের পদত্যাগের পর যুক্তরাজ্যের ৭৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন টেরেসা মে। অতঃপর দফায় দফায় বৈঠক, বিবৃতি করে ২০১৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার তথা ব্রেক্সিট বিল পাস করতে সম্মত হয় যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট এবং ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর ইইউ ও যুক্তরাজ্য একটা খসড়া চুক্তিতে সম্মত হয়,যা ২৫ নভেম্বর অনুমোদন দেয় ইইউ। তবে অনেকে মনে করেন,এটার পুর্নাঙ্গ সমাধান এখনো হয় নি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী?
ইউরোপীয় দেশগুলো নিয়ে গঠিত হওয়া আন্তর্জাতিক জোট সংস্থা, যা ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপীয় কমিউনিটির ভিত্তিতে বিকশিত হয়।অর্থাৎ বিস্তারিত বললে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশ্বের বাণিজ্য অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছিল। যুদ্ধের পর ১৯৫১ সালে ইউরোপের কয়লা ও ইস্পাতের সাধারণ বাজারজাত প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ফ্রান্স,জার্মানি,ইতালি,বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও লোকসেম্মবার্গ ছয়টি দেশ প্যারিসে ইসিএসসি (ইউরোপিয়ান কোল অ্যান্ড স্টিল কমিউনিটি) সৃষ্টির চুক্তিতে স্বাক্ষর করে,যা প্যারিস চুক্তি নামে খ্যাত ।
এরপর ১৯৫৭ সালের ২৫ শে মার্চ উপরোক্ত ছটি দেশ ইউরোপীয় সাধারণ অর্থনৈতিক বাজার ও ইউরোপীয় আণবিক শক্তি সাধারণ সংস্থার প্রতিষ্ঠার জন্য ইইসি ও ইউরেটম চুক্তি স্বাক্ষর করে,যা রোম চুক্তি নামে পরিচিত। ১৯৬৫ সালের ৮ এপ্রিল তিনটি ইউরোপীয় জোট অর্থাৎ ইসিএসসি, ইইসি ও ইউরেটম একীভূত হয়ে প্রতিষ্ঠা করে ইইউরোপীয় কমিউনিটি ,যা ১৯৬৭ সালে জুলাই মাসে ব্রাসেলসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯৯১ সালে ১১ই ডিসেম্বর ইউরোপীয় কমিউনিটি অর্থনৈতিক মুদ্রা ইউনিয়ন ও ইউরোপীয় রাজনৈতিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন চুক্তি স্বাক্ষর করে,এই চুক্তিটি ম্যাসট্রিচট চুক্তি নামে পরিচিত।এই চুক্তির মাধ্যমে ইইউ অভিন্ন মুদ্রাব্যবস্থা ইউরো চালু করে। সে যাকগে!১৯৯৩ সালের নভেম্বর থেকে চুক্তিটি কার্যকর হলে ইউরোপীয় কমিউনিটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাম ধারণ করে এবং বর্তমানের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্র হলো ২৮টি, ব্রিটেনবাদ পড়লে হবে ২৭টি। সর্বশেষ রাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর ব্রাসেলস। সরকারি ভাষা ২৪ টি৷ইউরোপে শান্তি ও স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১২ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করে।
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।
সুস্থ থাকুন,নিরাপদে থাকুন।
মোঃ মমিনুল ইসলাম