Get on Google Play

আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান
#1212
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণ কী?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির চ্যান্সেলর কে ছিলেন?
দ্বিতীয় ভার্সাই চুক্তি কত সালে হয়?
ট্রিটি অব পিস বলা হয় কোন চুক্তিকে?
জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা দেশ কোনটি?
হিটলার কত সালে জার্মানির ক্ষমতায় আরোহণ করেন?
গেস্টাপো কী?
হিটলার কেন ইহুদী বিদ্বেষী হয়ে উঠলেন?
জাপানের পার্ল হারবার আক্রমণ করার কারণ কী?
নূরেমবার্গ ট্রায়াল কী?
জেনেভা কনভেনশন কত সালে হয়?
জেনেভা কনভেনশনের বিষয় বস্তু কী?
আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি কী?
ফ্রান্সের নরমান্ডি শহরে মিত্র বাহিনীর অবতরণকে কী বলে?
মার্শাল প্ল্যান ও মলোটভ প্ল্যান কী?
যুদ্ধু বিদ্ধস্ত পৃথিবীর আর্থ সামাজিক উন্নয়নে মুখোমুখি দুই দেশ ও দুটি আদর্শ কী?
পুজিবাদ এবং সাম্যবাদ ধারণা দুটি দুভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বললেও পৃথিবী ব্যাপী এক ধরণের যুদ্ধ তৈরি করেছিল তার নাম কী?
প্রিলি শুধু প্রিলি নয়,রিটেন ও ভাইভার ভিত্তি।
প্রাসঙ্গিক এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে কয়েকটি বিষয় নিয়ে একটু ভাবলে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ আসলে হয়েছিলো ফুচকার দোকান নিয়ে। 😛 বিশ্বাস হচ্ছে নাতো? আচ্ছা দেখা যাক বিষয়টা।
মনে করা যাক ঢাকা কলেজের কয়েকটা ছেলে মিলে ইডেন কলেজের সামনে একটা ফুচকার দোকান দিল,কেমন চলবে? হুম খুব।
তাহলে খুব বেচাকেনা হচ্ছে কিন্তু। কিছুদিন পর ইডেন কলেজের একটা মেয়ের মাথায় চিন্তা খেলল, ‌‌আমাদের কলেজের সামনে এরা কেন ফুচকা বিক্রি করবে?আমরাও করব। তারাও একটা দোকান দিতে প্রস্তুত হলো।
এদিকে ঢাকা কলেজের ভাইয়েরা তো দোকান দিতেই দেবে না মেয়েদের। শুরু হলো দ্বন্দ্ব। ঢাকা কলেজ কিছু বন্ধু ডেকে নিয়ে আসলো তিতুমীর কলেজ থেকে। ইডেন কিছু বান্ধবী ডেকে নিয়ে আসলো বদরুন্নেসা থেকে। এম মধ্যে হাতাহাতিতে ঢাকা কলেজের এক ছাত্র ফান্ডিল্যান্ড মারা পরে গেলো। শুরু হলো যুদ্ধ। দেখুন,
১৭৬০ সাল থেকে ইউরোপে বিশেষ করে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়। শিল্প বিপ্লব মানে বিভিন্ন উৎপাদনমূখী যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন ও তা দিয়ে প্রচুর পণ্য দ্রব্য উৎপাদন। যেহেতু ইংল্যান্ড বেশ আগে থেকেই ভারত উপমহাদেশ ও এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে অনেক কলোনি প্রতিষ্ঠা করেছিল তাই তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার ছিল অনেক। বেচা বিক্রিতে কোন সমস্যা হতো না। কাঁচা মালও ওইসব জায়গা থেকেই আসতো। ১৮৫০ সালের পর জার্মানিতেও শিল্প বিপ্লবের ছোঁয়া লাগে। তারাও নানা পণ্য উৎপাদন করে এবং বিশ্ব বাজারে বিক্রি করতে চায়।কিন্ত ইংল্যান্ড আর রাশিয়া তাকে সে সুযোগ দিতে চায় না। এদিকে ১৮৭১ সালে খন্ড বিখন্ড জার্মানি একত্রিতহয়ে যায় বিসমার্কের নেতৃত্বে। ক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়া বাজার ধরা যাবে না এটা তারা বুঝে ফেলে। তাই নৌ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে তারা। এদিকে তখন অটোমান সমাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি আর সার্বিয়া-হার্জেগোভিনার মধ্যে কিছু কিছু এলাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। ঠিক এই মুহূর্তে ২৮ জুন ১৯১৪ অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ও তার স্ত্রী সোফিয়া সার্বিয়াত গিয়ে ব্ল্যাক হ্যান্ড নামের গোপন বাহিনীর হাতে খুন হয়। ব্ল্যাক হ্যান্ড ছিল সার্বিয়ার গোপন বাহিনী। ব্যস, যুদ্ধ শুরু।
তাহলে জার্মানি/প্রাশিয়া কোথা থেকে আসলো? অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির সাথে জার্মানির সামরিক চুক্তি ছিল আগে থেকেই। জার্মান চ্যান্সেলর বেথম্যান এই সুযোগে ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডকে এক হাত দেখে নিতে চেয়েছিলেন।
আর রাশিয়া-ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডও সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ। তারা আলাদা হয়ে গেলো মিত্র এবং অক্ষ শক্তিতে। অটোমান সম্রাজ্যের পতনের সময় সবাই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান ও বাজার দখল করতে চেয়েছিল।

যুদ্ধ শেষ হলো,জার্মানি হলো পরাজিত। তাকে আর তার বাহিনীকে ২৮ জুন ১৯১৯ সালে ২য় ভার্সাই চুক্তিতে বেধে ফেলা হলো। এই চুক্তির নাম ‌ট্রিটি অব পিস। শান্তির চুক্তি। পলিটিকাল সায়েন্সে শান্তি বলতে বোঝায়- যুদ্ধের অনুপস্থিতি। চুক্তিতে বলা হলো, জার্মানি তার অস্ত্র বাড়াতে পারবে না। বলা হলো সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো যাবে না। আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বা গ্রেট ওয়ারে মদদ দেয়ার কারণে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমান জরিমানা মিত্র বাহিনীর হাতে তুলে দিতে।

উড্রো উইলসন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এসে বললেন,এভাবে হয় না। যুদ্ধ আর কতো দিন? এই নৈরাজ্য আর কতো দিন? এসো একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরি করি,নিজেদের করি শৃঙ্খলাবদ্ধ। সবাই বলল,বাহ বেশবেশ। তৈরি হলো জাতিপুঞ্জ,লেখা হলো এর নিয়ম কানুন। কেউ এখন থেকে কাউকে এই সংগঠনের অনুমতি ছাড়া আক্রমণ করতে পারবে না। যতো রাগই হোক কাউকে মারবে না। আর, এর সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য থাকবে। এইসব আইন জাতিপুঞ্জের সদস্য দেশেরা মেনে চলবে। এবার উড্রো উইলসন সাহেব বললেন,হাঁ আমেরিকা কিন্তু এর সদস্য নয়। নিয়ম তোমাদের জন্য। আমেরিকা যা খুশি তাই করতে পারবে। আমরাতো আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ করিনি। ভদ্রদের এসব লাগে না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধঃ
১৯৩৩ সালে জার্মানির ক্ষমতায় হিটলার আসলেন। তিনি এসে দেখলেন ভার্সাই চুক্তি আর জাতিপুঞ্জ মিলে জার্মানিকে প্রায় পঙ্গু করে দিয়েছে। আমেরিকার প্রভাবে জার্মানির ক্ষমতায় বেশিরভাগ জায়গায় ইহুদীরা বসে আছে। তিনি ভালোমন্দ না বুঝেই ইহুদীদের সরানো শুরু করলেন। জাতি সংঘ থেকে সদস্য পদ প্রত্যাহার করে নিলেন। ভার্সাই চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করে লক্ষ লক্ষ অস্ত্র,বিমান, ট্যাংক তৈরী শুরু করলেন। একদিন(সেপ্টেম্বর 1939) সব শৃঙ্খল ভেঙ্গে নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য পোল্যান্ডকে দিয়েই পাওয়ার গেম শুরু করলেন। শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। নিজ দেশে সব জায়গায় সেনাবাহিনী বসিয়ে ইহুদীদের খুন করতে শুরু করলেন। গেস্টাপো নামে পুলিম বাহিনী তৈরী করলেন শুধু ইহুদীদের খবর সংগ্রহ করার জন্য। এ সময় এক ১৪ বছরের ইহুদী কিশোরী আনা ফ্রাঙ্ক গেস্টাপো বাহিনীর অত্যাচারের কাহিনী তার ডায়েরিতে লিখতে শুরু করে। কিভাবে লুকিয়ে তারা জীবন যাপন করেছে হিটলারের হাত থেকে বাঁচতে। কিভাবে কেটেছে ইহুদী পরিবারটির জীবন এতো কষ্টের মধ্যে দিয়ে। সেই ডায়রিটি আজ ইতিহাসের উৎস। আর হিটলার বিশাল গ্যাস চেম্বারে আটকে লক্ষাধিক ইহুদী মেরে হলোকাস্ট নামের ঘটনা জন্ম দিলেন। এদিকে আমেরিকা দূরে বসে ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছিল। যুদ্ধ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছিল। জার্মানির বন্ধু জাপানের বহুদিনের ইচ্ছে যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় প্রভাব বিস্তার করবে। কিন্তু আমেরিকার জন্য তা হয়ে ওঠে না। ৭ ডিসেম্বর ১৯৪১ প্রায় ৩০০টি জাপানি বিমান আমেরিকার সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর পার্ল হারবার আক্রমন করে। আমেরিকাও নেমে পরে যুদ্ধে। জার্মানি এই যুদ্ধে ফ্রান্সের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু বৃটিশ আর আমেরিকান সেনারা ফ্রান্সকে বাঁচাতে ফ্রান্সের নরমান্ডি শহরে ৬ জুন লক্ষাধিক সেনা বিমানে করে এবং জাহাজে করে নামিয়ে দেয়। একে বলে ডি ডে বা ডওন ডে। সোভিয়েত ইউনিয়ন(১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত) জার্মানিকে প্রতিরোধ করার সব ব্যবস্থা করে। যুদ্ধের ফাঁকে ফাঁকে বিশ্ব শান্তি নিয়ে যে কেউ ভাবছে না তা কিন্তু নয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট বড় বড় দেশ গুলোর সাথে আলাপ করছেন একটি স্থায়ী ও ক্ষমতাশালী আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরীর জন্য। তিনি ইতিমধ্যে লন্ডর ঘোষনার আয়োজন করেছেন,হয়েছে আটলান্টিক সনদ,মস্কো ঘোষনা,তেহরান কনফারেন্স। জাতিসংঘ তৈরীর কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে। যুদ্ধ যখন প্রায় শেষ তখন আমেরিকা আইনিস্টাইনের ফিশন ও চেইন রিএকশন তত্বের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানী ওপেন হাইমার এর নেতৃত্বে প্রজেক্ট ম্যানহাটনের আওতায় লস এলামস নামের ল্যাবরেটরিতে পারমানবিক বোমা বানিয়ে ফেলেছে। কয়েকটি পরীক্ষা করার পর সফল হয়ে এবার যুদ্ধে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বদল হয়ে গেছে। রুজভের্ট থাকলে হয়তো পারমানবিক বোমা ব্যবহার হতোনা। এবার ক্ষমতায় ট্রুম্যান। তার আদেশে ৬ আগস্ট এবং ৯ আগস্ট ১৯৪৫ জাপানে হিরোসিমা এবং নাগাসাকিতে লিটল বয় এবং ফ্যাট ম্যান নামের পারমানবিক বোমা ফেলা হয়। 14 আগস্ট ১৯৪৫ জাপান আত্ম সমার্পন করে। জার্মানি আরো কিছু দিন যুদ্ধ চালিয়ে গেলেও হিটলার বাহিনী আর যুদ্ধ চালাতে সক্ষম ছিল না। ৩০ এপ্রিল ১৯৪৫ হিটলার আত্মহত্যা করে বলে ধারণা করা হয়। আর অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয় নুরেমবার্গে। কিন্তু যুদ্ধ বন্দিরাওতো মানুষ! নেতাদের আদেশে তারা মানুষ মারে, না মারলে নেতারাই তাদের হত্যা করে। তাই যুদ্ধ বন্দিদের ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। যুদ্ধ বন্দিদের মানবাধিকার নিশ্চিত হয়নি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে। তাই আগামীতে যেন যুদ্ধবন্দিদের মানবাধিকার রক্ষা হয় এ লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালে পৃথিবীর ৫০ টি দেশের প্রতিনিধিরা জেনেভাতে আলোচনায় বসেন । একে বলে জেনেভা কনভেনশন।

যুদ্ধ শেষে বিশ্বের দেশগুলা অর্থনৈতিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তাদের নতুন করে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আমেরিকার নেতৃত্বে গড়ে উঠল বিশ্ব ব্যাংক(IBRD,IDA,MIGA,IFC,ICSID). আমেরিকা পৃথিবী গড়ার এই মহৎ পরিকল্পনা করল,তার নাম মার্শাল প্ল্যান। তাদের অস্ত্র হলো পুজিঁবাদ। সবাইকে বলল, সব উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যক্তি মালিকানায় দিয়ে দাও। মুক্ত বাজার অনুসরণ করো,গণতন্ত্রের পথে চলো। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের এই কথাগুলো পছন্দ হলো না। তারা বলল,শুধু তুমি কেন বিশ্ব অর্থণীতি গড়ে দেবে? আমি বেঁচে আছি এখনো। স্ট্যালিন সাহেব এগিয়ে আসলেন সাম্যবাদের ধারণা নিয়ে। তাদেরও ব্যাংক আছে। তার নাম কমেকন। জার্মানি সহ পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করতে তারা একটা পরিকল্পনা করল তার নাম মলোটভ প্ল্যান। এভাবে বিশ্বে পুজিবাদ আর সাম্যবাদ/সমাজতন্ত্র(কমিউনিজম) পৃথিবীর দেশে দেশে জনপ্রিয় হতে শুরু করল। পৃথিবী হয়ে গেলো দুই মেরুভিত্তিক। তাইতো কোরিয়া যুদ্ধে ১৯৫০ সালে উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, আর দক্ষিন কোরিয়াকে সমর্থনন করে আমেরিকা। ১৯৭১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের পক্ষে আর আমেরিকা পাকিস্থানের পক্ষে। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চলা এই উত্তেজনাকে বলে স্নায়ু যুদ্ধ। এখনো তা থামেনি , চলছে নতুন রূপে।
অনেক বড় পোস্ট। ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
।।
লিখেছেন: সুমন , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

    বিষয় : রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আপন বিভাগের “[…]

    বিষয় : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্[…]

    Amendment of Vacancy announcement for the post of […]