Get on Google Play

বাংলাদেশ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান
#1411
🔖বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল আইন ২০১২ এর আওতায় BARC কে সর্বোচ্চ সংস্থা ও ১২ টি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে BARC এর সাংবিধানিক ইউনিট হিসেবে গণ্য করে জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেম (NARS)

১। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ঢাকা
ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কাউন্সিল একটি গর্ভনিং বডির মাধমে তার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

২। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর
এটি ১৯৭৬ সালে গাজীপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের সর্ববৃহৎ এই কৃষি গবেষনা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ১৬ টি বিভাগ ও ৭ টি গবেষণা কেন্দ্র, ৬ টি আঞ্চলিক কেন্দ্র ও ৩০ টি উপকেন্দ্র। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০০ টির বেশি ফসল নিয়ে কাজ করে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন শস্যের ৪৫১ টি উন্নত জাত এবং ৪৪২ ফসল উৎপাদন প্রযুক্তিসহ মোট ৮৯৩ টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে।

৩। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর

এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ১৮ টি গবেষণা বিভাগসহ ৯ টি আঞ্চলিক কেন্দ্র রয়েছে। বিভিন্ন মৌসুমের উপযোগী ৪ টি হাইব্রীড ধান সহ ৭২ টি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে।

৪। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে পাট ও পাট জাতীয় আঁশ ফসলের একমাত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৬ সালে ইন্ডিয়ান সেন্ট্রাল জুট কমিটির (ICJC) আওতায় ঢাকায় জুট এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ল্যাবরেটরী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশে পাটের গবেষণা শুরু হয়। ১৯৫১ সালে ইন্ডিয়ান সেন্ট্রাল জুট কমিটির (ICJC) স্থলে পাকিস্তান সেন্ট্রাল জুট কমিটি (PCJC) গঠিত হয় যার সদর দপ্তর ছিল ঢাকায়। ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সেন্ট্রাল জুট কমিটি এর অধীনে পাট গবেষণাগার স্থাপিত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে এ্যাক্টের মাধ্যমে (সংশোধিত হয় ১৯৯৬ সালে) প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমান বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট।

পাট বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পর পরই পাটশিল্পের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশ সরকারের ১৯৭৪ সালের পাট আইনের আওতায় সেবছরই বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। নিম্নোক্ত কার্যাদি সম্পাদনের লক্ষ্যে পরবর্তীতে ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে সে আইনের পবিবর্তন করা হয়। ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত ৪০ টি জাতের মধ্যে ১৬ টি জাত মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়।

৫। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ

বাংলাদেশের, পারমাণবিক কৌশল কাজে লাগিয়ে কৃষিখাতে অবদান রাখার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। কৃষিতে পারমাণবিক কৌশলের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন অধিক উৎপাদনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন, ভূমি ও পানির উত্তম ব্যবস্থাপনা, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নতুন কলাকৌশল উদ্ভাবন এবং ফসলের রোগ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণার মূল বিষয়। ১৯৬১ সালে ঢাকার আণবিক শক্তি কমিশনের রেডিও-ট্রেসার গবেষণাগারে এর যাত্রা শুরু হয়। একে কেন্দ্র করে, ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে আণবিক শক্তি কমিশনে "পরমাণু কৃষি ইনস্টিটিউট" গঠন করা হয়। ১৯৭৫ সালে এটিকে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮২ সালে এটি স্বতন্ত্র কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মর্যাদা পায় ও এটিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় নেয়া হয়। ১৯৮৪ সালে অধ্যাদেশ নং-২ জারি করার করে এটিকে জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং সেই সাথে এটিকে "বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট" হিসেবে নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ময়মনসিংহ শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দুরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত। এতে প্রায় ৮০জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দায়িত্বরত আছেন। বাংলাদেশের রংপুর, ঈশ্বরদি, মাগুরা, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালীও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এটির ১৩টি উপকেন্দ্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ১২ টি ফসলের উপর ৮২ টি জাত উদ্ভাবন করেছে।

৬। বাংলাদেশ সুগারক্রপ (ইক্ষু) গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঈশ্বরদী, পাবনা

বাংলাদেশ ঈক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান কার্যালয়টি এ উপজেলার পাবনা-ঈশ্বরদী সহাসড়ক সংলগ্ন অরণকোলা ও বহরপুর মৌজার ২৩৫.০০ একর জমিতে অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও দণি-পশ্চিম অঞ্চলের স্বল্প বৃষ্টিপাত এলাকার একমাত্র নির্ভরযোগ্য অর্থকরী ফসল ঈক্ষু। বিএসআরআই এদেশের একটি অগ্রজ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যেখানে গবেষণা হয় ঈক্ষুর উপর এবং চিনি, গুড় ও চিবিয়ে খাওয়াসহ ঈক্ষুর বহুমুখী ব্যবহারের উপর। ১৯৫১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে মাত্র ১৭জন জনবল নিয়ে "ঈক্ষু গবেষণা কেন্দ্র" স্থাপন করে।
১৯৫১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে মাত্র ১৭জন জনবল নিয়ে "ঈক্ষু গবেষণা কেন্দ্র" স্থাপন করে। তখন কেন্দ্রটির কার্যক্রম শুধু ঈক্ষু প্রজনন এবং জাত বাছাইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ঈক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের অধিকতর উন্নয়নকল্পে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের "খাদ্য ও কৃষি কাউন্সিল" কেন্দ্রটিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত করে। কিন্তু উলে−খযোগ্য কোন উন্নতি ছাড়াই ১৯৬৫ সালে কেন্দ্রটিকে পুনরায় প্রাদেশিক সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ে ফেরৎ দেয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে এ কেন্দ্রটি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে এ কেন্দ্রটিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন তৎকালীন বাংলাদেশ চিনিকল সংস্থার নিকট হস্তান্তর করা হয়। এ সংস্থাটি ১৯৭৪ সালে "ঈক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউট" নামে একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে। দ্বিতীয় পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনাকালে (১৯৮০-৮৫) বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা ঈশ্বরদী ও ঠাকুরগাঁও- এ ‘‘ স্টাফ ট্রেনিং সেন্টার ’’ স্থাপনের ল্েয পরিকল্পনা কমিশনে একটি প্রকল্প পেশ করে। প্রকল্পটি বিবেচনাকালে ‘‘ স্টাফ ট্রেনিং সেন্টার’’ টি ঈক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাথে যুক্ত করে অনুমোদন দেয়া হয় এবং ঈক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউটের নাম পরিবর্তন করে ‘‘ ঈক্ষু গবেষণা ও প্রশিণ ইন্সটিটিউট ’’ করা হয়। সরকার ১৯৮৯ সালে একটি কেবিনেট সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয় প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার ল্েয পুনরায় কৃষি মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে। ১৯৯৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাহী আদেশ বলে ঈক্ষু গবেষণা ও প্রশিণ ইন্সটিটিউট কে বিলুপ্ত করে ‘‘ বাংলাদেশ ঈক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউট’’ স্থাপন করেন। অতঃপর ১৯৯৬ সালের ১৭ আগস্ট জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ ঈক্ষু গবেষণা ইন্সটিটিউট আইন প্রণীত হয়।

বিএসআরআই দেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনে স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জনের ল্েয কাজ করছে। মূলত এ ইন্সটিটিউট হতে দু’ধরনের কাজ সম্পাদিত হয় (ক) ইুর উন্নত জাত ও উন্নত উৎপাদন কলা কৌশল উদ্ভাবন এবং (খ) উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও উন্নত উৎপাদন কলা-কৌশলসমূহ ঈক্ষু চাষীদের মধ্যে বিস্তার ঘটানো। ৮টি গবেষণা কেন্দ্র, ১টি সংগনিরোধ কেন্দ্র এবং ২টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এর গবেষণা উইং। অন্যদিকে প্রযুক্তি হস্তান্তর উইং গঠিত হয়েছে ২টি প্রধান বিভাগ, ৬টি উপকেন্দ্র এবং ৩টি শাখার সমন্বয়ে। প্রযুক্তি হস্তান্তর উইং সাধারণতঃ ইুচাষী ও সম্প্রসারণ কর্মীদের প্রশিণ দেয়। চাষীর জমিতে নতুন প্রযুক্তিসমূহের প্রদর্শনী স্থাপন করে। বিভিন্ন ধরণের প্রকাশনার মাধ্যমে চাষাবাদের নতুন খবরের বিস্তার ঘটায়। চাষীর জমিতে নতুন প্রযুক্তির উপযোগিতা যাচাই করে এবং এর ফিড-ব্যাক তথ্য সংগ্রহ করে।

বিএসআরআই এ পর্যন্ত ৩৪টি ঈক্ষুজাত উদ্ভাবন ও অবমুক্ত করেছে। এর সবগুলোই উচ্চ ফলনশীল ও অধিক চিনি সমৃদ্ধ। এসব জাতগুলো দেশের চিনিকল এলাকার প্রায় ৯৯% এবং চিনিকল বহির্ভূত গুড় এলাকায় প্রায় ৫৭% এলাকা জুড়ে চাষাবাদ হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানটি ৪১ টি ইক্ষুর জাত উদ্ভাবন করেছে।

৭। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যা ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্য সীমিত ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদের যুক্তিযুক্ত ও লাভজনক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং মৃত্তিকা পরিবেশ সুরক্ষা। এ প্রতিষ্ঠানে-

৪টি বিভাগ; প্রশাসন, কার্টোগ্রাফী, ডাটা প্রসেসিং অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকেল এবং পাবলিকেশন অ্যান্ড রেকর্ড শাখাসহ
৯টি শাখা,
৬টি আঞ্চলিক কার্যালয়,
১৫টি আঞ্চলিক গবেষণাগার,
২১টি জেলা কার্যালয় এবং
২টি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে।
এছাড়া কৃষকের মৃত্তিকা নমুনা সরেজমিনে পরীক্ষা করে ফলাফলের ভিত্তিতে সুষম মাত্রার সার সুপারিশ করার লক্ষ্যে ১০টি ভ্রাম্যমান মৃত্তিকা পরীক্ষাগার রয়েছে।

৮। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ

এটি ১৯৮৪ সালে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৪ টি গবেষণা কেন্দ্র ও ৪ টি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে মিঠা ও লোনা পানিতে মাছ চাষের উপর বিভিন্ন সফল প্রযুক্তি হস্তান্তর করে উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে।

৯। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনষ্টিটিউট, সাভার, ঢাকা

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট হল বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের উদ্দেশে পরিচালিত একটি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঢাকা বিভাগের ঢাকা জেলার অন্তর্গত সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানায় ঢাকা আরিচা মহাসড়কের ১ নম্বর গেইট (প্রান্তিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) সংলগ্ন স্থানে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটির আয়তন ৫৫০ একর।

• বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও কর্মসংস্থান করা।
• দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে জাতীয় প্রাণিসম্পদ উৎপাদন ও বিপণন ব্যাবস্থার সমস্যা ও সম্ভাবনা ভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং এর প্রাথমিক সম্প্রসারণে সহায়তা করা।

প্রতিষ্ঠানটি ৬৩ টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে আর ২৯০ টি ডিম দেওয়া উন্নত জাতের লেয়ার মুরগি 'শুভ্রা' উদ্ভাবন করেছে।

১০। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্রগ্রাম

বাংলাদেশ বন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বনসম্পদ, যা প্রয়োজনের তুলনায় সীমিত, তার রক্ষণা-বেক্ষণ ও পরিচর্যা এবং নতুন বনাঞ্চল সৃষ্টি, এ সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা করে থাকে। এর প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে অবস্থিত।

১৯৫৫ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের এক আদেশ বলে পূর্ব পাকিস্তান বন গবেষণা ইনস্টিটিউট নামে প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। যা ১৯৭১ সালের পরবর্তী সময়ে নির্বাহী আদেশে বন অধিদপ্তরের অধীনে 'বাংলাদেশ বন গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাম-করণ করা হয়। এর ১৭ টি গবেষণা বিভাগ আছে।

১১। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৌলভীবাজার

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ চা বোর্ড-এর অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তান চা বোর্ড, ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তানে একটি চা গবেষণা ষ্টেশন প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার ষ্টেশনটিকে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করে।ভারতের আসামের পরেই উপমহাদেশের সবচেয়ে পুরাতন চা গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে শ্রীমঙ্গলে। যা দেখতে প্রচুর পর্যটক আসে।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটটি বাংলাদেশ ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ সিস্টেম (নার্স)-এর অন্তর্ভূক্ত ১০টি জাতীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। এ প্রতিষ্ঠানের সারাদেশে ৪টি উপকেন্দ্র রয়েছে। উপকেন্দ্রগুলোর

১টি মৌলভীবাজার জেলার কালিটিতে,
১টি সিলেট শহরে,
১টি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়িতে এবং সর্বশেষ ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত
১টি উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়ায় অবস্থিত।

বিটিআরআই-এর ৮টি গবেষণা বিভাগ রয়েছে। গবেষণা বিভাগগুলো হচ্ছেঃ- ১. মৃত্তিকা রসায়ন, ২. উদ্ভিদ বিজ্ঞান, ৩. কৃষিতত্ত্ব, ৪. কীটতত্ত্ব, ৫. উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, ৬. প্রাণ রসায়ন, ৭. প্রকৌশল, ৮. পরিসংখ্যান ও অর্থনীতি। এ প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যান্য চা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমতুল্য।

বিটিআরআই-এর চা বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা-জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা চা শিল্পের অগ্রগতি ও উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছে। চা বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত বিটি-১ থেকে বিটি-১৬ পর্যন্ত ১৬টি উচ্চ ফলনশীল ও আকর্ষনীয় গুণগতমান সম্পন্ন ক্লোন উদ্‌ভাবন করেছেন। চা বিজ্ঞানীরা সর্বশেষ অধিক ফলনশীল উন্নতজাতের ক্লোন 'বিটি-১৬' আনুষ্ঠানিকভাবে বিমুক্ত করেছেন। এছাড়া চা বিজ্ঞানীরা নিরলস গবেষণা চালিয়ে উদ্ভাবন করেছেন কয়েকটি জেনারেটিভ ক্লোন সমন্বয়ে ৪টি বাইক্লোনাল বীজজাত বিটিএস-১, বিটিএস-২, বিটিএস-৩, বিটিএস-৪সহ একটি পার্লক্লোনাল বীজজাত।

১২। বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, রাজশাহী

১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। ইনস্টিটিউটের প্রধান লক্ষ্য দেশে রেশম উৎপাদনের ব্যাপক বিস্তার ও সম্প্রসারণের জন্য লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রসার, সহায়ক সেবাপ্রদান এবং দক্ষ কারিগরি জনশক্তি গড়ে তোলা। রাজশাহীতে অবস্থিত এ ইনস্টিটিউটের রয়েছে প্রায় ২০ হেক্টর বিস্তৃত চত্বর, একজন পরিচালক এবং ২২ জন বিজ্ঞানিসহ প্রায় ১০০ জনের একটি কর্মিদল।

প্রতিষ্ঠানের একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে। ১৮৯৮ সালে রাজশাহীতে একটি রেশম কারিগরি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভক্তির পর সাবেক পূর্ব পাকিস্তান দুটি রেশম নার্সারি লাভ করে, যার একটি বগুড়ায়, অন্যটি রাজশাহীর মীরগঞ্জে। রেশম উৎপাদন প্রকল্প ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এই নতুন উদ্যোগের অধীনে ১০টি নতুন নার্সারি স্থাপিত হয় (ভোলারহাট, নবাবগঞ্জ, ঈশ্বরদী, রংপুর, দিনাজপুর, কোনাবাড়ী, ময়নামতি, সিলেটের খাদিমনগর, ভাটিয়ারি ও চন্দ্রঘোনা)। অতঃপর ২২টি সম্প্রসারণ কেন্দ্র, একটি রেশম কারখানা ও একটি রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রথম দিকে ইনস্টিটিউটটি রেশম ও লাক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং রেশম কারিগরি ইনস্টিটিউট এই দুটি ইউনিট নিয়ে গঠিত হয়েছিল। পরে এ দুটিকে একত্র করে ১৯৭৪ সালে রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নাম দেওয়া হয়। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড প্রতিষ্ঠার আগে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ইনস্টিটিউটের কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ৫টি গবেষণা শাখা রয়েছে: ১. তুঁতশাখা উচ্চফলনশীল তুঁতজাত উদ্ভাবন, তুঁতচাষ ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ; ২. রেশমকীট শাখা রেশমকীটের জীনগত সম্ভার সংরক্ষণ, উচ্চফলনশীল রেশমকীটের জাত/সংকর উদ্ভাবন ও ডিম উৎপাদন, সংরক্ষণ ও রেশমপোকার পরিচর্যা উন্নয়ন; ৩. রেশমরোগতত্ত্ব শাখা রেশমকীটের বিভিন্ন রোগ ও বালাই নিয়ন্ত্রণ; ৪. রেশম রসায়ন শাখা মাটি ও তুঁতপাতা বিশ্লেষণ এবং রেশম উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপবস্ত্তর ব্যবহার; এবং ৫. রেশমপ্রযুক্তি শাখা পর্যাপ্ত পরিমাণ মানসম্পন্ন কাঁচা রেশম উৎপাদনের জন্য লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন। ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে একটি পৃথক জীবপ্রযুক্তি ইউনিট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ শাখাটি রেশম উৎপাদনের বিভিন্ন দিকের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

১৩। তুলা উন্নয়ন বোর্ড, গাজীপুর

তুলা উন্নয়ন বোর্ড তুলাচাষ পুনঃপ্রবর্তন ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে স্থাপিত একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথম দিকে বোর্ড তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ করতে পারে নি। অবশ্য ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন প্রজাতির বীজ আনার পর দেশে তুলার চাষ জোরদার হয় এবং ১৯৮৩-৮৪ সালে উৎপাদন মাত্রা ৩০,০০০ বেলে পৌঁছে। আমদানিকৃত বীজের অবক্ষয়, গুণগত মানের অবনতি এবং বিপণনের অভাবে কয়েক বছর পর উৎপাদন কমে ১২,০০০ বেলে দাঁড়ায়। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা ছিল তুলা চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। সতেরো শতকের ফরাসি পর্যটক ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ার বাংলার তুলার সঙ্গে মিশরের তুলার তুলনা করে মন্তব্য করেন যে বাংলার তুলা মিশরের তুলার চেয়ে গুণগতভাবে অনেক উন্নতমানের, কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে বাংলায় তুলাচাষ ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে যায়।

দেশে তৎকালীন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে প্রথম তুলা গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নামে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পুনর্গঠনের পর অপ্রধান অাঁশ ও তামাক শাখাকে (Minor Fibre and Tobacco Division) উদ্ভিদ-প্রজনন বিভাগের অধীনে আনা হয়। বর্তমানে তুলা গবেষণাকে নিম্নলিখিত লক্ষ্যপূরণের উদ্দেশ্যে শক্তিশালী করা হয়েছে ১. দেশের জন্য বাণিজ্যিক জাতগুলির প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য মূল্যায়ন এবং স্থানীয় ও প্রবর্তিত জার্মপ্লাজমের উপযোগিতা নির্ধারণ; ২. বর্তমান চাহিদা পূরণের জন্য একটি প্রজনন ও নির্বাচন কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা; ৩. সর্বোত্তম চাষাবাদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সরবরাহের জন্য কৃষিতাত্ত্বিক গবেষণা; ৪. কীটপতঙ্গের আক্রমণের সময় ও পরিসর নির্ধারণ এবং উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উদ্ভাবন; এবং ৫. তুলার রোগনির্ণয় এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নয়ন। জয়দেবপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কেন্দ্রীয় খামার, যশোরের আঞ্চলিক স্টেশন, রংপুরের মহীগঞ্জে কৃষি স্টেশন এবং গাজীপুরের শ্রীপুরে কেন্দ্রীয় তুলাবীজ উৎপাদন কেন্দ্রে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

পুনর্গঠন ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গবেষণা সুবিধাদি একত্রীকরণের পর ঢাকায় খামারবাড়িতে প্রধান কার্যালয়সহ তুলা উন্নয়ন বোর্ড-এর কয়েকটি সম্প্রসারণ ও গবেষণা ইউনিট গঠিত হয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন ও খাগড়াছড়িতে অবস্থিত বিভাগীয় ও আঞ্চলিক কার্যালয়গুলির মাধ্যমে এ সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

বর্তমানে যেসব কেন্দ্রে প্রজনন, কৃষিতত্ত্ব, মাটির উর্বরতা, কীটতত্ত্ব ও রোগতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলছে সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রীয় তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজ উৎপাদন কেন্দ্র, শ্রীপুর, গাজীপুর; আঞ্চলিক তুলা গবেষণা ও বীজ উৎপাদন কেন্দ্র, সদরপুর, দিনাজপুর; আঞ্চলিক তুলা গবেষণা ও বীজ উৎপাদন কেন্দ্র, জগদীশপুর, যশোর; তুলা গবেষণা কেন্দ্র, মহীগঞ্জ, রংপুর; এবং তুলা গবেষণা কেন্দ্র, বালাঘাটা, বান্দরবান। অধিকন্তু গবেষণা কেন্দ্রগুলিতে উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তির যথাযথ পরীক্ষণও সেখানকার খামারে সম্পন্ন হয়।

নির্বাহী পরিচালক এ বোর্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বোর্ডের সম্প্রসারণ, গবেষণা ও বিপণন কার্যক্রমে উপ-পরিচালক, তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা, ইউনিট কর্মকর্তা ও গবেষকগণ (প্রধান খামার ব্যবস্থাপক, বিষয় বিশেষজ্ঞ) নির্বাহী পরিচালককে সহায়তা করেন।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড এ পর্যন্ত ৮ জাতের তুলা উদ্ভাবন করেছে। এগুলি সিবি-১, সিবি-৩, সিবি-৫, সিবি-৭, এস আই/৯১/৬৪৬, এসএ/সিবি-১/৯৯, জেএ/সিবি-৫/৯৯ ও এভিএ। দেশে তুলাচাষ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৩৪,৬৪২ হেক্টরে পৌঁছেছে এবং বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৭৩,৭১০ বেল যা দেশের মোট চাহিদার প্রায় ১৬% পূরণ করতে পারে।

Raisul Islam Hridoy

    বিষয় : রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আপন বিভাগের “[…]

    বিষয় : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্[…]

    Amendment of Vacancy announcement for the post of […]