Get on Google Play

বাংলাদেশ বিষয়ক সাধারণ জ্ঞান
#1255
বাংলাদেশের স্বাধীনতা নাকি ভারতের দান -বিস্তারিত একটু সময় নিয়ে পড়বেন..

----পাক-ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ ;; ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধ. যদিও ভারত এটাকে পাক- ভারত যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধে ভারত জয়ী বলে মনে করে----

বিতর্কিত দাবী ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারতের দান’ জাতীয় দাবী প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়। এটি স্বাধীনচেতা বাঙালীর জাতীয় গৌরববোধকে স্বভাবতঃ আঘাত করে। অনেকেই এর সঠিক ঐতিহাসিক অকাট্য উত্তর না দিয়ে নিজ নিজ বিশ্বাসের জোরে তর্ক করেন। যদিও বিষয়টি আজও অমীমাংসিত থেকে যায়।
পাক-ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধের ইতিহাস ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তান চারবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। প্রথম যুদ্ধ ১৯৪৭ সালে কাশ্মীর নিয়ে, দ্বিতীয় যুদ্ধে ১৯৬৫ সালে সেই কাশ্মীর নিয়ে, তৃতীয় যুদ্ধ ১৯৭১ সালে বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধের সূত্র ধরে এবং চতুর্থবার ১৯৯৯ সালে আবার সেই কাশ্মীর নিয়ে, যা কার্গিল যুদ্ধ নামে সমধিক পরিচিত। এই যুদ্ধের ফলাফল কী, তা বিশ্ববাসী জানেন।
প্রথম যুদ্ধে পাকিস্তান কাশ্মীরের একাংশ দখল করে ‘আজাদ কাশ্মীর’ নাম দেয়, যা এখনও আছে। সেই যুদ্ধ শেষ হয় ভারতের অনুরোধে জাতিসংঘের রেজ্যুলিউশন ১৯৪৭ অনুসারে ‘লাইন অফ কন্ট্রৌল’ তৈরি করে কাশ্মীর ও জম্মু ভারতের অধীনে এবং গিলিত-বালতিস্তান ও আজাদ কাশ্মীর পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে যায়, যা এখনও বর্তমান।

১৯৬৫ সালে কাশ্মীর নিয়ে পাক-ভারতের মধ্যে সংঘটিত দ্বিতীয় যুদ্ধে দুই পক্ষই বিজয় দাবী করে। কিন্তু বাস্তবে এটি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তাসখন্দ চুক্তির মধ্য দিয়ে শেষ হয়। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মীরের কার্গিলের অংশবিশেষ দখল করে নিলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধে বাঁধে।

এই যুদ্ধের শেষ হয় মার্কিন প্রেসিডেণ্ট বিল ক্লিণ্টনের হুমকির মুখে পাকিস্তানের সেনা প্রত্যাহার করার ফলে। তো, উপরে বর্ণিত কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের তিনটি যুদ্ধে প্রথমটিতে ভারত কাশ্মীরের অংশ হারালেও সব ক’টি যুদ্ধে মধ্যস্থাতায় শেষ হয়। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে পারেনি।

ইতিহাসে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শুধু একবারই বিজয়ী হয়েছে, আর সেটি হচ্ছে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের চলমান যুদ্ধে যুক্ত হয়ে। তবে, সে বিজয় ছিলো বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বিজয়, যা পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলে বিবৃত। পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালী মুক্তিবাহিনী দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার এক পর্যায়ে ভারত এসে যুক্ত হয় দেশটির ওপর পাকিস্তানের আক্রমণের উত্তরে। পাকিস্তান তার নিশ্চিত পরাজয় জেনেও ভারতের ওপর আক্রমণ করে যুদ্ধটাকে পাক-ভারত যুদ্ধের চেহারা দিতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে।

পাকিস্তান হয়তো তখন ভেবেছিলো নিজের ইজ্জত ও জিনিভা কনভেনশনের ট্রীটমেণ্ট পাওয়ার জন্যেই বাঙালী মুক্তিবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণের চেয়ে ভারতীয় পেশাদার বাহিনীর কাছে কিংবা অন্ততঃ ভারতের সম্পৃক্তিতে আত্মসমর্পণ করাটা যৌক্তিক।

তারপরও যুদ্ধের পরিণতি হিসেবে পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণে সম্মত হয় ভারতীয় বাহিনী ও বাংলাদেশ বাহিনী যৌথ কমাণ্ডের কাছে।

জন্মের পর থেকে পাকিস্তান ও ভারত পরস্পরের বিরুদ্ধে ৪বার যুদ্ধ করলেও, ১৯৭১ সালের আগে কিংবা পরে কোনো পক্ষই কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে ক্লীয়ার-কাট বিজয় দাবী করতে পারেনি। প্রতিবারই তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপে যুদ্ধের শেষ হয়েছে এবং উভয় পক্ষই উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে নিজ দেশের জনগণকে বিজয় বুঝাতে চেষ্টা করেছে।

আমরা যদি কয়েক সেকেন্ডের জন্য ধরেও নিই যে এটা পাক -ভারত যুদ্ধ তাহলে একটু বিস্তারিত বলতে হয় --
পাক-ভারতের ৩বার যুদ্ধের ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিংবা পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে পারেনি, কিন্তু বাংলাদেশ যুক্ত হওয়ার পরই ভারত এক এবং একমাত্র বার শরিকী-বিজয় লাভ করেছে।
সুতরাং পাকিস্তানের পরাজয়ের পেছনে ইনষ্ট্রুমেণ্টাল হচ্ছে বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধ বা বাঙালী মুক্তিবাহিনী। এই সত্যটি একই সাথে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান এবং বিশ্ববাসীকে বুঝতে হবে।

দান কাকে বলে? দান বলে তাকে, যা নিজের উপার্জিত নয়, অন্যের কাছ থেকে পাওয়া। দানে একজন বৈধ অধিকারী তার অধিকার অন্যকে স্বেচ্ছায় দিয়ে থাকেন। আমরা যদি ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকিয়ে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বৈধতার উৎস পরীক্ষা করি, তাহলে সত্যটা বেরিয়ে পড়বে। ইতিহাসে দেখি, পাকিস্তান ও ভারত ব্রিটেইনের পার্লামেণ্টে তৈরি ‘ইণ্ডিয়ান ইণ্ডিপেণ্ডেন্স এ্যাক্ট ১৯৪৭’ আইনের ফলে রাষ্ট্র হিসেবেও নয়, মাত্র ‘ডোমিনিয়ন’ হিসেবে পৃথক পৃথক গভর্ণর-জেনারেলের শাসনাধীনে ‘স্বাধীনতা’ লাভ করে। প্রকৃত প্রস্তাবে, কারও স্বাধীনতাকে যদি ‘দান’ হিসেবে দেখতেই হয়, তাহলে সেটি বাংলাদেশের নয়, সেটি হবে পাকিস্তান ও ভারতের।

“ঊনিশশো সাতচল্লিশের পনেরোতম দিবস থেকে ইণ্ডিয়াতে দু’টি স্বাধীন ডোমিনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হবে যা যথাক্রমে ইণ্ডিয়া ও পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত হবে।” বিপরীতে, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে সেলফ প্রোক্লেমেশন ও যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাঙালী জাতি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গণহত্যার শিকার হয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে বাঙালী জাতি।
সুতরাং, সেলফ প্রোক্লেমেশন ও যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠিত বাঙালীর জাতিরাষ্ট্রকে কারো ‘দান’ বলে নির্দেশ করা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। দুর্ভাগ্যবশতঃ বাঙালী জাতি আজ তার রাজনৈতিক বিভিক্তির কারণে নিজের জাতিরাষ্ট্রের অতি উচ্চ-মর্য্যাদাসম্পন্ন জন্মের নায্য দাবীটি করতে পারছে না। ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে অন্যের ‘দান’ বলে শুনতে হচ্ছে। বিষয়টি বড়োই পরিতাপের।

সংগৃহীত
    Similar Topics
    TopicsStatisticsLast post
    0 Replies 
    4536 Views
    by rana
    0 Replies 
    2596 Views
    by romen
    0 Replies 
    1376 Views
    by raja
    0 Replies 
    13455 Views
    by sakib
    0 Replies 
    5772 Views
    by tumpa

    A group of lions------------------------ A pride o[…]

    • Our family is on very good terms with his f[…]

    • ’মেঘনাদবধ’ কাব্যে ‘রাক্ষস[…]