- Tue Feb 25, 2020 12:07 pm#2353
বাঙালি জাতির উৎপত্তিঃ পর্ব ০৪
বাংলায় গুপ্ত যুগ
গুপ্ত যুগকে প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের স্বর্ণযুগ বলা হয়। ভারতে গুপ্ত বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রথম চন্দ্রগুপ্ত।
চন্দ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর সমুদ্রগুপ্ত পাটালিপুত্রের (পাটনা) সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন গুপ্ত বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তাঁকে প্রাচীন ভারতের ‘নেপোলিয়ন’ বলা হয়। তাঁর আমলে সমতট ছাড়া বাংলার অন্যান্য জনপদ গুপ্ত সম্রাজ্যের অধীনে ছিল। গুপ্ত অধিকৃত বাংলার রাজধানী ছিল পুণ্ড্রনগর।
সমুদ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পাটালিপুত্রের সিংহাসনে বসেন। তাঁর উপাধি ছিল ‘বিক্রমাদিত্য’। অনেক প্রতিভাবান ও গুণী ব্যক্তি তাঁর দরবারে সমবেত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রধান নয় জনকে ’নবরত্ন’ বলা হতো। তাঁর সভায় আর্যভট্ট ও বরাহমিহির ছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী। আর্যভট্ট অন্য সবার আগে পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতি নির্ণয় করেন। আর্যভট্টের গ্রন্থের নাম ছিল ‘আর্য সিদ্ধান্ত’। বরাহমিহির ছিলেন একজন জ্যোতির্বিদ। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘বৃহৎ সংহিতা’। ষষ্ঠ শতকের প্রথম দিকে ভারতে বিশাল গুপ্ত সম্রাজ্যের পতন ঘটে। মধ্য এশিয়ার দুর্ধর্ষ যাযাবর জাতি হুনদের আক্রমণে গুপ্ত সাম্রাজ্য টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
গুপ্ত-পরবর্তী যুগ
গুপ্ত বংশের পতনের পর বাংলায় দুটি স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব হয়। এর একটি ছিল প্রাচীন ‘বঙ্গ রাজ্য’ এবং দ্বিতীয়টির নাম ছিল ‘গৌড়’। প্রাচীনকালে রাজারা তামার পাতে খোদাই করে বিভিন্ন ঘোষণা বা নির্দেম দিতেন। এগুলোকে তাম্রশাসন বলা হতো। স্বাধীন বঙ্গরাজ্য আমলের এ রকম সাতটি তাম্রলিপি পাওয়া গেছে।
গুপ্ত রাজাদের অধীনে বড় কোনো অঞ্চলের শাসনকর্তাকে বলা হতো ‘মহাসামন্ত’। শশাঙ্ক ছিলেন গুপ্ত রাজা মহাসেন গুপ্তের একজন মহাসামন্ত। শশঙ্ক গৌড়ের রাজা হয়েছিলেন ৬০৬ সালের কিছু আগে। তিনি প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোকে ‘গৌড়’ নামে একত্রিত করেন। শশাঙ্কের উপাধি ছিল রাজাধিরাজ। তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম রাজা। শশাঙ্ক রাজধানী স্থাপন করেন কর্ণসুবর্ণে। এটি ছিল বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলায়।
হর্ষবর্ধন পুষ্যভূতি বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তাঁর সময় কনৌজ ছিল এ দেশের রাজধানী। তাঁর সময় বিখ্যাত সাহিত্যিক ছিলেন বানভট্ট। বানভট্টের বিখ্যাত গ্রন্থ হলো ‘হর্ষচরিত্র”।
পাল বংশের রাজনৈতিক ইতিহাস
শশাঙ্কের পর দীর্ঘদিন বাংলায় কোনো যোগ্য শাসক ছিলেন না। সামন্ত রাজারা প্রত্যেকেই বাংলার রাজা হওয়ার কল্পনায় অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকেন। এ অরাজকতাপূর্ণ সময়কে (সপ্তম-অষ্টম শতক) পাল তাম্র শাসনে ‘মাৎস্যন্যায়’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পুকুরে বড় মাছগুলো শক্তির দাপটে ছোট মাছ ধরে খেয়ে ফেলার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে বলে ‘মাৎস্যন্যায়’। বাংলার সবল অধিপতিরা এভাবে ছোট ছোট অঞ্চলকে গ্রাস করেছিল।
৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার অরাজক পরিস্থিতির অবসান ঘটে পাল রাজত্বের উত্থানের মধ্য দিয়ে। পাল বংশের প্রথম রাজা ছিলেন গোপাল। বাংলায় প্রথম বংশানুক্রমিক শাসন শুরু হয় পাল বংশের রাজত্বকালের মধ্য দিয়ে। পাল বংশের রাজারা একটানা চারশ বছর এই দেশ শাসন করেছিলেন। এত দীর্ঘ সময় আর কোনো রাজবংশ এই দেশ শাসন করেনি। পাল বংশের রাজারা ছিলেন বৌদ্ধধর্মালম্বী।
পাল রাজাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন গোপালের পুত্র ধর্মপাল। তার যুগে তিনটি রাজবংশ প্রতিযোগিতায় নেমেছিল উত্তর ভারতে আধিপত্য বিস্তার করতে। একটি বাংলার পাল বংশ, অন্যটি রাজপুতানার গুর্জর প্রতীহার বংশ এবং তৃতীয়টি দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকুট বংশ। ইতিহাসে এ যুদ্ধ ‘ত্রিশক্তির সংঘর্ষ’ নামে পরিচিত। নওগাঁর পাহাড়পুরে অবস্থিত ‘সোমপুর বিহার’ নির্মাণ করেন ধর্মপাল। পাল আমলে রাজা মহীপাল দেবের সময়ে তালপাতায় অঙ্কিত নালন্দা মহাবিহারের ‘বৌদ্ধ অনুচিত্র’ বাংলার প্রাচীনতম চিত্রকলার নিদর্শন। ‘বরেন্দ্র বিদ্রোহ’ সংঘটিত হয়েছিল পাল রাজা দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালে। এ বিদ্রোহের ফলে দ্বিতীয় মহীপালের মৃত্যু ঘটে। পাল বংশের সর্বশেষ রাজা ছিলেন রামপাল। সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিতম’ গ্রন্থ থেকে রামপালের রাজত্ব সম্পর্কে জানা যায়। দিনাজপুর শহরের কাছে যে ‘রামসাগর’ রয়েছে, তা রামপালের কীর্তি।
সেন রাজাদের ইতিহাস
বাংলায় সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সামন্ত সেন। তিনি রাজ্য প্রতিষ্ঠা না করায় সেন বংশের প্রথম রাজার মর্যাদা দেওয়া হয় তার পুত্র হেমন্ত সেনকে।
• সেন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন বিজয় সেন।
• বল্লাল সেন বাংলায় কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তনকারী হিসেবে পরিচিত।
১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি লক্ষ্ণণ সেনকে পরাজিত করে নদীয়া দখল করেন। লক্ষ্ণণ সেনের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় সেন শাসনের অবসান হয়। লক্ষ্ণণ সেন ছিলেন সেন বংশের শেষ রাজা। সেন বংশের রাজারা ছিলেন হিন্দুধর্মাবলম্বী। সেন যুগের অবসানের মধ্য দিয়ে বাংলায় হিন্দু রাজাদের শাসনের অবাসান ঘটে।
বাংলায় গুপ্ত যুগ
গুপ্ত যুগকে প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের স্বর্ণযুগ বলা হয়। ভারতে গুপ্ত বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রথম চন্দ্রগুপ্ত।
চন্দ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর সমুদ্রগুপ্ত পাটালিপুত্রের (পাটনা) সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন গুপ্ত বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তাঁকে প্রাচীন ভারতের ‘নেপোলিয়ন’ বলা হয়। তাঁর আমলে সমতট ছাড়া বাংলার অন্যান্য জনপদ গুপ্ত সম্রাজ্যের অধীনে ছিল। গুপ্ত অধিকৃত বাংলার রাজধানী ছিল পুণ্ড্রনগর।
সমুদ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত পাটালিপুত্রের সিংহাসনে বসেন। তাঁর উপাধি ছিল ‘বিক্রমাদিত্য’। অনেক প্রতিভাবান ও গুণী ব্যক্তি তাঁর দরবারে সমবেত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রধান নয় জনকে ’নবরত্ন’ বলা হতো। তাঁর সভায় আর্যভট্ট ও বরাহমিহির ছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী। আর্যভট্ট অন্য সবার আগে পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতি নির্ণয় করেন। আর্যভট্টের গ্রন্থের নাম ছিল ‘আর্য সিদ্ধান্ত’। বরাহমিহির ছিলেন একজন জ্যোতির্বিদ। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘বৃহৎ সংহিতা’। ষষ্ঠ শতকের প্রথম দিকে ভারতে বিশাল গুপ্ত সম্রাজ্যের পতন ঘটে। মধ্য এশিয়ার দুর্ধর্ষ যাযাবর জাতি হুনদের আক্রমণে গুপ্ত সাম্রাজ্য টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
গুপ্ত-পরবর্তী যুগ
গুপ্ত বংশের পতনের পর বাংলায় দুটি স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব হয়। এর একটি ছিল প্রাচীন ‘বঙ্গ রাজ্য’ এবং দ্বিতীয়টির নাম ছিল ‘গৌড়’। প্রাচীনকালে রাজারা তামার পাতে খোদাই করে বিভিন্ন ঘোষণা বা নির্দেম দিতেন। এগুলোকে তাম্রশাসন বলা হতো। স্বাধীন বঙ্গরাজ্য আমলের এ রকম সাতটি তাম্রলিপি পাওয়া গেছে।
গুপ্ত রাজাদের অধীনে বড় কোনো অঞ্চলের শাসনকর্তাকে বলা হতো ‘মহাসামন্ত’। শশাঙ্ক ছিলেন গুপ্ত রাজা মহাসেন গুপ্তের একজন মহাসামন্ত। শশঙ্ক গৌড়ের রাজা হয়েছিলেন ৬০৬ সালের কিছু আগে। তিনি প্রাচীন বাংলার জনপদগুলোকে ‘গৌড়’ নামে একত্রিত করেন। শশাঙ্কের উপাধি ছিল রাজাধিরাজ। তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম স্বাধীন ও সার্বভৌম রাজা। শশাঙ্ক রাজধানী স্থাপন করেন কর্ণসুবর্ণে। এটি ছিল বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলায়।
হর্ষবর্ধন পুষ্যভূতি বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তাঁর সময় কনৌজ ছিল এ দেশের রাজধানী। তাঁর সময় বিখ্যাত সাহিত্যিক ছিলেন বানভট্ট। বানভট্টের বিখ্যাত গ্রন্থ হলো ‘হর্ষচরিত্র”।
পাল বংশের রাজনৈতিক ইতিহাস
শশাঙ্কের পর দীর্ঘদিন বাংলায় কোনো যোগ্য শাসক ছিলেন না। সামন্ত রাজারা প্রত্যেকেই বাংলার রাজা হওয়ার কল্পনায় অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকেন। এ অরাজকতাপূর্ণ সময়কে (সপ্তম-অষ্টম শতক) পাল তাম্র শাসনে ‘মাৎস্যন্যায়’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পুকুরে বড় মাছগুলো শক্তির দাপটে ছোট মাছ ধরে খেয়ে ফেলার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে বলে ‘মাৎস্যন্যায়’। বাংলার সবল অধিপতিরা এভাবে ছোট ছোট অঞ্চলকে গ্রাস করেছিল।
৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার অরাজক পরিস্থিতির অবসান ঘটে পাল রাজত্বের উত্থানের মধ্য দিয়ে। পাল বংশের প্রথম রাজা ছিলেন গোপাল। বাংলায় প্রথম বংশানুক্রমিক শাসন শুরু হয় পাল বংশের রাজত্বকালের মধ্য দিয়ে। পাল বংশের রাজারা একটানা চারশ বছর এই দেশ শাসন করেছিলেন। এত দীর্ঘ সময় আর কোনো রাজবংশ এই দেশ শাসন করেনি। পাল বংশের রাজারা ছিলেন বৌদ্ধধর্মালম্বী।
পাল রাজাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন গোপালের পুত্র ধর্মপাল। তার যুগে তিনটি রাজবংশ প্রতিযোগিতায় নেমেছিল উত্তর ভারতে আধিপত্য বিস্তার করতে। একটি বাংলার পাল বংশ, অন্যটি রাজপুতানার গুর্জর প্রতীহার বংশ এবং তৃতীয়টি দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকুট বংশ। ইতিহাসে এ যুদ্ধ ‘ত্রিশক্তির সংঘর্ষ’ নামে পরিচিত। নওগাঁর পাহাড়পুরে অবস্থিত ‘সোমপুর বিহার’ নির্মাণ করেন ধর্মপাল। পাল আমলে রাজা মহীপাল দেবের সময়ে তালপাতায় অঙ্কিত নালন্দা মহাবিহারের ‘বৌদ্ধ অনুচিত্র’ বাংলার প্রাচীনতম চিত্রকলার নিদর্শন। ‘বরেন্দ্র বিদ্রোহ’ সংঘটিত হয়েছিল পাল রাজা দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালে। এ বিদ্রোহের ফলে দ্বিতীয় মহীপালের মৃত্যু ঘটে। পাল বংশের সর্বশেষ রাজা ছিলেন রামপাল। সন্ধ্যাকর নন্দীর ‘রামচরিতম’ গ্রন্থ থেকে রামপালের রাজত্ব সম্পর্কে জানা যায়। দিনাজপুর শহরের কাছে যে ‘রামসাগর’ রয়েছে, তা রামপালের কীর্তি।
সেন রাজাদের ইতিহাস
বাংলায় সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সামন্ত সেন। তিনি রাজ্য প্রতিষ্ঠা না করায় সেন বংশের প্রথম রাজার মর্যাদা দেওয়া হয় তার পুত্র হেমন্ত সেনকে।
• সেন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন বিজয় সেন।
• বল্লাল সেন বাংলায় কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তনকারী হিসেবে পরিচিত।
১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি লক্ষ্ণণ সেনকে পরাজিত করে নদীয়া দখল করেন। লক্ষ্ণণ সেনের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় সেন শাসনের অবসান হয়। লক্ষ্ণণ সেন ছিলেন সেন বংশের শেষ রাজা। সেন বংশের রাজারা ছিলেন হিন্দুধর্মাবলম্বী। সেন যুগের অবসানের মধ্য দিয়ে বাংলায় হিন্দু রাজাদের শাসনের অবাসান ঘটে।