- Sat Jun 15, 2019 11:41 pm#1446
ইরানের সীমানাসংলগ্ন হরমুজ প্রণালি পারস্য ও ওমান উপসাগরকে সংযুক্ত করেছে। সবচেয়ে সংকীর্ণ অবস্থায় এর প্রস্থ ৩৩ কিলোমিটার। সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমানসহ পারস্য উপসাগরের আশপাশের দেশগুলো থেকে জ্বালানি রফতানির প্রধান রুট এটি।
মূলত পারস্য উপসাগর থেকে ওমান উপসাগর হয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছেড়ে আসা জ্বালানিবাহী কার্গোগুলো ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। পরে সেগুলো ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়ার দেশগুলোয় চলে যায়।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যের অর্ধেকের বেশি এবং জ্বালানি তেলের এক-পঞ্চমাংশ হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবহন করা হয়। ২০১৭ সালে এ প্রণালি হয়ে প্রতিদিন গড়ে ১ কোটি ৭২ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবহন হয়েছে। তাই বৈশ্বিক জ্বালানি বাণিজ্যে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার প্রস্থের হরমুজ প্রণালিকে কৌশলগত কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করিডোর বিবেচনা করা হয়।
ইরানের সঙ্গে যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ বেড়ে যায়, তখন বৈশ্বিক জ্বালানি বাণিজ্যে হরমুজ প্রণালির নিরাপত্তা ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনাও তুঙ্গে ওঠে। সম্প্রতি ইরান-মার্কিন বিরোধ নতুন মাত্রা পেয়েছে। তেহরানের ওপর নতুন করে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা জোরদার করেছে ওয়াশিংটন।
স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় এসেছে হরমুজ প্রণালি। এর মধ্যেই প্রণালি অতিক্রমরত জ্বালানি তেলবাহী কার্গোয় হামলার ঘটনা পুরো পরিস্থিতিতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করেছে। গত এক মাসে এ জলপথে চারটি কার্গো চোরগোপ্তা হামলার শিকার হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার জাপানগামী দুটি কার্গোয় হামলা হয়েছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পর হরমুজ প্রণালি দিয়ে জ্বালানি পরিবহন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল ইরান। তখন হরমুজ প্রণালিতে জ্বালানিবাহী কার্গোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাহরাইনে পঞ্চম নৌবহর মোতায়েন করেছে ওয়াশিংটন। এর পরও একের পর এক কার্গোয় হামলার ঘটনায় ইরানকে দুষছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তেহরানের পক্ষ থেকে বরাবররই এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
হামলার পর জাপানি জ্বালানি কার্গোগুলোয় হরমুজ প্রণালি অতিক্রমের সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলেছেন জাপানি শিল্পমন্ত্রী হিরোশিগি সেকো। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, ‘হরমুজ প্রণালিতে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পেছনে ইরান সরাসরি জড়িত। দেশটিকে এর দায় নিতে হবে।’ ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এসব হামলার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করেছে ব্রিটেন, সৌদি আরব, ওমানসহ মার্কিন মিত্ররা।
অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, ‘হরমুজ প্রণালিতে জ্বালানিবাহী কার্গোয় হামলার পেছনে ইরানকে সম্পৃক্ত করাটা পুরনো নাশকতামূলক কূটনীতির অংশমাত্র। বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ প্রণালি বন্ধ করার কোনো অভিপ্রায় ইরানের নেই।’
উল্লেখ্য, হরমুজ প্রণালি কেন্দ্র করে এমন বৈশ্বিক সংকট এবারই প্রথম নয়। গত শতকের আশির দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় একবার হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিয়েছিল ইরান। ২০১০ সালের জুলাইয়ে এ প্রণালিতে জাপানি কার্গো আল কায়েদার হামলার শিকার হয়। ২০১২ সালেও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে ইরান আরো একবার হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হলো, এ করিডোর বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে? এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জ্বালানি ও নিরাপত্তাবিষয়ক কনসালট্যান্সি ম্যাথুস অ্যাডভাইজরির প্রতিষ্ঠাতা টন ও’সুলিভান বলেন, আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাণিজ্যে হরমুজ প্রণালির কৌশলগত গুরুত্ব অনেক।
কোনো কারণে এ করিডোর বন্ধ হয়ে গেলে সৌদি আরব, ইরাক, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে বিকল্প পথে জ্বালানি তেল ও এলএনজি রফতানি করতে হবে। এতে পরিবহন ব্যয় যেমন বাড়বে, তেমনি নানামুখী ঝামেলার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। ফলে ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার দেশগুলোয় জ্বালানি পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। ব্রেক্সিট নিয়ে কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি ইউরোপ। চীন, ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে এসেছে। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় বিশ্ব অর্থনীতি বড় একটি মন্দার মুখে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
এমন পরিস্থিতিতে হরমুজ প্রণালির নিরাপত্তা নিয়ে উত্কণ্ঠা জ্বালানি বাণিজ্যের পাশাপাশি সামগ্রিক বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জের জন্ম দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাড়িয়ে দেবে জ্বালানি পণ্যের দাম।
Mohammad Ashraful Islam
মূলত পারস্য উপসাগর থেকে ওমান উপসাগর হয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছেড়ে আসা জ্বালানিবাহী কার্গোগুলো ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে। পরে সেগুলো ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়ার দেশগুলোয় চলে যায়।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যের অর্ধেকের বেশি এবং জ্বালানি তেলের এক-পঞ্চমাংশ হরমুজ প্রণালি দিয়ে পরিবহন করা হয়। ২০১৭ সালে এ প্রণালি হয়ে প্রতিদিন গড়ে ১ কোটি ৭২ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিবহন হয়েছে। তাই বৈশ্বিক জ্বালানি বাণিজ্যে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার প্রস্থের হরমুজ প্রণালিকে কৌশলগত কারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করিডোর বিবেচনা করা হয়।
ইরানের সঙ্গে যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ বেড়ে যায়, তখন বৈশ্বিক জ্বালানি বাণিজ্যে হরমুজ প্রণালির নিরাপত্তা ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনাও তুঙ্গে ওঠে। সম্প্রতি ইরান-মার্কিন বিরোধ নতুন মাত্রা পেয়েছে। তেহরানের ওপর নতুন করে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা জোরদার করেছে ওয়াশিংটন।
স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় এসেছে হরমুজ প্রণালি। এর মধ্যেই প্রণালি অতিক্রমরত জ্বালানি তেলবাহী কার্গোয় হামলার ঘটনা পুরো পরিস্থিতিতে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করেছে। গত এক মাসে এ জলপথে চারটি কার্গো চোরগোপ্তা হামলার শিকার হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার জাপানগামী দুটি কার্গোয় হামলা হয়েছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পর হরমুজ প্রণালি দিয়ে জ্বালানি পরিবহন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল ইরান। তখন হরমুজ প্রণালিতে জ্বালানিবাহী কার্গোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাহরাইনে পঞ্চম নৌবহর মোতায়েন করেছে ওয়াশিংটন। এর পরও একের পর এক কার্গোয় হামলার ঘটনায় ইরানকে দুষছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও তেহরানের পক্ষ থেকে বরাবররই এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
হামলার পর জাপানি জ্বালানি কার্গোগুলোয় হরমুজ প্রণালি অতিক্রমের সময় বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলেছেন জাপানি শিল্পমন্ত্রী হিরোশিগি সেকো। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, ‘হরমুজ প্রণালিতে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পেছনে ইরান সরাসরি জড়িত। দেশটিকে এর দায় নিতে হবে।’ ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এসব হামলার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করেছে ব্রিটেন, সৌদি আরব, ওমানসহ মার্কিন মিত্ররা।
অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেছেন, ‘হরমুজ প্রণালিতে জ্বালানিবাহী কার্গোয় হামলার পেছনে ইরানকে সম্পৃক্ত করাটা পুরনো নাশকতামূলক কূটনীতির অংশমাত্র। বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ প্রণালি বন্ধ করার কোনো অভিপ্রায় ইরানের নেই।’
উল্লেখ্য, হরমুজ প্রণালি কেন্দ্র করে এমন বৈশ্বিক সংকট এবারই প্রথম নয়। গত শতকের আশির দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় একবার হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দিয়েছিল ইরান। ২০১০ সালের জুলাইয়ে এ প্রণালিতে জাপানি কার্গো আল কায়েদার হামলার শিকার হয়। ২০১২ সালেও পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে ইরান আরো একবার হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল।
এখন প্রশ্ন হলো, এ করিডোর বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে? এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জ্বালানি ও নিরাপত্তাবিষয়ক কনসালট্যান্সি ম্যাথুস অ্যাডভাইজরির প্রতিষ্ঠাতা টন ও’সুলিভান বলেন, আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাণিজ্যে হরমুজ প্রণালির কৌশলগত গুরুত্ব অনেক।
কোনো কারণে এ করিডোর বন্ধ হয়ে গেলে সৌদি আরব, ইরাক, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে বিকল্প পথে জ্বালানি তেল ও এলএনজি রফতানি করতে হবে। এতে পরিবহন ব্যয় যেমন বাড়বে, তেমনি নানামুখী ঝামেলার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। ফলে ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার দেশগুলোয় জ্বালানি পণ্যের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা পুরো বৈশ্বিক অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে। ব্রেক্সিট নিয়ে কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি ইউরোপ। চীন, ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে এসেছে। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় বিশ্ব অর্থনীতি বড় একটি মন্দার মুখে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
এমন পরিস্থিতিতে হরমুজ প্রণালির নিরাপত্তা নিয়ে উত্কণ্ঠা জ্বালানি বাণিজ্যের পাশাপাশি সামগ্রিক বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জের জন্ম দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাড়িয়ে দেবে জ্বালানি পণ্যের দাম।
Mohammad Ashraful Islam