Get on Google Play

লিখিত পরীক্ষা বিষয়ক
#1117
🔖ভূমিকাঃ
পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যে কোন দেশের উন্নয়নের জন্য অন্যতম উপাদান। যে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত সে দেশের জাতীয় উন্নয়ন তত দ্রুত ত্বরান্বিত হয়। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং এটার রাজধানী দেশের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় রাজধানীর সাথে দেশের উত্তর ও দক্ষিনাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যহত হয় যেটা উন্নতির অন্তরায়। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরে যমুনা সেতু নির্মানের দ্বারা দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি হলেও দেশের দক্ষিনাঞ্চল রাজধানীর সাথে যোগাযোগে ফেরী ও লঞ্চের উপর নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় পদ্মা সেতু জাতীয় উন্নয়নে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এই সেতুটি দ্বারা সমগ্র দেশের সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। যেটা দেশের উন্নয়নে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

🔖পদ্মা সেতুঃ
পদ্মা সেতু দেশের বৃহত্তম নদী পদ্মার উপর প্রস্তাবিত একটি বহুমুখী সেতু। এটা দেশের বৃহত্তম প্রকল্প এবং নির্মাণপরবর্তী সময়ে এটা হবে দেশের সর্ববৃহৎ সেতু। উত্তর দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া উপকূল এবং দক্ষিণ দিকে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের জাজিরা উপকূল হল সেতুটির প্রস্তাবিত স্থান। সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে ৬.১৫ কি.মি. এবং প্রস্থ হবে ২১.১০ মি. যেটা রেল এবং বাস উভয়ই চলাচলের উপযোগী করে তৈরী করা হবে। এটি বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার সহায়তায় নির্মিত হবে।

🔖জাতীয় উন্নয়নঃ
জাতীয় উন্নয়ন বলতে মূলত একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে বোঝায়। শিক্ষাব্যবস্থা, যোগাযোগব্যবস্থা, স্বাস্থ্য এমনকি খেলাধুলার উন্নতিও জাতীয় উন্নয়নের অংশ। এক কথায় কোন সরকার বা কোন নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের সার্বিক উন্নয়নই জাতীয় উন্নয়ন।

🔖জাতীয় উন্নয়নে পদ্মা সেতুর প্রভাবঃ
পদ্মা সেতুটি প্রধানতঃ দেশের দক্ষিনপশ্চিমাঞ্চলের সাথে সমগ্র দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণের নিমিত্তে নির্মিত হবে। দেশের অধিকাংশ উন্নয়ন কর্মকান্ড রাজধানী থেকে পরিচালিত হয় কিন্তু এ উন্নয়নের সুবিধাগুলো দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছতে পদ্মা একটি বড় বাধা। সেতুটি নির্মিত হলে দেশের কেন্দ্রীয় সুবিধা সমূহ এবং উক্ত এলাকাটির সম্ভাব্য উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা জাতীয় উন্নয়নের প্রভাবক। পদ্মা সেতু নির্মানের দ্বারা সৃষ্ট যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যে বিষয় গুলো জাতীয় উন্নয়নকে প্রভাবিত করতে পারে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হল।

🔖প্রাথমিক উপকারভোগী ও তাদের সুবিধাঃ
প্রত্যেকটি প্রকল্পেরই প্রাথমিক উপকারভোগী থাকে যারা এটি থেকে সৃষ্ট সুবিধাসমূহ ভোগ করতে প্রাথমিকভাবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় তিন কোটি লোক বসবাস করে যারা পদ্মা সেতু প্রকল্পটির প্রাথমিক উপকারভোগী। এ অঞ্চলের লোকজন ঢাকায় যাতায়াতে ফেরী এবং লঞ্চের উপর নির্ভরশীল। মাওয়া জাজিরা পয়েন্টে ফেরী পারাপারে কমপক্ষে দুই ঘন্টা সময় প্রয়োজন হয়। এই এলাকা থেকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা বা জরুরি প্রয়োজনে আসা লোকজন চরম ভোগান্তির শিকার হয়। সেতুটি নির্মিত হলে এই এলাকার লোকজনের ঢাকা সহ সমগ্র দেশে যাতায়াত সহজ হবে যেটা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাবসায় ও প্রযুক্তি সহ সার্বিক উন্নয়নকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।

🔖বহুমুখী যোগাযোগ সুবিধা ও তার প্রভাবঃ
পদ্মা সেতু বাস ও রেল উভয়ই চলাচলের উপযোগী করে তৈরী হবে। এটির মাধ্যমে শুধু যাতায়াতেরই সুবিধা হবেনা বরং এটি টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎব্যাবস্থা এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। এ সকল সুবিধা সমূহ দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নকে প্রভাবিত করবে।

🔖ব্যবসায়িক সুবিধাঃ
পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবসায় উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক। সেতুটি নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ব্যাবসায়িক অবস্থায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হবে যেটা জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

অন্যদিকে ঢাকার সাথে কলকাতার যোগাযোগ সহজ হবে ফলে দ্বিপাক্ষিয় বাণিজ্যের উন্নয়ন ঘটবে। এলাকাভিত্তিক ব্যাবসায়ের উন্নতি সব সময় জাতীয় অর্থনীতির উন্নতির কারন হিসেবে কাজ করে ফলে জাতীয় উন্নয়নের মানও উন্নয়নের দিকে ধাবিত হয়।

🔖মংলা বন্দরের উপর প্রভাবঃ
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুটি নৌবন্দরের একটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় অবস্থিত। এটি হল মংলাবন্দর এবং এটার সংশ্লিষ্ট পরিবহন ব্যাবস্থায় পদ্মা সেতু ব্যবহারের বিকল্প নেই। সেতু দ্বারা সৃষ্ট যাতায়াত ব্যাবস্থার উন্নতি দ¦ারা বন্দরটির সম্ভাব্য উপযুক্ত গ্রহণযোগ্যতা ও উপকারিতা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ নদী পথে বাণিজ্য করা দেশগুলোর সাথে অধিক ব্যাবসায়িক ক্ষেত্র তৈরী করতে পারবে ফলে দেশের সার্বিক বাণিজ্যের উন্নতি সাধিত হবে এবং সেটা জাতীয় উন্নয়নের কার্যকরী প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে।

🔖জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নঃ
জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নই জাতীয় উন্নয়নের বৃদ্ধি ঘটায়। আর পরিবহনব্যাবস্থা জাতীয় অর্থনীতিকে বিভিন্ন ধাপে উন্নয়নে সহযোগিতা করে। পরিবহনব্যাবস্থা জাতীয় অর্থনীতিকে বিভিন্নমাধ্যমে সহযোগিতা করে, যেমনঃ

🔖উৎপাদন বৃদ্ধিঃ
সেতুটির মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতি হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারবে কারন তখন তাদের উৎপাদিত পন্য গুলো সমগ্র দেশে পৌঁছতে বর্তমান সময়ের চেয়ে সহজ হবে।

🔖প্রতিযোগিতা বৃদ্ধিঃ
এই এলাকায় অবস্থিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিযোগী হয়ে উঠবে। এতে পণ্যের সার্বিক মান বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের ব্যাবসায়িক ক্ষেত্র ও বিস্তৃত হবে।

🔖জমির মান বৃদ্ধিঃ
যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতি হওয়ার কারনে এই এলাকার জমির মান ও বৃদ্ধি পাবে কারন সে গুলো পূর্বের তুলনায় যে কোন কাজের জন্য অধিক যথোপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।

🔖উপসংহারঃ
জাতীয় উন্নয়ন মূলত জাতীয় অর্থনীতির উপরই নির্ভরশীল এবং যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যাবস্থা জাতীয় অর্থনীতি উন্নয়নের প্রভাবক। তদুপরি পদ্মা সেতু যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যাবস্থার উন্নতিকল্পেই নির্মিত হবে। সুতরাং এটা বলা যায় যে, পদ্মা সেতু জাতীয় উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।

Raisul Islam Hridoy
    Similar Topics
    TopicsStatisticsLast post
    0 Replies 
    191 Views
    by tasnima
    0 Replies 
    1435 Views
    by bdchakriDesk
    0 Replies 
    930 Views
    by mousumi
    0 Replies 
    16112 Views
    by tasnima
    0 Replies 
    356 Views
    by sajib

    বিষয় : রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আপন বিভাগের “[…]

    বিষয় : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্[…]

    Amendment of Vacancy announcement for the post of […]