- Wed Sep 12, 2018 2:25 pm#731
রোহিঙ্গা সমস্যা
✔পর্বঃ০২
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য ‘গ্যাটো' জাতীয় বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা করেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বেশ কয়েকটি বিশেষ বসবাসের স্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা থেকে ওরা অনুমতি ছাড়া বের হতে পারে না। সেই গ্যাটোগুলোর ভিতরে আবদ্ধ মানবেতর জীবনযাপন করে রোহিঙ্গারা। চিকিৎসা, শিক্ষা ও উপযোগ সেবার ব্যবস্থা এই গ্যাটোগুলোতে থাকলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও নিম্নমানের।
রোহিঙ্গাদের বিয়ে করার জন্যও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেয়া লাগে। এছাড়া দুটোর বেশি সন্তান নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে বিয়ে করায় ও দুজনের বেশি সন্তানের জন্ম দেয়ায় রোহিঙ্গা পরিবারের সন্তানদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এদের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার। এইসব পরিবারের সন্তানরা সরকারের ‘গ্যাটো ব্যবস্থা' তালিকাভুক্ত নয়, ফলে, এদের জীবন ফোঁড়ার উপরে বিষ ঘা এর মত। এরা গ্যাটোগুলোতে থাকতে পারে না।
আবার, গ্যাটোর বাইরেও থাকতে পারে না, কারণ, মিয়ানমারের নাগরিক নয় ওরা। অবস্থাটা ওদের এমন যে, মিয়ানমার সরকার ওদের কোন অস্তিত্বই স্বীকার করে না। এইসব পরিচয়হীন রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের পথে পা বাড়ায়। নৌপথে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে অসংখ্য রোহিঙ্গা ঢুবে মারা গেছে।
বিগত কয়েক দশক ধরে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশ ইন করছে। রুটিনমাফিক নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করছে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে। বর্তমানে সাত লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত অবস্থায় বসবাস করছে। যদিও রিফিউজি হিসেবে বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আরো কম। রোহিঙ্গাদের প্রতি যা করছে মিয়ানমার সরকার, তা সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধেই অপরাধ। এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে আরাকানে বিকশিত হতে থাকা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সুবিধা না দেয়া, গ্যাটো সৃষ্টি করে সেখানে অমানবিক পরিবেশে থাকতে বাধ্য করা, জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োগ করা, বিচারবর্হিভূতভাবে গ্রেফতার করা, মালিকানাস্বত্ব, সার্বজনীন শিক্ষা, চিকিৎসা, উপযোগ সেবা ও মৌলিক মানবাধিকার হতে বঞ্চিত করার মাধ্যমে নিমর্মতার শেষ সীমানাটুকু অতিক্রম করেছে মিয়ানমার সরকার।
নতুন করে ভয়াবহ মুসলিম নিধন অভিযান
যুগ যুগ ধরে মুসলিম নিধনের ধাবাহিকতায় গত ৩ জুন থেকে পূর্ব পরিকল্পিত ইতিহাসের নৃশংসতম এ গণহত্যা শুরু করেছে সন্ত্রাসী রাখাইন বৌদ্ধরা। রোহিঙ্গাদের হাতে বৌদ্ধ মহিলা নির্যাতনের অজুহাতে তারা এ গণহত্যার সূচনা করে। শুরুতেই কট্টরপন্থী সন্ত্রাসী বৌদ্ধরা ১০ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে শহীদ করে। গত রোববার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের তুয়ানগোকিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মুসলিম রোহিঙ্গারা জুমুয়াবার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করলে ভয়াবহ দাঙ্গা বেঁধে যায়।
মিয়ানমারের আকিয়াব শহরের রামবী গ্রামের এক রাখাইন শিক্ষিকা কর্তৃক ছাত্র পিঠানোকে কেন্দ্র করে অভিভাবক ও শিক্ষকদের গালিগালাজ ও উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, এতে এক শিক্ষিকা মারা যায়। এরই জের ধরে আকিয়াব শহর থেকে গাড়িযোগে একদল রোহিঙ্গা মুসলিম ইয়াঙ্গুন যাওয়ার পথে ৩ জুন টংগু নামক স্থানে পৌঁছলে রাখাইন যুবকেরা গাড়ির হেলপারসহ ১০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করে। ড্রাইভার কৌশলে পালিয়ে গিয়ে টংবু ইমিগ্রেশনকে অবহিত করে।
নির্মম এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে ৫ জুন বাদ যোহর ও আছরের নামায শেষে মুসলমানরা ইয়াঙ্গুন শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ ঘটনায় মুসলিম অধ্যুষিত পুরো আরাকান রাজ্যে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ইয়াঙ্গুনে শীর্ষ মুসলিম নেতারা বৈঠক করে। ৮ জুন শুক্রবারে জুমুয়ার নামাযে মুসলমানদের জমায়েত করে শান্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উক্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ৮ জুন পুরো আরকানে জুমুয়ার নামাযে মুসল্লীরা সমবেত হতে থাকে। মংডু শহরের মসজিদে জুমুয়ার নামায চলাকালে মংডুয়ে বৌদ্ধদের ইউনাইটেড হোটেল থেকে মসজিদে ও মুসল্লীদের উপর পাথর নিক্ষেপ শুরু করে।
অতঃপর রাখাইন বৌদ্ধরা সম্মিলিতভাবে মুসলিমদের উপর হামলা শুরু করে। হাজার হাজার মুসলমানদের শহীদ করা শুরু করে। মসজিদ-মাদরাসা, ঘর-বাড়ি পোড়ানো শুরু করে। সরকারি মদদে কারফিউ জারি করে সেনা, পুলিশ ও নাসাকা বাহিনীর উপস্থিতিতে রাখাইন বৌদ্ধরা মুসলমানদের গণহত্যা চালাচ্ছে। সংঘর্ষ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক এ দাঙ্গার যে খবরাখবর গণমাধ্যমে এসেছে তা খানিকটা একপেশে ও তথ্য গোপনের অপচেষ্টায় দুষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। কারণ প্রকাশিত খবরে এ দাঙ্গার মূল ঘটনা আড়ালে চলে গেছে এবং দাঙ্গার প্রকৃত উৎসকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বৌদ্ধদের প্রাধান্য থাকায় দেশটির প্রচারমাধ্যম তাদের নিয়ন্ত্রণে। মুসলমান বা রোহিঙ্গাদের তেমন খবরদারি নেই সেখানে।
এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে এক বার্মিজ নাগরিক বলেছে, রোহিঙ্গা হত্যা একটি ভালো কাজ। এদিকে যাদের বিরুদ্ধে সম্ভ্রমহরণের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু প্রতিশোধ নেয়ার নেশায় উন্মাতাল হয়ে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের উপর হামলা চালায় বৌদ্ধ রাখাইনরা। ধর্ষণের ঘটনাটি দুঃখজনক হলেও এর প্রতিশোধ এত নির্মম হতে হবে? আবার একই প্রশ্নে জর্জরিত রোহিঙ্গারাও। হামলার প্রতিবাদে তারা কেন সশস্ত্র সংঘাতের পথ বেছে নিল? এ প্রশ্ন দুটোর উত্তর খুঁজতে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের আশ্রয় নেয়ার কোন বিকল্প নেই। ধর্ম ও জাতিগত বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মধ্যে এর উত্তর পাওয়া যাবে। মিয়ানমারের সাম্প্রতিক দাঙ্গার প্রকৃতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা সংখ্যালঘু হলেও তাদের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা কখনও প্রকাশ করেনি মিয়ানমার সরকার। তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এর প্রমাণ পাওয়া যায় জাতিসংঘ নিযুক্ত মিয়ানমারের বর্তমান প্রতিনিধি ইয়ে মিয়িন্ট অংয়ের উদ্ধৃতি থেকে।
সে মুসলমান ধর্মানুসারী রোহিঙ্গাদের ‘বন্য ও বর্বর’ বলে উল্লেখ করেছে। তাছাড়া সেই ১৯৮২ সাল থেকে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু বলে ঘোষণা করে আসছে। তাদের দেশটির নাগরিকত্ব দেয়া হয় না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এরা বাংলাদেশ থেকে আগত বাঙালি আদিগোষ্ঠী। এদের সঙ্গে মিয়ানমারের কোন সম্পর্ক নেই। সে মতামত প্রতিষ্ঠা করতে মিয়ানমার সরকার তাদের উপর এমন অমানবিক নির্যাতন চালায়, যাতে করে তারা দেশ ছেড়ে পালায় অথবা দাসত্ব স্বীকার করে নিতে বাধ্য।
সংগৃহিতঃ Raysul Islam Redoy
✔পর্বঃ০২
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য ‘গ্যাটো' জাতীয় বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা করেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বেশ কয়েকটি বিশেষ বসবাসের স্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা থেকে ওরা অনুমতি ছাড়া বের হতে পারে না। সেই গ্যাটোগুলোর ভিতরে আবদ্ধ মানবেতর জীবনযাপন করে রোহিঙ্গারা। চিকিৎসা, শিক্ষা ও উপযোগ সেবার ব্যবস্থা এই গ্যাটোগুলোতে থাকলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও নিম্নমানের।
রোহিঙ্গাদের বিয়ে করার জন্যও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেয়া লাগে। এছাড়া দুটোর বেশি সন্তান নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে বিয়ে করায় ও দুজনের বেশি সন্তানের জন্ম দেয়ায় রোহিঙ্গা পরিবারের সন্তানদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এদের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার। এইসব পরিবারের সন্তানরা সরকারের ‘গ্যাটো ব্যবস্থা' তালিকাভুক্ত নয়, ফলে, এদের জীবন ফোঁড়ার উপরে বিষ ঘা এর মত। এরা গ্যাটোগুলোতে থাকতে পারে না।
আবার, গ্যাটোর বাইরেও থাকতে পারে না, কারণ, মিয়ানমারের নাগরিক নয় ওরা। অবস্থাটা ওদের এমন যে, মিয়ানমার সরকার ওদের কোন অস্তিত্বই স্বীকার করে না। এইসব পরিচয়হীন রোহিঙ্গারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের পথে পা বাড়ায়। নৌপথে সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে অসংখ্য রোহিঙ্গা ঢুবে মারা গেছে।
বিগত কয়েক দশক ধরে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশ ইন করছে। রুটিনমাফিক নির্যাতন করে রোহিঙ্গাদের বাধ্য করছে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে। বর্তমানে সাত লক্ষের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত অবস্থায় বসবাস করছে। যদিও রিফিউজি হিসেবে বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আরো কম। রোহিঙ্গাদের প্রতি যা করছে মিয়ানমার সরকার, তা সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধেই অপরাধ। এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে আরাকানে বিকশিত হতে থাকা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব সুবিধা না দেয়া, গ্যাটো সৃষ্টি করে সেখানে অমানবিক পরিবেশে থাকতে বাধ্য করা, জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োগ করা, বিচারবর্হিভূতভাবে গ্রেফতার করা, মালিকানাস্বত্ব, সার্বজনীন শিক্ষা, চিকিৎসা, উপযোগ সেবা ও মৌলিক মানবাধিকার হতে বঞ্চিত করার মাধ্যমে নিমর্মতার শেষ সীমানাটুকু অতিক্রম করেছে মিয়ানমার সরকার।
নতুন করে ভয়াবহ মুসলিম নিধন অভিযান
যুগ যুগ ধরে মুসলিম নিধনের ধাবাহিকতায় গত ৩ জুন থেকে পূর্ব পরিকল্পিত ইতিহাসের নৃশংসতম এ গণহত্যা শুরু করেছে সন্ত্রাসী রাখাইন বৌদ্ধরা। রোহিঙ্গাদের হাতে বৌদ্ধ মহিলা নির্যাতনের অজুহাতে তারা এ গণহত্যার সূচনা করে। শুরুতেই কট্টরপন্থী সন্ত্রাসী বৌদ্ধরা ১০ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে শহীদ করে। গত রোববার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের তুয়ানগোকিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে মুসলিম রোহিঙ্গারা জুমুয়াবার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করলে ভয়াবহ দাঙ্গা বেঁধে যায়।
মিয়ানমারের আকিয়াব শহরের রামবী গ্রামের এক রাখাইন শিক্ষিকা কর্তৃক ছাত্র পিঠানোকে কেন্দ্র করে অভিভাবক ও শিক্ষকদের গালিগালাজ ও উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, এতে এক শিক্ষিকা মারা যায়। এরই জের ধরে আকিয়াব শহর থেকে গাড়িযোগে একদল রোহিঙ্গা মুসলিম ইয়াঙ্গুন যাওয়ার পথে ৩ জুন টংগু নামক স্থানে পৌঁছলে রাখাইন যুবকেরা গাড়ির হেলপারসহ ১০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করে। ড্রাইভার কৌশলে পালিয়ে গিয়ে টংবু ইমিগ্রেশনকে অবহিত করে।
নির্মম এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে ৫ জুন বাদ যোহর ও আছরের নামায শেষে মুসলমানরা ইয়াঙ্গুন শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ ঘটনায় মুসলিম অধ্যুষিত পুরো আরাকান রাজ্যে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ইয়াঙ্গুনে শীর্ষ মুসলিম নেতারা বৈঠক করে। ৮ জুন শুক্রবারে জুমুয়ার নামাযে মুসলমানদের জমায়েত করে শান্ত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উক্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ৮ জুন পুরো আরকানে জুমুয়ার নামাযে মুসল্লীরা সমবেত হতে থাকে। মংডু শহরের মসজিদে জুমুয়ার নামায চলাকালে মংডুয়ে বৌদ্ধদের ইউনাইটেড হোটেল থেকে মসজিদে ও মুসল্লীদের উপর পাথর নিক্ষেপ শুরু করে।
অতঃপর রাখাইন বৌদ্ধরা সম্মিলিতভাবে মুসলিমদের উপর হামলা শুরু করে। হাজার হাজার মুসলমানদের শহীদ করা শুরু করে। মসজিদ-মাদরাসা, ঘর-বাড়ি পোড়ানো শুরু করে। সরকারি মদদে কারফিউ জারি করে সেনা, পুলিশ ও নাসাকা বাহিনীর উপস্থিতিতে রাখাইন বৌদ্ধরা মুসলমানদের গণহত্যা চালাচ্ছে। সংঘর্ষ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক এ দাঙ্গার যে খবরাখবর গণমাধ্যমে এসেছে তা খানিকটা একপেশে ও তথ্য গোপনের অপচেষ্টায় দুষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। কারণ প্রকাশিত খবরে এ দাঙ্গার মূল ঘটনা আড়ালে চলে গেছে এবং দাঙ্গার প্রকৃত উৎসকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বৌদ্ধদের প্রাধান্য থাকায় দেশটির প্রচারমাধ্যম তাদের নিয়ন্ত্রণে। মুসলমান বা রোহিঙ্গাদের তেমন খবরদারি নেই সেখানে।
এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে এক বার্মিজ নাগরিক বলেছে, রোহিঙ্গা হত্যা একটি ভালো কাজ। এদিকে যাদের বিরুদ্ধে সম্ভ্রমহরণের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু প্রতিশোধ নেয়ার নেশায় উন্মাতাল হয়ে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের উপর হামলা চালায় বৌদ্ধ রাখাইনরা। ধর্ষণের ঘটনাটি দুঃখজনক হলেও এর প্রতিশোধ এত নির্মম হতে হবে? আবার একই প্রশ্নে জর্জরিত রোহিঙ্গারাও। হামলার প্রতিবাদে তারা কেন সশস্ত্র সংঘাতের পথ বেছে নিল? এ প্রশ্ন দুটোর উত্তর খুঁজতে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের আশ্রয় নেয়ার কোন বিকল্প নেই। ধর্ম ও জাতিগত বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মধ্যে এর উত্তর পাওয়া যাবে। মিয়ানমারের সাম্প্রতিক দাঙ্গার প্রকৃতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা সংখ্যালঘু হলেও তাদের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা কখনও প্রকাশ করেনি মিয়ানমার সরকার। তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এর প্রমাণ পাওয়া যায় জাতিসংঘ নিযুক্ত মিয়ানমারের বর্তমান প্রতিনিধি ইয়ে মিয়িন্ট অংয়ের উদ্ধৃতি থেকে।
সে মুসলমান ধর্মানুসারী রোহিঙ্গাদের ‘বন্য ও বর্বর’ বলে উল্লেখ করেছে। তাছাড়া সেই ১৯৮২ সাল থেকে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু বলে ঘোষণা করে আসছে। তাদের দেশটির নাগরিকত্ব দেয়া হয় না। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এরা বাংলাদেশ থেকে আগত বাঙালি আদিগোষ্ঠী। এদের সঙ্গে মিয়ানমারের কোন সম্পর্ক নেই। সে মতামত প্রতিষ্ঠা করতে মিয়ানমার সরকার তাদের উপর এমন অমানবিক নির্যাতন চালায়, যাতে করে তারা দেশ ছেড়ে পালায় অথবা দাসত্ব স্বীকার করে নিতে বাধ্য।
সংগৃহিতঃ Raysul Islam Redoy