Get on Google Play

লিখিত পরীক্ষা বিষয়ক
#2134
৩৬তম বিসিএস ছিল আমার প্রথম বিসিএস পরীক্ষা। পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেক চিন্তিত ছিলাম বিশাল সিলেবাস দেখে।


এত এত টপিক কিভাবে শেষ করব, কিভাবে উত্তর সাজাব—তা-ই ছিল চিন্তার কারণ। গতানুগতিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে বুঝলাম, এভাবে আর যা-ই হোক, বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করা যাবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি আমার মতো করে প্রস্তুতি নেব। বুঝতে পারলাম, কিছু বিষয় বুঝতে হয়, কিছু মুখস্থ করতে হয় আর কিছু টপিক নিয়মিত পড়তে হয়। সংবিধান, বিভিন্ন সমীক্ষা, পত্রিকা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে খাতায় টপিকভিত্তিক লিখে রাখতাম। মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসের বিষয়গুলোর মনোযোগ দিয়ে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ তারিখ, সাল, ব্যক্তির নাম লিখে রাখতাম। আমার একটা খাতা ছিল, যেখানে শুধু টপিকভিত্তিক তথ্য লিখে রাখতাম। প্রতিদিন সকালে তাতে চোখ বুলাতাম। পত্রিকার বিভিন্ন কলামিস্টের নাম লিখে রাখতাম।

এতে করে প্রয়োজনীয় জায়গায় তাঁদের কোট করা সহজ হয়েছে। কোন প্রশ্ন কিভাবে লিখব, তার পরিকল্পনা করতে অনেক সময় ব্যয় করেছি। ঢালাওভাবে প্রশ্ন-উত্তর মুখস্থ না করে, যেকোনো টপিকের মূল কথাটা বিভিন্ন বই থেকে পড়ে বোঝার চেষ্টা করেছি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের মানচিত্র আঁকা শিখেছিলাম, যদিও এখনো ভালো আঁকতে পারি না। প্রতিদিন চেষ্টা ছিল পত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতাটা দেখার। প্রয়োজনীয় তথ্য পেলে খাতায় লিখে রাখতাম। কোনো টপিক না বুঝলে বা কোনো তথ্য না পেলে গুগলের শরণাপন্ন হতাম।


বাংলাদেশ বিষয়াবলি

বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয়। এ দুটি বিষয়ে বেশির ভাগ প্রার্থী লেখার কৌশল ও পূর্বপরিকল্পনার অভাবে ভালো নম্বর তুলতে ব্যর্থ হয়। কৌশলী হলে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকা সম্ভব।

❏ নম্বর বণ্টন

বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য ২০০ নম্বর বরাদ্দ। সাধারণত প্রতিটি ২০ নম্বরের ১০টি প্রশ্ন থাকে। ১০টি প্রশ্নেরই উত্তর করতে হয়। সিলেবাসে নির্দিষ্ট কোনো মানবণ্টন না থাকায় প্রশ্ন হতে পারে যেকোনোভাবে। প্রতিটি প্রশ্নে ৫ নম্বরের ৪টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন অথবা ১০ নম্বরের ২টি প্রশ্ন থাকতে পারে। আবার ২০ নম্বরের প্রশ্নও হতে পারে।

❏ প্রস্তুতি ও লেখার কৌশল

বিগত লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো শুরুতে পড়ে নিলে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে। প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয়।

১) প্রতিটি টপিক সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে। বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে প্রশ্নের উত্তর যত তথ্যবহুল হবে, লেখার গ্রহণযোগ্যতা তত বাড়বে। তাই প্রতিটি টপিক পড়ার সময় প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্তগুলো গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে।

২) দৈনিক পত্রিকাগুলোর কলাম নিয়মিত পড়তে পারেন। উদ্ধৃৃতি হিসেবে তাঁদের কথা ব্যবহার করলে উত্তরের মান বাড়বে।

৩) সংবিধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধান থেকেই ৪০-৫০ নম্বরের প্রশ্ন হতে পারে। পড়ার সময় প্রতিটি অনুচ্ছেদের মূলকথা বুঝে পড়তে হবে। সংবিধানের সংশোধনী ও প্রস্তাবনা পড়তে হবে।

৪) অর্থনীতি-বিষয়ক টপিকগুলো পড়ার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক কিছু সংখ্যাভিত্তিক তথ্য অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে খাতায় লিখে রাখলে রিভাইস করতে সুবিধা হবে।

৫) মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ সাল, তারিখ, তথ্য, ঘটনা ইত্যাদি দাগিয়ে পড়তে পারেন।

৬) বাংলাদেশের মানচিত্র, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গ্রাফ বা চিত্র আলাদাভাবে খাতায় আঁকার চর্চা করলে প্রস্তুতিতে কাজে দেবে।

৭) বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে সময় ব্যবস্থাপনা খুব জরুরি। ৪ ঘণ্টার পরীক্ষায় লিখতে হয় প্রচুর। এ ক্ষেত্রে কত নম্বরের প্রশ্ন কত সময়ে লিখবেন, তা আগেই ঠিক করে নিন।

৮) বেশি লিখলে বেশি নম্বর, ধারণাটি ভুল। তথ্যবহুল প্রাসঙ্গিক লেখা বেশি গ্রহণযোগ্য। ঢালাওভাবে না লিখে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত, চার্ট ইত্যাদি দিয়ে উত্তর সাজান।

৯) সংবিধান লেখার ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ নম্বর ঠিক রেখে মূলভাব নিজের ভাষায় লিখতে পারেন। হুবহু লেখা জরুরি নয়।

১০. গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা উপাত্ত রঙিন কালি দিয়ে লিখতে পারেন। রঙিন কালি দিয়ে না লিখতে চাইলে এমনভাবে লিখুন, যাতে ওই অংশটুকু সহজেই চোখে পড়ে। অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যগুলো টেবিল, চার্ট বা গ্রাফ আকারে লিখতে পারেন।

❏ সহায়ক বইপত্র

নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ‘পৌরনীতি ও সুশাসন দ্বিতীয় পত্র’, ড. মাহবুবুর রহমানের ‘বাংলাদেশের ইতিহাস (১৯৪৭-১৯৭১)’, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, সর্বশেষ প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষা, বিচারপতি হাবিবুর রহমানের ‘নাগরিকদের জানা ভালো’ সহায়ক হবে। এ ছাড়া নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পড়তে হবে। প্রয়োজনমতো ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে হবে

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি

❏ নম্বর বণ্টন

লিখিত পরীক্ষায় আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে মোট নম্বর ১০০। ৩ ঘণ্টার এ পরীক্ষায় প্রশ্ন হয় ৩ ধরনের। প্রথম অংশে

Conceptual Issues, ৪ নম্বরের ১২টি প্রশ্ন থাকে। ১০টির উত্তর করতে হয়। দ্বিতীয় অংশে

Empirical Issues, ১৫ নম্বরের ৪টি প্রশ্ন থাকে। ৩টির উত্তর করতে হয়। শেষ অংশে

Problem Solving, ১৫ নম্বরের একটি সমস্যার সমাধানমূলক প্রশ্ন থাকে।

❏ প্রস্তুতি ও লেখার কৌশল সহায়ক বই

বিগত লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নগুলো আগে পড়ে নিলে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হবে। এতে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পাবেন।

১) Conceptual Issues পড়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি কনসেপ্ট সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে। বিভিন্ন কনসেপ্টের সংজ্ঞা, শ্রেণিবিভাগ, বৈশিষ্ট্য পড়তে হবে। এই অংশের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিপ্রদত্ত সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, উদাহরণ দিতে হবে। মূল কথায় উত্তর করতে হবে।

২) Empirical Issues-এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, ভূ-রাজনীতি, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি টপিকের ওপর প্রশ্ন হয়ে থাকে। এই অংশের উত্তর প্যারা করে করে লিখতে পারেন।

৩) দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক লেখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সম্পর্ক লিখুন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সম্পর্ক, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সম্পর্ক, রাজনৈতিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক, চুক্তি, বাণিজ্য, বাণিজ্য ঘাটতি ইত্যাদি বিষয় থাকতে পারে। এসব বিষয়ের ওপর প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে লিখে রাখুন। পরীক্ষার আগে রিভাইস করতে সুবিধা হবে।

৪) দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বা ভূ-রাজনীতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানচিত্র আঁকার চর্চা করুন এবং লেখার সময় মানচিত্র দেওয়ার সুযোগ থাকলে দিয়ে আসুন। নিখুঁত আঁকতে হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। তবে যেন দেখে বোঝা যায়, কোন অঞ্চলের বা কোন দেশের মানচিত্র।

৫) সমস্যা সমাধানমূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে সাধারণত সাম্প্রতিক সময়ের কোনো ঘটনার ওপর প্রশ্ন হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত দৈনিক পত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতা পড়তে হবে।

৬) সমস্যার সমাধান লেখার ক্ষেত্রে পয়েন্ট আকারে উত্তর সাজাতে পারেন। ভূমিকা, প্রেক্ষাপট, বর্তমান অবস্থা, আন্তর্জাতিক সমাধান, নিজস্ব সুপারিশ বা সমাধান, সুপারিশের পক্ষে যুক্তি, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, ফলাফল বা প্রভাব, উপসংহার ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। তথ্যবহুল উত্তর লিখতে হবে।

৭) প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানদের নাম, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নাম আলাদাভাবে খাতায় লিখে রাখুন। এতে উত্তর লেখার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।

৮) প্রতিটি প্রশ্ন লেখার ক্ষেত্রে নিজের ভাষায় ভূমিকা এবং মন্তব্য লেখার চেষ্টা করুন।

৯) আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে উত্তর লেখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন টেকনিক্যাল শব্দ ইংরেজিতে লেখাই ভালো।

❏ সহায়ক বইপত্র

শওকত আরা রচিত ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’, তারেক শামসুর রেহমানের ‘বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি’, শাহ মো. আব্দুল হাইয়ের ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সংগঠন, পররাষ্ট্রনীতি’, ড. নিহার কুমার সরকারের ‘ছোটদের রাজনীতি ছোটদের অর্থনীতি’ সহায়ক হবে। এ ছাড়া দৈনিক পত্রিকা, ইন্টারনেট, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নিয়মিত খোঁজ রাখুন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বা বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার জন্য অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমানের ব্লগ সাইট (tsrahmanbd.blogspot.com) দেখতে পারেন।

ইসমাইল হোসেন

    বিষয় : রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আপন বিভাগের “[…]

    বিষয় : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্[…]

    Amendment of Vacancy announcement for the post of […]