Get on Google Play

লিখিত পরীক্ষা বিষয়ক
#1887
সানশাইন পলিসি” হল দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃক উত্তর কোরিয়ার সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার নীতি।
২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ঠান্ডা যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে ১৯৪৫ সালে কোরিয়া ভেঙ্গে যাওয়ার পর তাদের আর এক হওয়া সম্ভব হয় নি। রাজনৈতিক ভাবে সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী ব্লকে চলে যায় উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনৈতিক অবস্থাও তলানিতে ছিল।ভূ-রাজনৈতিক কারণে তথা দক্ষিণ চীন সাগরে ও এশিয়া প্যাসিফিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিশ্ব মোড়ল পুঁজিবাদী যুক্তরাষ্ট্র ও সমাজতান্ত্রিক চীন , রাশিয়ার ক্রীড়ানকে পরিণত হয় দুই কোরিয়া । পরমানু শক্তি ও তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নত হওয়া দুই কোরিয়া ১৯৫০ সালে যুদ্ধও বেঁধে যায় । দুই কোরিয়া তথা দুই সতীনের লড়াইয়ের ফায়েদা লুটে নেয় বিশ্ব মোড়লরা । ১৯৫৩ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের unity for peace resolution এর মাধ্যমে যুদ্ধ বিরতি হলেও মাঝে মাঝেই পারমানবিক অস্ত্রের ঝনঝনানিতে যুদ্ধের দামামা বাজায় দুই কোরিয়া ;তাদের সাথে সুর মিলিয়ে গর্জন করতে বসে থাকে না তাদের মিত্ররা । দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন আর উত্তেজনাকে নিরসনে গেল শতকের '৯০ এর দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে জং এক নীতি গ্রহণ করেন যা সানশাইন পলিসি । কিম দায়ে জং এর এই নীতির ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালের ১৩ জুন দু দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । ২০১৩ সালে আবার দুই কোরিয়া পারমানবিক যুদ্ধের হুঁশিয়ারী দিয়ে আবার সম্পর্ক খারাপ করে । ২৭ এপ্রিল ২০১৮ সীমান্তবর্তী গ্রাম পানমুনজামে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন দীর্ঘ ৬৮ বছর পর যে শান্তির ডাক দিয়েছে তা পরোক্ষভাবে দীর্ঘদিনের সানশাইন পলিসির এর বাইপ্রোডাক্ট বললেও ভুল হবে না ।

অলিম্পিক ডিপ্লোম্যাসি বা অলিম্পিক কূটনীতি কী?
বিবদমান দুই দেশের বিভিন্ন ট্রাকের কূটনৈতিক পর্যালোচনা যখন বন্ধ থাকে তখন সেটি নিরসনের লক্ষ্যে বা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনুরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে মূলত অলিম্পিক গেমসে দুই দেশের আ্যথলেটদের কে অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে কূটনৈতিক তৎপরতা দেখা যায় অলিম্পিক ডিপ্লোম্যাসি বা অলিম্পিকস কূটনীতি বলা হয় যা অনেকটা পিং পং ডিপ্লোম্যাসি এর মত।এই কূটনৈতিক তৎপরতা যে সবসময় পজিটিভই হয় তা নয়; কখনো কখনো শত্রুতা ও প্রতিযোগিতাকে আরো তীব্রতরও করে।
প্রাচীন গ্রিসে আদি অলিম্পিক ছিল সমাজের যাঁরা নিয়ন্ত্রক তাঁদের বিনোদনের উদ্দেশ্যে আয়োজিত নানা রকম প্রতিযোগিতা, যেখানে সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিল ক্রীতদাস। ফলে রাজনৈতিক বিভাজন সেখানে ছিল অলিম্পিকের একটি আবশ্যকীয় উপাদান।১৮৯৬ সালে ব্যারন কুবার্ত কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অলিম্পিক যে রাজনৈতিক বিভাজন থেকে দূরে তা আশা করাই যায় ।
৯ ফেব্রুয়ারি ,২০১৮ তে কোরীয় উপদ্বীপের যুদ্ধংদেহী দুই কোরিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শীতকালীন অলিম্পিক গেমসটি সেকেন্ড ট্রাক কূটনীতির মতো কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে । দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাংয়ে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকসে উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে ইতিবাচক সাডা পাওয়ায় অলিম্পিকস কূটনীতি সফলতার মুখ দেখে । পিয়ংচ্যাংয়ের অলিম্পিকসে যুদ্ধংদেহী দুই কোরিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কোরিয়ার পতাকার নিচে দুই দেশের ক্রীড়াবিদদের অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কুচকাওয়াজে যোগ দেওয়া এবং নারীদের আইস হকি প্রতিযোগিতার জন্য সম্মিলিত একটি দল ঠিক করে নেওয়া। বিগত দিনগুলোর বাগাড়ম্বরপূর্ণ পদধ্বনির আলোকে সাম্প্রতিক এই উদ্যোগকে রীতিমতো বৈপ্লবিক আখ্যায়িত করা যায়।অলিম্পিক-প
রবর্তী সময়ে এই ঐক্যবদ্ধতা বা শান্তির ঐক্যতার বিস্তৃত হতে থাকে ; কেননা , এর পরই ২৭ এপ্রিল ২০১৮ সীমান্তবর্তী গ্রাম পানমুনজামে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন দীর্ঘ ৬৮ বছর পর যে শান্তি প্রস্তাবে যে একমত হয়েছেন তা পরোক্ষভাবে অলিম্পিক ডিপ্লোম্যাসিরই বাইপ্রোডাক্ট বললেও ভুল হবে না । সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় কোরীয় উপদ্বীপে অলিম্পিক ডিপ্লোম্যাসি সফলতার মুখ দেখেছে

পিং পং ডিপ্লোম্যাসি
১৯৭১ সালে চীনের চেয়ারম্যান মাও সে তুঙয়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে চীন সফর করে যুক্তরাষ্ট্র পিংপং দল। পরের বছর ফিরতি আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র যায় চীনা পিংপং দল। এর মাধ্যমে অবসান ঘটে ২০ বছর ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্র-চীন কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের, এবং নতুন করে দুই রাষ্ট্রের মাঝে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। পিংপং খেলাকে কেন্দ্র করে দুই রাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছিল বলে একে 'পিংপং ডিপ্লোম্যাসি' হিসেবে অভিহিত করা হয়।
পিংপং ডিপ্লোম্যাসির প্রভাব
১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল চীনের উপর ২০ বছর ধরে থাকা ভ্রমণ ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৭১ সালের অক্টোবরে ভোটের মাধ্যমে জাতিসংঘে বৈধ পদ লাভ করে চীন। পাশাপাশি তারা খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই অন্যান্য দেশগুলোর সাথেও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সক্ষম হয়।
১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চীন সফর সমাপ্ত হয় 'সাংহাই কম্যুনিক' এর মাধ্যমে। এটি হলো একটি দালিলিক চুক্তিতে স্বাক্ষর, যেখানে ভবিষ্যৎ যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল। এই চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট দুই দেশের সার্বভৌমত্ব ও আভ্যন্তরীণ বিষয়াদির প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, জনগণের মধ্যে যোগাযোগের পথ সুগম এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে সর্বোচ্চ লাভজনক পন্থা বেছে নেয়ার ব্যাপারে উল্লেখ ছিল।
১৯৭৩ সালের মে মাসে উভয় দেশের রাজধানীতে 'লিয়াজোঁ অফিস' স্থাপনের মাধ্যমে পারস্পরিক রাজনৈতিক আলোচনার পথ সুগম করা হয়।
১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে পিপলস রিপাবলিক অব চায়নাকে স্বীকৃতি দেয়।
সর্বোপরি, চীনের সমর্থন সোভিয়েত ইউনিয়নের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে হেলে পড়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনেও যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক একটি বিরাট ভূমিকা রেখেছিল।
পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, চীনের নেতারা নাকি বারবারই তাকে মনে করিয়ে দিয়ে আনন্দ পাচ্ছিলেন যে, ২০ বছর ধরে কূটনৈতিকরা যেখানে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে সামান্য পিংপং বলের মাধ্যমে তা সক্ষম হয়েছে!
আসলেই তো, ভাবতেই অবাক লাগে যে সামান্য পিংপং খেলার সূত্র ধরেই জোড়া লেগেছিল বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দুটি রাষ্ট্রের সম্পর্ক। আর এই পিংপং খেলা নিয়ে সবচেয়ে উপযুক্ত উপমাটি দিয়েছেন মাও নিজেই। তিনি বলেছেন, "The little ball moves the Big Ball"।

Collected

    বিষয় : রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আপন বিভাগের “[…]

    বিষয় : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্[…]

    Amendment of Vacancy announcement for the post of […]