Get on Google Play

লিখিত পরীক্ষা বিষয়ক
#1803
****বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ****

বাতায়ন

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। ধীরগতিতে হলেও এ শিল্পের উন্নয়ন লক্ষ করা যাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিক অগ্রযাত্রায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার কারণে পর্যটন শিল্পের এ অগ্রগতি।

ট্যুরিজম জরিপে বাংলাদেশ

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কমপেটেটিভনেস রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম বলা হয়েছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ৫ ধাপ এগিয়েছে যা ২০১৭ সালে ছিল ১২৫তম। মূলত নিরাপত্তা, সংস্কৃতি, বাসস্থান, বন্দর ও বিমান পরিবহন অবকাঠামো, আর্থিক মান ও স্থিতিশীল ভ্রমণের সুযোগসহ ৯০টি মানদণ্ড বিবেচনা করে ১৪০ দেশের র‌্যাংকিং করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। এতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১২০তম।

পর্যটন ক্ষেত্রের অগ্রগিত

পর্যটন খাতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা কম থাকা সত্ত্বেও এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পর্যটনে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সুবাদে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ফলে এ দেশের পর্যটন শিল্পে উল্লেখযোগ্য উন্নতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশের পর্যটন খাতে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে নিরাপত্তা খাতে, যাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩ থেকে ১০৫-এ উন্নীত হয়েছে। অতীতে নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পর্যটনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২ ধাপ উন্নতি হয়ে ১০৯-এ এসেছে বাংলাদেশের অবস্থান। পাশাপাশি সারা বিশ্বে বাংলাদেশের পর্যটনে ব্র্যান্ড ইমেজ বৃদ্ধি পেয়েছে যা ৯৭ থেকে ৭৭-এ এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) প্রস্তুতিতেও বাংলাদেশ ১১৬ থেকে এগিয়ে ১১১তম হয়েছে। বিপণন ও পণ্যের মূল্য প্রতিযোগিতায় ৮৯ থেকে এগিয়ে ৮৫তম। ভূমি ও বন্দর অবকাঠামোতে ৭৪ থেকে এগিয়ে ৬০তম এবং পরিবেশ সুরক্ষায় ১১৬তম। বলা হয়, বাংলাদেশ ভ্রমণ ও পর্যটন সক্ষমতায় সবচেয়ে বেশি উন্নতি করার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

পর্যটন ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ

অনেক সূচকে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকলেও এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ততায় বাংলাদেশ পিছিয়ে ১০৪ থেকে ১১৪তম হয়েছে। এতে মূলত বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভিসা জটিলতার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের ভিসা ব্যবস্থা একটি জটিল প্রক্রিয়া। পাশাপাশি পর্যটক সেবা অবকাঠামোতে বাংলাদেশ বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও কমাতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়নে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে।

পর্যটন ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ

নিরাপত্তা ক্ষেত্র: বাংলাদেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে বিগত এক দশকের বিভিন্ন পরিকল্পনার ভূমিকা অনেক। বিশেষ করে দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের লক্ষ্যে টুরিস্ট পুলিশ বড় ভূমিকা পালন করেছে। দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তায় ভূমিকা পালন করছে। পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাংলাদেশের মনোরম প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময় পরিবেশ- এ ভিশন নিয়ে টুরিস্ট পুলিশ দেশের দর্শনীয় স্থান এবং পর্যটনসংশ্লিষ্ট স্থাপনার নিরাপত্তা বিধান; বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাস-লঞ্চ টার্মিনাল থেকে পর্যটকদের গমনাগমনের সময়ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করছে।

পর্যটন শিল্পের ক্রমবিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে ফ্রন্ট ডেস্ক ও হেল্পডেস্ক স্থাপন করার মাধ্যমে বিনোদনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে পুলিশের এ স্বতন্ত্র বিশেষায়িত ইউনিট নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ: পর্যটন এলাকায় সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধসমূহের প্রকৃতি, সংঘটনের পদ্ধতি বিশ্লেষণ, এ সংক্রান্ত অপরাধ চিত্র এবং অপরাধীদের তালিকা প্রস্তুত করছে। পর্যটন শিল্প এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে অপরাধসংশ্লিষ্ট তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং পুলিশ বাহিনীর সংশ্লিষ্ট যে কোনো শাখা, বিভাগ, সংস্থা বা ইউনিটের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্যাবলির পারস্পরিক আদান-প্রদানেও তারা সাবর্ক্ষণিক তৎপর রয়েছে। টুরিস্ট পুলিশ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন দর্শনীয় পর্যটন স্থানে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ টুরিস্ট পুলিশের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। এতে করে তাদের মধ্যে পর্যটন শিল্প সম্পর্কে তৈরি হচ্ছে সম্যক ধারণা। এর ফলে টুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তার পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে আস্থার জায়গা হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

অবকাঠামেগত উন্নয়ন: পক্ষান্তরে, দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কক্সবাজার বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকার এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। যার ফলে পর্যটন শিল্পে নীরব বিপ্লব সংগঠিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এসব উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড় বেঁধে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ অন্যতম। এটা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেবে।

পর্যটন পার্ক: বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজারে তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেছে বর্তমান সরকার। প্রতি বছরে এতে বাড়তি ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ তিনটি টুরিজম পার্ক হল সাবরাং টুরিজম পার্ক, নাফ টুরিজন পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকোটুরিজম পার্ক। এসব স্থানে প্রায় ৪০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তাছাড়া ২০১৮ সালের ওআইসির আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ঢাকাকে ওআইসি পর্যটন শহর-২০১৯ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এতে করে মুসলিম দেশগুলোর অনেক পর্যটকের কাছে বাংলাদেশ নতুনভাবে পরিচিতি লাভ করবে। এভাবে পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের ইমেজ আরও বৃদ্ধি পাবে।

উপসংহার

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের মূল উপাদান হতে পারে এ দেশের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ। পাহাড়-পর্বত, নদী-সমুদ্র, বনাঞ্চল, হাওরসহ বৈচিত্র্যের সম্ভার আমাদের এ দেশ। এ সম্পদগুলো নিয়ে সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা গেলে এ দেশে দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আমাদের বর্তমান ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজতর করতে হবে। আমাদের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরের কর্মকাণ্ডকে আরও পর্যটকবান্ধব করতে হবে। যেসব সূচকে আমাদের দেশ পিছিয়ে আছে তাতে আরও মনোযোগ দিতে পারলে বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করতে পারবে নিঃসন্দেহে। মহিদ'স মাসিক সম্পাকীয় সমাচার সংখ্যায় থাকছে।

সংগৃহিতঃ-
    Similar Topics
    TopicsStatisticsLast post
    0 Replies 
    930 Views
    by mousumi
    0 Replies 
    16112 Views
    by tasnima
    0 Replies 
    197 Views
    by mousumi
    0 Replies 
    77 Views
    by raihan
    0 Replies 
    356 Views
    by sajib

    বিষয় : রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আপন বিভাগের “[…]

    বিষয় : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্[…]

    Amendment of Vacancy announcement for the post of […]