Get on Google Play

লিখিত পরীক্ষা বিষয়ক
By masum
#1745
এই পোস্টটি ”বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন " সম্পর্কিত যে কোন ধরনের ফোকাস Writing এর উত্তর করা যাবে।

★★ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন ★★

★ জলবায়ু পরিবর্তন
বিশ্বব্যাপি জলবায়ুর পরিবর্তন শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কারণেই নয়, এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণও সামিল। জলবায়ু পরিবর্তন বলতে অস্থায়ী কিংবা স্থায়ী নেতিবাচক এবং ইতিবাচক প্রভাবকে বোঝাচ্ছে।

★ ভূমণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি (Global Warming)
ভূমন্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন (Global Warming) হলো জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বিশেষ ঘটনা। সাধারণত সময় বা কারণ-নিরপেক্ষ হলেও বৈশ্বিক উষ্ণায়ণ বলতে মূলত ইদানিংকার উষ্ণতা বৃদ্ধিকেই নির্দেশ করা হয় এবং এটি মানুষের কার্যক্রমের প্রভাবে ঘটেছে। UNFCCC বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে মানুষের কারণে সৃষ্ট, আর জলবায়ুর বিভিন্নতাকে অন্য কারণে সৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তন বোঝাতে ব্যবহার করে। কিছু কিছু সংগঠন মানুষের কারণে পরিবর্তনসমূহকে মনুষ্যসৃষ্ট (anthropogenic) জলবায়ুর পরিবর্তন বলে।

★ উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণসমূহ
গ্রীনহাউজ গ্যাসসমূহ:
কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড এবং সালফারের অন্যান্য অক্সাইডসমূহ, নাইট্রিক অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুওরো কার্বন ইত্যাদি।

ওজোনস্তর ক্ষয়:
কার্বন ডাই অক্সাইড বিকিরণগত চাপ প্রয়োগ করে ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি এলাকায় যে উষ্ণায়ন সৃষ্টি করে, সেই একই প্রক্রিয়া অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে স্ট্র্যাটোমণ্ডল-কে শীতল করে। আর এই শীতলায়ন ওজোন স্তরের ক্ষয় ও ওজোন ফুটোর সংখ্যা বৃদ্ধি করে। বিপরীতভাবে, ওজোন স্তরের ক্ষয় জলবায়ু ব্যবস্থার ওপর বিকিরণগত চাপ সৃষ্টি করে। এখানে দুইটি বিপরীত ক্রিয়া কাজ করছে: ওজোন স্তর ক্ষয়ে যাওয়ায় আরো বেশি সৌর বিকিরণ পৃথিবীতে আসতে পারে, ফলে স্ট্র্যাটোমণ্ডলের পরিবর্তে ট্রপোমণ্ডল উত্তপ্ত হয়।

★ চারটি মানদন্ডে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিবেচনা
কোনো দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সত্যিই পড়ছে কিনা, তা চারটি মানদন্ডে বিবেচনা করা হয়:
১. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ
২. কোথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে
৩. সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা কোথায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে
৪. ক্ষতিগ্রস্থ দেশটি ক্ষতি মোকাবিলায় বা অভিযোজনের জন্য এরই মধ্যে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে।

বাংলাদেশে একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক অনেক বেশি। মালদ্বীপ, টুভ্যালু, টোবাগো -এদের সবার ক্ষেত্রেই এই সবগুলো মানদন্ডই কার্যকর নয়। তাছাড়া মালদ্বীপের মোট জনসংখ্যা বাংলাদেশের অনেক জেলার জনসংখ্যার চেয়েও কম। তাই এই চারটি মানদন্ডেই বাংলাদেশ, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকায় শীর্ষে।

★ জলবায়ু পরিবর্তনে ইতিবাচক প্রভাব
# পলি পড়ে নতুন ভূমি গঠন, সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ বৃদ্ধি
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের প্রাকৃতিক সম্পদবিষয়ক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেস (CEGIS)-এ গবেষণাপ্রসূত ফলাফল অনুযায়ী জানাচ্ছে যে, হিমালয় থেকে প্রতি বছর ১০০ টন পলি এসে সমুদ্রে পড়ে আর তা সমুদ্রের জোয়ার-ভাটায় এসে উপকূলে জমা হয়। হিমালয়কেন্দ্রিক নদীগুলো হয়ে যে পলি বাংলাদেশে আসে, তার তিন ভাগের এক ভাগ দেশের ভেতরের নদী ও নদীতীরে জড়ো হয়। এর এক অংশ নোয়াখালী, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর এলাকার উপকূলীয় নদী, এবং বাকি অংশ সমুদ্র হয়ে (সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড) ইন্দোনেশিয়ার দিকে চলে যায়, এভাবে নতুন ভূমি জেগে ওঠে।আগামী ১০০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে দেশের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোতে পানির পরিমাণ বাড়লেও একই সঙ্গে পলির পরিমাণও বাড়বে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মেঘনা হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র সক্রীয় বদ্বীপ এলাকা, যেখানে ভূমি এখনো গঠিত হচ্ছে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার সীমানায় অবস্থিত পশুর, শিবসা ও বলেশ্বর নদী দিয়ে প্রচুর পরিমাণ পলি এসে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে জড়ো হচ্ছে।

★ জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব
# বৃষ্টিপাত হ্রাস
# লবণাক্ততা বৃদ্ধি
# অস্বাভাবিক তাপমাত্রা
# ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস
# সুপেয় পানির অভাব
# প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস
# মৎস্যসম্পদ হ্রাস
# জীবজন্তুর অবলুপ্তি বা সংখ্যাগত বিপুল তারতম্য
# উদ্ভিদ প্রজাতি ধ্বংস
# কৃষিভিত্তিক উৎপাদন হ্রাস বা ধ্বংস
# প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি
# জলোচ্ছাস
# অতিবৃষ্টি ও তীব্র বন্যা
# নদীভাঙন
# সুনামির সম্ভাবনা

# সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি (SLR)
UNFCCC'র দেয়া তথ্যমতে, বিংশ শতাব্দিতে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা ১০-২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে এবং ২০১১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আরো ১৮-৫৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়লে মালদ্বীপসহ তলিয়ে যাবে উপকূলবর্তী দেশ বাংলাদেশও।
জাতিসংঘের আন্তসরকার জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেল IPCC-এর তথ্যমতে ২০৫০ খ্রিস্টাব্দে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের অন্তত ১৭% ভূমি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে৷

# জলবায়ু উদ্বাস্তু বৃদ্ধি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধির ফলে তলিয়ে যাওয়া অঞ্চল থেকে ২০৫০ সাল নাগাদ ৩ কোটি মানুষ গৃহহীন হতে পারে৷ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির সংবাদ মতে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১-১.৫ কোটি মানুষ বড় বড় শহরের দিকে ধাবিত হচ্ছে।ইতোমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বিপুল সংখ্যক (প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ) মানুষ ছেড়েছে খুলনার কয়রা এলাকা; পাড়ি জমিয়েছে ঢাকা, রাঙ্গামাটি কিংবা খুলনা সদরে।
এসকল উদ্বাস্তুর কারণে বড় বড় শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাপ পড়েছে রাজধানী শহর ঢাকায়। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে যেখানে ঢাকার জনসংখ্যা ছিলো ১,৭৭,০০০, সেখানে ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার জনসংখ্যা এসে দাঁড়ায় ১,৬০,০০,০০০। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবমতে, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ঢাকার জনসংখ্যা হবে ২ কোটি।

# অর্থনৈতিক ক্ষতি
নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে ও চলমান দুর্যোগ মোকাবিলা করতে বিদ্যমান অবকাঠামোগত স্থাপনায় আনতে হয় নকশাগত ও আবকাঠামোগত পরিবর্তন। তাছাড়া উপর্যুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির সংস্কার কিংবা পুণর্নির্মাণে প্রতি বছর বাজেটে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। দাতা সংস্থাসমূহ এই ব্যয় বহন করতে অস্বীকৃত হলে বাংলাদেশ সরকারকে অভ্যন্তরীণ আয় থেকেই এসকল ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে অর্থঘাটতি দেখা দেয়। সরকারের অন্যান্য প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়।চাষযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে, মৎস্য সম্পদ, বনজ সম্পদ হ্রাস পাচ্ছে তাতে বাংলাদেশ সরকারের মূল আয়ের উৎসগুলো বন্ধ হতে চলেছে। কৃষিভিত্তিক উৎপাদন কমে গেলে সরকার রাজস্ব এবং রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ হারিয়ে ফেলবে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতি আয়ের তুলনায় ব্যয়ের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়বে।বাংলাদেশের অর্থনীতির এক বিরাট অংশ মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। এই বিপুল মৎস্যসম্পদ আজ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে।

★ বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়: প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন
নাসা আশঙ্কা করছে, গ্রিনল্যান্ডে যে বরফ জমা রয়েছে, তা যদি উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে গলে যায়, তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৭ মিটার বৃদ্ধি পাবে। তাই কার্বন ডাই-অক্সাইড হ্রাসের কথা বলছে নাসা।

টুভালু:
পৃথিবীর চতুর্থ ক্ষুদ্রতম স্বাধীন রাষ্ট্র টুভালুর দ্বীপগুলো এত নিচু যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর মাত্র ছয় থেকে আট ইঞ্চি বাড়লেই প্রশান্ত মহাসাগরে তলিয়ে যাবে গোটা দেশ।

মালদ্বীপ:
সহস্রাধিক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপের ৮০ শতাংশ ভূখণ্ড সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র তিন ফুট উঁচু। যে হারে জলবায়ুর উষ্ণতা বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে মালদ্বীপ নামের কোনো দেশ পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা ১০টি দেশের তালিকা।
১. বাংলাদেশ
২. ইন্দোনেশিয়া
৩. ইরান
৪. পাকিস্তান
৫. ইথিওপিয়া
৬. সুদান
৭. মোজাম্বিক
৮. হাইতি
৯. ফিলিপাইন
১০. কলম্বিয়া

সূত্র: ম্যাপলক্র্যাফ্ট
ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ম্যাপলক্র্যাফ্ট-এর তালিকায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার আগে।

★ বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন হুমকীস্বরূপ
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের যে ক্ষতি হবে, তা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। জাতিসংঘের রিপোর্টেও এ ক্ষতির দিকটি উল্লেখ করা হয়েছে একাধিকবার। প্রতি বছরই জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত যে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যা কপ বা ‘কমিটি অব দ্য পার্টিস’ নামে পরিচিত, সেখানেও বাংলাদেশের পরিবেশগত সমস্যার কথা উঠে আসে।

আইপিসিসি’র (ইন্টারগর্ভমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে যাওয়া অঞ্চল থেকে ২০৫০ সাল নাগাদ ৩ কোটি মানুষ গৃহহীন হতে যেতে পারেন।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির মতে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর এক থেকে দেড় কোটি মানুষ বড় বড় শহরের দিকে জলবায়ু অভিবাসী হচ্ছেন।

দি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর ডিজাস্টার রিডাকশনের এক সমীক্ষায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে:
১. বন্যার ঝুঁকিতে বাংলাদেশ প্রথম,
২. সুনামির ঝুঁকিতে তৃতীয়,
৩. ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকিতে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।

★ বাংলাদেশের জন্য হুমকী :
১. বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে যে ক’টি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
২. বাংলাদেশের উপকূলে প্রতি বছর ১৪ মিলিমিটার করে সমুদ্রের পানি বাড়ছে।
৩. ২০ বছরে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ সেন্টিমিটার।
৪. ১৭ ভাগ এলাকা সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে।
৫. বাংলাদেশে প্রতি সাতজনে একজন মানুষ আগামীতে উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে।সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় উপকূলের মানুষ অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

বাংলাদেশে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, সাইক্লোন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ভূমিধস, নদীভাঙন, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত, ভূগর্ভস্হ পানিতে অতিরিক্ত মাত্রায় আর্সেনিকের প্রভাব, ভূগর্ভস্হ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ও সর্বোপরি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ক্ষতিকর প্রভাব।

★ জলবায়ু কূটনীতি
জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ক্ষতিকর প্রভাব রোধকল্পে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমন্বিত উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ‘জলবায়ু কূটনীতি’ নামে নতুন এক প্রপঞ্চের (phenomenon) আগমন ঘটেছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্বে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল প্রক্রিয়ায় যেখানে প্রত্যেক রাষ্ট্রই স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট, সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলো কীভাবে তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে, ধনী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলোচনার কৌশল কী হবে, ক্লাইমেট ফাইন্যান্সের ধরন, ব্যয়ের খাত কীভাবে নির্ধারিত হবে, সুশাসন, জবাবদিহিতা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে কী কৌশল নেওয়া হবে, সে বিষয়ে কার্যকর অবস্থান এবং প্রতিনিধিত্বই হচ্ছে জলবায়ু কূটনীতি।
জলবায়ু কূটনীতির প্রকৃতি, কৌশল, উপাদানগুলো গতানুগতিক কূটনীতি থেকে ভিন্ন। রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সসিবিলিটি ক্লাইমেট নেগোশিয়েশনে একটি স্বীকৃত বিষয়। কোনো দয়া বা অনুগ্রহ নয় অত্যধিক পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ বন্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা- এ দুটি বিষয়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোর সরল স্বীকারোক্তি ক্লাইমেট নেগোশিয়েশনের বড় অর্জন।

★ জলবায়ু কনভেনশন
১৯৯২ সালে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যাকে মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় একটি কনভেনশন স্বাক্ষর করে। এই কনভেনশনে স্বীকার করে নেওয়া হয়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মূলত শিল্পোন্নত দেশগুলোই দায়ী। তাই, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় তাদের দায়িত্বটাই বেশি। কিন্তু পরে লন্ডন, মেক্সিকো সিটি, কানকুন, ডারবান ও দোহার সম্মেলনেও উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নে ঐকমত্যে পৌঁছতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়।

★ বাংলাদেশের জলবায়ু কূটনীতি কেমন হওয়া উচিত
বাংলাদেশের মতো অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশের পক্ষে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবেলা করা সহজ নয়। কারণ, সমস্যাটি বহুজাতিক (ট্রান্স ন্যাশনাল)। আর তাই প্রয়োজন আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে, এমন দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারির দেশ বাংলাদেশ।তাই জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দোষ শিকার বাংলাদেশকে সহায়তা করা তাদের ধনী দেশগুলোর নৈতিক দায়িত্ব।আমাদের জলবায়ু কূটনীতি কেমন হওয়া উচিত, আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে আমরা কী ভাষায়, সুরে ও ভঙ্গিতে আমাদের বক্তব্য হাজির করব, এ নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যেসব কথাবার্তা বেশি উচ্চারিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ছিল:
১. জলবায়ু উদ্বাস্তু,
২. অভিযোজন তহবিল,
৩. ক্ষতিপূরণমূলক তহবিল ইত্যাদি।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্লাইমেট নেগোশিয়েশনে নিজেদের জলবায়ু পরিবর্তনগত ঝুঁকিগুলো কার্যকরভাবে উত্থাপন করে যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায়ের কূটনৈতিক কৌশল প্রয়োগে এখন পর্যন্ত দৃঢ়তার প্রমাণ দিতে পারেনি। ক্লাইমেট নেগোশিয়েশনের ক্ষতিপূরণের কৌশলগত এবং বাংলাদেশের ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’-এর মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ ও Cost-Benefit বিশ্লেষণ করে লাভবান হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে কূটনৈতিক কৌশল ও দক্ষতার ওপর নির্ভরশীল। তাই এ মূহূর্তে বাংলাদেশের জলবায়ু কূটনীতিতে বাংলাদেশের লস ও ড্যামেজ এবং জলবায়ু অভিবাসনের মতো বিষয়গুলোকে ক্লাইমেট নেগোশিয়েশনে নিয়ে এসে কীভাবে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়, তার কৌশল নির্ধারণ এখনই জরুরি।

★ জলবায়ু পরিবর্তন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তর্জার্তিক পদক্ষেপ
রিয়েলিজম ও লিবারেলিজম উভয় তত্ত্বের ঘোর সমালোচক প্রভাবশালী চিন্তাবিদ ই এইচ কার ১৯৩৯ সালে তার বইতে গ্লোবাল কমন চিন্তার ভিত্তিতে কমন গুড (সাধারণ কল্যাণ) খুঁজে বের করার ওপর জোর দিয়েছেন; যেখানে পৃথিবীর সব রাষ্ট্র এই কমন ‘গুডগুলোর’ সাধনের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও এর ঝুঁকি মোকাবেলা হচ্ছে, এ রকম একটি কমন গুড বা গ্লোবাল কমন। বিশ্ব সম্প্রদায় কমন গুড কনসেপ্ট-এর ভিত্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক ঐক্য গঠনে সফল হয়েছে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে Inter governmental Panel on Climate Change (IPCC), United Nations Environment Program (ENEP) এবং United Nations Framework Convention on Climate Change(UNFCC) এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠিত হয়েছে।

কিয়োটো প্রটোকল ও Bali Action Plan ক্লাইমেট নেগোশিয়েশনের ইতিহাসে দুটি বড় অর্জন। কিয়োটো প্রটোকলে ধনী রাষ্ট্রগুলো গ্রিন হাউস গাস নিঃসরণ কমিয়ে আনতে কাজ করছে।
Bali Action Plan ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ ও প্রযুক্তি সহায়তা দানের কাজও এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার জন্য ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট-২০১০’ নামে একটি ট্রাস্ট স্থাপন করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক রাজনীতিতে সবার দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে।

সবচাইতে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র কিয়োটো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। অন্যদিকে, দরিদ্র, অনুন্নত ও ঝুঁকির ভেতর থাকা দেশগুলি উন্নত দেশগুলির কার্বন নিঃসরণ কমাতে চাপ প্রয়োগে যতটা না আগ্রহী, তার চেয়ে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে অনেক বেশি আগ্রহী।

★ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ:
(ক) সরকারের উন্নয়ন বা অনুন্নয়ন বাজেটের বাহিরে বিশেষ ক্ষেত্র হিসাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় এই ট্রাস্ট্রের তহবিল ব্যবহার করা;
(খ) জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিশেষ কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে উপযুক্ত কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা;
(গ) জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অভিযোজন (Adaptation), প্রশমন (Mitigation), প্রযুক্তি হস্তান্তর(Technology Transfer) এবং অর্থ ও বিনিয়োগ (Finance and Investment) এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক গবেষণা (Action Research) করা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফলের আলোকে উপযুক্ত বিস্তার (dissemination) সহ বা পাইলট কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা;
(ঘ) জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো এবং ক্ষতিগ্রস্ততা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং এর ভিত্তিতে কর্মসূচী বা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা;
(ঙ) জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী জরুরী কার্যক্রমে সহায়তা করা।

★ বাংলাদেশের করণীয় কী
১. কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ ও সোচ্চার হতে হবে।
২. ক্ষতিপূরণ ও অভিযোজনের পুরো অর্থ আদায়ের ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে।
৩. জলবায়ু উদ্বাস্তুদের বিশ্বজুড়ে অভিবাসনের সুযোগ করার দাবি জোরালো করাতে হবে।
৪. সবুজ জলবায়ু তহবিলের-সিজিএফ (Green Climate Fund ) এর অর্থ আদায়ে সচেষ্ট হতে হবে।
৫. যারা সত্যিকার অর্থেই জলবায়ু উদ্বাস্তু, তারা সাহায্য পাচ্ছে এটা নিশ্চিত করতে হবে।জলবায়ু তহবিলের অর্থ ঠিকমতো খরচ হচ্ছে কিনা তা মনিটরের ব্যবস্থা করা জরুরী।
৬. জলবায়ু তহবিল ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।জলবায়ু তহবিল সংগ্রহের পর তা ব্যবহারে যদি স্বচ্ছতা না থাকে, তবে আন্তর্জাতিক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে এবং আমাদের ন্যায্য দাবিকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনকে কার্যকরভাবে রোধ করা একমাত্র আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই সম্ভব। আন্তর্জাতিক রাজনীতির কূটচালে এ ধরনের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

এ সমস্যা মোকাবিলায় স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে হবে। ব্যস্তচ্যুতি ঠেকাতে এবং অগত্যা ব্যস্তচ্যুতদের সহযোগিতার লক্ষ্যে দেশীয় পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী তথা ধনী ও উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতিমালা তৈরি করা একান্ত জরুরি।

====================
উত্স ও তথ্যসূত্র :
পত্রিকা, আর্টিকেল, ওয়েব, ব্লগ থেকে সংগৃহীত ও

Courtesy by
Samad Azad
    Similar Topics
    TopicsStatisticsLast post
    0 Replies 
    573 Views
    by sajib
    0 Replies 
    379 Views
    by kajol
    0 Replies 
    239 Views
    by tasnima
    0 Replies 
    271 Views
    by mousumi
    0 Replies 
    130 Views
    by raihan

    ] Global China Hardware & Trading Ltd. is[…]

    Thanks for the information.

    ইবনে সিনা ট্রাস্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৪ নিয়োগ বিজ[…]

    Achieving the best SEO (Search Engine Optimization[…]