Get on Google Play

লিখিত পরীক্ষা বিষয়ক
#1524
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে বাণিজ্য নিয়ে টানাপড়েন চলছে অনেক দিন ধরেই। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই উত্তেজনা শুরু হয়। বিশ্লেষকরা একে শুধু উত্তেজনা নয়, বরং বাণিজ্য লড়াই বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ট্রাম্প এ পর্যন্ত চীন থেকে আমদানি করা ২৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক বসিয়েছেন। আরো ৩০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্ক বসানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি। চীনও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে মার্কিন পণ্যের একই পরিমাণ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছে। এমন এক উত্তেজক পরিস্থিতির মধ্যেই চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে বৈঠকে বসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। জাপানের ওসাকায় শিল্পোন্নত দেশগুলোর সংগঠন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এই দুই নেতা মিলিত হন আপাতদৃষ্টিতে সফল এ বৈঠকে।
বরাবরের মতো এবারের বৈঠকটিকেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিহিত করেছেন ‘অসাধারণ’ হিসেবে। চীনের পক্ষ থেকেও বৈঠকটি সফল হয়েছে বলেই দাবি করা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে আবারও আলোচনা শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। তাই চীনা পণ্যে নতুন করে আর শুল্ক আরোপ হবে না; এমনকি বৈঠকে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ব্যাপারেও কিছুটা ছাড় দিতে সম্মত হয়েছেন ট্রাম্প। ৮০ মিনিটের এ বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আবারও আলোচনার ট্র্যাকে ফিরে এসেছি, দেখতে চাই শেষ পর্যন্ত কী হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘চীনের যেসব পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে তা এ মুহূর্তে তুলে নেওয়া হবে না। তবে নতুন করে আর ৩০ হাজার কোটি ডলার পণ্যে শুল্ক আরোপ হবে না। আমরা শুল্ক আরোপ থেকে বিরত থাকছি, তারা আমাদের আরো বেশি পণ্য কিনবে। যদি আমরা একটি চুক্তিতে উপনীত হতে পারি, তবে এটা হবে ঐতিহাসিক।’
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সরাসরি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এক বিবৃতিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি বলেন, ‘আমি আশা করি যুক্তরাষ্ট্র চীনা কম্পানিগুলোর সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করবে। সার্বভৌমত্ব ও সম্মানের প্রশ্নে চীন নিজের স্বার্থ রক্ষা করবে।’ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিকে উদ্ধৃত করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে চীন আন্তরিক। তবে আলোচনা হতে হবে সমান ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে।
দুই দেশের এ সমঝোতার খবরে স্বস্তি ফিরেছে বিশ্ব অর্থবাজারেও। ইউএস-চায়না বিজনেস কাউন্সিলের চীন কার্যক্রমের ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যাকব পার্কার বলেন, ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় ফিরে আসা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের জন্য একটি ভালো খবর। এখন সমাধানে আসতে হলে দুই দেশকে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।’
এ ছাড়া চীনের টেলিকম প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ব্যাপারে ইতিবাচক খবর শুনিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘হুয়াওয়ের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানিগুলো সরঞ্জাম বিক্রি করতে পারে, যতক্ষণ না এ বিক্রিতে এমন কোনো পণ্য থাকে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকির কারণ হবে।’ এর ফলে হুয়াওয়ের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কম্পানির পণ্য বিক্রির যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা কার্যত শেষ হলো। কিন্তু ট্রাম্প বলেছেন, ‘হুয়াওয়েকে বাণিজ্য বিভাগের কালো তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে কি না এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে পরে।’ তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে কী হয় তা আমরা দেখতে চাই, সে পর্যন্ত হুয়াওয়েও থাকবে।’ এ বক্তব্য ইঙ্গিত দেয়—হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হবে কি না তা নির্ভর করছে দুই দেশের বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে চুক্তির ওপর।
ট্রাম্প আরো জানান, হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সাবরিনা মেঞ্জের বিষয়ে শির সঙ্গে আলোচনা হয়নি। তিনি বর্তমানে কানাডায় আটক আছেন। ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের দায়ে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর করা হবে কি না এ বিষয়ে শুনানির অপেক্ষায় আছেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত অংশীদার হতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে উন্মুক্ত; কিন্তু চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উন্মুক্ত নয়।’ এ বৈঠক সমঝোতার বাতাস এনেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। ট্রাম্প এর আগে হুমকি দিয়েছেন চীনের সঙ্গে আলোচনায় সমাধান না এলে দেশটির আরো প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলার পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হবে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মতে, শুল্ক-পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে প্রকারান্তরে ভোক্তাদের পণ্যে বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। গত মাস পর্যন্ত চীনের ২৫ হাজার কোটি ডলার পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেছে ওয়াশিংটন। এর জবাবে চীনও আমেরিকার প্রায় ছয় হাজার কোটি ডলার পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছে।
চীনের সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা চেষ্টার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের আগ্রহ দেখিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে দুই কোরিয়ার ডিমিলিটারাইজড জোনে গিয়ে হাত মেলানোর কথা বলেছেন। এমন একটি সময় ট্রাম্প উনের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে চাইলেন, যখন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত আলোচনা প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। এর আগেও গত বছর এই দুই নেতা দুই দফা সাক্ষাত্ করেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে কার্যত কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেননি তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্র চায় পুরোপুরি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত কোরীয় উপদ্বীপ। কিন্তু উত্তর কোরিয়া এ নিয়ে ধীর গতিতে এগোতে আগ্রহী। তাদের দাবি, অস্ত্র ত্যাগের ক্ষেত্রে নিজেদের অগ্রসর হওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘকেও উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নিতে হবে, যাতে বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত হয়। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে চলমান আলোচনায় এ ছাড় দিতে নারাজ ট্রাম্প প্রশাসন।
ফলে ট্রাম্পের তরফ থেকে আবারও আলোচনা বা সাক্ষাতের প্রস্তাব এলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন, করমর্দন বা ফটোসেশনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে বড় কোনো অগ্রগতি ঘটবে না। তবে এমন ধারণা করা যেতেই পারে, বড় অগ্রগতির ক্ষেত্রে নতুন একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে।

তামান্না মিনহাজ

    বিষয় : রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আপন বিভাগের “[…]

    বিষয় : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্[…]

    Amendment of Vacancy announcement for the post of […]