Get on Google Play

অনুপ্রেরণামুলক গল্প, বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী, ইতিবাচক আচার-আচারন ইত্যাদি
By shohag
#2661
ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি ভাবতাম, পাবলিক ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারাটাই সফলতা। ওখান থেকে পড়াশোনা করে বের হতে পারলে মোটামুটি ভাল একটা চাকুরী পাবো৷ তারপর পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্বিঘ্নে জীবনটা কাটিয়ে দিবো।

কিন্তু এখানে এসে দেখলাম বাস্তবতাটা আসলে ভিন্ন৷এখানে এসে আমার সফলতার পুরো সংজ্ঞাটাই পাল্টে গেল। এখানে সফলতার সংজ্ঞা অনেক গভীর, অনেক প্রশস্ত। পুকুরের একটা কই মাছ পুকুর বন্দী জীবন ভাল লাগেনা বলে বৃষ্টি এলে মাটির উপর দিয়েই লাফাতে লাফাতে পার্শ্ববর্তী নদীর দিকে রওনা দেয় এই ভেবে যে সেখানেই হয়তো ওর মুক্তি। কিন্তু নদীতে গিয়ে দেখে ওখানের পানি অনেক বেশি গভীর, অনেক বেশি প্রশস্ত । মাছটি নদীটির কোনো কূল কিনারা করতে না করতে পেরে তখন ভাবে ওর পুকুর বন্দী জীবনটাই আসলে অনেক ভাল ছিল৷ না হোক ছিল একটু ছোট, অগভীর৷ কিন্তু জীবনটা তার হাতের নাগালে ছিল৷ ভার্সিটিতে এসে আমিও এভাবে নিজের জীবনের কোনো নাগাল খুজে পাচ্ছিলাম না৷

ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার মাস খানেকের মাঝেই একটা বিজনেস ক্লাবের বড় ভাইয়েরা এসে একটা করে টিকেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে ১০০টাকা আদায় করে নিল৷ ওই টিকিট দিয়ে আমাদের অডিটোরিয়ামে একটা প্রোগ্রাম দেখতে যেতে বলা হলো। ওটা ছিল আসলে ক্যারিয়ার গড়ার একটা মোটিভেশনাল প্রোগ্রাম৷ তখন একটু একটু সুলায়মান সুখন আর আয়মান সাদিকের নাম শুনেছি৷ সালমান মুক্তাদিরকে চিনতাম না৷ গনরুমের এক বন্ধু নাইলা নাইমের সাথে 'জান, ওহ বেবি, সোনার ময়না পাখি' গানটা দেখিয়ে সালমান মুক্তাদিরকেও চিনিয়ে দিল৷ এটা দেখে আগ্রহ চলে গেলেও শুধুমাত্র টাকা উসুল করার জন্যে প্রোগ্রামটা দেখতে গিয়েছিলাম৷

প্রোগ্রামে প্রথমে উঠলো আয়মান সাদিক৷ সব কথার মাঝে এক ফাকে বললো, তার এখন তার আর্মি বাবার চেয়েও বেশি ইনকাম৷ এরপর সুলায়মান সুখন উঠে বললো, একসময় তার পড়ার মত জামা ছিলনা৷ এখন তার আলমারি ভর্তি এতই ব্লেজার যে একদিন যেটা পড়ে, আগামী দু-একমাসের ভিতরে সেটা আর পড়তে হয়না৷ । সবশেষে সালমান মুক্তাদির তার পায়ের জুতাজোড়া দেখিয়ে সবার কাছে দাম জানতে চাইলো৷ পরে নিজেই বললো যে ওটার দাম ১২০০০ টাকা৷ এটা সে নিজের টাকায় বিদেশ থেকে কিনেছে৷

আমি একেবারে গ্রাম থেকে উঠে আসা একটা ছেলে। ওই বয়সে ওইসব মোটিভেশনাল কথাবার্তা শোনার পর ভেবেছিলাম ওটাই বোধহয় সফলতা। মাসে লাখ লাখ টাকা আয়, আলমারি ভর্তি দামি দামি সব ব্লেজার আর শেলফ ভরা জুতো। এই সব থাকা মানেই সফলতা। এই সব কিছুর রেশ আমার মনে রয়ে গিয়েছিল বেশ কয়েকদিন। তখন আমি টিউশনের টাকা জমিয়ে চেষ্টা করতাম ব্রান্ডের জামা-কাপড় আর জুতো কিনতে৷ ভাবতাম ব্রান্ডের জিনিস পড়লে নিজেও একটা ব্রান্ড হয়ে যাব। নিজের মাঝে একটা ক্লাসি ক্লাসি ভাব চলে আসবে।

আমার চার বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক আর ভার্সিটির পি.এইচ.ডি করা শিক্ষকদের মাঝে বিস্তর তফাৎ। গ্রামের শিক্ষকেরা সবসময় আমাদের শিখিয়ছে আদব-কায়দা মেনে চলতে, মুরুব্বিদের সম্মান করতে, মিথ্যা কথা পরিহার করতে৷ সর্বোপরি একজন ভাল মানুষ হওয়ার চেষ্টা করতে বলেছে৷ আর ভার্সিটির শিক্ষক আমাদের শিখিয়েছে সফলতাই জীবন। জীবনে সফল হতে না পারলে এই জীবন ব্যর্থ। সমাজে নিজের এক পয়সাও দাম থাকবেনা৷ ছোটবেলায় যেখানে পড়ে এসেছি কুসুমকুমারী দাশের 'আদর্শ ছেলে' কবিতা, সেখানে বড় হয়ে পড়ছি বিল গেটস আর জেফ বেজোসের সফল হওয়ার কাহিনী। এই পার্থক্যটা কিন্তু আসলে অস্বাভাবিক না৷ এটার কারণ হতে পারে দুই শ্রেণীর শিক্ষকদের ডিগ্রী আর সার্টিফিকেটের তারতম্য৷ দুজনের জীবনবোধ আর দর্শনের মাঝের ব্যবধান আর বাস্তব ও কর্পোরেট জীবন সম্পর্কে দুজনের অভিজ্ঞতার ভারসাম্যহীনতা৷

তবে আমাদের ভার্সিটির শিক্ষকদের এই প্রচেষ্টা সত্যিকার অর্থেই সফল হয়েছে। আমরা সবাই এখন সফল হওয়ার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছি৷ আমাদেরই কাওকে দেখছি ভার্সিটির টিচার হওয়ার জন্যে দিনরাত জেগে পড়াশোনা করে সিজিপিএর পিছনে দৌড়াচ্ছে , কেউ কেউ জি আর ই, টোফেল, আই এল টি এস আর কি কি যেন আছে ওসব পড়ে বিদেশে যাওয়ার প্লান করছে৷ দুই একজন আবার ফাইন্যান্স নিয়েই ঘাটাঘাটি করতেছে সি.এফ.এ. হওয়ার জন্যে । আর আমাদের মত আমজনতা পাবলিক সফলতার কোনো সঠিক পথ খুজে না পেয়ে খাওয়ার টাকা বাচিয়ে বিসিএস এর বই কিনে টেবিল ভরে ফেলতেছে৷

গত বছর ঠিক এই সময়টাতে আমি সি আর পি হসপিটালে ভর্তি ছিলাম পায়ের টিউমার অপারেশন করানোর জন্যে৷ সি আর পি একটা নামকরা পঙ্গু হাসপাতাল৷ চারদিকে বিভিন্ন বয়সী অসুস্থ পঙ্গু মানুষদের দেখে ওই প্রথম আমি উপলব্ধি করেছিলাম, জীবনে টাকা-পয়সা বা ক্ষমতা নয়, সুস্থ থাকাই জীবনে সবচেয়ে বড় সফলতা। এই কোয়ারান্টাইন জীবনে সেই চিন্তাটাও বারংবার ঘুরে ফিরে মনে আসছে। সুস্থতার সহিত বেচে থাকতে পারাটাই জীবনের আসল সফলতা৷ টাকা-পয়সা হয়তো জীবনে আরাম আয়েস এনে দেয়, কিন্তু সুস্থতার নিশ্চয়তা দেয়না। সুস্থতার পরেও যদি সফলতা নিয়ে কথা বলি তাহলে হবে সেটা একজন ভাল মানুষ হয়ে বেচে থাকা৷

দামী কাপড় অথবা জুতা কখনো মানুষকে ব্রান্ড করে তুলেনা। বরং দামী মানুষ এসব কাপড় আর জুতাকে ব্রান্ড করে তুলে। এই সফলতার পিছনে ছুটে হয়তো জীবনে অনেক টাকা আয় করতে করলাম। স্ত্রীর জন্মদিনে তাকে দামী সোনার গহনা উপহার দিলাম। কিন্তু সে হয়তো মনে মনে আশা করেছিল একটা ডায়মন্ডের নেকলেস।এটা কি সফল জীবন?
এরচেয়ে যদি আমি এমন জীবন গড়ি যেখানে আমার স্ত্রী তার জন্মদিনে একটা গোলাপ অথবা রজনীগন্ধা ফুলের মালা পেয়েই খুশিতে উচ্ছসিত হয়ে উঠবে। সেটাকে কি আমি সফল বলতে পারিনা?

আমি যে জীবনে সফল হতে চাইনা এমন নয়। আমিও জীবনে সফল হতে চাই৷ অনেক সফল৷ আমার মা-বাবার কাছে একজন আদর্শ সন্তান হয়ে সফল হতে চাই৷ আমার স্ত্রীর কাছে একজন আদর্শ স্বামী হয়ে সফল হতে চাই৷ আমার সন্তানের কাছে একজন আদর্শ বাবা হয়ে সফল হতে চাই৷ আমার মতে, একজন পুরুষের জীবনে যেমন লক্ষ্য থাকা উচিত একজন সফল বাবা হওয়া, একজন নারীর তেমনি লক্ষ্য থাকা উচিত একজন সফল মা হওয়া৷ বেচে থাকার জন্যে বাকি প্রয়োজনীয় সবকিছু এর পরে গুরুত্ব পাক।

#সংগ্রহীত
By sumon
#2676
জীবনে সবকিছুর দরকার আছে। সবচেয়ে বেশি দরকার টাকা। টাকা যদি কাউকে সুখী করতে না পারে অন্য কিছুই পারবে না৷
By kausar
#2677
sumon wrote: Fri Jun 05, 2020 2:12 pm জীবনে সবকিছুর দরকার আছে। সবচেয়ে বেশি দরকার টাকা। টাকা যদি কাউকে সুখী করতে না পারে অন্য কিছুই পারবে না৷
টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা যায় সুখ কেনা যায় না। টাকা দিয়ে সুখ কেনা গেলে বিলাসবহুল অাপার্টমেন্টের কোন মানুষ অসুখী থাকত না। অার গাছতলার কোন গরীব মানুষও সুখী হত না।
By sumon
#2679
nabila wrote: Fri Jun 05, 2020 2:18 pm Tk.Dye.Jdi.Sukh.Kena.Jeto.Tahle.Dokane.Dokane.Sukh.Bikri.Hto.Bujhte.Parcen......
জীবনে এমন কোন বিষয় আছে যেখানে টাকা ছাড়া করতে পারবেন? বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড কে একটা চকলেট কিনে দিতেও টাকা দরকার।

    বিষয় : রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, আপন বিভাগের “[…]

    বিষয় : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্[…]

    Amendment of Vacancy announcement for the post of […]