Get on Google Play

মৌখিক পরীক্ষা সম্পর্কিত বিষয়াদি
#801
ডাঃ তাহসিনা আফরিন
সহকারী সচিব
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ভাইভা! মেডিক্যাল জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ। আমার মনে হয় কাজে লাগাতে পারলে ভাইভা হয়ে উঠে বিশেষ আশীর্বাদ, ভালো নাম্বার তোলার জন্য, কিন্তু ফস্কে গেলে ... একেবারে মারিয়ানা ট্রেঞ্চে !! যাহোক, যেকোনো বিষয়ে ভয় কাটানো আমার কাজ। ভাইভা ভীতি এবং সেটা থেকে উত্তরনের কিছু মোটিভেশন বিসিএস এ একদম নতুনদের জন্য দিলাম। কাজে লাগানোর ইচ্ছা ‘যার যার তার তার’ !! :)

১) ভাইভাকে ভালোবাসুন।
মেডিক্যালে পরতে আসলে/ বিসিএস ক্যাডার হতে হলে ভাইভা না দিয়া তো কেউ পার পাইতে পারবেনা। তাই এটাকে ভালবাসতে হবে! “তোকে ভালবাসতেই হবে!” ... by force love!! ধরে নেবেন, স্যার এর সাথে গল্প গুজব করার জন্যই আপনাকে এতোগুলো নাম্বার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিন ঘণ্টা লিখতে হচ্ছে না, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হিস্ট্রি নেয়া লাগছে না, লেকচার ক্লাসের মতো ঝিমিয়ে বসেও থাকতে হচ্ছে না। জাস্ট রুমে ঢুকলেন, স্যারদের সাথে মিনিট দশেক গল্প করলেন, পরীক্ষার অর্ধেক নাম্বার এক সিটিং- এ টাচ করে আসলেন। ভাইভা একটা দারুন ব্যাপার! :)

২) ভাইভা = পড়াশোনা + কনফিডেন্স।
প্রফে বা বিসিএস এ ৫০% পড়া হলে, বাকি ৫০% কনফিডেন্স দিয়ে চলতে হবে। পড়া যদি ৪০% হয় তবে ৬০% কনফিডেন্স দেখানো লাগবে। এখন যদি বলেন, কনফিডেন্স পাইনা, ভয় পাই। তাহলে কনফিডেন্স ২০%, আর পড়া অবশ্যই ৮০% করে যাওয়া লাগবে। মানে, দুইটা মিলিয়ে ১০০% হওয়া লাগবেই!

‘বকবক করা/ চাপা মারা/ তেল মারা’ ভাইভা দেয়ার সময় এইগুলো কিছু ক্রিয়া পদকে আঁতেল সমাজ ট্যাগ করে রেখেছে ত্যাবুর মতন, যেন এগুলো ইস্তেমাল কোনভাবেই করাই যাবেনা! কিন্তু আমার তো মনে হয় রুগী দেখতে যেয়েও প্রচুর বকবক/চাপা/তেল সময় অনুযায়ী দেয়া লাগবে , আপনি যতই ভালো ডাক্তার হয়ে যান না কেন! তাই এগুলোর ব্যবহার চালিয়ে যাবেন পরিমান মতো। ছাত্র অবস্থা থেকেই। যে দেবতা যে পূজায় তুষ্ট!! ভক্তের সেটা ছাড়া মোক্ষ নাই!! :)

৩) ভাইভা ভয় , কেন হয়?!
আমরা ভয় পাই পরীক্ষাকে। স্বাভাবিক। পাস না করলে ‘জীবন ব্যর্থ’ হয়ে যাবে, ভয় পাবো এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভয় পেয়ে দেখে আসা পড়াও গুলিয়ে ফেলবো / যেটা বলতে চাইনা সেটাই মুখ দিয়ে বের হয়ে যাবে/ টাটকা মুখস্ত একটা জিনিস থট ব্লকের জন্য স্যার এর কান অবধি পৌঁছাবে না ... এটা স্বাভাবিক না। এটার সংস্কার করা লাগবে।
আপনার একজামিনার/ স্যার ম্যাম আসমান থেকে নাজিল হওয়া কেউ না। তাদেরও জীবনে অনেক ব্যর্থতা আছে। অনেক কিছু নিয়ে তারাও দিন রাত প্যারার মধ্যে আছেন। যে স্যারকে দেখলে আপনার মাথা চক্কর দিয়ে উঠে, দেখে আসা পড়া আউলাই যায়, পাল্পিটিশানের জন্য কথা কইতে পারেন না ... খোঁজ নিয়ে দাখেন তার পিতার কাছে তিনি পরিবারের সবচেয়ে ‘অথর্ব বেল্লিক সন্তান’! স্ত্রীর কাছে এই রকম ‘দায়িত্ব জ্ঞানহীন স্বামী’ আর নেই! সন্তানরা হামেশাই বলে, ‘আব্বু তুমি কিচ্ছু জানো না’!! :P

তাই ভাইভা সিরিয়ালের নেক্সট জন হয়ে যখন রুমের বাইরে অপেক্ষা করেন, আর ‘ইয়া নাফসি’ শুরু হয়ে যায় মনে ... তখন মনকে সাজেশন দিবেন, ভয় লাগা স্বাভাবিক। সবার লাগে। কিন্তু ভেতরে যারা বসে আছেন তারাও রক্ত মাংশের মানুষ, একটু উন্নততর প্রজাতির এই যা! :)

৪) পরীক্ষক/ শিক্ষক সবসময়ই সঠিক।
ভাইভা রুমে ঢুকেই অনুভব করবেন, আপনি একটি মহান কাজের জন্য আপনি প্রবেশ করলেন কিছু উন্নততর মানুষের সামনে। আপনার পাস/ বিসিএস চাকরি এই মুহুর্তটা সুন্দর কাটাতে পারলেই ব্যাস!! কল্পনায় দেখার চেষ্টা করবেন, কতিপয় দেবতুল্য মানুষ বসে আছেন আপনাকে তরী পার করাবার জন্য!! তাই আপনার চলা,বসা,সালাম,কথা কিছুতেই যেন বেয়াদপি প্রকাশ না পায়। আপনার পরীক্ষক/ শিক্ষক সে যেই হোক, যেমনই হোক ... আপনি তার চেয়ে অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই কম জানেন, এটা যতদিন অন্তরে ধারন করতে পারবেন না, ততদিন এই লাইনে কিচ্ছু হবে না। আপনার চোখে মুখে এই অভিব্যক্তি যেদিন থেকে আসবে, সেদিন থেকেই জয়ের সূচনা।
আটিটিউড দেখিয়ে থ্রি ইডিয়টে চাকরি পাওয়া যায়, বাস্তবে ৯০% ক্ষেত্রে সেটা হবেনা। তাই অন্তত বিসিএস ভাইভায়/ প্রফ ভাইভায় আটিটিউড কে আড়ি দিন। :)

৫) একটু একটু অভিনয় ভালো !
ভাইভা এক রকম প্রেসেনটেশান, আর প্রেসেনটেশান একরকমের অভিনয়। চোখে মুখে অভিনয় থাক, যে আপনি মাসের পর মাস রাতভর পরেছেন, পরীক্ষার জন্য সিরিয়াস হয়ে জান দিয়ে দিয়েছেন, সামনে বসা স্যার এর কৃপা ছাড়া আপনার মুক্তির পথ নাই!

এদিকে আপনার প্রেপ হয়ত অত ভালো না। তাই ভাইভা শুরু হবার পর যারা যারা বের হয়েছে সবার থেকে প্রশ্ন শুনে ফালাফালা করে দিয়েছেন, উত্তর গুলোও দেখে নিয়েছেন চামে। এখন দয়ালু স্যার সেই একই প্রশ্ন আপনাকেও করছেন ...! ইয়াহু!! কিন্তু ধাপাস করে উত্তর দিয়ে দিয়েন না!! ... একটু থামেন! এক সেকেন্ড ভাবনার অভিনয় করেন, যেন মাথা থেকে সিন্থেসিস করে উত্তর টেনে আনছেন!! পরীক্ষক / স্যার খুশী হবেন, তিনি আপনার brainstorming করাতে পেরেছেন!

“আপনি ছাত্র (পুরুষ) হয়ে থাকলে স্যারদের সামনে একটু ভীতু আর ম্যামদের সামনে সাবলীল থাকেন। ছাত্রী(মহিলা) হয়ে থাকলে স্যারদের কাছে সাবলীল আর ম্যামদের কাছে একটু ভীতু হয়ে থাকেন”। ... নো অফেন্স। এটা কেন আমি জানি না! কিন্তু এটাই! :)

৬) হাসিমুখ ... সব সমস্যার শেষ কথা।
ভাইভা বোর্ডে ঢুকলেন শুভেচ্ছা সূচক হাসি দিয়ে, চেয়ারে বসলেন সালামী হাসি দিয়ে, প্রশ্ন গুলো নিলেন অনিশ্চিত হাসি দিয়ে, স্যার এর টিটকারীতে কাষ্ঠ হাসি দিলেন, বকুনিতে অপরাধী হাসি দিলেন, বাহবাতে ‘কি যে বলেন স্যার!’ টাইপ হাসি দিলেন, উত্তর মনে না আসলে প্রশ্রয়ের হাসি, মনে আসলে বিশ্বজয়ের হাসি, ভালো ভাইভা দিয়ে উঠে যাবার সময় ধন্যবাদের হাসি, খারাপ ভাইভা দিয়ে উঠে যাবার সময় ‘তবুও একটু দেইখেন, স্যার!’ টাইপের হাসি ... !
জাহান্নামের উপর বসে, হাসি পুষ্পের হাসি!

স্যার ম্যাম যত কঠিন হোক না কেন, এই হাসি তাকে গলিয়ে দিবে না কিন্তু পরিবেশকে ভারি হতে দিবে না কোনভাবে। আপনার উপর শত বিরক্ত হলেও নিষ্ঠুর হতে দিবে না। ন্যায় করার জন্য কঠোর হতে হলেও আপনার উপর অবিচার করতে দিবে না।

... এতক্ষণ এতো কাবিলাতি করে বকবক করার জন্য গুস্তাখি মাফ! চৌদ্দ বছর আগে এই পথে পা রেখে গ্রাজুয়েট-পোস্ট গ্রাজুয়েট- কম্পিটিটিভ জব ইন্টারভিউ ... শত ফাঁকিবাজি করেও যতটা পথ পার করেছি, হাজারো পরীক্ষার পচা শামুকে একবার ও পা কাটেনি শুধুমাত্র ‘ভাইভা ভালো দেয়া’র জোরে। থার্ড ইয়ারে এক প্রিয় সিএ স্যার একদিন বলেছিলেন, মেডিক্যালে পরতে ব্রেন লাগে, আর পাস করতে লাগে টেকনিক। উনার এই কথাটা আমার খুব ভালো লাগে। আমিও সব জুনিওর কে এটা বলে বেড়াই!! :)
আর এখন বিসিএস এর পরে এই ধারনা আরো পাকা হয়েছে!! বিসিএস টেকনিকের লড়াই!

... ভালো ভাবে পড়াশোনার কোন বিকল্প নেই, শর্ট কাট নেই। তবুও পড়ার জোর থাকলে কিছুই লাগে না এটা যেমন সত্য, তেমনি মেডিক্যাল লাইফে প্লেস করা ছাত্র ছাত্রীও পরীক্ষা দিয়ে পাস হবার জন্য নিশ্চিত থাকতে পারে না/ বছরের পর বছর বিসিএস প্রস্তুতি নিয়েও তরী পার হতে পারে না অনেকে - এটাও সত্য। তাই পাসের জন্য কোন তরিকাই আপ্লাই করা বাদ দেয়া যাবে না। একটি সুন্দর ‘ভাইভা’ যেটার একটা পজিটিভ উপসংহার দিতে পারে। আর প্রফেশনাল লাইফ তো এক অনন্ত 'ভাইভা বোর্ড'! :)

মোটিভেশনগুলো কাজে লাগলে, আপু’কে হাদিয়া স্বরূপ কি দেবেন সেটা জানা আছে আশা করি!! :P
দোয়া চাওয়া ছাড়া আর কি আছে এই জীবনে! :)

    Thanks for the information.

    Achieving the best SEO (Search Engine Optimization[…]

    Creating a website easily on WordPress is a popula[…]

    Creating a website on BigCommerce offers a seamles[…]