- Wed Sep 05, 2018 1:02 pm#697
১. উয়ারী বটেশ্বরঃ
উয়ারী বটেশ্বর নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রত্নতত্বিক স্থান। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন এবং সর্বশেষ আবিষ্কৃত প্রত্নতত্বস্থান। এটি মাটির নিচের একটি দূর্গ নগরী। উয়ারির বসতিকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রত্নতাত্বিকদের অনেকেই উয়ারী বটেশ্বরকে টলেমির সৌনাগড়া বলে উল্লেখ করে থাকেন। এখানে প্রাপ্ত চারটি পাথরে নিদর্শন প্রস্তর যুগের বলে মনে করা হয়। ২০১০ সালে এখানে আবিষ্কৃত হড ১৪০০ বছরের প্রাচীন ইট নির্মিত বৌদ্ধ পদ্মমন্দির। ১৯৩০ সালের দিকে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ হানিফ পাঠান প্রথম উয়ারি বটেশ্বরকে সুধী সমাজের নজরে আনেন। ২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ববিভাগের উদ্যোগে শুরু হয় এর প্রথম খনন কাজ। খনন কাজের নেতৃত্ব দেন বিভাগের প্রধান সুফী মোস্তাফিজুর রহমান।
২. পুণ্ড্রনগরঃ
বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মহাস্থানগড় বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। বাংলার প্রাচীনতম জনপদ ছিল পুণ্ড্র বা পৌন্ড্র। পুণ্ড্রদের আবাসস্থলই পুণ্ড্র বা পুণ্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত। এই পুণ্ড্ররাজ্যের রাজধানী ছিল পুণ্ড্রনগর। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় অব্দে এই নগর গড়ে উঠেছিল।
পুণ্ড্রনগরের বর্তমান নাম মহাস্থানগড়। এটি মৌর্য ও গুপ্ত রাজবংশের প্রাদেশিক রাজধানী ছিল। কথিত আছে, এখানে পরশুরামের সাথে ফকির বেশী আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র.) এর যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে (১২০৫-১২২০খ্রি.) পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন। শাহ সুলতান বলখী (র.) এ অঞ্চলে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করেন। গড়ের পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত শীলাদেবীর ঘাট। এখানে রয়েছে সম্রাট অশোক নির্মিত বৌদ্ধ স্তম্ভ যা বেহুলার বাসর ঘর নামে পরিচিত। মহাস্থানগড়ের দর্শনীয় স্থান শাহ সুলতান বলখীর মাজার, পরশুরামের প্রসাদ, খোদার পাথর ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, গোবিন্দ ভিটা, লক্ষ্মীন্দরের মেধ, কালীদহ সাগর, পদ্মাদেবীর বাসভবন ইত্যাদি। ১৮০৮ সালে বুকানন হ্যামিল্টন সর্বপ্রথম এ স্থানটি আবিষ্কার করেন। ১৮৮৯ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম স্থানটিকে প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী হিসেবে সনাক্ত করেন।
৩. কোটিবর্ষঃ
দেবকোট বা কোটিবর্ষ ছিল বাংলার এক প্রাচীন শহর। কোটিবর্ষ ছিল পুণ্ড্রবর্ধন ভুক্তির একটি অংশ। অধুনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাণগড় গ্রামে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে।
৪. ময়নামতিঃ
কুমিল্লার বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান ময়নামতি। এ এলাকাটি প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাচীন নগরী এবং বৌদ্ধ বিহারের অবশিষ্টাংশ। সপ্তম-দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে এই নগরী ও বিহারগুলো নির্মিত হয়েছিল। রাজা মানিকচন্দ্রের স্ত্রী রানী ময়নামতির নামানুসারে এ স্থানের নামকরণ করা হয়। ময়নামতির পূর্ব নাম ছিল রোহিতগিরি। প্রত্নতাত্বিকদের মতে, ময়নামতি জয়কর্মান্তবসাক নামক একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ। এখানকার উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হলো শালবনবিহার, লালমাই পাহাড়, কুটিলা, ইটাখোলা মুড়া, রূপবান মুড়া, চারপত্র মুড়া ইত্যাদি।
৫. নোয়াপাড়া ঈষাণচন্দ্রনগরঃ
কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অন্যতম বৃহৎ অনাবিষ্কৃত প্রত্নতাত্বিক স্থান। ধ্বংসাশেষের বেশির ভাগ এলাকা বৌদ্ধ আমলের। পন্ডিতগণ মনে করেন এই নিদর্শনগুলো হারিয়ে যাওয়া নগরী কর্মান্ত ভাসাকর - যা সপ্তম শতকের সমতটের রাজধানী খাদগা।
৬. সোনারগাওঃ
বারো ভূইয়াদের নেতা ঈসা খাঁ সোনারগাও এ বাংলার রাজধানী স্থাপন করেন। এ সময় দিল্লীর ক্ষমতায় ছিলেন সম্রাট আকবর। সোনারগাও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। সোনারগাও পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী এবং উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত একটি বিস্তৃত জনপদ ছিল। এর পূর্ব নাম সুবর্ণগ্রাম। ঈসা খাঁর স্ত্রী সোনা বিবির নামানুসারে সোনারগাও এর নামকরণ করা হয়। সোনা বিবির মাজার, পাঁচবিবির মাজার, পাঁচ পীরের মাজার, গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের মাজার, হোসেন শাহ নির্মিত একটি সদৃশ্য মসজিদ, ঈসা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, গ্রান্ড-ট্রাঙ্ক রোড ইত্যাদি সোনারগার দর্শনীয় স্থান। সোনারগাও এর পানাম নগরী উনিশ শতকে উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ছিল।
৭. লালবাগের কেল্লাঃ
লালবাগের কেল্লা মুঘল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি পুরোনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত একটি দুর্গ। এই কেল্লার পূর্ব নাম আওরঙ্গবাদ দূর্গ। সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে তার তৃতীয় পুত্র শাহজাদা মোহম্মদ আযম শাহ ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে এর নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকে। তবে তার কন্যা পরিবিবি (প্রকৃত নাম ইরান দুখত) এর মৃত্যুর পর ১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। কেল্লা এলাকাতে পরিবিবির সমাধি অবস্থিত। কেল্লার উত্তর-পশ্চিমাংশে বিখ্যাত শাহী মসজিদ অবস্থিত।
৮. বড় কাটরা এবং ছোট কাটরাঃ
বড় কাটরা ঢাকার চকবাজারে অবস্থিত মুঘল আমলের নিদর্শন। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহসুজার নির্দেশে আবুল কাসেম ১৬৪১ খ্রিস্টাব্দে বুড়িগঙ্গা ণদীর তীরে এই ইমারতটি নির্মাণ করেন। Raysul Islam Redoy
ছোট কাটরা ঢাকার চকবাজারে অবস্থিত শায়েস্তা খাঁর আমলে তৈরি একটি ইমারত। তিনি এটি সরাইখানা বা প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য নির্মাণ করেন। ১৬৬৩ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৬৭১ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
৯. হুসেনি দালানঃ
হুসেনি দালান বা ইমাম বাড়া ঢাকা শহরের বকশিবাজার এলাকার একটি শিয়া উপাসনালয়। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলে এটি নির্মিত হয়। হিজরী ১০৫২ সনে সৈয়দ মীর মুরাদ এটি নির্মাণ করেন।
১০. উত্তরা গণভবনঃ
দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ী (উত্তরা গণভবন) নাটোর জেলায় অবস্থিত এককালে দিঘাপাতিয়া মহারাজদের বাসস্থান। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের উত্তরাঞ্চলীয় সচিবালয়। ১৭৪৩ সালে রাজা দয়ারাম রায় এটি নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালে প্রলয়ংকারী ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। পরে রাজা প্রমদা নাথ রায় এটি পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন গভর্নর মোনায়েম খান একে গভর্নরের বাস ভবন হিসাবে উদ্বোধন করেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই রাজবাড়ীর নামকরণ করেন উত্তরা গণভবন।
১১. কার্জন হলঃ
কার্জন হল ঢাকার একটি ঐতিহাসিক ভবন। ১৯০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও বড়লাট লর্ড কার্জন এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। এটি নির্মিত হয় ঢাকা কলেজের পাঠাগার হিসাবে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে কার্জন হল অন্তর্ভুক্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের জন্য - যা আজও ব্যবহৃত হয়।
১২. আহসান মঞ্জিলঃ
আহসান মঞ্জিল পুরানো ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের প্রাসাদ। এর প্রতিষ্ঠাতা নবাব আব্দুল গণি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানউল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন। এর নির্মাণকাল ১৮৫৯-১৮৭২ সাল। ১৮৯৭ সালে ঢাকায় ভূমিকম্প আঘাত হানলে আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তীকালে নবাব আহসানউল্লাহ তা পনঃনির্মাণ করেন। ১৯০৬ সালে আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এক সভায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালে আহসান মঞ্জিলকে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়।
১৩. বঙ্গভবনঃ
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সরকারী বাসভবন বঙ্গভবন। এটি ঢাকার দিলকুশা এলাকায় অবস্থিত। ১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসামের সরকার এ স্থানটি কিনে নেয় এবং প্রসাদোপম বাড়ি তৈরি করে। এটি ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে গভর্নর হাউজ নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি গভর্নর হাউজের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গভবন করা হয়। ঐ দিনই আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রথম সাংবিধানিক রাষ্ট্রপতি হন এবং এ স্থানটিকে রাষ্ট্রপতির ভবন হিসেবে ব্যবহার করেন।
১৪. ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারঃ
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ঢাকা শহরের প্রধান কারাগার। এটি ঢাকার চানখারপুল এলাকায় অবস্থিত। মুঘল আমলে এখানে একটি দুর্গ ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে তা কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৭৫ সালে ৩ নভেম্বর এই কারাগারে আটক চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়। এজন্য ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়। জেলখানায় যে চার নেতাকে হত্যা করা হয় তাঁরা হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মেদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী।
১৫. তিন নেতার মাজারঃ
তিন নেতার মাজার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত। স্বাধীনতা পূর্ব বাংলার তিন বিখ্যাত নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কবরের উপর নির্মিত ঢাকার অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন।
১৬. মুজিবনগর স্মৃতিসৌধঃ
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই ঘটনাকে চির স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল এখানে উদ্বোধন করা হয় মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধটির ডিজাইনের নকশা করেন স্থপতি তানভীর করিম।
১৭. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধঃ
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ঢাকার মীরপুরে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে এদেশের সূর্যসন্তানদের হত্যা করে। ১৯৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সৌধটি উদ্বোধন করেন। এর স্থপতি মোস্তফা হারুন কুদ্দুস হিলি।
১৮. রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধঃ
ঢাকা শহরের পশ্চিমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশেই এই স্মৃতিসৌধটি অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের প্রখ্যাত সন্তানদের হত্যা করে এই স্থানে পরিত্যক্ত ইটের ভাটার পশ্চাতে ফেলে রাখা হয়েছিল। এই সকল সূর্য সন্তানদের স্মরণে ইটের ভাটার আদলে এই স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। এর স্থপতি ছিলেন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও জামি আল শাফি।
১৯. শিখা অনির্বাণ এবং শিখা চিরন্তনঃ
শিখা অনির্বাণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। যুদ্ধে আত্মৎসর্গকারী সৈনিকদের স্মৃতিকে জাতির জীবনে চির উজ্জ্বল করে রাখার জন্য এই স্মৃতিস্তম্ভতে সর্বক্ষণিকভাবে শিখা প্রজ্জ্বলন করে রাখা হয়। ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় এটি অবস্থিত। এর স্থাপত্য পরিকল্পনা করেছে ঢাকা ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। Raysul Islam Redoy
শিখা চিরন্তন রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত একটি স্মরণ স্থাপনা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই স্থানটিতে দাড়িয়ে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রদান করেন।
২০. কমনওয়েলথ সমাধিঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৪১-১৯৪৫খ্রি.) বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে ৪৫০০০ কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হয়। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে তৈরি করা হয় রণ সমাধিক্ষেত্র। বাংলাদেশে ২ টি কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র রয়েছে। একটি চট্টগ্রামে এবং অপরটি কুমিল্লার ময়নামতিতে।
২১. রাজশাহীর বড়কুঠিঃ
বড়কুঠি বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের সর্বপ্রাচীন এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইমারত। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমে এটি নির্মিত হয় বলে ধারণা করা হয়। এটি প্রথমে ওলন্দাজ বা ডাচদের ব্যবসা কেন্দ্র ছিল।
২২. ষাট গম্বুজ মসজিদঃ
বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। পঞ্চদশ শতাব্দীতে পীর খান জাহান আলী এটি নির্মাণ করেন।
২৩. ছোট সোনা মসজিদঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের আমলে (১৪৯৩-১৫১৯খ্রিঃ) ওয়ালী মোহাম্মদ নামক এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন।
২৪. সাত গম্বুজ মসজিদঃ
সাতগম্বুজ ঢাকার জাফরাবাদ এলাকায় অবস্থিত। মসজিদে চারটি মিনার + তিনটি গম্বুজ = মোট সাত, এই কারণে মসজিদের নাম হয়েছে সাত গম্বুজ মসজিদ। ১৬৮০ সালে মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে তার পুত্র উমিদ খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
২৫. বাজরা শাহী মসজিদঃ
নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার বাজরা ইউনিয়নে দিল্লীর শাহী মসজিদের অনুকরণে নির্মিত বাজরা শাহী মসজিদ মুঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতি বহন করে। মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহের আমলে ১৭৩২ সালে জমিদার আমানউল্লাহ কর্তৃক নির্মিত হয়।
২৬. আতিয়া জামে মসজিদঃ
টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত মসজিদ। ১০ টাকার নোটে এ মসজিদের ছবি আছে।
২৭. সোমপুর বিহারঃ
ধর্মপাল নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে একটি বিহার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। বিহারটির নাম ছিল সোমপুর বিহার। অষ্টম শতাব্দীতে তিনি এটি নির্মাণ করেন। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজের ফলে যত বৌদ্ধবিহার আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে এটি আয়তনে বৃহত্তম। ১৮০৭-১৮১২ সালের মধ্যে কোনো এক সময়ে বুকানন হ্যামিল্টন পাহাড়পুর পরিদর্শন করেন। এটি ছিল পাহাড়পুরের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক পরিদর্শন। সেই সূত্র ধরে ১৮৭৯ সালে কানিংহাম এই বিশালকীর্তি আবিষ্কার করেন। সত্য পীরের ভিটা সোমপুর বিহারের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। সোমপুর বিহারে বাগদাদের খলিফা হারুন-অর রশিদের ১২৭ হিজরি (৭৮৮খ্রি.) সনের রৌপ্য মুদ্রা পাওয়া গেছে।
২৮. ঢাকেশ্বরী মন্দিরঃ
ঢাকার শহরের পলাশী ব্যারাক এলাকায় অবস্থিত একটি সুপ্রাচীন মন্দির। ধারণা করা হয় সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন দ্বাদশ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেন।
Raysul Islam Redoy
উয়ারী বটেশ্বর নরসিংদীর বেলাব উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রত্নতত্বিক স্থান। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন এবং সর্বশেষ আবিষ্কৃত প্রত্নতত্বস্থান। এটি মাটির নিচের একটি দূর্গ নগরী। উয়ারির বসতিকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রত্নতাত্বিকদের অনেকেই উয়ারী বটেশ্বরকে টলেমির সৌনাগড়া বলে উল্লেখ করে থাকেন। এখানে প্রাপ্ত চারটি পাথরে নিদর্শন প্রস্তর যুগের বলে মনে করা হয়। ২০১০ সালে এখানে আবিষ্কৃত হড ১৪০০ বছরের প্রাচীন ইট নির্মিত বৌদ্ধ পদ্মমন্দির। ১৯৩০ সালের দিকে স্থানীয় স্কুল শিক্ষক জনাব মোহাম্মদ হানিফ পাঠান প্রথম উয়ারি বটেশ্বরকে সুধী সমাজের নজরে আনেন। ২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ববিভাগের উদ্যোগে শুরু হয় এর প্রথম খনন কাজ। খনন কাজের নেতৃত্ব দেন বিভাগের প্রধান সুফী মোস্তাফিজুর রহমান।
২. পুণ্ড্রনগরঃ
বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মহাস্থানগড় বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। বাংলার প্রাচীনতম জনপদ ছিল পুণ্ড্র বা পৌন্ড্র। পুণ্ড্রদের আবাসস্থলই পুণ্ড্র বা পুণ্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত। এই পুণ্ড্ররাজ্যের রাজধানী ছিল পুণ্ড্রনগর। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় অব্দে এই নগর গড়ে উঠেছিল।
পুণ্ড্রনগরের বর্তমান নাম মহাস্থানগড়। এটি মৌর্য ও গুপ্ত রাজবংশের প্রাদেশিক রাজধানী ছিল। কথিত আছে, এখানে পরশুরামের সাথে ফকির বেশী আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র.) এর যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে (১২০৫-১২২০খ্রি.) পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন। শাহ সুলতান বলখী (র.) এ অঞ্চলে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করেন। গড়ের পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত শীলাদেবীর ঘাট। এখানে রয়েছে সম্রাট অশোক নির্মিত বৌদ্ধ স্তম্ভ যা বেহুলার বাসর ঘর নামে পরিচিত। মহাস্থানগড়ের দর্শনীয় স্থান শাহ সুলতান বলখীর মাজার, পরশুরামের প্রসাদ, খোদার পাথর ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, গোবিন্দ ভিটা, লক্ষ্মীন্দরের মেধ, কালীদহ সাগর, পদ্মাদেবীর বাসভবন ইত্যাদি। ১৮০৮ সালে বুকানন হ্যামিল্টন সর্বপ্রথম এ স্থানটি আবিষ্কার করেন। ১৮৮৯ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম স্থানটিকে প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী হিসেবে সনাক্ত করেন।
৩. কোটিবর্ষঃ
দেবকোট বা কোটিবর্ষ ছিল বাংলার এক প্রাচীন শহর। কোটিবর্ষ ছিল পুণ্ড্রবর্ধন ভুক্তির একটি অংশ। অধুনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাণগড় গ্রামে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে।
৪. ময়নামতিঃ
কুমিল্লার বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান ময়নামতি। এ এলাকাটি প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাচীন নগরী এবং বৌদ্ধ বিহারের অবশিষ্টাংশ। সপ্তম-দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে এই নগরী ও বিহারগুলো নির্মিত হয়েছিল। রাজা মানিকচন্দ্রের স্ত্রী রানী ময়নামতির নামানুসারে এ স্থানের নামকরণ করা হয়। ময়নামতির পূর্ব নাম ছিল রোহিতগিরি। প্রত্নতাত্বিকদের মতে, ময়নামতি জয়কর্মান্তবসাক নামক একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ। এখানকার উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হলো শালবনবিহার, লালমাই পাহাড়, কুটিলা, ইটাখোলা মুড়া, রূপবান মুড়া, চারপত্র মুড়া ইত্যাদি।
৫. নোয়াপাড়া ঈষাণচন্দ্রনগরঃ
কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অন্যতম বৃহৎ অনাবিষ্কৃত প্রত্নতাত্বিক স্থান। ধ্বংসাশেষের বেশির ভাগ এলাকা বৌদ্ধ আমলের। পন্ডিতগণ মনে করেন এই নিদর্শনগুলো হারিয়ে যাওয়া নগরী কর্মান্ত ভাসাকর - যা সপ্তম শতকের সমতটের রাজধানী খাদগা।
৬. সোনারগাওঃ
বারো ভূইয়াদের নেতা ঈসা খাঁ সোনারগাও এ বাংলার রাজধানী স্থাপন করেন। এ সময় দিল্লীর ক্ষমতায় ছিলেন সম্রাট আকবর। সোনারগাও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা। সোনারগাও পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী এবং উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত একটি বিস্তৃত জনপদ ছিল। এর পূর্ব নাম সুবর্ণগ্রাম। ঈসা খাঁর স্ত্রী সোনা বিবির নামানুসারে সোনারগাও এর নামকরণ করা হয়। সোনা বিবির মাজার, পাঁচবিবির মাজার, পাঁচ পীরের মাজার, গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের মাজার, হোসেন শাহ নির্মিত একটি সদৃশ্য মসজিদ, ঈসা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, গ্রান্ড-ট্রাঙ্ক রোড ইত্যাদি সোনারগার দর্শনীয় স্থান। সোনারগাও এর পানাম নগরী উনিশ শতকে উচ্চবিত্ত ব্যবসায়ীদের বাসস্থান ছিল।
৭. লালবাগের কেল্লাঃ
লালবাগের কেল্লা মুঘল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি পুরোনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত একটি দুর্গ। এই কেল্লার পূর্ব নাম আওরঙ্গবাদ দূর্গ। সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে তার তৃতীয় পুত্র শাহজাদা মোহম্মদ আযম শাহ ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে এর নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকে। তবে তার কন্যা পরিবিবি (প্রকৃত নাম ইরান দুখত) এর মৃত্যুর পর ১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। কেল্লা এলাকাতে পরিবিবির সমাধি অবস্থিত। কেল্লার উত্তর-পশ্চিমাংশে বিখ্যাত শাহী মসজিদ অবস্থিত।
৮. বড় কাটরা এবং ছোট কাটরাঃ
বড় কাটরা ঢাকার চকবাজারে অবস্থিত মুঘল আমলের নিদর্শন। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহসুজার নির্দেশে আবুল কাসেম ১৬৪১ খ্রিস্টাব্দে বুড়িগঙ্গা ণদীর তীরে এই ইমারতটি নির্মাণ করেন। Raysul Islam Redoy
ছোট কাটরা ঢাকার চকবাজারে অবস্থিত শায়েস্তা খাঁর আমলে তৈরি একটি ইমারত। তিনি এটি সরাইখানা বা প্রশাসনিক কাজে ব্যবহারের জন্য নির্মাণ করেন। ১৬৬৩ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৬৭১ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
৯. হুসেনি দালানঃ
হুসেনি দালান বা ইমাম বাড়া ঢাকা শহরের বকশিবাজার এলাকার একটি শিয়া উপাসনালয়। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের আমলে এটি নির্মিত হয়। হিজরী ১০৫২ সনে সৈয়দ মীর মুরাদ এটি নির্মাণ করেন।
১০. উত্তরা গণভবনঃ
দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ী (উত্তরা গণভবন) নাটোর জেলায় অবস্থিত এককালে দিঘাপাতিয়া মহারাজদের বাসস্থান। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের উত্তরাঞ্চলীয় সচিবালয়। ১৭৪৩ সালে রাজা দয়ারাম রায় এটি নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালে প্রলয়ংকারী ভূমিকম্পে রাজপ্রাসাদটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। পরে রাজা প্রমদা নাথ রায় এটি পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন গভর্নর মোনায়েম খান একে গভর্নরের বাস ভবন হিসাবে উদ্বোধন করেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই রাজবাড়ীর নামকরণ করেন উত্তরা গণভবন।
১১. কার্জন হলঃ
কার্জন হল ঢাকার একটি ঐতিহাসিক ভবন। ১৯০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও বড়লাট লর্ড কার্জন এর ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। এটি নির্মিত হয় ঢাকা কলেজের পাঠাগার হিসাবে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে কার্জন হল অন্তর্ভুক্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের জন্য - যা আজও ব্যবহৃত হয়।
১২. আহসান মঞ্জিলঃ
আহসান মঞ্জিল পুরানো ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের প্রাসাদ। এর প্রতিষ্ঠাতা নবাব আব্দুল গণি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানউল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন। এর নির্মাণকাল ১৮৫৯-১৮৭২ সাল। ১৮৯৭ সালে ঢাকায় ভূমিকম্প আঘাত হানলে আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তীকালে নবাব আহসানউল্লাহ তা পনঃনির্মাণ করেন। ১৯০৬ সালে আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এক সভায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালে আহসান মঞ্জিলকে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়।
১৩. বঙ্গভবনঃ
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সরকারী বাসভবন বঙ্গভবন। এটি ঢাকার দিলকুশা এলাকায় অবস্থিত। ১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসামের সরকার এ স্থানটি কিনে নেয় এবং প্রসাদোপম বাড়ি তৈরি করে। এটি ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে গভর্নর হাউজ নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি গভর্নর হাউজের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গভবন করা হয়। ঐ দিনই আবু সাঈদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রথম সাংবিধানিক রাষ্ট্রপতি হন এবং এ স্থানটিকে রাষ্ট্রপতির ভবন হিসেবে ব্যবহার করেন।
১৪. ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারঃ
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ঢাকা শহরের প্রধান কারাগার। এটি ঢাকার চানখারপুল এলাকায় অবস্থিত। মুঘল আমলে এখানে একটি দুর্গ ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে তা কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৭৫ সালে ৩ নভেম্বর এই কারাগারে আটক চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়। এজন্য ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়। জেলখানায় যে চার নেতাকে হত্যা করা হয় তাঁরা হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মেদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী।
১৫. তিন নেতার মাজারঃ
তিন নেতার মাজার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অবস্থিত। স্বাধীনতা পূর্ব বাংলার তিন বিখ্যাত নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কবরের উপর নির্মিত ঢাকার অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন।
১৬. মুজিবনগর স্মৃতিসৌধঃ
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে প্রবাসী সরকার শপথ গ্রহণ করে। এই ঘটনাকে চির স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল এখানে উদ্বোধন করা হয় মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধটির ডিজাইনের নকশা করেন স্থপতি তানভীর করিম।
১৭. শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধঃ
শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ঢাকার মীরপুরে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে এদেশের সূর্যসন্তানদের হত্যা করে। ১৯৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সৌধটি উদ্বোধন করেন। এর স্থপতি মোস্তফা হারুন কুদ্দুস হিলি।
১৮. রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধঃ
ঢাকা শহরের পশ্চিমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশেই এই স্মৃতিসৌধটি অবস্থিত। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দেশের প্রখ্যাত সন্তানদের হত্যা করে এই স্থানে পরিত্যক্ত ইটের ভাটার পশ্চাতে ফেলে রাখা হয়েছিল। এই সকল সূর্য সন্তানদের স্মরণে ইটের ভাটার আদলে এই স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। এর স্থপতি ছিলেন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও জামি আল শাফি।
১৯. শিখা অনির্বাণ এবং শিখা চিরন্তনঃ
শিখা অনির্বাণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। যুদ্ধে আত্মৎসর্গকারী সৈনিকদের স্মৃতিকে জাতির জীবনে চির উজ্জ্বল করে রাখার জন্য এই স্মৃতিস্তম্ভতে সর্বক্ষণিকভাবে শিখা প্রজ্জ্বলন করে রাখা হয়। ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় এটি অবস্থিত। এর স্থাপত্য পরিকল্পনা করেছে ঢাকা ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। Raysul Islam Redoy
শিখা চিরন্তন রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত একটি স্মরণ স্থাপনা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই স্থানটিতে দাড়িয়ে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রদান করেন।
২০. কমনওয়েলথ সমাধিঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৪১-১৯৪৫খ্রি.) বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে ৪৫০০০ কমনওয়েলথ সৈনিক নিহত হয়। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে তৈরি করা হয় রণ সমাধিক্ষেত্র। বাংলাদেশে ২ টি কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র রয়েছে। একটি চট্টগ্রামে এবং অপরটি কুমিল্লার ময়নামতিতে।
২১. রাজশাহীর বড়কুঠিঃ
বড়কুঠি বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলের সর্বপ্রাচীন এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইমারত। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমে এটি নির্মিত হয় বলে ধারণা করা হয়। এটি প্রথমে ওলন্দাজ বা ডাচদের ব্যবসা কেন্দ্র ছিল।
২২. ষাট গম্বুজ মসজিদঃ
বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। পঞ্চদশ শতাব্দীতে পীর খান জাহান আলী এটি নির্মাণ করেন।
২৩. ছোট সোনা মসজিদঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের আমলে (১৪৯৩-১৫১৯খ্রিঃ) ওয়ালী মোহাম্মদ নামক এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন।
২৪. সাত গম্বুজ মসজিদঃ
সাতগম্বুজ ঢাকার জাফরাবাদ এলাকায় অবস্থিত। মসজিদে চারটি মিনার + তিনটি গম্বুজ = মোট সাত, এই কারণে মসজিদের নাম হয়েছে সাত গম্বুজ মসজিদ। ১৬৮০ সালে মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে তার পুত্র উমিদ খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করেন।
২৫. বাজরা শাহী মসজিদঃ
নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার বাজরা ইউনিয়নে দিল্লীর শাহী মসজিদের অনুকরণে নির্মিত বাজরা শাহী মসজিদ মুঘল সাম্রাজ্যের স্মৃতি বহন করে। মুঘল সম্রাট মুহম্মদ শাহের আমলে ১৭৩২ সালে জমিদার আমানউল্লাহ কর্তৃক নির্মিত হয়।
২৬. আতিয়া জামে মসজিদঃ
টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত মসজিদ। ১০ টাকার নোটে এ মসজিদের ছবি আছে।
২৭. সোমপুর বিহারঃ
ধর্মপাল নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে একটি বিহার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। বিহারটির নাম ছিল সোমপুর বিহার। অষ্টম শতাব্দীতে তিনি এটি নির্মাণ করেন। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজের ফলে যত বৌদ্ধবিহার আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে এটি আয়তনে বৃহত্তম। ১৮০৭-১৮১২ সালের মধ্যে কোনো এক সময়ে বুকানন হ্যামিল্টন পাহাড়পুর পরিদর্শন করেন। এটি ছিল পাহাড়পুরের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক পরিদর্শন। সেই সূত্র ধরে ১৮৭৯ সালে কানিংহাম এই বিশালকীর্তি আবিষ্কার করেন। সত্য পীরের ভিটা সোমপুর বিহারের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। সোমপুর বিহারে বাগদাদের খলিফা হারুন-অর রশিদের ১২৭ হিজরি (৭৮৮খ্রি.) সনের রৌপ্য মুদ্রা পাওয়া গেছে।
২৮. ঢাকেশ্বরী মন্দিরঃ
ঢাকার শহরের পলাশী ব্যারাক এলাকায় অবস্থিত একটি সুপ্রাচীন মন্দির। ধারণা করা হয় সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন দ্বাদশ শতাব্দীতে এটি নির্মাণ করেন।
Raysul Islam Redoy