Page 1 of 1

বুদ্ধিজীবী হত্যা

Posted: Sun Sep 13, 2020 10:00 pm
by Jahidhasan
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ঠিক আগ মূহুর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অনিবার্য হয়ে পড়লে পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের মিত্র আলবদর বাহিনী ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাঙালির তৎকালীন শ্রেষ্ঠ সন্তান তথা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে এক কলঙ্কময় ইতিহাসের সৃষ্টি করেন। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডা. ফজলে রাব্বি, ডা. আলীম চৌধুরী, দার্শনিক জিসি দেব, সুরকার আলতাফ মাহমুদ, রাজনীতি বীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, শহীদুল্লাহ কায়সার, সাহিত্যিক মুনীর চৌধুরী, সাহিত্যিক আনোয়ার পাশা, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, সাংবাদিক সেলিনা পারভিন, ড. সিরাজুল ইসলাম খান প্রমুখ।
চূড়ান্ত বিজয়
১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথ কমান্ড গঠন করে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে এটি গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান বিমানবাহিনী ভারতের বিমানঘাটিতে হামলা চালালে সেদিনই তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্দী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম জেলা হিসেবে যশোর শক্রমুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পূর্বঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেণারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্মিলিত মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর পূর্বঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান সেনাপতি লে. জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন গ্রুপ ক্যাপটেন একে খন্দকার। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্থাৎ বিজয়ের দিন ছিল বৃহস্পতিবার।
বিবিধ
বাংলা এ পর্যন্ত দুই বার বিভক্ত হয়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের কারণে এবং দ্বিতীয় বার ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের কারণে ।
ঢাকা এ পর্যন্ত পাঁচবার বাংলার রাজধানী হয়। প্রথমবার ১৬১০ সালে সুবেদার ইসলাম খান সুবা বাংলার রাজধানী করেন ঢাকাকে। দ্বিতীয়বার ১৬৬০ সালে সুবেদার মীর জুমলা ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী করেন। তৃতীয়বার ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন পূর্ববঙ্গ ও আসামের রাজধানী করে ঢাকাকে । চতুর্থবার পাকিস্থান সরকার পূর্ব বাংলার রাজধানী করে ঢাকাকে এবং সর্বশেষ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে ঘোষণা করে।
দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ
দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ ছিল ১ আগস্ট ১৯৭১ রবিবার দুপুর ২টা ৩০ মিনিট ও রাত ৮ টায় নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে প্রায় ৪০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সাবেক বিটলস সংগীত দলের লিড গিটার বাদক জর্জ হ্যারিসন এবং জাতীয় সেতার বাদক রবিশঙ্কর কর্তৃক সংগঠিত দুটি বেনিফিট কনসার্ট । এই প্রদর্শনী পূর্ব পাকিস্তানর শরনার্থী দের জন্য আন্তর্জাতিক সচেতনতা এবং তহবিল ত্রাণ প্রচেষ্টা বাড়াতে মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কিত বাংলাদেশের নৃসংসতার ফলে সাহায্যের উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়েছিল । এই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিখ্যাত সংগীত শিল্পীদের এক বিশাল দল অংশ নিয়েছিল, যাদের মধ্যে বব ডিলান , এরিক ক্ল্যাপটন, জর্জ হ্যারিসন, বিলি প্রিস্টন , লিয়ন রাসেল, ব্যাড ফিঙ্গার এবং রিঙ্গো রকস্টার ছিলেন উল্লেখযোগ্য। কনসার্ট ও অন্যান্য অনুষঙ্গ থেকে প্রাপ্ত অর্থ সাহায্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৮.৫১ মার্কিন ডলার, যা ইউনিসেফের মাধ্যমে শরনার্থীদের সাহায্যার্থে ব্যয় করা হয়।
উল্লেখ্য, কনসার্ট ফর বাংলাদেশের গায়ক বব ডিলানকে (জন্মগত নাম রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান) ২০১৬ খ্রিষ্ট্রাব্দের ১৩ অক্টোবর সুইডিস একাডেমি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি পৃথিবীর প্রথম গীতিকার, যিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন । অদ্যাবধি তার বিক্রীত রেকর্ডের সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি।
মুক্তিযুদ্ধে বিদেশিদের অবদান
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের বর্বরতার খবর সর্বপ্রথম বর্হিবিশ্বে প্রকাশ করেন সাইমন ড্রিং। স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য অর্থ সংগ্রহের জন্য কবিতা পাঠের আয়োজন করেন রাশিয়ার ইয়েভগেনি ইয়েভ তুসোস্কোর এবং ভারতের এলেন গিনেসবার্গ। এলেন গিনেসবার্গ বাংলাদেশি শরনার্থীদের করুণ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ‘সেপ্টেম্বর অব যশোর রোড’নামক কবিতা রচনা করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যিনি সবচেয়ে বেশি সহযোগীতা করেছেন তিনি হলেন ইন্দিরা গান্ধি। স্বাধীনতার পরে ইন্দিরা গান্ধী প্রথম রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে আগমন করেন ১৯৭২সালের ১৭ মার্চ। বঙ্গন্ধুর জন্মদিনে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। তার আগে কোনো বিদেশি রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান বাংলাদেশে আসেনি । রাশিয়া (সোভিয়েত ইউনিয়ন ) এবং ভারতের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়। পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরোধিতা করে । আমেরিকার মূল ভূখন্ডের বাইরে সবচেয়ে বড় নেভাল ফোর্সের নাম ‘সপ্তম নৌবহর’। এর প্রধান ঘাঁটি জাপানের ইয়াকোসুকা। রাশিয়া বাংলাদেশের পক্ষে ভেটো প্রদান করেছিল । এসময় ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণে সপ্তম নৌবহরের বেশিরভাগ জাহাজ ভিয়েতনামের কাছাকাছি ছিল। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর সপ্তম নৌবহরের কয়েকটি জাহাজ নিয়ে টাস্কফোর্স ৭৪ গঠন করা হয়। জাহাজগুলো সিঙ্গাপুরে একত্র হয়ে বঙ্গপসাগরে অভিমুখে যাত্রা শুরু করে । এই বহরের জাহাজগুলোর মধ্যে প্রধান জাহাজ হলো ‘ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ’। ঐ সময় জাহাজটিতে বোমাও ছিল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পাল্টা ধাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রয়াস ব্যর্থ হয়। এবং যুক্তরাষ্ট্র পিছু হটে। চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরও জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের বিরূদ্ধে ভেটো প্রদান করে।